অনলাইন ডেস্ক : উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধিতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। গাইবান্ধায় আবারও বাঁধ ও সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। রাজশাহীর বাগমারায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধসে গেছে ২০০ বাড়িঘর। নাটোরের সিংড়ায় দুটি বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, বিলীন হয়েছে বেশকিছু বাড়িঘর। সিরাজগঞ্জে আবারও যমুনার পানি বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত চরাঞ্চলের মানুষ।

গাইবান্ধা : জেলার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর এ তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে কলা, আখ ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন সবজিখেত। এদিকে করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা ও ঘাঘটসহ জেলার সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার করতোয়া নদীর পানি বিপত্সীমার ১০৭ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নতুন করে আকস্মিক এই বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে গতকাল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বগলাগাড়ী এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও কালীতলা-বগলগাড়ী পাকা সড়ক ভেঙে পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জের সাত গ্রামের মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গোবিন্দগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন। সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ সাহারিয়া খান বিপ্লব জানান, পানি ঢুকে পড়ায় বৃহস্পতিবার তার উপজেলার ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, প্রতিদিন পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

বাগমারা (রাজশাহী) : উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার পানিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বড়বিহারী ও কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম এখন বন্যার পানিতে ভাসছে। এছাড়া ঐ দুই ইউনিয়নের অন্তত ২০০ কাঁচা বাড়িঘর ধসে গেছে বলে জানা গেছে। ঐ ইউনিয়নের মুরারিপাড়া, কুলিবাড়ী, আমবাড়িয়া, মন্দিয়াল, কোহিতপাড়া, কড়বিহানালী পূর্বকান্দিসহ অনেক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পরিবার-পরিজন ও গৃহপালিত পশু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে এলাকার লোকজন। কাঁচা-পাকা সড়ক ডুবে গেছে পানিতে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে বানভাসিরা। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ১৩টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে কমবেশি ভাসলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়বিহানালী, দ্বীপপুর, কাচারীকোয়ালীপাড়া ও ঝিকরা ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে দুর্গতরা। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু জায়গাতে। কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করায় গতকাল স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও বানভাসি মানুষদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেন।

সিংড়া (নাটোর) : আত্রাই নদীর পানি বিপত্সীমার ১০৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার রাত ২টার দিকে পানির তীব্র স্রোতে পৌর এলাকার শোলাকুড়া মহল্লায় সিংড়া বলিয়াবাড়ি রাস্তার বাঁধ ভেঙে যায়। এতে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মহেশচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি মহল্লার হাজার হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে নাগর নদের হিয়াতপুর নামক স্থানে সিংড়া-তাজপুর সড়ক ভেঙে যায়। এতে ঐ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। উপজেলার ২ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ১ হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত ১ লাখ মানুষ। নিরুপায় হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ছুটছেন বন্যাদুর্গত মানুষরা। ইতিমধ্যে ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : কয়েক দিন ধরে সিরাজগঞ্জ ও কাজীপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাজীপুর পয়েন্টে বিপত্সীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপত্সীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনা তীরবর্তী চর এলাকার মানুষ বিশেষ করে কৃষকরা আবারও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণের কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।