অনলাইন ডেস্ক : উইঘুর গণহত্যার কথা স্বীকার করতে এবং এ বিষয়ে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কানাডাকে বাধ্য করার দাবিতে মামলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, উইঘুর গণহত্যার বিষয়ে কানাডা জাতিসংঘের ‘গণহত্যা কনভেনশনের’ প্রতি তার বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করছে। নতুন দায়ের করা ফেডারেল কোর্টের আবেদনে আরো অভিযোগ করা হয়েছে যে, কানাডা জাতিসংঘের কনভেনশনে বর্ধিত ধারাগুলো সঠিকভাবে পালন করছে না।
দি উইঘুর রাইটস অ্যাডভোকেসি প্রজেক্ট নামে একটি সংগঠন চলতি সপ্তাহে মন্ট্রিলের ফেডারেল কোর্টে ওই আবেদন করেছে। এতে কানাডাকে উইঘুর ইস্যুতে চীনকে চাপ দিতে বাধ্য করার দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনের মুখপাত্র মেহমেত তোহতি কানাডা সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বিশ্বের যে কোন স্থানে গণহত্যার বিরুদ্ধে কাজ করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্বেও কানাডা তা এড়িয়ে যাচ্ছে। উইঘুর ইস্যুতে কানাডার নিরব থাকার অর্থ হলো তারা নিরবে চীন সরকারকে গণহত্যা চালানোর স্বীকৃতি দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা চীনের ওই প্রচেষ্টায় অবদান রাখছে।
প্রসঙ্গত, চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের পুরানো। স¤প্রতি দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং প্রদেশের স্বায়ত্বশাসিত উইঘুর অঞ্চলে নির্যাতনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, সেখানে প্রায় দুই মিলিয়ন লোককে বন্দি শিবিরে আটক রেখে জোরপূর্বক কাজ করানো হচ্ছে। এছাড়া বন্দিদের উপর নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নেরও অভিযোগ রয়েছে। চীন সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে যে, শিবিরগুলো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তবে তারা তাদের দাবির সমর্থনে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি এবং আন্তর্জাতিক কোন সংস্থাকে শিবিরগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি। এতে চীনা সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো আরো জোরালো হচ্ছে।
ইউ এন কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্যা ক্রাইম অব জেনোসাইড’ যা জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন নামে পরিচিত। ১৯৫১ সালে কার্যকর হওয়া এই চুক্তিতে কানাডাও স্বাক্ষর করেছিল। এই কনভেনশন গণহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারণ, গণহত্যাকারিদের চিহ্নিহ্নত ও প্রতিরোধ করা এবং তাদের শাস্তির দাবি জানায়।
২০২০ সালে মানবাধিকার বিষয়ক একটি কানাডিয়ান সংসদীয় উপ-কমিটি উইঘুর বিষয়ে কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ শোনা ও পরীক্ষার পর বলেছিল যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি উইঘুর জাতিসংঘ কনভেনশনের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া গত বছর কানাডার পার্লামেন্টেও ‘জিনজিয়াংয়ে চীন সরকারের পদক্ষেপকে’ গণহত্যা ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছিল। তবে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা এতে ভোট দানে বিরত ছিলেন।
আদালতে দায়ের করা আবেদনটিতে বলা হয়েছে, চীন সরকার ২০১৪ সাল থেকে সেখানে গণহত্যা চালাচ্ছে। কিন্তু কানাডা সরকার এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করে নিজেদের স্বাক্ষর করা করভেনশনের নীতিমালা লঙ্ঘন করছে।
মেহমেত তোহতি বলেন, আমাদের আইনি ব্যবস্থায় গণহত্যার একটি নাম রয়েছে। সরকারকে স্পষ্ট করে তা বলতে হবে। যদি সরকার তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমাদের ফেডারেল আদালত সরকারকে ভুল সংশোধনের জন্য নির্দেশ দিতে পারে। এমনটা হলে তা সরকারের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক সমালোচক মাইকেল চং বলেছেন, বিদ্যমান বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আর গত বছর হাউস অব কমন্সে নেয়া প্রস্তাবের কারণে সরকারের ইতোমধ্যেই উচিত ছিল ‘জিনজিয়াংয়ের গণহত্যাকে’ স্বীকৃতি দেয়া এবং এই বিষয়ে চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া। তিনি আরো বলেন, ফেডারেল সরকার এখন এই বিষয়ে বিচারকের রায় উপেক্ষা করতে পারবে না। সূত্র : দ্য স্টার