সোনা কান্তি বড়ুয়া : মানবতায় বিভেদ বিদ্বেষের নামই কি ধর্ম ও রাজনীতি? মানবাধিকারের অস্তিত্বের আলোকে আন্তঃধর্মীয় স¤প্রীতিতে সব ধর্মই শান্তির বার্তা দেয়! মানবতাই হোক প্রকৃত ধর্ম! মসজিদ এবং মন্দিরে মহাশান্তি মহাপ্রেম! হিন্দুত্ববাদীদের বুদ্ধ অবতার এবং আল্লাহ উপনিষদ রচনার কারন ভারতে অহিন্দু ধর্মসমূহকে হিন্দুধর্মের লেজুর বানাতে বুদ্ধ অবতার ও আল্লাহ উপনিষদ ব্যবহার করা হবে। রাম মন্দির আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় ১৯৯২ সালে ৬ই ডিসেম্বর ভগবান রামের নামে হিন্দুত্ববাদীরা আল্লাহ’ র বাবরি মসজিদ ধ্বংস করলো কেন? ভারতে জাতির পিতা গান্ধীজির পরম প্রিয় ভজন ছিল, “ঈশ্বরআল্লাহ তেরে নাম / সবকো সদ মতি দেয় ভগবান।“ অযোধ্যার পর আসর সরগরম করে তুলেছে বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদের মামলা। যদিও চরিত্র কিছুটা ভিন্ন। মানবাধিকারের অস্তিত্বের আলোকে বাবরি মসজিদ আলোকিত মানবতার প্রতিশ্র“তি এবং সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (1656 A. D.) “আল্লাহ উপনিষদে” রচিত হলো: “আল্লো জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং, পূর্ণং ব্রহ্মানং অল্লাম। অর্থাৎ দেবতাদের রাজা আল্লাহ আদি সকলের বড় ইন্দ্রের গুরু।”
বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর হিন্দু মন্দির! বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করার নাম বৈদিক হিন্দুধর্ম ! হিন্দুশাসকগণ রাশি রাশি বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস করে হিন্দু মন্দিরে বদলানো হয়েছিল! লেখক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, (Daily Pratidin Kolkata dated ২৯ মে,২০২২) “খোদ প্রধানমন্ত্রী (Mr. Narendra Modi) নির্বাচন কেন্দ্র বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘প্রকৃত চরিত্র’ অনুসন্ধানে স্থানীয় আদালতের নির্দেশ মেনে ভিডিও সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। অযোধ্যার পর আসর সরগরম করে তুলেছে আরও এক মন্দির-মসজিদ মামলা। যদিও চরিত্র কিছুটা ভিন্ন। বিশ্বাস, ইতিহাস, লোকগাথা, পরম্পরার ধারাবাহিকতা, সত্য প্রতিষ্ঠার দাবি ও মামলার মধ্যে প্রাচীরের মতো মাথা উঁচিয়ে রয়েছে এক আইন, মাত্র ২১ বছর আগে সা¤প্রদায়িকতার বিষ-ছোবল থেকে দেশকে বাঁচাতে যা তৈরি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কী করবে সুপ্রিম কোর্ট? মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও তুমুল সার্বিক অস্থিরতার মাঝে গোটা দেশের নজর আচমকাই ঘুরে গিয়েছে সেইদিকে।
স¤প্রতি ভারতে বারাণসী দায়রা আদালত থেকে (আনন্দবাজার পত্রিকা (২৯ মে, ২০২২)! অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’র তরফে বারাণসী আদালত ঘোষিত ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা, তহ্খানা-সহ মসজিদের একাংশ) এলাকা সিল করার নির্দেশ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর সময় বলা হয়েছিল, ওজুখানার জলাধারে পর্যবেক্ষক দল যে পাথরটি দেখেছেন সেটি আদতে ফোয়ারা। শীর্ষ আদালত বারাণসী দায়রা আদালত থেকে বারাণসী জেলা আদালতে সেই মামলা স্থানান্তর করেছে। আর সেই শুনানি-পর্বের সময়ই বিচারাধীন বিষয়ে কেন বিজেপি সাংসদ মন্তব্য করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতিতে সংবিধান এবং আমাদের মনে রাখতে হবে যে ভারতে সংবিধান সুরক্ষিত রাখতে পারলেই ফ্যাসিবাদী, ব্রাহ্মণবাদী চক্রান্তকারীদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে।
তুমি হিন্দুত্ববাদী হয়ে বাবরি মসজিদ এবং বৌদ্ধ বিহার গুলি লুট করষর অধিকার পাইলা কই? বৌদ্ধময় ভারত আর্য-বৈদিকতার হিংস্র রক্তস্রোতে ডুবে যায়। আর তার ঐতিহ্যকে ইতিহাসের পাতা থেকে সুকৌশলে মুছে দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ আনুমানিক প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার বৌদ্ধ মঠ-বিহার ভেঙ্গে সেখানে গড়ে ওঠে আর্য-বৈদিক দেবদেবীর মন্দির। শুধু তাই নয়, অসংখ্য বৌদ্ধ ঐতিহ্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয় — যা আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলে বৌদ্ধধম্ম ও সংস্কৃতি আর্য-বৈদিক স্রোতে বিলীন হয়ে যায়” (জন মার্শালের ‘The Tradition of History’ গ্রন্থ, পৃষ্ঠা-৭৯, তৃতীয় প্রকাশ)। হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি বৌদ্ধধর্মকে নিশ্চিহ্ন করেছে (আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) এবং হিন্দুত্ববাদী জঙ্গীদের হষতে লুট হয়ে যাওয়া বৌদ্ধদের তিরুপতি বালাজী (বৌদ্ধ বিহার) মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ (বৌদ্ধ বিহার) মন্দির ফিরে পাব কি?
হিন্দু রামায়নের সেই রাজা রাম এবং সেই রাজধানী অযোধ্যা (from Bangkok 40 kilometers) থাইল্যান্ডে কেন? আমি বাংলাদেশ হযরত শাহজালাল ঢাকা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশের রাজধানী ব্যাঙ্কক সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখলুম বাংলা ভাষার জনক গৌতমবুদ্ধ বিরাজমান। বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় এমারেল্ড (মরকত মনি) বুদ্ধ মন্দিরের চারিদিক জুড়ে আছে দশরথ জাতকে রামকীর্তির অভিনব চিত্রশালা। আজকের থাইল্যান্ডের মহারাজা Vajira Longkorn হচ্ছেন দশম রাম।
বাংলাদেশে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান- এ চারটিই প্রধান ধর্ম। আমাদের দেশে মসজিদের পাশে মন্দির, ঈদ ও পূজা উদ্যাপন হয়; একই সঙ্গে আজানের ধ্বনির পাশাপাশি মন্দিরে বাজে বাঁশরির সুর। আধুনিক বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন, ‘একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি,/ আজো একসাথে থাকবোই/ সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।’ বড় সাধ জাগে একবার ঈদ ও পূজায় মানবতাই হোক প্রকৃত ধর্ম দেখি! ইসলামি জঙ্গীরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার কাছে পরাজিত হয়ে কোরআন নিয়ে রামুর বৌদ্ধ বিহার ও কুমিল্লা দূর্গাপূজায় ধ্বংসযজ্ঞ এই বিষয়টার মধ্যে যে বিদ্বেষের মশলা আছে তা জনমানসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সংক্রমিত!
প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন যখন বাংলার রাজা (1119 A. D.) হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্ম ও ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করতে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বল্লাল সেন সেনাবাহিনীকে হুকুম দিল, “বৌদ্ধধর্মীদের পিছনে ধাওয়া করে হত্যা করো। (গুরুচাঁদচরিত ষষ্ঠ সংস্করণের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠা দেখুন)। বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর হিন্দু মন্দির! বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করার নাম বৈদিক হিন্দুধর্ম! হিন্দুশাসকগণ রাশি রাশি বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস করে হিন্দু মন্দিরে বদলানো হয়েছিল!
বুদ্ধকে হিন্দুদের নবম অবতার বানিয়ে বর্ণাশ্রমবাদী হিন্দু মন্দিরে ‘বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি’ উচ্ছারিত হয় না কেন? প্রাচীন বাংলাদেশে হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি বৌদ্ধধর্ম ও ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করতে ১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র হিন্দু রাষ্ট্রধর্মের নেতা হয়ে ‘শেক শুভোদয়া’ শীর্ষক বই লিখেছিলেন। তিনি তাঁর রচিত দিনলিপি (ডাইরেক্টরী) উক্ত বইতে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করতে মুসলিম তুর্কী মিশনের যোদ্ধাদের সাথে মহামন্ত্রীর গোপন ষড়যন্ত্রে রাজালক্ষণ সেনকে সরিয়ে বখতিয়ার খিলজি কে বাংলার সিংহাসন আরোহনের নীলনক্সার পুঞ্জীভূত লোমহর্ষকর বাস্তব ঘটনাবলী অকপটে রচনা করে স্বীকার করলেন। রাতারাতি ইতিহাস তৈরী হয় না। গৌতমবুদ্ধের অহিংসা পরমধর্মে বৌদ্ধ দশরথ জাতকই রামায়নের উৎস এবং প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বৌদ্ধ চিন্তাধারাপুষ্ঠ অশোক চক্র (বৌদ্ধদের ধর্মচক্রকে বদলিয়ে) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমবেøম বা সরকারী স্মারক চিহ্ন রুপে বিরাজমান।
জনতার প্রশ্ন : মহাভারতের লেখক ঋষি বেদব্যাস ধৃতরাষ্ঠ্রের মা, পান্ডুর মা এবং বিধূরের মা কে সামাজিক নিয়মে বিয়ে না করে ও তাদের (ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডু এবং বিদুরের) পিতা হলেন কি অধিকারে? বিশ্বশান্তি স্থাপন করতে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাংলা বইয়ের নাম “চর্যাপদ এবং বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ! মহাভারতে মানবতার কলংকিত সংকেত! দেশ পত্রিকার লেখক দীপঙ্কর রায়ের মতে, “গীতায় একজন বুদ্ধিমান আরেকজন অপেক্ষাকৃত অল্প বুদ্ধিমানকে হত্যায় প্ররোচিত করছেন। এই প্ররোচনার ফলে মানুষ নিহত হয়েছিলেন অগণ্য। এর পর হাজার বছর ধরে সেই প্ররোচনামূলক গ্রন্থটিকে একটি জাতির মহান গ্রন্থ বলে জাহির করে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি অর্থাৎ কায়েমি স্বার্থ কে টিকিয়ে রাখার চেষ্ঠা চলেছে (দেশ, কোলকাতা, জুন ২২, ১৯৯১)।” সেই মিথ্যাবাদী উগ্র মুসলমান রাজনীতির গভীর চক্রান্ত সিন্ধু প্রদেশে ৭১১ সালে ধবংসযজ্ঞ কেন? দক্ষিন এশিয়ার যাদুঘরসমূহ, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, আফগানিস্তানের বামিয়ান পর্বতমালা, পাকিস্তানের ডায়ামার ভাসা বাঁধ, রাজশাহীর পাহাড়পুর এবং নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বরে আবিস্কৃত হলো লক্ষ লক্ষ বুদ্ধমূর্তি।
ভারত সরকার কর্তৃক ইংরেজী ভাষায় মূল্যবান “দি ওয়ে ওব দি বুদ্ধ” শীর্ষক গ্রন্থে গৌতমবুদ্ধের আগের (১) কনকমুনি বুদ্ধ এবং (২) কাশ্যপবুদ্ধের নাম সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে সগৌরবে বিরাজমান। আনন্দবাজার পত্রিকার (সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) মতে, “রামায়নের আদি হিসাবে তাঁহাদের কেহ কেহ প্রাচীনতর ভারতীয় কাহিনীর যথা: “দশরথ জাতক” (জাতক নম্বর : ৪৬১) এর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়াছেন। … সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির। তাঁহারা কি জানেন, হিন্দুর কাছে অতি পবিত্র পুরীর মন্দিরের প্রাক্ ইতিহাস সম্পর্কে কানিংহাম কিংবা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের কী অভিমত? তাই বলিতেছিলাম, অযোধ্যা একটি বৃহৎ প্রশ্ন বটে, কিন্তু নিতান্তই মনগড়া এক নির্বোধ প্রশ্ন।”
এই প্রসঙ্গে ইহা ও বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে, সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের মতে, (কলিকাতার দেশ পত্রিকায় ৪ মে, ২০০১, পৃষ্ঠা, ১৩) “হিন্দু মন্দিরের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকা বৌদ্ধ উপাসনা (বৌদ্ধদের তিরুপতি বালাজী মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির) গৃহগুলি ও কি অত:পর একই যুক্তিতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বৌদ্ধদের হাতে? বস্তুত, ইতিহাসের সমস্ত অসংগতির ক্ষতিপূরণ বর্তমানে দাবী করার রীতি এইভাবে স্বীকৃত হতে থাকলে ‘বর্ণ হিন্দু’ আধিপত্যহীন হিন্দুধর্মে ধ্বজাধারীদেরও সুনিদ্রা সুনিশ্চিত থাকার কোনও কারন আদৌ নেই।” একে বলা হয় হিন্দুধর্মের সহনশীলতার বকওয়াস। বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধদের ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম হিন্দু ধর্ম! রাম মন্দির আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় ১৯৯২ সালে ৬ই ডিসেম্বর প্রায় দুই হাজার অপাপবিদ্ধ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল লালকৃষ্ণ আডবাণীসহ হিন্দু রাজনীতিবিদের বকওয়াস রাজনীতির জন্যে। হিন্দু রাজনৈতিকগণ বৌদ্ধদের তিরুপতি বালাজী মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির দখল করার পর গৌতমবুদ্ধকে হিন্দু রাজনীতির ভগবান বা অবতার বলে বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু রাজনীতি তিলে তিলে কিডন্যাপ করেছেন। হিন্দু মৌলবাদী সেনাবাহিনী বেঈমানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সন্ন্যাসীর রুপ ধরে শত শত বছর পর্যন্ত ত্রিশূল দিয়ে সর্বত্র ভারতীয় বৌদ্ধগণকে হত্যা করেছে।
কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা প্রদোষে প্রাকৃতজন ‘এই উপন্যাসটি সম্পর্কে বলছেন, “একসময় শেখ শুভদয়া নামে একটি সংস্কৃত বই হাতে আসে। কেউ বলেছে সেন রাজত্বের পরপরই ওটা লেখা হয়েছিল। শেখের শুভ উদয় এই অর্থে। শেখ মানে মুসলমান। ওই বইয়ের মধ্যে কিছু কিছু গল্পের মতো পেয়েছি। যেমন একটা দৃশ্য ওখানে পেয়েছি যে অশ্ব বিক্রেতারা নৌকায় চড়ে অশ্ব বিক্রি করতে এসেছে। অশ্ব বিক্রি হয়ে গেছে। উপন্যাসটি লেখার চিন্তাটা এ কারণেই এসেছিল যে দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রান্তে মুসলমানের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ কী?”
এমনকি রাজা লক্ষন সেনের সভাকবি উমাপতি ধর পরে বখতিয়ার খিলজির সভাকবি হলেন কেন? ইহাই বাংলাদেশে রাষ্ঠ্রধর্মের ট্রাজেডি । মীরজাফরের সাথে ইংরাজ শাসদের চক্রান্তের মতো সেন রাজার মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়, Hindu Political Conspiracy to destroy Buddhism in India, এবং প্রাচীন বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন (প্রসঙ্গত : কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা প্রদোষে প্রাকৃত জন)। তূর্কিশাসক সন্ত্রাসী বক্তিয়ার খিলজী এবং সেন রাজার মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র প্রাচীন বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেছিলেন।
আটশত বছর পর চীন ও জাপানের দুই বিলিয়ন ডলার এবং ভারত সরকারের সাহায্যে দুইহাজার আঠারো সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাস শুরু হয়েছে। দুঃখের বিষয় এই যে অমর্ত্য সেন উচ্চশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষা প্রশাসক হয়েও বিশ্ব জনতার আকুল আশা অনন্ত পিপাসা ধ্বংস করতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি কোটি টাকা বিভিন্নভাবে পকেটেস্থ করেছে। ১২০২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয় করেছিলেন! রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র এবং বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! রাতারাতি ইতিহাস তৈরী হয় না। এমনকি রাজা লক্ষন সেনের সভাকবি উমাপতি ধর পরে বখতিয়ার খিলজির সভাকবি হলেন কেন? ইহাই বাংলাদেশে রাষ্ঠ্রধর্মের ট্রাজেডি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে বাংলার বৌদ্ধগণ ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন।
জনতার প্রশ্ন : ভারতে আল্লাহ উপনিষদের আলোকে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা অন্যায় ও অমানবিক নয় কি? আনন্দবাজার পত্রিকার (সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) মতে,..” সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির। “এয়োদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে তুর্কি সন্ত্রাসী বখতিয়ার খিলজি বিভেদ বিদ্বেষে বাংলাদেশে বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ করছে!
মানবাধিকারের অস্তিত্বের আলোকে তুর্কি মুসলমানদের মানবতায় বিভেদ বিদ্বেষের রাজনীতি বৌদ্ধদের হাত থেকে বৌদ্ধ দেশ (Afghanistan, Pakistan, India, Bangladesh, Malayasia and Indonesia) এবং আফগানিস্তানের বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি কেড়ে নিল! সুদূর আরব থেকে এসে ৭১১ সালে মোহাম্মদ বিন কাশিম বিভেদ বিদ্বেষে সিন্ধু প্রদেশে দখল করে নিল! ইসলাম ধর্মের নামে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় বেহায়া Reporter ফিরোজ মান্না বিভেদ বিদ্বেষের অন্ধ সা¤প্রদায়িকতায় গৌতমবুদ্ধকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে (২৪ এপ্রিল (২০১৭)!
হিন্দুরাজনীতি বৈদিক পন্থীরা মিথ্যা ইতিহাস বানিয়ে বৌদ্ধ সভ্যতাকে গ্রাস করে ফেলেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ত্রিপিটকের পালি বর্ণমালাকে ব্রাহ্মী বর্ণমালা করেছিল! ডাক্তার কে যমানাদাসের লেখা ‘তিরুপতি বালাজি ওয়াজ এ বুদ্ধিষ্ঠ স্রাইন’ শীর্ষক মহাগ্রন্থে লেখা আছে, “আসলে এটি একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি। ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম পতনের সময় হিন্দুরা স্রেফ গায়ের জোরে বিহারটিকে দখল করে নেয়। পুরীর (উড়িষ্যা) জগন্নাথ দেবের মন্দির ও আসলে বুদ্ধ মন্দির। স্যার যদুনাথ, নগেন্দ্রনাথ বসু, ডঃ ভাও লোকান্ডের উদ্ধৃতি ও নৃতাত্বিক প্রমাণাদিসহ ড. যমানাদাস হিন্দু ধর্মের সহনশীলতা এই বহু কথিত গুণটিকেই কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ ঘটানো ও ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে নাগরিক উদ্যোগ জোরদার করা দরকার! হিন্দুত্ববাদীদের বুদ্ধমূর্তি চুরি এবং ‘তিরুপতি বালাজি বৌদ্ধ বিহার দখল প্রসঙ্গ! আইনের শাসনে হিংস্র ত্যাঁদড় হিন্দুত্ববাদীরা চোর এবং বৌদ্ধদের! তিরুপতি বালাজি সোনালী বুদ্ধমূর্তি (তিরুপতি মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশ) চুরি করেছে
২০১৭ সালের ২৯শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের সময় কানাডার ফ্রান্স ভাষা নিয়ন্ত্রিত কুইবেক শহরের জনঅরণ্যে জনৈক শ্বেতকায় সন্ত্রাসী যুবক তিনটি বন্দুক সাথে নিয়ে পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করে এবং মর্মন্তিকভাবে নির্বিচারে গুলি করে প্রার্থনারত ছয়জন মুসলমানকে হত্যা করেছে এবং সাত জন নির্মমভাবে আহত হয়েছে। এই যুগধর্ম লাঞ্চিত আলকায়দার হামলা এবং মহানবীর (সা:) ব্যঙ্গ ডেনিশ কার্টুনে মনে হয় স্বার্ধান্ধ ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকে সোনার পাথরবাটির ব্যবসায় খৃষ্ঠান ও মুসলিম উগ্র ধর্মীয় ও বর্ণবাদী জঙ্গিপনার ডোজ কাউন্টার ডোজ, তখন কি কোনও ভরসা আসা সম্ভব? উক্ত অমানবিক বীভৎষ মর্মান্তিক দুঃখজনক ঘটনায় মনে পড়ে, “ইসলামোফেবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষ” প্রকোপ কী মারাত্মক!
কোন হিন্দু মন্দিরে বুদ্ধ পূজা হয় না, তবু ও হিন্দু রাজনীতি গৌতমবুদ্ধের বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দির দখল করেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ইচ্ছা করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৌদ্ধ বাড়ীসহ পুরানো বৌদ্ধ শহর (বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ , দেশ, ৪ মে ২০০১ পৃষ্ঠা ১২ কলকাতা)! হিন্দুগণ বুদ্ধপূজা না করে ও হিন্দুরাজনীতির পান্ডাগণ গৌতমবুদ্ধের পূত পবিত্র ধ্যানভূমি বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির দখল করে দৈনিক হিন্দুদের বিবাহ অনুষ্ঠান সহ শিবলিঙ্গের পূজা সকাল বিকাল বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে করার জন্যে গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুমার্কা বিষ্ণুর নবম অবতার বানিয়ে মিথ্যা ইতিহাস রচনা করেছে। হিন্দু রাজনীতির হাতে গৌতমবুদ্ধের পূত পবিত্র ধ্যানভূমি বুদ্ধগয়া এবং “রাশি রাশি বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস করে হিন্দু মন্দিরে বদলানো হয়েছিল (সম্পাদকীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩ আগষ্ট, ১৯৯৩) দক্ষিন এশিয়া জুড়ে।”
লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!