মণিজিঞ্জির সান্যাল : “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান”
সত্যিই তাই, আমরা তো এক-ই বৃন্তে দুটি কুসুম।
কবি নজরুলকে স্মরণ করে প্রতিমুহূর্তে বলতে ইচ্ছে করে হে কবি তোমার মতো করে বিশুদ্ধ একটা মন নিয়ে যদি আমাদের সকালটা শুরু হয়, আর রাতটাও শেষ হয় সেই এক-ই অনুভূতি নিয়ে, তাহলে আমাদের মূল্যবোধটাই যেন এক অনন্য রূপে ধরা পড়ত আমাদের জীবনবোধের প্রতিটি পরতে পরতে। জীবন দর্শন তাহলে আমাদের কাছে এসে বলত “তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।”
ঈদ মানেই তো খুশির জোয়ার, ঈদ মানেই তো উৎসবের রেশ, ঈদ মানেই তো সম্প্রীতির বন্ধন। বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি, তা ধর্মীয় হোক বা লোকজ উৎসব। চিরায়ত উৎসব উদযাপনের পর আবার নতুন নতুন উপলক্ষ খুঁজে উৎসবের মিছিল বড় করতে পছন্দ করে। ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা হোক বা ঈদ, সবকিছুতে সানন্দে অংশ নেয় ধর্ম নির্বিশেষে সব আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধুরা। আবহমান কালের বাঙালি ধর্মীয় রক্ষণশীল চিন্তা দিয়ে নিজেকে সংকীর্ণ করেনি। আর লোকজ উৎসব যা কিছু, ঝরনা ধারার মতো উৎসাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।
সারা বছরে তো উৎসব লেগেই আছে, কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠে ভালোবাসার নিজস্ব বন্ধন, পরস্পরের আনন্দের ছোঁয়ায় আমাদের মন ভরে ওঠে, মেতে উঠি মনের আনন্দে। বছরে দুটো ঈদ, দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পুজোয় যে অতিমাত্রায় উৎসাহ উদ্দীপনা হিন্দু -মুসলমান সবার মাঝে, তাতে বোঝা কঠিন, কোনটা কার উৎসব। অন্যদিকে যেকোনো উৎসবে অনেক সময় দায?িত্ব ও কর্তব্য বেশি করে সামনে এসে দাঁড়ায়। এই সব উৎসবগুলোর ভূমিকা অনেকক্ষেত্রেই সবার কাছে কিন্তু সমান নয় তাই। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নিজের পরিবার বা আত্মীয় স্বজনদের জন্যে নতুন জামা কাপড় বা উপহার দেবার রীতি আছে। তাই অভাবের সংসারে অনেকে-ই ইচ্ছে থাকলেও অনেক ইচ্ছে পূরণ করতে পারেন না। তাই আনন্দের রেশটা একটু হলেও তা ফিকে হয়ে যায় কিভাবে কখন। তবুও সাধ্যমত নতুন কিছু একটা কেনার চেষ্টা করে থাকেন প্রায় প্রত্যেকেই। এসবের ওপরে গিয়েও মানুষ একে অপরের প্রতি শুভকামনা জানাতে ভোলেন না কখনো। অনেক অভাবী পরিবার আবার দেখেছি পরিবারে অভাব থাকলেও এই উৎসবের দিনে কোন কিছুর কমতি থাকে না।
রোজার ঈদে চাঁদের রাতে ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে একজন চাচা আসতেন দাওয়াত দিতে। ঈদের দিন ঘুম ভাঙতেই আমার বাড়ির পাশেই সেলিম চাচার বাড়িতে যেতাম আমরা ছোটরা। দুপুর পর্যন্ত ওখানেই কেটে যেত আমাদের। সেলিম চাচার স্ত্রী পারভীন চাচির হাতের দারুন সব রান্নার স্বাদ যেন এখনও জিভে লেগে আছে। পারভীন চাচির মেয়ে সালমা আমাদের দারুণ বন্ধু ছিল। আমাদের জন্য স্পেশাল সব খাবারের ব্যবস্থা হতো। আমাদের এক বন্ধু মাংস খেত না বলে ওর জন্য আলাদা একটা পদ হত। পরের দুদিন আরো দুই বন্ধুর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া আনন্দ হতো। আমরা বন্ধুরা তার পরের দিনও বিকেলে নাচ-গান হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দের জোয়ারে ভেসে যেতাম । ঈদ যে আমাদের কোন উৎসব নয় এ কথা একবারও মনে হয়নি, বরং আমাদের অপেক্ষা ছিল অন্যরকম; কখন রোজা শুরু হবে।
বাংলাদেশ থেকে আসা একটি পরিবারের সাথে পরিচয় হতে পেরে আমরা সত্যিই জীবনের মানে খুঁজে পেতাম এবং তাদের জীবনের ফেলে আসা দিনের কথা শুনে অবাক হয়ে যেতাম, বিশেষ করে ঈদের এই বিশেষ দিনে। বড়রা গল্প শোনাতেন আর আমরা মন দিয়ে সেই গল্পের রস আস্বাদন করতাম। সেই সব দিনগুলো ছবির মতো ভেসে উঠতো আমার মানসচোখে। আমাকে গল্প শোনাতো জাসমিন। কি সুন্দর নাম, ছোট্ট মেয়ে জাসমিন। রোজা শুরু হতেই ইদের জন্য অপেক্ষা আর দিন গোনা শুরু। ছোট্টবেলায় দিন কেটেছে ওর প্রকৃতির সাথে, খেলার সাথীদের সাথে আনন্দ ফুর্তি করে।
আসলে গ্রাম হচ্ছে মানুষের শিকড়। ঈদ ঘিরে মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে ফেরে। বছরের ক্লান্তি ভুলে প্রিয় মানুষের সাথে কিছু সময় অবসর কাটানোর জন্যে মানুষের কি নিরন্তর চেষ্টা। মেঘনা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে তা উপলব্ধি করতেন। ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই শহর থেকে নৌকো ও লঞ্চের মাধ্যমে গ্রামে আসতেন সকল শ্রেণীর মানুষ। গল্প শুনতে শুনতে আমি যে কখন পৌঁছে গেছি সেই মেঘনা নদীর পাড়ে, যেন আমিও সব ছেলে মেয়েদের সাথে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখছি। জাসমিন আমাকে শোনায় তার ছেলেবেলার এমন কত গল্প। বাড়ির পাশেই ছিল একটা ছোট্ট পুকুর। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার জন্য সেই পুকুর পাড়ে সবাই ভিড় করত।
আসলে ঈদ মানেই হল খুশি, ঈদ মানে আকাশে বাতাসে আনন্দের বন্যা, ঈদ মানে আনন্দ।
“প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে, বাঁধন খুলে দাও দাও দাও, ভুলিব ভাবনা, পিছনে চাব না, পাল তুলে দাও, দাও, দাও, দাও”
ঈদ মানে মায়াবী রাত।
“সেদিনের সোনা ঝরা সন্ধ্যায় আর এমনি মায়াবী রাত মিলে…”
ঈদ মানে একটা সুন্দর মুহূর্ত।
“একি অপূর্ব প্রেম দিলে বিধাতা আমায়।”
চোখের সামনে ভেসে উঠছে একঝাঁক ছেলে মেয়ের কৌতূহলী চোখ। কখন চাঁদ উঠবে আর কে কার আগে তা দেখবে। আসলে সেই চাঁদ-ই তো বয়ে আনবে আনন্দের সবটুকু বার্তা। সেই আনন্দের মধ্যেও যেন অনিশ্চয়তার বীজ। চাঁদ আজ উঠবে? না আগামীকাল? হঠাৎ করে চাঁদ উঠতেই যে সবার প্রথমে দেখল সে আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠলো “ওই যে ওই যে চাঁদ উঠেছে।”
তারপরে শুরু হলো আনন্দের মিছিল। এক, দুই, সাড়ে তিন রাত পোহালেই ঈদের দিন। স্লোগানে মুখরিত, গ্রামের রাস্তা দিয়ে মিছিল করছে পাড়ার ছেলেরা-মেয়েরা। রেডিওতে ভেসে আসছে গান। মসজিদের মাইকে ভেসে আসছে ঈদ মোবারক ধনী ও নামাজের সময়সূচী।
ফেলে আসা দিনের গল্প শোনাতে শোনাতে জাসমিনের চোখে দেখতাম জল ভরে উঠেছে। জাসমিনের মা-ও গল্প শোনাতেন ঈদের আগের রাতের, উত্তেজনায় ঠিকমত ঘুমাতে পারতেন না, সারারাত সেই কি উন্মাদনা, হইচই। গল্প শুনতে শুনতে আমরাও কখন যে ঈদ উৎসবে সামিল হয়েছি তা বুঝতেই পারিনি। আসলে কিছু কিছু উৎসবে শুধু যে আনন্দের ছোঁয়া থাকে তা নয়, কিছু উৎসবে থাকে আন্তরিকতা স্পর্শ, মায়া-মমতা, অকৃত্রিম ভালোবাসা, আনন্দঘন পরিবেশ, সামাজিক বন্ধন আরো কত কি। আমাদের বাঙ্গালীদের সবকটা উৎসবের মধ্যে আছে পারিবারিক মেলবন্ধনের ছোঁয়া। বিবাহিত মেয়েরা, এমনকি যেসব ছেলেরা বা মেয়েরা বিদেশে থাকেন তাঁরাও এই উৎসবের সময়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেন দেশে ফিরতে, পরিবার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় সকলের সাথে একসঙ্গে সময় কাটাতে।
হিন্দুদের বিজয় দশমীর মত এই উৎসবেও বন্ধুদের সবার সঙ্গে কোলাকুলি করে থাকেন পরস্পর। নিষ্ঠা সহযোগে বেশিরভাগ মানুষই পালন করে থাকেন যাবতীয় আচার। পরিবারের সবার সাথে পাঞ্জাবি, পায়জামা পরে, জায়নামাজ হাতে নিয়ে ঈদগাহে যান। ঈদগাহের বাইরে বসে সাময?িক ঈদের মেলা। নানান রকম জিনিস নিয়ে এই মেলার আয়োজন। ইমাম সাহেব যখন নামাজ শুরু করেন তখন সবাই দল বেঁধে নামাজে দাঁড়ায়। নামাজ শেষে এখনো নিষ্ঠা সহকারে এই নিয়ম নীতি রীতি পালন করা হয়, যার মধ্যে থাকে ভালোবাসার ছোঁয়া, শ্রদ্ধা এবং একনিষ্ঠ ত্যাগ।
প্রতিটি অনুষ্ঠানের মূল বিষয়-ই হল ভক্তি শ্রদ্ধা আর আরাধনা, আমার মনে হয় যেকোন বিষয়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। আমরা সবাই মানুষ, হিন্দু মুসলমান এই শব্দগুলো আমাদের জীবনে একটি মোড়কমাত্র, আসল হচ্ছে হৃদয়। দিনের শেষে হিন্দু, মুসলমান এবং আরো অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়াই জীবন। পারস্পারিক মেল বন্ধনের সূত্র এই অনুষ্ঠানগুলোর হাত ধরেই। প্রতিটি অনুষ্ঠান তা ধর্মীয়-সামাজিক যাই হোক, একসাথে হাতে হাত রেখে চলাই তো জীবনের মূলমন্ত্র। তাই শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে তো আমরা নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারবো না। দুর্গাপুজোর সময় মুসলিম জনগণের অকুণ্ঠ সহযোগিতা বা ঈদের সময় হিন্দুদের একাত্মতা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজর সৃষ্টি করে।
হিন্দু মুসলমান হচ্ছে শুধুমাত্র একটি আবরণ, একটি ধর্মীয় পরিচয় মাত্র কিন্তু আমরা সবাই তো মানুষ। উৎসব হচ্ছে সর্বজনীন তাই উৎসবে সবাই একসাথে শামিল হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা সব ধর্মের মানুষকে উৎসবের পর আপন করে নেব এটাই তো প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা কিন্তু কিছু মানুষ দুটি বিষয়কে যখন গুলিয়ে ফেলেন তখন সমস্যা হয় কিন্তু অপশক্তি কখনোই সফল হবে না। পবিত্র রমজান শেষে ঈদের আনন্দ যেন মনের পাশাপাশি আকাশ বাতাসকেও মুগ্ধ করে তোলে।
সময়ের সাথে সাথে আনন্দের বা বিনোদনের রূপটাও বদলেছে। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে আলম মুসাওয়ার নামের এক শিল্পী বা একদল শিল্পী ঢাকার ঈদের মিছিলের সিরিজ ছবি এঁকেছিলেন। সে সময়ের ঈদের বিনোদনের অন্যতম অংশ ছিল মেলা। তাতে ঢাকার সব পেশার মানুষ এবং সব ধর্মের মানুষ অংশ নিত। ফলে বলা যায়, এই মেলাগুলো এক ধরনের সর্বজনীন রূপ নিত। এসব মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে খেলনা, খাদ্যবস্তু আরো নানান রকম সামগ্রী বিক্রি হতো ।
এখনও এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় চলে জমজমাট ঈদ কেনাকাটা। এ কেনাকাটার উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে মেলা। ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে চলে জমজমাট ঈদ মেলা। জামদানি মেলা, তাঁত বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্প মেলা, ঈদ আনন্দ মেলা, বর্ষা মেলা ইত্যাদি বিভিন্ন নামে চলে এ ধরনের মেলা। দেশি-বিদেশিসহ নানা ব্র্যান্ডের পণ্যের সমাহার এই মেলা প্রাঙ্গণে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার অভিপ্রায়ে বিভিন্ন স্টলগুলি সেজে ওঠে তাদের নিজস্ব রং বেরঙের সাজসজ্জায়। সব বয়সের ক্রেতা সমাগম লক্ষ করা যায় এইসব মেলা প্রাঙ্গণে।
বাংলাদেশে এই ঈদকে কেন্দ্র করে খুশির জোয়ার নামে মানুষের ঘরে-ঘরে। ঈদের জন্য জামদানি শাড়ি কেনার সুযোগ করে দিতেই আয়োজন করা হয় জামদানি মেলা। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে মেলা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই মেলার সবার জন্য উন্মুক্ত। জলপাড়, পান্নাহাজার, বলিহার, শাপলা ফুল, কলমি লতা, চন্দ্রপাড় ও ঝুমকাসহ, বাহারি নামের এসব শাড়ির পসরা নিয়ে বসে রূপগঞ্জের জামদানি কারিগররা। জামদানি পন্যে সাজানো হয় নানা রং, চমৎকার বুনন ও কারুকাজের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মানিব্যাগ, রুমাল, হাত ব্যাগ ও টেবিল ক্লথ। বাংলাদেশের মতো ভারতবর্ষেও এমন উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা রকম রং বেরঙের মেলা বসে।
এই ধরনের মেলা যে কোন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয়। মেলার আনন্দে মানুষ যখন খুশির উৎসবে মেতে ওঠে, তখন অতি দরিদ্র মানুষগুলির জীবনের কথা কে আর ভাবে! যাদের জীবন দিন আনি দিন খাই তাদের সকাল সন্ধ্যার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না, বৈচিত্র্য থাকে না উৎসবের দিনগুলোতে। কোন উৎসবের ছোঁয়াই তাদের বর্ণহীন জীবনকে বর্ণময় করে তুলতে পারে না।
ফুটপাতের বাচ্চারা ওই একই দিনে ফুটপাতেই খেলা করে। তাদের মায়েরা বাচ্চাদেরকে কিভাবে খাবার তুলে ধরবে তাই নিয়েই তাদের চিন্তা, তবুও সন্ধার সময় নিজেরাই নিজেদের আলো খুঁজে নেয়। একটা গানের আওয়াজকে নিজেদের সঙ্গী করে, আর সেই ছন্দের ঘেরাটপে মনের আনন্দে নাচতে থাকে। এই নাচের মধ্যে দিয়েই হয়তো তারা তাদের জীবনের সমস্ত বিস্বাদকে ভুলে যেতে চায়, ঈদের আনন্দকে এভাবেই ওরা ভাগ করে নেয় পরস্পর। জীবনের মানে এর মধ্যেই হয়তো খুঁজে পেতে চায় ওরা।
জীবনের আনন্দ কে না চায়। প্রত্যেকটা মানুষই বাঁচতে চায় একটা উজ্জ্বল দিনকে সঙ্গী করে। ছেলে -মেয়ে পরিবার নিয়ে তারাও আনন্দের রূপকে দুচোখ ভরে দেখতে চায়। কেউ পায় – কেউ না পেয়েও সে আনন্দের অংশীদার খোঁজে। কত মানুষ উৎসবের দিনগুলোতে বাড়িঘর, পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির পেছনে কতো টাকা খরচ করে, অথচ অভুক্ত একটি বাচ্চার হাতে একটা সন্দেশও তুলে দেয় না। অনেক পরিবার আছে তারা এই উৎসবকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে অথচ দরিদ্র অসহায় বাচ্চার হাতে একটা নতুন জামা কিনে দিতে মন চায় না, টেলিভিশন চ্যানেলে চ্যানেলে অনেক সময়েই এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কখনো সহানুভূতি দেখিয়ে অসহায় মানুষগুলোর জীবনকে তুলে ধরা হয়েছে কিন্তু তাদের হাতে একটা নতুন পোশাক তুলে ধরার কথা হৃদয় দিয়ে কেউ অনুভব করেনি কখনো।
বাংলাদেশের চিত্র আরো করুন সেখানে একজন কোটিপতির পাশের জনই শূন্যপতি। এই সমস্ত কোটিপতি যদি শূন্যপতিদের জন্য এই ঈদের সময় কিছু ভালো পোশাক আর তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাহায্য করতেন তাহলে এই উৎসবগুলোর রং একেবারে একটা আলাদা রকম মাত্রা পেত। ঈদ মানে যেহেতু আনন্দ তাই মহান উৎসবে যেন মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ না থাকে। ঈদের আনন্দ একেক জনের কাছে যেন এক একরকম বার্তা না দেয়। প্রত্যেকে যেন সকলের মধ্যে তাদের সবটুকু আনন্দ মিলেমিশে ভাগ করে নেয়। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী সকলকে নিয়ে এই ঈদ উৎসবে যেন ঝলমল হয়ে ওঠে।ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল মানুষ সব রকম ভেদাভেদ ভুলে এই ঈদ আনন্দে যেন উপভোগ করার সুযোগ পায় তাহলেই এর সার্থকতা।
মণিজিঞ্জির সান্যাল: কথা সাহিত্যিক, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত