অনলাইন ডেস্ক : ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সরকারের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ দেখিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের উপর টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে পুলিশ। এর আগে দেশটিতে বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর চার দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।
এ সপ্তাহের শেষের দিকে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী হিসেবে একরেম ইমামোগলুর নাম ঘোষণা করার কথা ছিল। তুরস্কের রাজনীতিতে সেক্যুলার দল হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) নেতা তিনি।
এর মধ্যেই বুধবার দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তার অভিযোগে আরো ১০৫ জনের সঙ্গে ইমামোগুলোকেও আটক করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেয়ার অভিযোগে আরো অনেককে আটক করে সরকার। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ।
দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ওজগুর ওজেল বলেছেন, ইস্তাম্বুল জুড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। সিটি হলের সামনে বিশাল জনসমাগমকে সিএইচপি নেতা বলেন, রাস্তা এবং সেতু বন্ধের কারণে বিক্ষোভকারীরা দেশের বিভিন্ন শহরে আলাদা আলাদা জায়গায় জড়ো হয়েছে। এছাড়া সব লোককে এক জায়গায় জমায়েত হতে বাধা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গ্রেপ্তারের একদিন আগে ইস্তাম্বুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইমামোগলুর ডিপ্লোমা ডিগ্রি বাতিল করে দেয়। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী দেশের সর্বোচ্চ পদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। কার্যত প্রেসিডেন্টের পদে লড়াইয়ে অযোগ্য ঘোষণা করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ইমামোগলু বলেছেন, তিনি ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবেন।
এদিকে শুক্রবার এরদোগান বলেছেন, রাস্তার এমন বিক্ষোভ সহ্য করবে না তার সরকার। একইসঙ্গে তিনি ইমামোগলুর রিপাবলিকান পিপলস পার্টিকে (সিএইচপি) দুর্নীতি এবং “সন্ত্রাস” সংগঠনের সাথে যোগ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন।
এরদোগান বলেন, “ইস্তাম্বুলে একটি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে রাস্তায় অশান্তি ছড়ানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি এটা জানাতে চাই যে, আমরা মুষ্টিমেয় সুবিধাবাদীকে তাদের লুণ্ঠন পরিকল্পনা রক্ষার জন্য তুরস্কে অশান্তি সৃষ্টি করতে দেব না।”
সরকারের সমালোচকরা ইমামোগলুর গ্রেপ্তারকে তুরস্কের পরবর্তী নির্বাচনে এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছেন। তারা বলছেন, বিরোধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে সরকারী কর্মকর্তারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জোর দিয়ে বলেছেন, তুরস্কের আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে।
ইস্তাম্বুল থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক আকসেল জাইমোভিচ বলেছেন, ইস্তাম্বুলের পৌর ভবনের বাইরে বিক্ষোভে “অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র” অংশ নিয়েছেন। তারা ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রত্যাহার সিদ্ধান্তেরও প্রতিবাদ করছেন। বিক্ষোভকারীরা জাইমোভিচকে বলেছেন, “এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য যেকোনও একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করা নয়, বরং তুরস্কের সমাজের ‘পদ্ধতিগত অবিচার’ সম্পর্কে একটি বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া।”
বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যমতে, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বুধবার ইস্তাম্বুলে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দেশটির ৮১টি প্রদেশের ৩২টিতে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি ইমামোগলুর গ্রেপ্তারকে “অভ্যুত্থান” হিসেবে বর্ণনা করেছে। এদিকে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৮৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তুর্কি মিডিয়া জানিয়েছে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া বলেছেন এখন পর্যন্ত ১৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এছাড়া অনলাইনে বিক্ষোভের পক্ষে পোস্ট করায় পুলিশ আরও ৫৪ জনকে আটক করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন ইমামোগলু। ১৯৯৪ সাল থেকে ওই নগরীর ওপর ক্ষমতাসীন একে পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু ইমামোগলুর বিজয়ের মধ্যদিয়ে ২৫ বছরের সে আধিপত্যের অবসান হয়। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতিপক্ষ মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই মেয়রকে আগেভাগেই জেলখানায় পাঠানো হলো।
সূত্র : আল জাজিরা