Home আন্তর্জাতিক ইসরায়েলের ‘দায়মুক্তি চলতে পারে না’: জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান

ইসরায়েলের ‘দায়মুক্তি চলতে পারে না’: জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান

অনলাইন ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় আট মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এমন অবস্থায় ইসরায়েলের ‘দায়মুক্তি চলতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্টিন গ্রিফিথস। একইসঙ্গে গাজার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

রাফায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনির হতাহতের ঘটনার পর এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। মঙ্গলবার (২৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান সোমবার দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে বাস্তুচ্যুত লোকদের শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা করে বলেছেন, ‘এ ধরনের দায়মুক্তি চলতে পারে না।’

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় মার্টিন গ্রিফিথস লিখেছেন, ‘গাজা থেকে আরেকটি ভয়ঙ্কর আপডেট পেলাম। গত রাতে রাফাতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু জীবন্ত পুড়ে মারা গেছেন।’

গাজায় ত্রাণ বিতরণে চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে গ্রিফিথস বলেন: ‘নানা প্রতিবন্ধকতা এবং তীব্র লড়াইয়ের কারণে আমরা এখনও কেরেম শালোম থেকে পণ্যগুলো নিতে পারিনি।’

গ্রিফিথস বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন: ‘এই ধরনের দায়মুক্তি চলতে পারে না। বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করুন। তাদের নিরাপদ জায়গা খোঁজার সুযোগ দিন। তাদের সাহায্য পেতে দিন।’

এর আগে রোববার রাতে গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরে বাস্তুচ্যুত লোকদের শিবিরে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। হামলায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২৫০ জন মানুষ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রোববারের ওই হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আরও শতাধিক মানুষ গুরুতরভাবে আগুনে পুড়ে গেছে, হাত-পা ভেঙ্গে, অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে।

গাজা-ভিত্তিক সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, রাফার তাল আল-সুলতানে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) লজিস্টিক ঘাঁটির কাছে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৮১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

Exit mobile version