অনলাইন ডেস্ক : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নের প্রস্তাব পাসে ব্যর্থ হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়তে পারে। এই ইসু্যতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের ডাকা অনলাইন সম্মেলনেও যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সংবাদসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, বিবিসি ২০১৫ সালে পরমাণু সমঝোতা সই হওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদে ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবের আওতায় আগামী ১৮ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে। যুক্তরাষ্ট্র দুই বছর আগেই পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেলেও দেশটি ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞা নবায়নের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে গত শুক্রবার ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ১১ দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল; আর প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট পড়েছে দুটি করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ডোমিনিকান রিপাবলিক প্রস্তাবটির পক্ষে এবং চীন ও রাশিয়া এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। বাকি কোনো দেশ ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি। শনিবার নিউ জার্সির বেডমিনস্টার রিসোর্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘ভোটের ফলাফল কী হয়েছে, আমরা তা জানি। তবে আমরা নিষেধাজ্ঞা নবায়ন করব, সামনের সপ্তাহেই আপনারা তা দেখতে পারবেন।’ নিরাপত্তা পরিষদে এভাবে হেরে যাওয়ার পরও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে মার্কিন মিত্রদের অবস্থান থেকে পরিষ্কার হয়েছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইসু্যতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র মিত্রহীন হয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু ইসু্যতে ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। গত কয়েক বছরে বারবার ইরানের ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। তবে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে বিভিন্ন কূটনীতিক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামনে হয়তো খারাপ সময় আসছে। তাদের এমন পদক্ষেপ যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। ওই কর্মকর্তা ইরান পরমাণু চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এদিকে, ইরান ইসু্যতে বিরোধ ঠেকাতে জরুরি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। আলোচনায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীন, জার্মানি এবং ইরানকে যোগদান করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা চুক্তি নিয়ে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। নিরাপত্তা পরিষদে তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বর্ধিতকরণ নিয়ে বিরোধ ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হোক, তা কেউ চায় না। সেসব এড়াতে আমরা একটি অনলাইন ভিডিও আলোচনার আয়োজন করতে পারি।’ কিন্তু ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, পুতিনের আমন্ত্রণে তার দেশ সাড়া দেবে না। এর আগে ইরানবিরোধী প্রস্তাব পাস করতে ব্যর্থ হওয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের। কিন্তু এই দায়িত্ব পালনে পরিষদ ব্যর্থ হয়েছে এবং এর কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না।’ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদে ওয়াশিংটনের বেআইনি আবদার প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পম্পেওর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়- নিরাপত্তা পরিষদসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে একক কর্তৃত্বের অধিকারী বলে মনে করে। অথচ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রমাণিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির প্রভাব আলগা হয়ে যাচ্ছে এবং তারা একঘরে হয়ে পড়েছে। এমনকি ইউরোপীয় মিত্ররা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করেনি। অন্যদিকে, ভেনেজুয়েলার পথে থাকা বিপুল পরিমাণ ইরানি জ্বালানি জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার মার্কিন বিচার বিভাগ বলেছে, ‘বিদেশি অংশীদারদের সহযোগিতায়’ চারটি জাহাজে থাকা প্রায় ১১ লাখ ব্যারেল জ্বালানি জব্দ করা হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করায় জ্বালানির এ চালান জব্দ করা হয়েছে বলে ভাষ্য ওয়াশিংটনের। তবে ভেনেজুয়েলায় ইরানের রাষ্ট্রদূত হুজাত সুলতানি ইরানি জ্বালানি জব্দের মার্কিন দাবিকে ‘অপপ্রচার’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।