অনলাইন ডেস্ক : ইসরায়েলে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর হামলার কারণে এখন তারা ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে নজর দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক চলে আসছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে হামাসকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে আসায় ইরানের ওপর ক্ষোভ বাড়ে ইসরায়েলের।
এ ধারাবাহিকতায় গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় কনস্যুলেট ভবনটি। হামলায় নিহত হন দেশটির ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) শীর্ষস্থানীয় দুই কমান্ডারসহ সাতজন সামরিক কর্মকর্তা। জবাবে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একযোগে তিনশ’র বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের ভূখন্ডে এর আগে আর কখনও সরাসরি হামলা চালায় নি দেশটি। এ হামলার জবাবে এবার ইরানে পাল্টা আঘাত হানার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসরায়েল। সব মিলিয়ে দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ দেখা দিয়েছে নতুন করে। ইরানে পাল্টা হামলা না করার জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের অন্যান্য পশ্চিমা মিত্ররাও।
এমন পরিস্থিতিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটয জানান, তিনি ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে ৩২টি দেশের কাছে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ চিঠির পাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, তিনি আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করছেন। অন্যদিকে ইইউয়ের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেলও বলেছেন, তার ব্লক এটি নিয়ে কাজ করছে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) মার্কিন অর্থমন্ত্রী ইয়েলেন বলেছেন, ‘আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা নেব। আমরা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আগে থেকে বলি না। তবে ইরানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন ব্যাহত করার সমস্ত বিকল্পই আমার টেবিলে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ইরানের তেল রপ্তানি এমন একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র যা আমরা টার্গেট করতে পারি। স্পষ্টতই, ইরান এখনও কিছু পরিমাণ তেল রপ্তানি করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা হয়তো আরও কিছু করতে পারি।’
ইয়েলেন বলেন, ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই আর্থিক নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ব্যবহার করছে। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি এবং সংস্থাকে লক্ষ্য করে আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞা প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন করার এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে সমর্থন করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করার কাজ করছে।
এদিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন কর্মসূচির পাশাপাশি তাদের বিপ্লবী গার্ড এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হবে। আমরা আশা করি, আমাদের মিত্র এবং অংশীদাররা শিগগিরই তাদের নিজস্ব নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করবে।’
অন্যদিকে ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বোরেল বলেছেন, কিছু সদস্য দেশ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর জন্য বলেছে। নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করার জন্য ইইউয়ের কূটনৈতিক পরিষেবার কাছে অনুরোধ পাঠানো হবে।