অনলাইন ডেস্ক : আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমলা হ্যারিসের সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটার এবং অ-মার্কিন স্থানীয়দের মধ্যে। ইউরোপের গণতান্ত্রিক কর্মীরা এমনটাই বলছেন।
ডেমোক্র্যাটস অ্যাব্রোড বা ডিএ’র মুখপাত্র অ্যামি পোর্টার একে ‘আশ্চর্যজনক ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হাতে নির্বাচনি লড়াইয়ের ব্যাটন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে জনগণের বিপুল সাড়া মিলেছে।
অ্যামি জানান, যে সংস্থা বিশ্বব্যাপী মার্কিন ‘ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করে, তারা পর্যবেক্ষণ করেছে, অসংখ্য নতুন ভোটাররা নিজের নাম নিবন্ধন করেছেন। অনেকেই প্রচারণায় সহায়তা করতে স্বেচ্ছাসেবী হতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, “স্থানীয় মানুষ, ফ্রান্সের মানুষ, অ-মার্কিন নাগরিকেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলছে, কমলা হ্যারিসকে নির্বাচিত করতে আমরা সাহায্য করতে চাই।”
তার মতে, এই ঘটনা অত্যন্ত বিরল।
বিদেশে আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে উদাসীনতা
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফেডারেল ভোটিং অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম অনুমান করছে, বিদেশে বসবাসকারী ২৮ লাখ আমেরিকান ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য। এই প্রোগ্রামের জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে তাদের মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট দিয়েছেন।
ডিএ বলেছে, ফেডারেল পোস্ট কার্ড অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন দিনে গত সপ্তাহের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বসবাসকারীদের নিবন্ধনের সংখ্যাটা তিন হাজারেরও বেশি বেড়েছে। এই প্রক্রিয়ায় যে কোনও দলের ভোটারদের নিবন্ধন করা হয়। তবে ডিএ বলেছে, তাদের নতুন সদস্যের সংখ্যাও সোমবার থেকে বুধবার তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে।
বিদেশি নাগরিকদের মার্কিন নির্বাচনী প্রচারে অর্থের অনুদান দেওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু ডেমোক্র্যাটস অ্যাব্রডে ঢেলে অনুদান দেওয়া হয়েছে। তার কথায়, “আমরা নিয়মিত অনুদান পাই, কিন্তু এটা ভাবনার বাইরে ছিল।”
ফিনল্যান্ডের ভূমিকা কী হবে?
২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেমোক্র্যাটস অ্যাব্রোড ফিনল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন ডানা ফ্রেলিং৷ তিনি জানান, নতুন নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এদের মধ্যে ফিনিশ নাগরিকেরা রয়েছেন। ন্যাটোর প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর ফিনল্যান্ড ২০২৩ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়। রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে দেশটির। তাই ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়টি মার্কিন-রাশিয়া কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ডানা ফ্রেলিং বলেন, “আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ন্যাটোর এই গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ককে কীভাবে দেখবেন, তার উপর আমাদের নিরাপত্তা নির্ভর করবে।”
এর আগে ফিনল্যান্ড আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কথায় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ক্রেমলিন ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি। ট্রাম্পের সেই ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়। কাজেই ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতা নিয়ে ফিনিশরা খানিকটা চিন্তায় রয়েছেন।
এদিকে অনেক বিশেষজ্ঞই পররাষ্ট্রনীতিকে কমলা হ্যারিসের অন্যতম শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছেন না।যদিও রাশিয়া সম্পর্কে তার মতামত স্পষ্ট করেছেন কমলা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে, ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করেছেন তিনি। মিত্রদের আশ্বস্ত করে ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন ‘ন্যাটোর প্রতি একনিষ্ঠভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
ডানা বলেন, টেক্সাসে তার ভাইয়ের মতো অনেক রিপাবলিকান কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
প্রবাসী রিপাবলিকানরা কী ভাবছেন
মাইক কুলবিকাস, একজন রিপাবলিকান ভোটার। কয়েক দশক ধরে ব্রাসেলসে থাকেন তিনি। স্থানীয় বিতর্ক সভায় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন মাইকেল। তার কথায়, “বেশিরভাগ রিপাবলিকান মনে করেন, যদি কমলাকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, তবে তাকে হারানো আরও সহজ হবে।”
তিনি যদিও স্বীকার করেছেন, “কমলা হ্যারিস একজন নারী। তিনি সংখ্যালঘু শ্রেণির প্রতিনিধি, সেটা কিছু ভোটারদের উপর খানিকটা জোরালো প্রভাব ফেলবে।”
তবে তিনি বিশ্বাস করেন, ‘এমন কোনও পরিবর্তন হবে না’ যা নির্বাচনের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য বদল ঘটাতে পারে।
তার কথায়, “ডেমোক্র্যাট সবসময় নিজেদের আলোতে রাখতে চাইবে। তবে এটা রাজনৈতিক খেলা, তাই এই মুহূর্তের পরিস্থিতি দেখে কোনও জরিপ কিছু বলতে পারে সেটা বিশ্বাস করি না।”
২০২৪ সালের নির্বাচন এবং ইউরোপ সম্পর্কে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মাইকেল বলেন, মানুষ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ সম্পর্কে এতটা উদ্বিগ্ন নয়। তারা কৌতূহলী। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে বড় কোনও পরিবর্তন আশা করেন না তিনি। তবে তার কথায়,, ইউক্রেন নীতি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।
তার কথায়, “ব্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জোটের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতা প্রমাণে ন্যাটো সদস্যদের আরও অনেক কিছু করে দেখাতে হবে, এটাই ছিল ট্রাম্পের অবস্থান। আর এটা একেবারে সত্যি।”
মাইকেল কুলবিকাস বিশ্বাস করেন, তাদের দলের সদস্যরা ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ভোটার। এই মুহূর্তে তারা ‘আগের মতোই উজ্জীবিত, হয়তো পরে আরও উজ্জীবিত হবেন’।
ডিএর অ্যামি পোর্টার জোর দিয়েছেন, বিদেশি ভোটাররা প্রমাণ করেছেন, তারা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তার কথায়, ‘জর্জিয়া এবং অ্যারিজোনায় বাইডেনের জয়ের ব্যবধান [২০২০ সালে] আন্তর্জাতিক ভোটের সংখ্যার তুলনায় কম ছিল’।
কয়েকটি স্টেটের (সুইং স্টেট) ফলাফল এদিকওদিক হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
ডিএ-এর বক্তব্য, “সারা বিশ্বজুড়ে, মানুষজন ফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা, অন-দ্য-গ্রাউন্ড রেজিস্ট্রেশন করে চলেছে। এটা শুধু ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিষয়ে নয়, এটা সেনেট, কংগ্রেস, ব্যালট এবং সমস্তকিছুর জন্য।” সূত্র: ডয়েচে ভেলে