অনলাইন ডেস্ক : আকস্মিক সামরিক আইন জারিকে ঘিরে সৃষ্ট অচলাবস্থার মাঝে দক্ষিণ কোরিয়ায় নাটকীয়তা যেন থামছেই না। অভূতপূর্ব পদক্ষেপে এবার পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সুও অভিশংসিত হয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংসদে আইনপ্রণেতাদের ভোটে অভিশংসিত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের ভাগ্যেও একই পরিণতি হলো।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মূলত ২০২২ সালের মে মাস থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন হান ডাক-সু। আর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের অভিশংসনের পর সম্প্রতি তিনি দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ এই পদক্ষেপ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির চলমান সংবিধানিক সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বিবিসি বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার দুই সপ্তাহ পরে দেশটি এবার তার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সুকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

শুক্রবারের ভোটাভুটিতে মোট ১৯২ জন আইনপ্রণেতা তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। যদিও অভিশংসনের পদক্ষেপ সফল করার জন্য ১৫১টির বেশি ভোটের প্রয়োজন ছিল।

চলতি মাসের ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসিত করার পর প্রধানমন্ত্রী হান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন।

মূলত দেশটিতে বর্তমানে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল হানের।

কিন্তু বিরোধী এমপিরা অভিযোগ করেছিলেন, তিনি ইউনের অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন। শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলার মধ্যে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে বিরোধীরা। সেখানে তারা বলেন, হান ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্রোহের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে বিশেষ তদন্ত এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং সাংবিধানিক আদালতের তিনজন বিচারকের নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই ধরনের কাজ একজন সরকারি কর্মকর্তার আইন সমুন্নত রাখা এবং জনগণের সেবা করার দায়িত্বের লঙ্ঘন।’

বিরোধী দল তাদের চেষ্টায় সফল হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিতীয় অভিশংসন দেখল। আর এর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো একজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হলেন।

হান তার পদ থেকে অপসারিত হলে তার জায়গায় অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মোক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে দেখা যেতে পারে।

মূলত পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির বর্তমান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাংবিধানিক আদালতের গঠন, যা ইউনকে অভিশংসনের সংসদীয় সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে কি না তা নির্ধারণ করবে। সাংবিধানিক আদালতে বর্তমানে তিনজন বিচারকের অভাব রয়েছে। আদালত বেঞ্চের ছয় সদস্য নিয়েই এগিয়ে যেতে পরবে। তবে এক্ষেত্রে একটি মাত্র ভোট বিপক্ষে পড়লেই তা ইউনকে পুনর্বহালের জন্য যথেষ্ট হবে।

বিরোধীরা চায় হান নয় সদস্যের বেঞ্চ পূরণের জন্য আরও তিনজন মনোনীত ব্যক্তিকে অনুমোদন দিন। কিন্তু তিনি এখনও এটি করতে অস্বীকার করে চলেছেন। মূলত এই বিষয়টি নিয়ে দেশটিতে অচলাবস্থা চলছে।