অনলাইন ডেস্ক : কানাডার টরেন্টো শহরের বাঙালি অধ্যুষিত স্কারব্রো এরিয়ার মর্নিং সাইট পার্কে ২৫ শে জুন -২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশন জিটিএ ইনক এর বনভোজন।

টরন্টো শহরে বসবাসরত সিলেটবাসী তথা জালালাবাদবাসিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বনভোজনের অংশ নিয়েছেন কানাডায় বসবাসরত বাংলা কমিউনিটির বাংলা ভাষাভাষী প্রায় হাজার দেড়েক বাঙালিরা।

মর্নিং সাইট পার্কে বনভোজন কমিটির কনভেনার সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল হাসান সাহানের সঞ্চালনায় প্রথমেই আব্দুল আলিমের কন্ঠে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রারম্ভিক কার্যক্রম শুরু হয়। ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ আখলাক হোসেন এর স্বাগত বক্তব্য এবং আকাশে বেলুন উড়িয়ে বনভোজনের উদ্বোধনী কার্যক্রম শুরু করেন কানাডা এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত সম্মিলিতভাবে পরিবেশনের মাধ্যমে। আনুস্টানিক শুরুর পর হতে সময় যত গড়িয়ে গিয়েছে মানুষের সমাগম ততোই বেড়েছে এক পর্যায়ে এলাকাটি যেন হয়ে উঠেছিল পুরো জালালাবাদময় সিলেটী আড্ডাস্থল।

শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে পুরুষ মহিলাদের সাথে সবচাইতে বেশি সমাগম হয়েছে এ শহরের সিনিয়র সিটিজেন সম্মানিত মুরব্বিদের। বনভোজনের প্রাণ হয়ে উঠেছিলেন শিশু-কিশোর এবং সম্মানিত মুরুব্বীরা। শিশুরা মেতে উঠেছিলো অসংখ্য রকমের খেলাধুলাসহ প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন ইভেন্টে এবং মুরুব্বিরা খুলে দিয়েছিলেন তাদের মনের দুয়ার; নস্টালজিক আড্ডায় শ্রোতা হিসেবে ছিলেন কৈশোর পাড়ি দেওয়া যুবকেরা এবং অন্যান্য বয়সী সকলেই। সকাল ১০টা থেকেই আসলে শুরু হয়েছিল পিকনিকের কার্যক্রম। খসরুজ্জামান চৌধুরী দুলু ভাইয়ের নেতৃত্বে বনভোজনের প্রধান আকর্ষণ আপ্যায়ন সেক্টর ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল প্রথমেই। জনাব সাইদুন ফয়সলের সার্বিক তত্ত¡াবধানে আয়োজিত বনভোজনের আহবায়ক জনাব কামরুল হাসান সাহান ও তাহার কো-কনভেনর সর্বজনাব এম আর আজিজ, শাকিল খান, মাশরুল হোসেন রিপন, ফুজেল আহমদ, সুমন আহমদ, সাইফুল মিয়া তাজুল, রেহান উদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান জুয়েল, আব্দুল হালিম, লাভলু আহমদ, সোহেল মিয়া, সেলিম আহমদ, জাহেদ ইসলাম; ইউনুছুর রহমান সোহেল, সুফিয়ান সিদ্দিক জনি, মাহিন মোহাম্মদ শাহরিয়ার। দফায় দফায় খানাপিনা ও আড্ডায় অনেকেই কল্পনায় নিজ মাতৃভ‚মিতে ফিরে যান। পিজাঁ থেকে শুরু করে চা, পান-সুপারী, জিলাপি, চানা (ছোলা), পিয়াজি, ঝালমুড়ি, তরমুজ, সাদাভাত, মোরগের রোষ্ট, সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস, খাসির মাংস দিয়ে বুটের ডালসহ আরও অনেক আয়োজন।

ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশন এই সন্মিলিত প্রচেস্টা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুরো ব্যবস্থাপনাটি সফলভাবে সম্পাদনা করা ছিলো ইউনাইটেড শব্দটির বাস্তব প্রতিফলন।

মাঠের কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র থেকে জুনিয়র পর্যন্ত প্রতিটি সদস্য এবং শুভাকাক্সক্ষীরা। আমাদের সম্মানিত মহিলারাও এগিয়ে এসেছিলেন সহযোগিতায়। খাবারের আয়োজন এর মধ্যে সবচাইতে আকর্ষণীয় ছিলো পিকনিক কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হাসান শাহান ভাইয়ের নেতৃত্বে খাবারের ভিন্নতা আনতে যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে সেখানে আবার প্রধান ভ‚মিকায় ছিলেন মিসেস সাহান। উনার নেতৃত্বে শুরু থেকেই ঝাল-মুড়ি চানা ভুনা থেকে শুরু করে জিলাপি! চমন বাহার এবং হাকিমপুরী জর্দা দিয়ে পান সুপারির বিশাল আয়োজন। আমাদের সংগঠনের সম্মানিত আহ্বায়ক মহোদয়ের স্ত্রীও নিয়ে এসেছিলেন তরমুজে বহর। বাচ্চাদের জন্য ছিল দশটির মত স্পোটিং ইভেন্ট। পিকনিক কমিটির কো কনভেনার এম আর আজিজ এবং তানভীর কুহিনুর এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় সবকটিই ইভেন্ট। উনাদের হাতে থাকা মাইকের ব্যাটারি ডাউন হয়ে গিয়েছিল কিন্তু উনারা ছিলেন আপন কন্ঠস্বরে অবিচল। সারাদিনব্যাপী সব কটি স্পোর্টিং ইভেন্টকে সাফল্যমন্ডিত করতে উনাদের পরিশ্রম এবং উনার সাথে থাকা সুমন আহমদ, আরাফাত বকসি সুমন, মাহিন শাহরিয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল মিয়া, তাজুন ইসলাম-জনিসহ পুরো টিমকে স্পেশাল কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্য সচিব মাহবুবুল ইসলাম, এজাজ খান, মুহিবুর রহমান খান, জামাল উদ্দিন, শাকিল খানসহ দায়িত্বশীলরা। স্পেশালী আহবায়ক জনাব আখলাক হোসেন স্পনসরসহ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগীতা সমর্থনকারী সবাইকে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্যালুট জানান।

পিকনিকের সবচাইতে বড় আকর্ষণ ছিল “সিলেট তথা বাংলাদেশকে জানো” এই স্লোগানকে সামনে রেখে অলিউর রহমানের তৈরি কুইজ প্রতিযোগিতা। পুরস্কার ছিল নগদ দেড় হাজার ডলারের মত। সিলেট এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীক প্রশ্নগুলির উত্তরসহ আগেই সরবরাহ করা হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউনাইটেড জালালাবাদ এর ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ৬৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পাবলিক পরীক্ষার আদলে উত্তর ঠিক রেখে প্রশ্নের ধরন বদলিয়ে চমৎকারভাবে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। মাত্র দুজন সবকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে তাদের মধ্য থেকে আবারও কুইজের মাধ্যমে প্রথম এবং দ্বিতীয় বেছে নেওয়া হয়। এবং সর্বমোট ১১টি পুরস্কার দেয়া হয়। বাচ্চা- মহিলা এবং পুরুষদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ইভেন্টগুলির পুরস্কারের সংখ্যা ছিল শতাধিক। তবে সবচাইতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিল অংশগ্রহণকারী এবং বনভোজনে আগত প্রতিটি শিশুকেই পুরস্কৃত করা হয়েছে ইউনাইটেড জালালাবাদ এর পক্ষ থেকে। যাহা শিশুদের মনে আনন্দ উল্লাসের ঢেউ জাগিয়ে তুলেছে। অন্যান্য সংগঠনের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরী করল ইউনাইটেড জালালাবাদ ফাউন্ডেশন ।

বনভোজনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে নেপথ্যে থেকে সাইদুন ফয়সাল, দিপু ইসলাম, আব্দুল মানিক, দেলোয়ার এলাহি, রোম্মান চৌধুরী, আছাদ উদ্দিন, আ ন ম ইউসুফ, সবুজ চৌধুরী টিটু, মাশরুল রিপন মনসুর আলীসহ যারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব জনাব আখলাক হোসেন এবং মাহবুবুল ইসলাম।

সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল র্যাফেল ড্র। র‌্যাফেল ড্রর জন্য মুখ্য ভ‚মিকা পালন করেন সংগঠনের সদস্য জনাব মুহিবুর খান, জয়নুল ইসলাম ও সেলিম আহমদ। ৬২০০ ডলারের শুধু কুপনই বিক্রি করে টরেন্টোর ইতিহাসে রেকর্ড গড়েন। ১ম পুরষ্কার- টরন্টো ঢাকা টরন্টো বিমান টিকেট, ২য় পুরষ্কার – ৫র্৫র্ রঙ্গিন টেলিভিশন, ৩য় পুরষ্কার- বাইসাইকেলসহ মোট – ২০টি পুরষ্কার।
এই সিলেটীদের মহা-মিলনমেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন স্কারবরো সাউথ ওয়েষ্ট এর এম পি পি, বৃহত্তর সিলেটের গর্ব ডলি বেগম।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক:
সর্বজনাব দেওয়ান গফরান চৌধুরী, শাহ মাহবুব আহমদ, আবুল হোসেন আলী, জামাল উদ্দিন, আনই মিয়া, এজাজ আহমদ খান, জুলফিকার আলী খছরু। আরও উপস্থিত ছিলেন, সর্বজনাব আছাদ উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী, খুশনুর রশিদ চৌধুরী, জামিল আহমদ, আব্দুল মানিক, শামসুল ইসলাম, আঃ রহিম দাদুল, আব্দুল মালিক সিরাজ, আ ন ম ইউসুফ, টুনু মিয়া, মাসুক চৌধুরী, মোজাহিদুল ইসলাম, খান ইমরুল চৌধুরী, লায়েক চৌধুরী, মোর্শেদ আলম মুক্তা, প্রফেসর আতাউর রহমান, নুরুল ইসলাম আজাদ, রুহুল কুদ্দুছ চৌধুরী, রেজোয়ান রহমান, সাব্বির চৌধুরী লিটন, জবরুল ইসলাম, এবাদ চৌধুরী, আরাফাত বকশী সুমন, মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল, শামীম মিয়া, শাহাব উদ্দিন, শরফুল ইসলাম, মোস্তফা উদ্দিন, রফিকুল হক, নজরুল আহমদ, সোহেল ইবনে ইসহাক, কামিল হোসেন, সায়েফ চৌধুরী এবং শাহীন চৌধুরী।