অনলাইন ডেস্ক : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ কিছু মানুষের ধারণার চেয়েও আগে শেষ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা শান্তির কাছাকাছি, যতটা আমরা ভাবছি তার চেয়েও। আমাদের শুধু খুব শক্তিশালী হতে হবে, খুব শক্তিশালী।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমবার জেলেনস্কি আরো বলেন, এই সপ্তাহে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যে বিজয় পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন, তাতে কিয়েভের মিত্রদের ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে ‘শক্তিশালী করতে’ হবে।
জেলেনস্কি বলেছেন, এই পরিকল্পনা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে নয়, বরং এটি যুদ্ধ থামানোর জন্য একটি কূটনৈতিক সমাধানের সেতু। তিনি আরো বলেন, শুধু ‘শক্তিশালী অবস্থান’ থেকে কিয়েভ আসলে ইউক্রেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ শেষ করতে বাধ্য করতে পারে।
এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার বলেছেন, ইউক্রেনের পরিকল্পনা সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে রাশিয়া সতর্ক।
সংঘাত তখনই শেষ হবে, যখন রাশিয়ার লক্ষ্য অর্জিত হবে। জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন, যাতে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। এই সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে আবারও এই আহ্বান জানানোর আশা করছেন।
বাইডেন রবিবার বলেছেন, তিনি এখনো ইউক্রেনকে সবুজ সংকেত দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে এই সিদ্ধান্তে নেতৃত্ব দিতে হবে মন্তব্য করে জেলেনস্কি এবিসিকে বলেছেন, ‘সবাই তার (বাইডেন) দিকে তাকিয়ে আছে এবং নিজেদের রক্ষার জন্য আমাদের এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’
জেলেনস্কি বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
‘কেউ হারবে না’
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পেট্র পাভেল নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইউক্রেনকে তাদের পূর্বাঞ্চলের যে এলাকাগুলো রাশিয়া গত ৩১ মাসের যুদ্ধে দখল করেছে তা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সম্পর্কে ‘বাস্তববাদী’ হতে হবে। তিনি আরো বলেন, যুদ্ধের সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল হলো, ইউক্রেনের একটি অংশ বহু বছর ধরে রাশিয়ার দখলে থাকবে।
পাভেল টাইমসকে বলেছেন, ইউক্রেন বা রাশিয়ার—যুদ্ধের কোনো পক্ষেরই পরাজয় হবে না।
‘এটি একেবারেই ঘটবে না’ এবং সংঘাতের সমাপ্তি হবে ‘মধ্যবর্তী কোথাও’।
জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন ইউক্রেন রাশিয়ার ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে রয়েছে। মঙ্গলবার দিনের আক্রমণে রাশিয়া ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভের একটি উঁচু ভবনে আঘাত হানে। এই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, গ্লাইড বোমার মাধ্যমে এ হামলা হয়েছে। এর আগে সোমবার রাতে পূর্ব ইউক্রেনের পোলতাভা শহরে একটি হামলায় অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়াতে ‘ব্যাপক বিমান হামলার’ পর এক ব্যক্তির মৃত্যু এবং আরো ছয়জন আহত হয়।
এ ছাড়া রাশিয়ান সেনারা পূর্বাঞ্চলে গুরুতর অগ্রগতি করেছে এবং ভুহলেদারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা দনবাসের দক্ষিণাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্রের একটি শহর। এটি রুশরা তাদের পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের শুরু থেকেই দখল করার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল কস্তিয়ান্তিন মাশোভেটস তার সহকর্মী ইউক্রেনীয়দের সতর্ক করে বলেছেন, দনবাসের পূর্বাঞ্চলে সেলিদোভ, তোরেতস্ক ও ভুহলেদারের ক্ষতির জন্য তাদের ‘মানসিকভাবে প্রস্তুত’ থাকতে হবে। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি ভুল প্রমাণিত হতে চাই। কিন্তু আমার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী…এটি নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ঘটনাপ্রবাহের একটি সম্ভাব্য চিত্র।’
সূত্র : বিবিসি