অনলাইন ডেস্ক : এবারের ইউএস ওপেন টেনিসের শুরু থেকেই বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিলেন জাপানের নাওমি ওসাকা। এমনকি বর্ণ বৈষম্যের আন্দোলনের অংশ হিসেবে টুর্নামেন্ট থেকে সড়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। সেমিফাইনালের আগে নাম প্রত্যাহার করতে চেয়েছিলেন তিনি। ভাগ্যিস, সড়ে যাননি ওসাকা।

গতরাতে দর্শক শূন্য এবারের ইউএস ওপেনে মহিলা এককের শিরোপা উঠলো ওসাকার হাতেই। এ বছরের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ইউএস ওপেনের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়েছেন তিনি। টুর্নামেন্টের ফাইনালে পিছিয়ে পড়েও চতুর্থ বাছাই ওসাকা ১-৬, ৬-৩ ও ৬-৩ গেমে হারিয়েছেন অবাছাই বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে।

১ ঘন্টা ৫৩ মিনিট লড়াই করে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মত গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপা জিতলেন ওসাকা। ইউএস ওপেনে দ্বিতীয়। অন্যটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে।

গেল মে মাসে আফ্রিকান-আমেরিকান সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হাঁটুতে পিষে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য পুলিশ। ফ্লয়েডের হত্যায় ঐ সময় থেকেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব।

সেই প্রতিবাদের রেশও এখনো রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইউএস ওপেনের প্রথম থেকে নিজের ম্যাচগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গদের ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ওসাকা। প্রতি ম্যাচে একেকজনের নাম সংবলিত মাস্ক পরে খেলতে নেমেছেন তিনি। ফাইনালে ‘তামির রাইস’ লেখা মাস্ক পরে খেলেছেন ওসাকা। ২০১৪ সালে ক্লিভল্যান্ডে ১২ বছর বয়সের যে শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছিল দেশটির পুলিশ।

যেন বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্যে হার মানতে চাননি ওসাকা। আজারেঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম সেট ৬-১ গেমে হারলেও, হাল ছাড়েননি ওসাকা। ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পরের দুই সেটে জয় পান ৬-৩ গেমে। ফলে ম্যাচে সমতা আসে। সমতা আনতে পেরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন ২২ বছর বয়সী ওসাকা।

ফাইনাল সেটেও আজারেঙ্কাকে লড়াই করার সুযোগ না দিয়ে ৬-৩ গেমে জিতে শিরোপায় চুমু খান ওসাকা। ইউএস ওপেনের ইতিহাসে ১৮ বছর পর নারী এককে নিজের ক্যারিয়ারের তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল জয়ের নজির গড়েন ওসাকা। ২০১৮ সালের ইউএস ওপেন, ২০১৯ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, আর এবার ইউএস ওপেন জিতলেন ওসাকা।

শিরোপা জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে আজারেঙ্কার প্রশংসা করে ওসাকা বলেন, ‘আমি তোমার সাথে আর কোন ফাইনালে মুখোমুখি হতে চাই না। আমি সত্যিই এটি উপভোগ করিনি। এটি অনেক বেশি কঠিন ম্যাচ ছিলো। এটা আমার কাছে অনেক অনুপ্রেরণার কারণ আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন এখানে তোমাকে খেলতে দেখেছি। তোমার কাছ থেকে আমি অনেক শিখেছি, তোমাকে ধন্যবাদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন জেতার জন্য অতিরিক্ত চিন্তা করি, তখনই আমার খেলায় সমস্যা শুরু হয়। জেতার জন্য শান্ত থাকা খুবই জরুরি। প্রথম সেট পিছিয়ে মনে হচ্ছিল, জেতা হবে না। পরে ভাবলাম, আমি একটা ফাইনাল খেলতে এসেছি। অনেকেই ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে। আমি সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে। কেন হাল ছাড়বো! আমি এভাবে হারতে পারি না। শেষ চেষ্টাটা করতে হবে। হয়তো আত্মবিশ্বাসই আমাকে শিরোপা এনে দিয়েছে।’

ফাইনাল হেরে আজারেঙ্কার পালকে আরও হতাশা যোগ হলো। এ নিয়ে তিনবার ইউএস ওপেনের ফাইনালে হারের দেখা পেলেন তিনি। ২০১২ ও ২০১৩ সালে পরপর এবারের আসরের ফাইনালে হারলেন আজারেঙ্কা। তবে ২০১২ ও ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন ৩১ বছর বয়সী আজারেঙ্কা।

হ্যাট্টিকবারের মত ইউএস ওপেনের ফাইনালে হারের জন্য ভাগ্যকে দুষলেন আজারেঙ্কা, ‘আমার ভাগ্যে ইউএস ওপেন নেই। তিনবার ফাইনাল হারা, সত্যিই অনেক বেশি হতাশার। এবার শিরোপা জয়ের ভালো সুযোগই ছিলো। কারণ প্রথম থেকেই বেশ ছন্দে ছিলাম। ফাইনালে দারুন খেলেছে ওসাকা। তাকে অভিনন্দন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সাধারণত হতাশ হই না। তবে এবার হতে হচ্ছে। তিনবার হারা সবসময় বেদনার। আমি শিরোপার কাছেই ছিলাম। কিন্তু এবারও শিরোপা অধরাই হয়ে রইলো।