হাসান আমিন : স¤প্রতি কানাডায় আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ঘুমানোর জায়গা খুঁজে পেতে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টরন্টো সিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা শরণার্থীদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী শহরের আশ্রয় ব্যবস্থায় শয্যা চেয়ে ফেডারেল কর্মসূচীতে আবেদন করবে। রাজনৈতিক নিপীড়নের কারণে আশ্রয় পাওয়ার আশায় গত ৩ জুন ইথিওপিয়া থেকে টরন্টো এসেছেন বার্ক টেকলাউ। ৩৪ বছর বয়সী বার্ক বলেছেন, দিনের পর দিন শহরের আশ্রয় ব্যবস্থা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তিনি কানাডায় আসার শুরু থেকেই রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন। বার্ক একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি…. তারা বলে যে আমাদের এখন একটিও জায়গা নেই। আমি কানাডায় এমনটি আশা করিনি।’
বার্ক একা নন, এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন বহু আশ্রয়প্রার্থী। বার্কসহ আফ্রিকা থেকে আসা এক ডজনেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী গত ১৪ জুন, বুধবার তাদের আবাসন খুঁজে পাওয়ার অক্ষমতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার আশায় সিটি হলে গিয়েছিলেন। শহর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, বাসিন্দাদের এবং উদ্বাস্তুদের জন্য জরুরি আশ্রয় সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা সামলাতে ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আরও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, তবে সেই অতিরিক্ত অর্থ কখন আসবে তা স্পষ্ট নয়।
ইতিমধ্যে, কয়েক ডজন আশ্রয়প্রার্থী লিম্বোতে আটকে আছে, যারা শহরের আশ্রয় ব্যবস্থায় সেবা পাচ্ছেন না এবং ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
গত ৩১ মে ডেপুটি মেয়র জেনিফার ম্যাককেলভি বলেন, শহরের আনুমানিক ৯ হাজার শয্যার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে কোন রাতেই এখন শয্যা খালি থাকে না এবং এগুলোতে আরও বেশি সংখ্যক শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার অবস্থায় নাই।তিনি আরও জানান, এখন শহরের ‘অভিবাসন উদ্বাস্তু এবং নাগরিকত্ব কানাডা’ প্রোগ্রামগুলোতে তাদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই,যদিও বর্তমানে টরন্টোতে লোকেদের আবাসন প্রদান করে এমন কোনও কেন্দ্রীয় আশ্রয় কর্মসূচি নেই।
শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২০ মাসে টরন্টোর আশ্রয় ব্যবস্থায় আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ৫০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এক রাতে প্রায় ৫৩০ জনের থেকে ২০২৩ সালের মে মাসে বেড়ে ২ হাজার ৮০০ জনে দাঁড়িয়েছে। টরন্টো শহর কর্তৃপক্ষ প্রতি রাতের হিসেবে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার ৫০০টি শয্যার জন্য প্রত্যেক বছর বাজেট দিয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত ২ হাজার ৩০০ জন আশ্রয়প্রার্থীর জন্য শহরের কাছে অতিরিক্ত তহবিল না থাকা সত্তে¡ও তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শহরের আশ্রয়, সহায়তা এবং আবাসন প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক গর্ড ট্যানারের মতে, স্থান সংকুলানের অভাবে শরণার্থী দাবিদার এবং অ-শরণার্থী উভয় সংখ্যাক আশ্রয়প্রার্থী শত শত লোককে প্রতিদিন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ‘জায়গা থাকলে আমরা লোকেদের গ্রহণ করি, কিন্তু বর্তমানে কোন জায়গা নেই,’ট্যানার একটি সাক্ষাৎকারে বলেন।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ শেল্টার অ্যান্ড হাউজিং জাস্টিস নেটওয়ার্কের আউটরিচ কর্মী এবং সংগঠক লোরেন লাম বলেছেন, শহরের সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের মূল আশ্রয় ব্যবস্থায় প্রবেশ করা নিষিদ্ধ করে, পরিবর্তে তাদের শরণার্থীদের জন্য নির্ধারিত আশ্রয়ে সীমাবদ্ধ করে — যা ইতিমধ্যেই শহর স্বীকার করেছে যে, তাদের অর্থের অভাব রয়েছে এবং আশ্রয় ব্যবস্থায় শয্যা পরিপূর্ণ।‘এর অর্থ হল আপনি এমন অনেক লোকের মধ্যে একজন যাদের আক্ষরিক অর্থে কোথাও যাওয়ার নেই,’লাম বলেন। ‘আপনি মূলত এমন ব্যক্তিদের একটি পৃথক গ্রুপ তৈরি করছেন যারা শহরের দ্বিতীয় শ্রেণীর বা তৃতীয় শ্রেণীর লোকের মতো বিবেচিত হয়, যারা সংস্থানগুলোতে প্রবেশের অধিকার পায় না।’
শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে খালি শয্যার অভাব স্থানীয় সংস্থাগুলোকে অভাবীদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে তীব্র চাপে ফেলেছে। বৃহত্তর টরন্টো এলাকার ইথিওপিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেসেরাত ডেমেকে বলেছেন, তার সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা গত ১২ জুন, সোমবার শহরের একটি গৃহহীন সহায়তা কেন্দ্রের বাইরে ফুটপাতে ২০ জনেরও বেশি ইথিওপিয়ান আশ্রয়প্রার্থীকে ঘুমোতে দেখেছেন। তিনি বলেন, তার সংস্থা ৬০ থেকে ৭০ জন আশ্রয়প্রার্থীকে সাহায্য করছে যারা স¤প্রতি আফ্রিকা থেকে কানাডায় এসেছে, কিন্তু তাদের কোনো আবাসন নেই। সংস্থাটি হোটেল রুম এবং ভাড়া আবাসন ক্রয় করতে সাহায্য করার জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে, কিন্তু অর্থ দ্রুতি ফুরিয়ে যাচ্ছে।
ট্যানার বলেছেন, ফেডারেল সরকার নতুন আগতদের আবাসনের খরচ চালিয়ে নিতে এই বছর শহরটিকে তহবিল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে,সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সরবরাহ করা তহবিলের ওপর শহরকে নির্ভর করতে হচ্ছে। শহর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছেন, উদ্বাস্তুদের আশ্রয় সহায়তা প্রদান চালিয়ে যাওয়ার জন্য টরন্টোর এই বছর ৯৭ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (আইআরসিসি) এর মুখপাত্র জেফরি ম্যাকডোনাল্ড একটি ইমেল বার্তায় বলেছেন, ফেডারেল সরকার অন্তর্র্বতীকালীন আবাসন সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে জরুরি আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়দাতাদের সহায়তা প্রদান করে। ম্যাকডোনাল্ড আরও বলেছেন, প্রোগ্রামটি ২০১৭ সাল থেকে প্রভিন্সএবং পৌরসভাকে ৭০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে, যার মধ্যে প্রায় ২১৫ মিলিয়ন টরন্টো সিটির জন্য বরাদ্দ রয়েছে।ম্যাকডোনাল্ড আরও জানান, সরকার অনুমোদনহীন রক্সহাম রোড সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে কানাডায় প্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্যহোটেলগুলোতে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থাও করেছে। সূত্র : সিবিসি নিউজ