আকতার হোসেন : সকালে আমি তোমার। সন্ধ্যাতেও তোমার। সকাল সন্ধ্যার মাঝখানের সময় তখনো তোমার। রাত্রিতে তোমার। ভোরেও তোমার। ভোর-রাত্রির মাঝখানের সময় তখনো তোমার। নিজের জন্য সময় ছিল না আমার। সে কথা তুমি জানতে। ভেবেছিলাম এখনো তাই জানো। অথচ, তুমি অবাক হলে আজ। অবাক হবার কি আছে। যদি সময়গুলো এখনো সেভাবে কাটে।
আমাদের যত কথা সব জানে চাঁদ আর জানে জানালা। অবসর পেলে চাঁদ চলে আসে তোমার গল্প শুনতে। আমি জানালার কোলে মাথা রেখে। তোমার গল্প করি। আমার সব গল্প তোমাকে নিয়ে। গল্পের শুরুতে তুমি শেষেও তুমি। মনে হয় সভ্যতার আগে থেকে তোমাকে চিনি কিংবা তারও আগে।
চাঁদ আমাকে নেশাগ্রস্ত করে। চাঁদের চেয়ে মাদকতা। অন্য কিছুতে নেই, যতো বেশি জ্যোৎস্না ততো বেশি নেশা। নেশায় চুর হয়ে সব কথা বলেছি চাঁদকে। শুধু গোপন ছিল একটি রাতের কথা। চাঁদের সাথে মেশানো চাঁদের কথা। ভেবেছিলাম কিছু কথা থেকে যাক সংগোপনে। ভেবেছিলাম নামাজ শেষে লোকে যেমন মোনাজাত ধরে তুমিও ফরজ শেষ করে মোনাজাতে ফিরে আসবে। এখন মনে হচ্ছে, তুমি মোনাজাত ভুলে গেছ। চাওয়া-পাওয়া বলে কিছু নেই তোমার। আমি সময়ের লাখ কলেমা পড়ে যাচ্ছি, এই বুঝি ফিরে আসো। এই বুঝি পিছ থেকে ডাক ছাড়ো ‘শান্ত’। আজ দেখলাম তোমার অবাক হবার স্বভাবটা রয়েই গেছে।
চাঁদের বুক ভেঙ্গে যাবে আজ। ভাঙ্গুক। আমার বুক কেন এতো ব্যথা সইবে। ক্লান্ত সূর্য ফিরে যায় ঘরে। সূর্য যে হবে না ক্লান্ত। সে ধারণা তো ভ্রান্ত। আমি ছাড়া এ পৃথিবীতে সকলে ক্লান্ত হয়। আমি যখন ক্লান্ত ক্লান্ত তোমার জন্য যখন আমি ব্যস্ত। ব্যস্ত তোমার জন্য। সূর্য ঘরে গেলে চাঁদের অনুবলে অন্ধকার দূর হয়। চাঁদের আলো সূর্যের কাছে কিছু নয়। মনে হয় ফ্লাড লাইটের কাছে। দেয়াশলাইয়ের কাঠি।তবুও চাঁদের আলোটাই অনেকের কাছে যথেষ্ট।
বকুল, তোমার আর আমার একদিন না চাঁদ না সূর্য কোনটার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু চাঁদ এলে তো তাকে বলা যায় না মাফ করো অন্য ঘরে যাও। সেদিন আমাদের এক মহা পরিকল্পনা। ঘোষণা দিলাম চাঁদ থেকে আলো খসে গেলে মাজারে সিন্নি দেব। অন্ধকারের জন্য সিন্নি। সত্যি সত্যি সেদিন চাঁদের গায়ে অন্ধকার নেমে এলো। কুমিরের মতো একটা ছায়া গিলে খেল চাঁদকে। চারিদিকে সর্বনাশা অন্ধকার। গ্রহণ যখন শুরু। অর্থাৎ কুমির যখন চাঁদটাকে খেতে শুরু করলো। আমরাও প্রস্তুত হতে লাগলাম। নিজ হাতে তোমার বেণী খুলে দিলাম। তোমার হাত আমার জামার বোতাম স্পর্শ করে নিচে নেমে গেল। এমন চন্দ্রগ্রহণ কেন প্রতিদিন হয় না। আমি চন্দ্রগ্রহণ পছন্দ করতে লাগলাম। চাঁদ গেছে কুমিরের পেটে শহর ডুবে আছে লোডশেডিংএ আহ সে কি আনন্দ।
চম্পা অবশ্য একটা মোমবাতি নিয়ে এসেছিল। মোমবাতি দেখলে বরাবর আমার হাসি পায়, এতোটুকু বাতি, বিশাল অন্ধকার কি করে আলো করবে সে। চাঁদের কাজ যদি মোম দিয়ে হবে তবে চাঁদের কি প্রয়োজন। আকাশের গায়ে মোম গেঁথে দিলেই হয়।
চম্পার দেয়া মোমবাতিকে বললাম কিগো আলোর টোকাই দেব নাকি নিভিয়ে। বেগুনের মত সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে যে। অমন সুন্দর শরীরটা কেন আমাদের জন্য শেষ করে দেবে।
আমার কথা শুনে তুমি হেসে দিলে। না হাসতেই তোমার মুখটি হাসি হাসি থাকে। সত্যি সত্যি যখন হাসো মানুষের চোখের বারোটা বেজে যায়। হেসে হেসে বললে;
চম্পা তো সখ করে মোমবাতিটা আনেনি। ও চায় না চাঁদের উত্তাপে আমরা পুড়ে মরি। মা বোধহয় ওকে ধরিয়ে দিয়েছিল। একটা রেখেছিলেন নিজের কাছে অন্যটা দিয়েছিল চম্পার হাতে। চম্পা মোমটা রেখে চলে গেল। চম্পার নিজের জন্য মোমবাতির দরকার নেই। মা ওকে নিয়ে চিন্তিত নয়। চিন্তা করবার মত বয়স হয়নি ওর। চম্পা সবার ছোট। চম্পার বেণী কেউ খুলে দেবে না। অমন ছোট বেণীতে কে হাত দেবে। চাঁদের গায়ে অমাবস্যা এদিকে মা বাবার যতো সব চিন্তা। বাবা ঘরে থাকলে আমাদের মাঝে এসে বসে থাকতো। চীনের পাঁচিল হতো। তোমার আমার মধ্যে দূরত্ব এনে দিতো মহাদেশের মতো।
তুমি আরো বললে; বাবা তোমাকে খুব ভাল জানে। মা’র কাছে একবার তোমার গল্প করছিলো। আমি চুপ করে শুনেছি। মেয়েদের সবকিছুই চুপ করে শুনতে হয়। বাবা বলছিলো গরীবের ছেলে, পেটের দায়ে টিউশনি করে। অমন ছেলের কাছে মেয়েটাকে নিয়ে ভয় নেই। সংসারের খরচ যোগাতে যে ছেলে টিউশনি করে। সে প্রেমট্রেম করে না। আমার মা প্রেমের ফর্মুলা জানে না। গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় তার বিয়ে। বাবার সাথে তার প্রেম ছিল না। তারপর ধীরেসুস্থে ভালোবেসেছে। মা খুব সহজভাবে বললো। শুনেছি প্রাইভেট মাস্টাররা ছাত্রীদের সাথে প্রেমট্রেম করে বেড়ায়। শান্ত ছেলেটা মন্দ নয়, তবে যেভাবে প্রতিদিন লোডশেডিং হয় খুব ভয় জাগে মনে।
তোমার কথা শেষ হলো। কোমল কণ্ঠ থেমে গেল। ইশারায় মোমের কথা তুললাম। শেষ পর্যন্ত একটা মোম বাধা হয়ে দাঁড়াবে। গোলা বারুদ নয়। অ্যাটম বোমা, হিরোশিমা নাগাসাকি নয়, পলাশীর যুদ্ধ, বিশ্ব যুদ্ধ ক্ষুধা দারিদ্র্য। কোন কিছু বাধা নয় একটা মোমবাতি শেষে কিনা বাধা? আমার চোখের বারোটা বাজিয়ে আবারো সেই হাসি দিলে। তারপর এক আশ্চর্য কাজ করলে। জগতের সমস্ত বিস্ময় বিহ্বল হলো তোমার কান্ড দেখে। মুখ থেকে এক বুঁদ হাওয়া ঢেলে দিলে মোমের গায়ে মোমবাতির লোডশেডিং হয়ে গেল।
যে অন্ধকার আমাদের কাম্য ছিল সে অন্ধকার আমাদের হাতে এলো। এত অন্ধকার যে কিছুই দেখা যায় না। তবুও তোমার চোখ বন্ধ আমার চোখ বন্ধ। অন্ধকারে আমরা দু’জন ভীষণ অন্ধ। আলোর মোড়লি থেকে মুক্তি পেয়ে ছুটে বেড়ালাম আপন ইচ্ছায়। এমন আনন্দ আলোতে পেতাম না হয়তো। হঠাৎ আলো এসে গেলো বলে আনন্দ কুল হারালো।
লোডশেডিংএর এ এক অদ্ভুত নিয়ম আলো কখন আসে আলো কখন যায় কেউ জানতে পারে না। হঠাৎ আলোতে আমরা আবিষ্কার করলাম নিজেদের। তুমি মনে করলে আমি আদম আমি ভাবলাম তুমি বুঝি হাওয়া। তারপর আমরা গাছের পাতায় নিজেদের ঢেকে নিলাম।
চম্পা মোমবাতি ফিরিয়ে নিতে এসে দেখে আমরা যেমনি বসে ছিলাম তেমনি বসে আছি। আমাদের পাঠগ্রহণের কোন পাঠান্তর সে পেলো না। সেদিনের পর থেকে আর একটা লোড শেডিংএর অপেক্ষায় ছিলাম। অথচ সে লোডশেডিং আর ফিরে এলো না। অপেক্ষা জীবনের শেষ ভরসা হলো।
তোমার বাবা ডেকে বললেন, বাবা শান্ত তোমার আর আসবার প্রয়োজন নেই।
আমি আদম হয়েছিলাম তুমি হাওয়া একথা তিনি জানলে কি বলতেন আর আসতে হবে না। ফসল যেমন বৃষ্টির কাছে ঋণী জীবন ঋণী হয় সময়ের কাছে। নদীর পানির মতো মানুষের সময়গুলো বয়ে বয়ে যায় ধেয়ে ধেয়ে যায়। মানুষ তবুও আরো কিছুদিন বাঁচতে চায়। সময় মঞ্জুরির দরখাস্ত পাঠায়। কখনো তা মঞ্জুর হয় কখনো হয় না।
যেমন, আমার বাবার প্রথম দরখাস্ত ফিরে এসেছিল। সময় মঞ্জুরি তিনি পাননি। যুদ্ধে গিয়ে আচমকা সময়ের স্বল্পতা অনুভব করলেন বাবা। কোমরের নিচে একটা গুলি ঢুকে বেঁচে থাকার সমস্ত সময়গুলো ঝরিয়ে দিচ্ছিল। লাল টকটকে সময় দেখে বাবা ভাবলেন এত তড়িঘড়ি করে যাওয়া ঠিক হবে না। স্বাধীনতা, তাও দেখা হলো না। যিনি সময় দাতা তার কাছে দরখাস্ত পাঠালেন। গুলি লাগা দরখাস্ত গুলি খেয়ে ফিরে এলো।
অসময়ে বাবার তীর্থযাত্রায় সংসারটা যুদ্ধক্ষেত্র হল। আমাদের সংসারের সকলেই যোদ্ধা। মা ছিলেন বড় সেনাপতি। বাবাও কম ছিলেন না। কিন্তু বাবার তিরোধানে মা দুর্বল হয়ে গেলেন। মুক্তিযোদ্ধার পুত্রকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বাজারের থলি ধরিয়ে দিলেন। বাজারের থলি নিয়ে পথে পথে আমি যোদ্ধার মত ঘুরতাম। সেই থলি খালি মানে সংসারের সবার পেট খালি। মাঝে মাঝে গ্রেনেডের মত ভারি ভারি আলু নিয়ে ফিরতাম ঘরে। আলু দেখে মা-তো বেজায় খুশি। ব্যাগের নিচে উঁকি দিয়ে তিনি আলু গুনতেন। একটা আলু। দুইটা আলু। তারপর প্রধান সেনাপতি আলু দিয়ে পোলাও রাঁধতেন, কোর্মা রাঁধতেন, কালিয়া কোফতা বানাতেন। আমাদের প্লাটুনটার নাম আলু প্লাটুন। মানুষ চাঁদে যেতে চায়। চাঁদে গিয়ে চাষ করবে রূপালি ফসল। অথচ আমাদের লক্ষ্য একটা আলু। দুইটা আলু।
গরীব আমরা কখনো ছিলাম না। শুধু আলুর চেয়ে সুস্বাদু কিছু খাইনি বহুদিন। তোমাদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল না, তবে এমন নয় যে আমরা প্রজা তোমরা জমিদার। পার্থক্য এতোটুকু যে তোমার বাবা যুদ্ধে গিয়েও অদৃশ্য হয়ে যায়নি। তিনি ছিলেন দৃশ্যমান। যুদ্ধ শেষে তিনি ফুলের মালা পেয়েছিলেন। আমার বাবার কবরটা খুঁজে পেলে কিছু ফুল গাছ লাগিয়ে দিতাম। অথবা কবরটায় একটা জানালা করে দিতাম। স্বাধীনতা দেখার খুব সাধ ছিল তাঁর।
তোমার বাবা শরফুদ্দিন সাহেব তোমার ওপর বাজি ধরেছিলেন, সংসারের বড়ো মেয়ে তুমি। সকলে তোমার বাবাকে বলতো বকুলের বাবা, তোমাদের বাসাটাকে বলতো বকুলদের বাসা। তোমাকে পুঁজি করে তিনি চম্পা আর তোমার ভাইটার থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। ভাত কাপড় আর আলুর চেয়ে বেশি কিছুর ব্যবস্থা। আমাকে খুঁজে এনে বলেছিলেন বকুলের বি.এ. পাশটা সংসারের জন্য খুবই জরুরী। আমি যেন সেভাবে তোমাকে প্রস্তুত করে তুলি।
তোমাকে প্রস্তুত করতে এসে আমি নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। এ জন্মে কেন হাজার জন্মেও তোমার মতো সুন্দরী দেখিনি। তুমি কেন পাঠশালা থেকে আমার কাছে পড়তে আসোনি। আমাদের সংসারের অভাবটা কেন আরো আগে এলো না। বাবা যুদ্ধে গেলে অভাবকে আসতে হবে অভাবের একি স্বভাব। না হলে সেই কবে থেকে টিউশনি করতে পারতাম। চোখ বুজে বুজে তোমাকে পাঠ দিতাম। ছোট বেলায় ছোট ছোট পাঠ বড় বেলায় বড়। তোমার বিয়ে পাশের জন্য মনোনীত আমি নিজেই একটা পাশ দিয়ে দিলাম। ধীরে ধীরে তোমাকেও প্রস্তুত করলাম। তুমি অরাজি তারপর কয়েক ধাপ তারপর নিমরাজী। আরো কয়েক ধাপ শেষে তুমি কাজী ঘরে যেতে রাজী।
কিন্তু তোমার বাবা বি.এ. পাশের চেয়ে বড় হরিণ ধরে এনেছিলেন। তিনি একজন পাকা শিকারী। ছেলেমেয়েদের ভালোর জন্য বাঘ শিকারেও যেতে পারেন। যার মাথায় বিদ্যার জাহাজ, দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে যিনি ডক্টরেট করেছেন এমন একজনকে বললেন সোনার হরিণ। আমার মতো ছই নৌকায় তোমাকে তুলে দিতে চাইলেন না। আমি তার পায়ে পড়েছিলাম। তুমি উপোসী হয়েছিলে। দু’দিন কিছুই খেলে না। আমাকে পা থেকে তুলে নিয়ে শরফুদ্দিন সাহেব উল্টো আমার পা চেপে ধরলেন। বললেন, প্রয়োজন হলে আলু প্লাটুনের সবার পায়ে ধরে বসে থাকবেন। আমাদের সেনাপতির কাছে গিয়ে বললেন, আপনারা আলু খান আমি মানা করবো না। আমার ছেলেমেয়েরা কেন সারাজীবন আলু খাবে। আমাদের অপরাধ কি? আমরা কি স্বপ্ন দেখতে পারি না। আমার একমাত্র ছেলে খালেদ, সে কি ক্যানাডা আমেরিকা যাবার আশা করবে না।
আমার মা। অর্থাৎ সেই মুহূর্তে তোমার বাবা যাকে ফিল্ড মার্শালের মর্যাদা দিয়েছিলেন তিনি সন্ধি করে বসলেন। যে পা একবার ধরেছিলাম তাকে বশ মানিয়ে ছাড়তাম, কিন্তু দু’দিনের উপোসে তুমি কাবু হয়ে গেলে। তোমার মনটাকে কে যেন মোমের মত গলিয়ে দিল। আমাকে বললে, ভুলে যাও। ভুলে যাও।
ভুলে যাও। দু’টি মাত্র শব্দ অথচ শত শতবার বজ্রের মতো আঘাত করলো বুকের মধ্যখানে। সেই থেকে তোমার কথার বাধ্য হয়ে আছি। খালেদ যেন আমেরিকায় আসতে পারে সে পথ খুলে দিয়েছিলাম পনেরো বছর আগে। শুনেছি সে এক আমেরিকান মেয়ে বিয়ে করেছে। একই শহরে থাকো তোমরা। তোমার বিদ্যার জাহাজ এখনো বিদ্যার ধোঁয়া উড়াচ্ছে। চারিদিকে নাকি তার খুব নাম। তুমি তাকে তিনটি সন্তান উপহার দিয়েছ। সেগুলোকে মানুষ করতে ব্যস্ত তুমি, আর তিনি চারিদিকে বিদ্যার লেকচার দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তোমার বাবা আর তোমার স্বামী দুই দিগন্তের দুই ভিন্ন মানুষ। অথচ তাদের চরিতাবলী একই সুরে গাঁথা। বিয়ের পরে জীবন সাথীকে চেনা। আমার মতো ভালোবাসতে কয়জন জানে। সকালে আমি তোমার সন্ধ্যাতেও তোমার সকাল সন্ধ্যার মাঝখানের সময় তখনো তোমার।
তোমরা এসেছিলে নায়াগ্রার জলপ্রপাত দেখতে। নায়াগ্রা থেকে এলে টরণ্টো। ডাউন টাউনের এক পাঁচতারা হোটেলে এসে উঠেছো। আমাকে দেখে সহজেই চিনে ফেললে তুমি। হোটেলের রুমবয় আমি। তোমার জন্য খাবার নিয়ে গেলাম। রুমে কেউ ছিল না। তুমি একা। ক্লান্ত ছিলে তাই শহর এবং সি.এন. টাওয়ার দেখতে যাওনি। আমি তোমার খাবার রেখে চলে এলাম। যতটুকু কথা বলার তুমিই বললে। আমার মুখ দিয়ে কথা গড়ালো না। একবার ভেবেছিলাম জিজ্ঞেস করি, ভুলে যেতে বলেছিলে কতো বছর তাতো বলোনি। ভুলে যাও সেকি অনন্তকাল? অবাকী স্বভাবের মেয়ে তুমি। আজ অল্প কথাতেই অবাক হলে। অবাক নয় মনে হয় বরফ হয়ে গেলে। বরফের যেমন ভাষা থাকে না শুধু কান্না থাকে তুমিও কান্নার পাহাড় হলে।
হাজার বছরেও তোমার মত সুন্দরী দেখিনি মনে হলো তুমি সমুদ্রের পরী। সমুদ্রের যতো জল সব তোমার চোখের কাছে ঋণী। তুমি কাঁদবে ভেবে উঠতে পারিনি। তাহলে কথাটা গোপন রাখতাম। তুমি জিজ্ঞেস করলে তাই শুধু বললাম, এ পৃথিবীতে আছে একাধিক সমুদ্র। বহু নদী। নক্ষত্র, তাও অগণিত শুধু চাঁদ আছে একটি আর আমিও একাকী।
১৪ ডিসেম্বর, ২০০০, মুক্তিসন ২৮