অনলাইন ডেস্ক : ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট তারকা ড্যারেন সামি অভিযোগ করেছেন যে ভারতে আইপিএলে খেলার সময় তিনি এবং শ্রীলংকার খেলোয়াড় থিসারা পেরেরা বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছিলেন।

ড্যারেন সামি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেছেন, তিনি এবং শ্রীলংকার থিসারা পেরেরা যখন ভারতে আইপিএলে খেলতেন তখন তাদেরকে ‘কালু’ বলে ডাকা হতো। তবে এই ‘কালু’ শব্দের মানে তখন তিনি জানতেন না।

‘কালু’ একটি হিন্দি শব্দ, এর মানে হচ্ছে কালো। অতি সম্প্রতি ড্যারেন সামি এর আসল অর্থ জানতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ড্যারেন সামি জানিয়েছেন, তিনি যখন ভারতে আইপিএলে খেলতেন, তখন তিনি কালু শব্দের মানে শক্তিশালী ঘোড়া (স্ট্যালিয়ন) বলেই জানতেন। কিন্তু সম্প্রতি হাসান মিনহাজের অনুষ্ঠান দেখে তিনি জানতে পেরেছেন এর আসল মানে। এখন তিনি সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ।

ড্যারেন সামির নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলতেন।

যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তাতে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করার জন্য।

টুইটারে অনেক কটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, বর্ণবাদ কেবল আমেরিকার সমস্যা নয়, এটি সারা দুনিয়াতেই আছে। তিনি বলেছেন, ক্রিকেট বিশ্ব যদি এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারাও এই সমস্যারই অংশ।

‍একটি টুইটার পোস্টে তিনি লিখেন, ‍“আইসিসি এবং অন্যান্য ক্রিকেট বোর্ড, তোমরা কি দেখতে পাচ্ছো না আমার মতো মানুষদের সঙ্গে কী ঘটছে? আমাদের মতো মানুষদের বিরুদ্ধে যে সামাজিক অবিচার চলছে সেটা নিয়ে কী তোমরা মুখ খুলবে না? এটা শুধু আমেরিকার ব্যাপার নয়। এটা প্রতিদিন ঘটছে। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার। এখন চুপ করে থাকার সময় নয়। আমি তোমাদের কাছ থেকে শুনতে চাই।”

ড্যারেন সামির এই অভিযোগকে ঘিরে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক হৈ চৈ চলছে।

ভারতে খেলতে যাওয়া বিদেশি ক্রিকেটারদের এরকম বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এটাই প্রথম নয়।

টুইটারে অনেকেই ড্যারেন সামির সঙ্গে এই আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এর আগেও যে এমন ঘটনা ঘটেছে সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

পীলরাজা নামে একজন টুইটারে এক পোস্টে লিখেছেন, “আমি একবার একটি ক্রিকেট শো দেখছিলাম। সেখানে একজন একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছিল, যেখানে কার্টলি অ্যামব্রোস ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কার্টলি অ্যামব্রোস নাকি বলেছিলেন, আমি জানি কালু শব্দের মানে কী। আমি যতবার বাউন্ডারির কাছে ফিল্ডিং দিয়েছি গ্যালারির দর্শকরা আমাকে দেখে সারাক্ষণ কালু বলে চিৎকার করেছে।”

সন্দ্বীপ নামে একজন লিখেছেন, ‍“এতে বিস্মিত হওয়ার কী আছে? ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বর্ণবাদী দেশগুলোর একটি।”

সুনীল কুমার নামে আরেকজনের মন্তব্য, “বিদেশীদের কথা ভুলে যাও, আমরা তো আমাদের দেশের লোকজন সম্পর্কেই বর্ণবাদী কথাবার্তা বলি।”

বর্ণবাদের এই অভিযোগের ব্যাপারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এখনো কোন মন্তব্য করেনি।

এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ক্রিকেটার ক্রিস গেইলও বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্ণবাদ কেবল ফুটবলে সীমাবদ্ধ নয়, ক্রিকেটেও বর্ণবাদ আছে।

“আমি সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছি এবং কালো লোক হওয়ার কারণে বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হয়েছি। এমনকী নিজের দলের মধ্যেও কালো লোক হওয়ার কারণে আমাকে এরকম আচরণের শিকার হতে হয়েছে।”