মামুন খান : গেল সপ্তাহের প্রায় পুরোটা জুড়েই বৃষ্টি ছিল। সাথে সো সো শব্দে উত্তরি হিমেল হাওয়া। চারিদিকে শীতের আগমনী দামামা। আর ক’দিন পরেই ধবল তুষারের কাফনে মুরে দীর্ঘ পাঁচ-ছ’ মাসের জন্য হাইবারনেশনে যাবে প্রিয় শহর টরন্টো আর তার প্রকৃতি। অথচ এই তো সেদিন পর্যন্ত কত বাহারী রঙ্গেই না সেজেছিল প্রকৃতি। চারিদিকে শুধু স্বপ্নময় রঙিন ভাল লাগা। ভাল লাগা সেই রঙিন দিন গুলো আজ বিগত অতীত।
ভাবতে ভারী কষ্ট লাগে- আমার জীবনের রঙও একদিন অতীত হয়ে যাবে। আজ এই মূহূর্ত থেকে শুরু করে কোন এক বছর হবে সুন্দর এ ধরনীতে আমার শেষ বছর। কোন এক মাস হবে শেষ মাস, কোন এক দিন হবে শেষ দিন, কোন এক ক্ষণ হবে জীবনের শেষ ক্ষণ। তারপর সব শেষ। সেদিন অথবা সেদিনের পর আরও অনেক অনেক যুগ পর্যন্ত প্রকৃতি তার স্বরুপে বার বার ফিরে আসবে, সাজিয়ে দিবে, রাঙ্গিয়ে দিবে বর্ণহীন জীর্ণ মলিণ এ ধরিত্রীকে। ফুলে ফুলে ভরে যাবে উঠোন। লাল, নীল, বেগুনী পরাগ রেণু পাখায় মেখে এ ফুল উড়ে বেড়াবে প্রজাপতির দল। বাগানের কচি লাউয়ের ডগা মাচান বেয়ে তরতর করে বেড়ে উদ্ধত ভঙ্গিতে জানিয়ে দেবে তার উপস্থিতি। গোধূলী লগ্নে ডানায় মিষ্টি সোনালী রোদ্দুর মেখে নিশ্চিত মনে নীড়ে ফিরে যাবে পাখিরা। মাথায় গিজগিজ দুঃশ্চিন্তা নিয়ে হাইওয়ে ৪০১ এর ট্রাফিক জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকবে ঘরে ফেরা কর্মজীবী আদম সন্তান। রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে ধাতব চাকায় ডাইনোসরের ক্রন্দনের মত বিকট শব্দে নগরীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত থেকে ছুটে যাবে রেল গাড়ী। জন্ম নিবে কত শত নক্ষত্র, ঝরে যাবে তেমনি কত শত। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কোন এক মধ্য বয়সি যুবক সিগারেটের ধোঁয়ায় কুণ্ডলী পাকাবে আর জীবনে চাওয়া ,পাওয়া, লাভক্ষতির জটিল হিসেব মেলাবে। মায়ের কোলে খিল খিল করে হেসে উঠবে মানব শিশু। থাকবে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, মান, অভিমান। পৃথিবীর সবকিছুই চলবে ঠিইক আগের মতই। সেদিন আমিই শুধু থাকব না।
মামুন খান : ব্র্যাম্পটন