মনিস রফিক : কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজের জন্ম, বেড়ে উঠা আর কানাডার নেতৃত্বে আসার অসাধারণ কিছু ঘটনা উপস্থাপন করেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘কমন গ্রাউন্ড’ এ। জাস্টিন ট্রুডোর সাবলীল আর অসম্ভব সুন্দর বর্ণনা খুব সহজেই পাঠকের সামনে উম্মোচিত করে কানাডার রাজনীতি, সংস্কৃতি আর স্বপ্নকে। ইংরেজি ভাষায় লিখিত গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন মনিস রফিক। ‘বাংলা কাগজ’ এ ‘কমন গ্রাউন্ড’ এর অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে।
বার.
কানাডার অধিকাংশ বাবা মা যখন তাদের সন্তানদের প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর কথা ভাবেন, তখন তাদের চোখে যে ছবিটা ভেসে ওঠে তা হচ্ছে, ছোট্ট একটা ক্লাস রুম, যাতে সব ছাত্রছাত্রী খুবই মনোযোগী হয়ে খুবই জ্ঞানী ও দক্ষ শিক্ষকের আধুনিক ও ফলপ্রসূ ক্লাসগুলো শুনছে। ব্রেবিউফ কিন্তু তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। আমাদের এক এক ক্লাসে ছাত্র থাকতো ছত্রিশ জন। মনে হতো ক্লাস রুমগুলো ছাত্রদের পড়ার ডেস্ক দিয়ে ঠাসা আছে। আর শিক্ষকরা যে পদ্ধতিতে পড়াতো তাকে বলা যায়, ‘মঞ্চের ওপর এক পণ্ডিতের জ্ঞান বিতরণ’, যেখানে শিক্ষকরা তাদের যা বলার বলে যেতেন আর আমরা তিনি যা বলছেন তা লিখে যেতাম।
আমি যখন স্কুলের ছাত্র তখনও কিন্তু স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘আত্ম-ক্ষমতা’র যে আন্দোলন সেটা দানা বেঁধে উঠেনি। এই আন্দোলনটার ফলেই কিন্তু এখন স্কুল শিক্ষায় সেই আগের মত শিক্ষক এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলে চলে গেলেন এমনটি আর হয় না, বরং এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুলে সব সময় চেষ্টা চালানো হয় একজন ছাত্রের মধ্যে যে সব ভালো গুণ বা ক্ষমতা আছে সেগুলোকে কিভাবে জাগিয়ে তুলে তার সদ্ব্যবহার করা যায়। আর এ ব্যাপারটাতো সত্যি, কিছু শিক্ষক ইচ্ছে করেই আমাদের মধ্যে নিজেদের ক্ষমতার বৈশিষ্ট্যকে মিইয়ে দেন। আমাদের সেকেন্ডারী ফোর বা গ্রেড টেন এ মি. দেয়াগ্নেউল্ট নামে ফরাসী ভাষার একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রায়ই অভিযোগের সুরে বলতেন, এ যুগের ছাত্রদের কোনো কালচার নেই। তার মতে, কালচার মারমালেড ফলের মতো, এটা একজনের কাছে যতো কম থাকবে, সে তত কম এটার স্বাদ আহরণ করতে পারবে।
মি. দেয়াগ্নেউল্ট এর কোর্সটা আমাদের কারিক্যুলাম এর সাধারণ মানের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। তার কোর্সে আমাদেরকে তেরোটা বই পড়তে হতো যেগুলো ছিলো খুবই উন্নত মানের ক্ল্যাসিক সাহিত্যকর্ম। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো, ডেভিড কপারফিল্ড, দ্য ইলিয়ড, দ্য ওডীসী, লা মিজারেবল এবং ডন কুইজোট। আমাদের প্রথম সপ্তাহের ক্লাসে এসেই তিনি দাত খিঁচিয়ে জানতে চিৎকার করে বলা শুরু করলেন, ‘থার্মোপাইল কারা ছিলো? কি হলো, কেউ বলতে পারবে না? তোমরা কিচ্ছু জানো না! কে বলতে পারবে থার্মোপাইল কারা ছিলো? আমি জানি কারো পক্ষে এটা বলার ক্ষমতা নেই।’ অতি সন্তর্পনে আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে ক্লাসের চারিদিকে একবার দেখে নিলাম। দেখলাম, সবাই কিছুটা অস্বস্তির সাথে মুখ নিচু করে নিজেদের ডেস্ক বা মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে, সবাই এক ধরনের আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। আমি একটু নিঃশ্বাস ফেললাম। আমার মনে হলো সারা ক্লাসকে উদ্ধারের দায়ভারটা এখন আমাকেই নিতে হবে। এই ভেবেই আমি ধীরে ধীরে আমার হাতটা উচু করলাম।
‘থার্মোপাইল’তো কোনো ব্যক্তি ছিল না।’ আমি বলে যেতে লাগলাম। ‘থার্মোপাইল হচ্ছে সেই গিরিপথ যেখানে রাজা লিওনিডাস এবং তার তিন’শ স্পার্টান সৈন্য পারস্যের পুরো সৈন্যদের আটকিয়ে দিয়েছিলেন।’ মি. দেয়াগ্নেউল্ট এবার মাথা নাড়লেন, তার ঠোট ও ভ্রæ কিছুক্ষণ কুঞ্চিত করে আবার তিনি তার স্বভাবসুলভ বক্তৃতায় ফিরে গেলেন। সেইদিন আমি তাঁর কাছ থেকে এক অন্যরকম প্রশংসা পেয়েছিলাম। তবে সত্যি কথা বলতে কি, যে উত্তর অন্য কেউ পারেনি কিন্তু আমি পেরেছিলাম, তাতে আমার নিজের ব্যক্তিগত কোনো কৃতিত্ব ছিল না, বরং একেবারে ছোটবেলা থেকেই বাবা এগুলো গল্পের ছলে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
বেশ কয়েক বছর পর আমি যখন ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছি তখন একবার আমি ব্রেবিউফ এ মি. দেয়াগ্নেউল্ট সহ আমার সময়ের শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেই সময় তাঁর সাথে তখন আমার নানা বিষয়ে অনেক আলাপ হয়েছিল। আমাদের সেই আলাপের মধ্যে বিশেষ বিষয় ছিল তার শিক্ষক জীবনের শুরুর শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আমার শিক্ষক জীবনের শুরুর শিক্ষাব্যবস্থা। আলাপের মধ্যেই তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি সেই আগের শিক্ষককেন্দ্রীক এবং কঠোর কড়া ক্লাস ব্যবস্থা থেকে সরে এসেছেন। এবং বর্তমানে পশ্চিম উপক‚ল থেকে আমি যে ছাত্রকেন্দ্রীক ও আধুনিক শিক্ষা বিষয়ে যেভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছি তিনি সেই ভাবেই তার ছাত্রদের পড়ান। তারপরও আমি কিন্তু তাঁকে সেদিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম, উনি ক্লাসে যে কঠিন ও কঠোরভাবে আমাদের পড়াতেন এবং পড়া করিয়ে নিতেন তার জন্য তিনি আমার জীবনের একজন প্রিয় শিক্ষক হিসেবে আমার শ্রদ্ধার আসনে আছেন। তাঁর এই জোর করে আমাদেরকে পড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দেবার যে চেষ্টা তা অনেকক্ষেত্রেই আমাদের জীবনে খুবই ফলপ্রসূ হতো।
যাহোক, মি. দেয়াগ্নেউল্ট এর ক্লাসে সেই বালক অবস্থায় ক্ল্যাসিক বিষয়ে জ্ঞান থাকার যে নাম ডাক হয়েছিল সেটা কিছুটা হোঁচট খেয়েছিল তাঁর শেষ ক্যুইজ ক্লাসে। এই ক্যুইজটা ছিল এরকম, যেখানে প্রতিটি ছাত্র নিজের ইচ্ছেমত উল্টানো একটা কার্ড তুলবে এবং কার্ডের উলটো পাড়ে যে বইটার নাম লিখা থাকবে সেটার ওপর পরীক্ষা নেয়া হবে।
আমি যে কার্ডটা তুললাম সেটাতে লেখা ছিল, ‘রবিনসন ক্রুসো’। নামটা দেখেই আমার মনটা উৎফুল্লতায় ভরে উঠেছিল। অন্যান্য তালিকা করা বইয়ের মত রবিনসন ক্রুসো আমি অনেক আগেই পড়েছিলাম। কার্ডটা তুলে আমার বারবার মনে হচ্ছিল অধ্যাপকের সামনে পরীক্ষা দেবার জন্য আমাকে আর বইটা পড়তে হবে না। সেজন্য ওটা আর পড়িওনি। আর এই না পড়ার ফলে তার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করার যে অভ্যাস তাতে আমার সেই কৈশোরিক অলসতা ধরা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সব কিছুর পরও আমি উতরে গিয়েছিলাম।
যখন ওপরের ক্লাসে উঠতে লাগলাম, তখন আমাদেরকে বিশেষ কোর্স নিতে হতো যা আমাদেরকে তৈরী করতো আমরা ‘কলা’ না ‘বিজ্ঞান’এ পড়বো। যদিও আমি ভাবতাম সি.ই.জি.ই.পি’র পর আমি সরাসরি আইন স্কুলে পড়বো, তারপরও আমি আমার পড়ার পরবর্তী ক্ষেত্রটাকে উম্মচিত রাখতে চেয়েছিলাম। সেজন্য আমি ইতিহাস আর পদার্থবিদ্যা দুটোই নিয়েছিলাম। বিষয় নির্বাচনে সাধারণত এমনটা হতো না। পদার্থবিদ্যা আমাকে বিশেষভাবে টানতো, এমনকি এখনো পদার্থবিদ্যার প্রতি আমার সেই প্রেমটা আছে। আসলে শক্তি ও বস্তুর মধ্যে মৌলিক ও প্রাথমিক বুঝাপড়া ও যে টান আছে, এ বিষয়টা আমাকে খুবই বেশি আকর্ষিত করতো।
ব্রেবিউফ এর কিছু এসাইনমেন্ট থাকতো সেই সময়ের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে। এক সেমিস্টারে কুইবেকের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আমাদের একটা বিতর্ক ছিল। বির্তকটার আসল মানে ছিল ফেডারেল ব্যবস্থার বিপক্ষে সার্বভৌমত্ব। আমার শিক্ষকের মনে হয়েছিল, বালক ট্রæডো’কে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে দেয়াটা খুব শালীন হবে না। ঠিক তেমনি ফেডারেল বিষয়টায় খ্রীস্টানত্বের যে প্রভাব থাকার ধারণা গোটা ক্লাসে ছিল, সেটাও আমাকে মাথায় রাখতে হচ্ছিল। যাহোক, এমন সবকিছুর একটা জোড়াতালি দিয়ে এবং আমার জীবনে আমি আশপাশ থেকে যা কিছু শুনে এসেছি, সবকিছু মিলিয়ে আমার মত করে একটা যুক্তি তর্ক দাঁড় করিয়েছিলাম। যদিও আমি জানতাম আমার বিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যে সব যুক্তি লাগবে তা কাটায় কাটায় উপস্থাপন করা খুব সহজসাধ্য কোনো বিষয় নয়, তারপরও আমি আমার সাধ্যমত ভালোভাবে বিষয়টা উপস্থাপন করার চেষ্টা চালিয়েছিলাম। আমি উপলব্ধি করেছিলাম, এ প্রক্রিয়ার আমি যে ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলাম, তা হচ্ছে, আমি আমার নিজের ব্যাপারে ও নিজের চিন্তার যে সত্যতা আছে সেটা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি কোনো বিষয়কে তর্কের মাধ্যমে খুবই বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করতে পারি না। কিন্তু সব সময়ই আমার হৃদয় পড়ে থাকে আমার মাতৃভূমি এই কানাডায়।
ক্লাসের সেই বিতর্কে সার্বভৌমত্ববাদীরা যুক্তি দেখিয়েছিল কুইবেকের যে সম্ভাবনা আছে তার বাস্তবায়নে কুইবেকের স্বাধীনতা খুবই প্রয়োজন আর সত্যি সত্যি কুইবেক স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হবার সব দিক দিয়েই দাবী রাখে। একজন গর্বিত ফরাসীভাষী কুইবেসার যিনি পনের বছরের বেশী কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাঁর সন্তান হিসেবে এবং আরেকজন কুইবেসার ব্রায়ান মুলরোনী যিনি বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টা ভেবে, আমি ভাবতেই পারছিলাম না কিভাবে এই প্রদেশটা আলাদা হবে। একজন গর্বিত কানাডিয়ান এবং একই সাথে একজন গর্বিত কুইবেসার হওয়ার মধ্যে আমি কোনো দ্ব›দ্ব খুঁজে পেতাম না। সত্যি বলতে কি, আমার সবকিছুর বিবেচনায় মনে হতো, রকি থেকে ক্যাবট ট্রেইল পর্যন্ত সবকিছু থেকে কুইবেকের যে এই ‘একলা চলা নীতি’ তা পরিহার করা উচিত। নিউ ব্রæনোস্কি, উত্তর অন্টারিও, দক্ষিণ ম্যানিটোবাসহ কানাডার বিভিন্ন জায়গাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ ফরাসী ভাষীদেরকে বাদ দিয়ে ফেলা নীতি নিয়ে সামনে এগুনোর কোনো মানে হয় না। বিতর্কের চুড়ান্ত সীমায় আমার মনে হয়েছিল, কুইবেসাররা যে অর্থনীতির যুক্তি দেখাচ্ছে তা একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ পৃথিবী তখন এগুচ্ছিল সীমানাবিহীন এক মুক্ত বাজার অর্থনীতির দিকে। পৃথিবীর নতুন স্রোত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় কী উপকার হতে পারে? এটা তাদের কিভাবে চরম সাফল্য এনে দিতে পারে? এসব কিছু ভেবে চিন্তে আমার কাছে সার্বভৌমত্ববাদীদের এই দাবীকে একেবারে যুক্তিহীন মনে হতো।
এবং মূলগতভাবে, ফরাসী ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার যে দৃষ্টিকোণ থেকে এ আন্দোলনের যুক্তি দেখানো হতো, সেটা আমার কাছে খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হতো না। আমি সব সময় মনে করতাম, দেয়াল তুলে কোনো কিছুকে অন্য কিছুর প্রভাব থেকে একেবারে মুক্ত করা যায় না এবং সেটা খুব ভালো কোনো ফল বয়ে আনে না। বরং দেয়ালের আবদ্ধতা তুলে দিয়ে পারস্পরিক সমঝোতা ও আদান প্রদানের মধ্য দিয়েই ভালো কিছু বের হয়ে আসতে পারে এবং এটাতে যেমন নিজের শক্তি বাড়ে তেমনি নিজের পরিচয়ও আরো সুদৃঢ় হয়।
কিন্তু সব জায়গাই যুক্তি খাটে না। সেটা ছিলো আশির দশক। তখন কম বয়সী কুইবেসারদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী হওয়ার প্রবণতাটা একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ব্রেবিউফ এর অধিকাংশ শিক্ষকই স্বাধীনতা দাবীর পক্ষে ছিলেন। কিন্তু তাঁদের চিন্তাভাবনা যাই হোক না কেন, তাঁরা কখনো তাঁদের মত ও মতবাদকে ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দেন নি বা ছাত্রদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন নি। এক্ষেত্রে আমাদের ইতিহাসের শিক্ষক আন্দ্রে চ্যামপ্যাগনি একেবারে আলাদা ছিলেন। তিনি জোর গলায় বলতেন, তিনি একজন ক্যুমিউনিস্ট এবং আমাদেরকে ক্যুমিউনিজমের সব ভালো দিকগুলো বলে সেই ধারাই প্রভাবিত করার চেষ্টা করতেন। এমনকি তিনি তাঁর ঘরের এক কোনায় লেলিন এর একটি আবক্ষ মূর্তি রেখে উচ্চ স্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রশংসা করতেন। কিন্তু তুমি যতই তাঁর কথা বার্তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখবে তাহলে বুঝতে পারবে সবকিছুই নির্ভর করে আসলে কাজটা কেমনভাবে করা হয়। সেই ১৯৩০ এর দিকের শ্রমিক শ্রেণীর স্বর্গ গড়ার যে স্বপ্ন কমিউনিস্টরা দেখতো, মি. চ্যামপ্যাগনি ঠিক তেমনটি ছিলেন না। তিনি এর বিপরীত ধর্মী মানুষ ছিলেন যিনি আমাদের মত বুর্জোয়া ক্লাসের ছাত্রদের মত ও চিন্তা ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করতেন। তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল আমাদের ভেতরের সেই ভাবনাকে জাগিয়ে তোলা যাতে আমরা নিজেরাই বুঝতে পারবো এই পুজিবাদী বিশ্ব থেকে মানব সমাজ কী পাচ্ছি।
ব্রেবিউফ এর অন্যান্য শিক্ষকদের মত মি. চ্যামপ্যাগনি স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষা ব্যবস্থাটায় অনুসরণ করতেন, কিন্তু কিছু সময় আসতো যখন তিনি তাঁর বিশেষ আবেগের সাথে ছাত্রদের পড়াতেন। তাঁর আর একটা স্বভাব ছিলো, তাঁর ছাত্রদের কেউ যদি তাঁর দিকে মনোযোগী না হতো তবে তার দিকে খুব স্নেহের সাথে তাঁর হাতে থাকা ইরেজার’টা ছুড়ে মারতেন। বেশ কয়েক বছর পর আমি যখন শিক্ষক হলাম, তখন আমার মধ্যেই এই অভ্যাসটা দানা বেঁধেছিলো। আন্দ্রে চ্যামপ্যাগনি কখনো আমাকে সোশিয়ালিস্ট হবার জন্য উদ্ধুদ্ধ করেন নি, কিন্তু তিনি আমার চোখ খুলে দিয়েছিলেন যে খোলা চোখে আমি আমার ছাত্রদের দেখলেই বুঝতে পারতাম তারা কী বিশ্বাস করে এবং কী ধরণের ভাবনা ভাবে। (চলবে)
মনিস রফিক ঃ চলচ্চিত্রকর্মী, টরন্টো, কানাডা