আতোয়ার রহমান
আমার একটি নদী ছিল, সেই নদীর নাম গিরাই
আমার একটি গ্রাম ছিল, সেই গ্রামের নাম গিরাই
বাড়ির সামনে চচকার বিল, পিছনে ক্ষীনতোয়া নদী,
কখনো সোনালি কখনো সবুজ আবার কখনো রূপালী,
এক চিতল মাছের সাদা পেট সদৃশ হাজির হয়ে
বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত ও উর্বর করে চলেছে সাত পুরুষ পরম্পরায়।
আমি বড় হয়েছিলাম এর ভাঙা পথের রাঙা ধুলায়।
আমি বিষন্ন হলে দুঃখ পেলে ডেকে নিত সে,
স্নেহজলমাখা হাত বুলিয়ে দিতো মাথায়।
নদীর ভালোবাসায় আমার দুহাতে পাখনা গজায়
হই রূপালী রঙের পাখি, আমি উড়তে থাকি,
পিছনে ফেলে মন খারাপের স্টেশন।
আমার কন্ঠ বদলে যায় সবুজে।
সকাল সিক্ত হতো দোয়েলের শিসে।
নদীর ধারে ফুটে থাকে সাদা কাশফুল,
ঢেউ খেলানো ধানের হাসিতে উপচে পড়ে দু’কুল।
শিমুলের গাড় লাল আর সরষে ফুলের হলুদে হৃদয় ব্যাকুল।
অস্তগামি সূর্যের নরম আলোয় গোধুলির শেষ রঙে,
নদীর জলে কেউ যেন আবির ঢেলে দেয়,
গাঙচিলেরা গাছে ফিরে যায়।
রাতের তারার আলো, স্নিগ্ধ জোতস্না, মোহময়
এর থেকে ছড়িয়ে পড়া এক নীল মায়াবি রেখা
ছুঁয়ে দেয় আমার শরীর, হাত পা মাথা
ফলভারে নুয়ে-পড়া পাইয়াল গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।
কাছেই শ্মশান, কচি প্রাণ, ভূতের ভয়
মা, ছিলো আমার একমাত্র নির্ভার ও অলৌকিক আশ্রয়
শ্বাসরুদ্ধ দুঃসময়ে মাথায় মায়ের স্নেহমাখা হাত,
সুরা পড়ে বুকে মুখে ফুঁ কে আর আমায় দেবে?
টক আমগাছের ছায়া মাড়িয়ে. বিল পার হয়ে,
সুপারি বাগানের মাঝখান দিয়ে
মাথার সিঁথির মতো সরু আঁকাবাঁকা পথ মাড়িয়ে
ঘুরি হাফ প্যান্টের পকেটে রঙিন মার্বেল নিয়ে,
সুপারি গাছের ফাঁক গলে আসা নরম রোদের আলিঙ্গনে।
ধান-কেটে-নেওয়া কোন জমির ওপর দিয়ে হাঁটা
থেকে থেকে কাঁটা বেঁধে পায়ে, পিঠে এসে লাগে রোদ্দুরের ফলা।
রাখাল বালক বাঁশি বাজাতে বাজাতে হেঁটে
যায় গ্রামের রাস্তা দিয়ে।
সেই বাঁশির সুরেই যদি কেটে যেত জীবনটা।
সারা দুনিয়ায় ঘুরি, কিন্তু পিছে টানে সে মফস্বলি তৃষ্ণাটা।