স্পোর্টস ডেস্ক : বার্সেলোনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন ফুটবল সুপার স্টার নিজেই জানিয়েছেন,বার্সেলোনায় আর থাকছেন না তিনি। বার্সাকে মেসি বাতিল করতে বলেছেন বর্তমান চুক্তি। বার্সেলোনার সঙ্গে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে তার। গত মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) বার্সেলোনা নিশ্চিত করেছে, এক ফ্যাক্স বার্তায় ক্লাব ছাড়ার কথা জানিয়েছেন মেসি। বিনামূল্যে (ফ্রি ট্রান্সফার) বার্সা ছাড়তে চান তিনি। তবে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ মেসিকে জানিয়েছে, যেখানে ইচ্ছে যেতে পারেন মেসি তবে তাকে নিতে চাইলে কমপক্ষে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে হবে আগ্রহী ক্লাবের। মেসিকে ধরে রাখতে বার্সেলোনায় বিক্ষোভ করেছে ভক্ত-সমর্থকরা।

তুলেছে ক্লাব সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের পদত্যাগের দাবি। তবে বার্তোমেউ জানিয়েছেন, পদত্যাগ করবেন না তিনি। বার্সেলোনার কঠিন সময়ে মেসির সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেননি ক্লাবের সাবেক ও আগামীর নেতৃত্বও। ক্লাবের সভাপতি পদপ্রার্থী টনি ফ্রেইজা বলেন, ‘বার্সেলোনার প্রতি অশ্রদ্ধা দেখালো মেসি। সে চলে গেলে সমস্যা নেই। মেসিই বার্সার সব নয়।’

ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চুক্তির ধারা নিয়ে আদালতে মুখোমুখি হতে পারে মেসি-বার্সা। বার্সেলোনার সঙ্গে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ রয়েছে ২০২১ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত। এই চুক্তিতে জুড়ে দেয়া আছে বিশেষ একটি শর্ত- চাইলেই প্রতি মৌসুমের শেষে বিনামূল্যে ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে পারবেন মেসি। তবে শর্ত কার্যকর করতে হলে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে রেকর্ড ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকাকে।

গত মঙ্গলবার বুরোফ্যাক্সের (প্রত্যয়িত পত্র) মাধ্যমে ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার কথা বার্সা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন মেসি। চুক্তির ওই বিশেষ ধারা কার্যকর করে বিনামূল্যে ক্লাব ছাড়তে চাইছেন ৩৩ বছর বয়সী তারকা। আর বার্তা সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, মেসির প্রস্থানের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে আইনি জটিলতা। বিষয়টি গড়াতে পারে আদালতে। কারণ, বার্সা বোর্ডের দাবি, চুক্তির ওই শর্ত অনুসারে গেল ১০ই জুনের মধ্যে মেসিকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হতো। তখন বিনামূল্যে তাকে ক্লাব ছাড়ার সুযোগ দেয়া হতো। কিন্তু আরো অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে সেই সময়। তাই চুক্তির ওই ধারা এখন আর কার্যকর হবে না বলে মত দিয়েছেন স্প্যানিশ ক্লাবটির কর্মকর্তারা। তবে মেসি ও তার আইনজীবীরা মনে করছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ২০১৯-২০ মৌসুম স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘায়িত হয়েছে। তাই বিশেষ শর্তটির মেয়াদও বাড়বে। অর্থাৎ আগামী ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তা কার্যকর করা যাবে। আর মেসি যেহেতু এই সময়ের আগেই তার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন, সেহেতু বার্সা ছাড়তে তার কোনো বাধা নেই।

মেসি বরাবরই বলে এসেছেন তিনি ক্যারিয়ার শেষ করতে চান ন্যু ক্যাম্পে। তবে সম্প্রতি বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে মনোমালিন্য ও সবশেষ বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রিয় ক্লাব থেকে মায়াটা যেন উঠে যায় মেসির। স্প্যানিয়ার্ড সাংবাদিক আলফ্রেডো মার্টিনেজ টুইট করেছেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) বার্সেলোনা ভক্তদের জন্য অতীব দুঃখের দিন। লিও মেসি ঘোষণা দিয়েছে, সে আর বার্সেলোনায় থাকতে চায় না। পেশাদার ক্যারিয়ারে বার্সেলোনায় ২৯ বছর কাটানোর পর ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘মেসি এই সপ্তাহে ট্রেনিংয়ে যোগ দেবেন না। তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।’

আলফ্রেডোর টুইটের সমর্থন জানিয়ে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা লিখেছে, ‘মেসি ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ছাড়তে চায়। বিস্ময় চিহ্ন ছাড়া এ বাক্য লেখা কঠিন।’ আর এ খবর শোনার পর মেসির সাবেক ক্লাব সতীর্থ কার্লোস পুয়োল টুইট করেছেন, ‘লিও, তোমার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান। অল মাই সাপোর্ট, ম্যান!’ পুয়োলের টুইটের রিপ্লাইয়ে হাততালির দুটি ইমোজি দিয়ে লুইস সুয়ারেজও জানিয়ে দিলেন তিনি সমর্থন করেছেন ব্যাপারটা। ভক্ত-সমর্থকদের একটা অংশ মনে করছে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেসি। আরেকটি অংশ মনে করে, মেসির বার্সাতেই ক্যারিয়ার শেষ করা উচিত।

স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম দেপোর্তেস কুয়াত্রোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি নবায়ন করবে নাকি ক্লাব ছেড়ে যাবেন এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেন মেসি। তবে সে আলোচনায় কোম্যানের কথাবার্তা পছন্দ হয়নি মেসির। প্রতিবেদনে কোম্যানের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে মেসিকে কোম্যান বলেছেন, ‘বার্সেলোনা স্কোয়াডে তুমি যেসব সুযোগ-সুবিধা পেতে সেগুলো আর পাবে না। তোমাকে এখন দলের জন্য সবকিছু করতে হবে। আমি অনমনীয় হতে যাচ্ছি। তোমাকে কেবল দলের কথা ভাবতে হবে।’ এমন কথা মোটেও ভালো লাগেনি বার্সেলোনাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া মেসির। এটা ঠিক বার্সার কারণেই তিনি মহাতারকা হয়ে উঠেছেন। ছোটবেলায় জটিল গ্রোথ হরমোন সমস্যায় ভুগছিলেন মেসি। তখন তার চিকিৎসার খরচ বহন করে কাতালান ক্লাবটি। ২০০০ সালে লা মাসিয়ায় এসে অভিজ্ঞ কোচদের পরিচর্যায় দ্রুত বিকশিত হন মেসি। এসব কারণে বার্সেলোনার প্রতি সব সময়ই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিদানও কম দেননি বার্সেলোনাকে। মেসির অভিষেকের আগে বার্সার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ছিল মাত্র একটি। এখন এ আসরে তাদের শিরোপা পাঁচটি। মেসির পারফরম্যান্সে গত ১০-১২ বছরে লা লিগাতেও আধিপত্য দেখিয়েছে বার্সেলোনা। মেসির আমলে সবমিলিয়ে ৩৪টি ট্রফি জিতেছে কাতালান ক্লাবটি। মেসি নিজেও জিতেছেন ৬টি ব্যালন ডি অর, ৬টি গোল্ডেন শু পুরস্কার। করেছেন ৬৩৪ গোল আর ৩৬টি হ্যাটট্রিক।