দিনভর আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে গত ২১ আগস্ট স্কারবরোর অ্যাডামস পার্কে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘নরসিংদী জেলা পিকনিক- টরন্টো, ২০২২’। পার্কের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আর গ্রীষ্মঋতুর উষ্ণ পরশ পিকনিকের পরিবেশকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। আবহাওয়ার ভবিষ্যতবাণী অবশ্য ছিল বজ্রপাতসহ দিনভর বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে প্রকৃতি তার সেই রুদ্ররূপ নিয়ে হাজির হয়নি সেদিন। সকালের দিকে থেমে থেমে দশ/পনের মিনিট হালকা বৃষ্টিপাত হলেও সারাদিন ছিল সুন্দর আবহাওয়া। ছিল মেঘ আর রোদের খেলা এবং সেই সাথে মৃদু হাওয়া।
সকাল থেকেই লোকজন আসতে থাকেন পিকনিক স্থলে। বেলা বারটা নাগাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। তার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার পর্ব।
এই পর্ব পরিচালনা করেন জনাব আসাবউদ্দিন খান, নজরুল ইসলাম ও বজলুর রহমান। শিশু-কিশোরদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জমে উঠে খেলাধুলার পর্ব। এই সময় মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে দর্শকরা তাদের উত্সাহ যোগান।
দুপুরে পরিবেশন করা হয় মধ্যাহ্ন ভোজ। অতিথিগণ ঐ সময় সুশৃংখলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করেন। মজাদার বিভিন্ন পদের খাবার খেয়ে সকলেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন।
অপরাহ্নে আবারও শুরু হয় খেলাধুলার পর্ব। এতে অংশ নেন বয়স্করা। ফুটবলসহ আরো কয়েক ধরণের খেলার আয়োজন ছিল বয়স্ক নারী-পুরুষদের খেলাধুলার পর্বে। স্বেচ্ছাসেবীরা সচেষ্ট ছিলেন সুচারুরূপে সবকটি খেলা পরিচালনা করার জন্য।
অন্যদিকে অংশগ্রহণকারীরাও স্বতস্ফুর্তভাবে মেতে উঠেন খেলায়। পিকনিক স্থলে আগত অতিথিগণ খেলাধুলার পাশাপাশি মেতে উঠেন অন্তরঙ্গ আড্ডায়। এরই ফাঁকে ফাঁকে তারা অবচেতন বা সচেতন মনে খুঁজে বেড়ান নিজ গ্রাম বা পাশের গ্রামের কাউকে পাওয়া যায় কিনা। কে জানে হয়তো কাছের বা দূরের কোন আত্মীয় বা বন্ধু বা এক সময়ের সহপাঠীকে খুঁজে পাওয়াও যেতে পারে পিকনিক স্থলে যার সঙ্গে সম্ভবত কয়েক দশক ধরে দেখা হয়নি।
করোনার কারণে গত দুই গ্রীষ্ম ঋতুতে নরসিংদী যাদের হোম ডিস্ট্রিক এবং বর্তমানে টরন্টো বাস করছেন স্থায়ীভাবে, তাদের উদ্যোগে কোন পিকনিক অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে সবাই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিলেন আবার কবে পিকনিক হবে এবং সবার সঙ্গে দেখা হবে। এবছর সেই সুযোগ আসাতে সবাই বিপুল উত্সাহ নিয়ে পিকনিকে যোগ দেন। শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণও ছিল এবার চোখে পড়ার মত এবং দিনভরই তারা মেতে ছিল খেলাধুলায়।
বিকেলে খেলা শেষে শুরু হয় পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে বিভিন্ন ইভেন্টে যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।
এবারের পিকনিকে র্যাফেল ড্র এর বড় আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ বিমানে টরন্টো-ঢাকা, ঢাকা-টরন্টো রিটার্ন টিকিট ও ৫৮ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি। বিমানের টিকিটটি স্পন্সর করেন রিয়েল এস্টেট ব্রোকার জনাব আনোয়ার কামাল। আর ৫৮ ইঞ্চি টিভি স্পন্সর করেন রিয়েলটর মনির ইসলাম। এছাড়াও আরো যারা র্যাফেল ড্রতে পুরস্কার দেন তারা হলেন, শেখ হাসিব হোসেন, মিঠু সোম, খন্দকার বিটু হক, আলাউদ্দিন কাজল, সোহেল, দুলাল ভৌমিক, জামসেদ মোবারক, নাসরিন সুলতানা ও বজলুর রহমান। এদের মধ্যে বজলুর রহমান ছাড়া বাকি সবাই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী।
এবারের পিকনিকে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর প্রায় আড়াইশত লোক। যারা পিকনিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তাদের মধ্যেও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাংলাদেশী মিডিয়ার প্রতিনিধিরাও। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশের বুরো অব ম্যানপাওয়ার এ্যান্ড এ্যামপ্লয়মেন্ট মিনিস্ট্রির সাবেক মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার) আব্দুস সাত্তার খান। এদের দুজনের জন্মই নরসিংদী জেলায়।
পিকনিকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তারা হলেন, মর্টগেজ ব্যবসায়ী এ বি এম খান, আসাবউদ্দিন খান (আসাদ) ও বজলুর রহমান (মারুফ)। তাজমহল ফুডস এর স্বত্তাধিকারী রিয়াজ আহমেদ। রিয়েলটর মনির ইসলাম, আবুল হাসনাত, রাকিব জামান ও রাফি আলম। ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ও ওমর জাহিদ।
মিডিয়া প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘সুখবর’ এর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি সৈয়দ শামসুল আলম, ‘বাংলা কাগজ’ এর প্রধান সম্পাদক এর এম আর জাহাঙ্গীর, ‘এনআরবি টিভি’র প্রধান নির্বাহী ও ‘বাংলা মেইল’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক শহীদুল ইসলাম মিন্টু, ‘নতুনদেশ.কম’ এর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক শওগাত আলী সাগর, ‘নন্দন টিভি’র স্বত্তাধিকারীও প্রধান নির্বাহী উত্পল দেবনাথ এবং ‘প্রবাসী কণ্ঠ’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক খুরশিদ আলম।
পিকনিক উদ্যোক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহজাহান সরকার, লুত্ফর কবীর কাজল, আবুল হাসনাত, আসাবউদ্দিন খান, এবিএম খান, বজলুর রহমান মারুফ, নজরুল ইসলাম, শওগাত আলী সাগর, আহসান উল্লাহ ও খুরশিদ আলম।
উল্লেখ্য যে, কোন সমিতি বা সংগঠনের ব্যানারে নয়, বাংলাদেশে নরসিংদী যাদের হোম ডিস্ট্রিক এবং বর্তমানে টরন্টো বাস করছেন স্থায়ীভাবে, মূলত তাদের উদ্যোগেই অনুষ্ঠিত হয় এই পিকনিক। ছবি : সিতম আহমেদ