জেমস এ রিসচার, অনুবাদ: কোরবান আলী : (প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে এক অপার শক্তি। এই শক্তিতে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে গেলে একজনের প্রয়োজন একান্তে নিজের ভেতরে প্রবেশ করা, নিজেকে উপলব্ধি করা আর নিজের শক্তি বৃদ্ধির চর্চায় নিজেকে নিমগ্ন করা। মানুষের এই নিমগ্নতা মানুষকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায়, যা অন্যদের মুগ্ধ করে। ‘স্পিরিচুয়াল লিডারশীপ’ বিষয়ক গ্রন্থের লেখক এবং ‘অর্গানাইজেশন ট্রান্সফরমেশন নেটওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জেমস এ রিসচার সু²ভাবে আলোচনা করেছেন মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই পরম শক্তি নিয়ে এবং কিভাবে এই শক্তিকে ব্যবহার করে সত্যিকারের নেতৃত্ব অর্জন করা যায়। জেমস এ রিসচার এর আলোচনার আধ্যাত্মিকতা ও নেতৃত্ব বিষয়টি সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’ এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী।)

চার.
পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্ব হচ্ছে সেই ধরনের নেতৃত্ব, যা অনুপ্রেরণা, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং দর্শনের সমন্বয়ে নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে সক্ষম। মানুষের পারস্পারিক স্বাভাবিক সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের নেতৃত্ব বলেন, “আমরা সকলে এখানে একত্রে আছি।” এ নেতৃত্ব বিশ্বাস করে “প্রত্যেক ব্যক্তি দলের একজন সম্মানিত ও মর্যাদাশীল ব্যক্তি” অবিচ্ছিন্নতা একটা প্রতিষ্ঠানকে সংশক্তি প্রদান করে যা একটা প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য অপরিহার্য। সংশক্তি পারস্পরিক সম্মানবোধ, পারস্পারিক মর্যাদাবোধ, সমতা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের দর্শন বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৬. বিশ্বাসবোধ ও খোলামেলা মনোভাব
অবিচ্ছিন্নতার মতো বিশ্বাসবোধ ও খোলামেলা মনোভাব একটা প্রতিষ্ঠানের সংশক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক অখন্ডতা বজায় রাখে। পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্বের জন্য এ গুণাবলি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। বিশ্বাস বোধ হচ্ছে অন্যান্যদের এবং নিজের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অন্যান্যরা সঠিকভাবে চিন্তা করবে এবং সঠিক আচরণ করবে এ ধরনের চিন্তা করার প্রবণতাই হচ্ছে বিশ্বাসবোধ। খোলামেলা মনোভাব বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি সতর্কতা, কপট, সত্যনিষ্ট। সত্যিকার অর্থে খোলামেলা মনোভাব বলতে নিজস্ব ব্যক্তিগত বিষয় কোন কিছু বাদ না দিয়ে অবলীলায় বলে দেবার ইচ্ছাকে বুঝায়, স্বভাবতই বিশ্বাস বোধ হচ্ছে খোলামেলা মনোভাবের পূর্বশর্ত।

বিশ্বাসবোধ হচ্ছে একটা দৃষ্টিভঙ্গি অথবা কোন কিছু দেখার প্রক্রিয়া। একজন নেতা একটা বিশেষ পরিস্থিতিকে যেভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। আমি কোন কোন সময় এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলি যা শুভ চিন্তার দৃঢ়চেতা মনোভাব ব্যক্ত করে। এটা একটা মৌলিক বিশ্বাস বোধ “আমি তোমার কাছ থেকে সব সময় ভাল কিছু আশা করি, তোমার ভাল কিছু অর্জনের জন্য আমি অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকি এবং তুমি কোন সমস্যায় পড়লে আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবো। তোমাতে শক্তি যোগাবো।” এ দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিশ্বাসবোধ কাজ করে।

এদিক থেকে বিচার বিশ্লেষণ করলে যে অদ্ভুত ধারণা জন্মে তা’হলো বিশ্বাসবোধ ও খোলামেলা মনোভাব অযৌক্তিক আচরণ সৃষ্টি করে। “মানুষ কি সবসময় আস্থাভাজন হয়?” এ প্রশ্নটির বিজ্ঞান সম্মত গবেষণা করলে কি উত্তর পাওয়া যেতে পারে? আমি নিশ্চিত যে, এ প্রশ্নের উত্তর হবে ’না’। কাজেই মানুষকে বিশ্বাস করা অযৌক্তিক। নেতারা সম্ভবতঃ আর দশজনের চেয়ে আলাদা। তারা চুড়ান্তভাবে সচেতন যে মানুষ সবসময় আস্থাভাজন নয়। মানুষ কোন কাজ করার জন্য সম্মতি প্রকাশ করলেও পরে তা সম্পন্ন করে না। কখনই একশ ভাগ দায?িত্ব পালন করে না। মানুষ বহুভাবে আরেকজন মানুষের এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধন করে থাকে। এতদ সত্বেও রপান্তরক্ষম নেতৃত্ব মানুষকে বিশ্বাস করতে পছন্দ করেন।
বেশিরভাগ মানুষ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বিশ্বাস করে। কিন্তু একজন পরিবর্তনক্ষম নেতা মানুষকে বিশ্বাস করতে হয় বলে বিশ্বাস করে। এটা মানুষকে দেখার একটা দৃষ্টিভঙ্গি। অভিজ্ঞতা বলে এ বিশ্বাসবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠানে ভাল ফলাফল বয়ে আনে। একজন পরিবর্তনক্ষম নেতা এক ধরনের স্ববিরোধী সত্য উক্তি মাফিক কাজ করে থাকেন। উক্তিটি হচ্ছে, আমি মানুষকে বিশ্বাস করতে পছন্দ করি এবং এমনকি যারা সবসময় আস্থাভাজন নয় তাদের সাথেও খোলামেলা আচরণ করি’। কিছু সংখ্যক পরিবর্তক্ষম নেতৃবৃন্দ এ স্ববিরোধী উক্তিকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু বেশির ভাগ নেতৃবৃন্দ মানুষকে বিশ্বাস করতে যেয়ে স্নায়বিক চাপে ভোগেন। এ উক্তিকে বাস্তবায়নের জন্য দরকার পর্যাপ্ত মানসিক শক্তি ও কর্ম প্রচেষ্টা। যখন বিশ্বাস করার কোন যুক্তি বা আলামত দৃষ্টিগোচর হয় না সে সময় বিশ্বাস করার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও পছন্দ।

বিশ্বাস প্রবণতা একজন নেতার চার পাশে শক্তিশালী প্রতিরোধক সৃষ্টি করে। এ শক্তিতে মানুষ আকৃষ্ট হয়, কারণ নেতার সামনে নিজেকে অপেক্ষাকৃত বড় মানুষ ভাবার সুযোগ পায় এবং আলোড়িত হয়। নেতার বিশ্বাসবোধ তাদের আত্মবিশ্বাসকে বৃদ্ধি করে এবং নেতার কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকলে কর্মীবৃন্দের মনে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের শক্তিশালী প্রতিরোধক একজন পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্বের চার পাশে বিরাজ করে। যা কিছু অনুসারীদের ত্যাগ স্বীকারে উত্সাহিত করে তার মধ্যে এ ধরনের শক্তিশালী প্রতিরোধক একটা গুরত্বপূর্ণ উপাদান। এতদ সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি যদি সংকীর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন হন অথবা কোন ব্যক্তি যদি খোলামেলা মানসিকতার হয়ে থাকেন, তবে নেতৃবৃন্দ কোনটি পছন্দ করবেন?

একজন নেতার বিশ্বাস করার প্রবণতার সাথে নেতার খোলামেলা হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি সংশিষ্ট। খোলামেলা হওয়া কথাটি দ্বারা শুধুমাত্র তথ্য আদান প্রদানের কথা বলছিনা। আমি ব্যক্তিগত বিষয়ে একজন ব্যক্তির আবেগঘন প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশকে ইঙ্গিত করছি। পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্ব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নিজেকে মেলে ধরেন, যাতে কর্মীবৃন্দ নেতার অকপট দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্পষ্টবাদিতায় অবাক হয়। খোলামেলা হওয়া নেতার এমন একটি মূল্যবান চারিত্রিক বৈশিষ্ট যা ভালমন্দ আলোচনার সূত্রপাত ঘটায় তথা প্রাণবন্ত আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম। যখন নেতা খোলামেলা তখন অন্যান্য পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকে, জটিলতা সৃষ্টি হয় না। হঠাত দেখা যাবে আপনি ঘটনার আসল কারণগুলো বলে ফেলেছেন। নেতা খোলামেলা না হলে আপনি হয়তোবা এগুলো বলতেন না। খোলামেলা পরিবেশ সৃষ্টি না হলে একজন ব্যক্তি হয়তোবা এভাবে বলতে পারেন – এ মতামতটি যে খুব যৌক্তিক এবং মূল্যবান সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু খোলামেলা পরিবেশ সৃষ্টি হলে ঐ ব্যক্তিটিই এভাবে বলতে পারেন -“সত্যিকথা বলতে কি, মতামতটি চমত্কার এবং কার্যকর কিন্তু আমি এ কাজে নিজেকে জড়াতে চাইনা। কারণ এখানে লতিফ সাহেবের সাথে কাজ করতে হবে। ফলে আমরা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবোনা।”

একটা বিশেষ মূহুর্তের কথা ভাবুন যখন আপনি ব্যবস্থাপক বা ক্ষমতা প্রাপ্ত কাউকে কোন বিষয়ের উপর বিছু বলতে চান কিন্তু দেখলেন লোকটি সেখানে নায়। সে মূহুর্তে লোকটিকে না পেয়ে আপনি হালকা ভীতিকর কিছু বলা শুরু করলেন, কিন্তু সেখানে উপস্থিত নেতা প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলেন। অনেক ব্যবস্থাপক এ ধরনের নেতার সাথে কথা বলার সময় যখন প্রাসঙ্গিকভাবে আবেগঘন বিষয় চলে আসতে থাকে তখন সহসা নিজেকে সামলে ফেলেন।
অনেক ব্যবস্থাপক সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন এবং এমনকি এভাবে বলে থাকেন “যদি আপনাদের কোন সমস্যা থাকে অথবা কোন বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করতে চান তবে সংকোচের কোন কারণ নেই, বলতে পারেন।” কিন্তু এ অবস্থায় অনেক গুরত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় নাও আসতে পারে। কোন কর্মী তার কর্মকর্তার সাথে অকপটে সবকিছু বিষয় আলোচনা করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন যদি কর্তা ব্যক্তিটি খোলামেলাভাবে মতবিনিময় করেন। অন্যথায় কর্মী সর্বোচ্চ ঝুঁকি অনুভব করেন, তিনি আলোচনা শুরু করবেন এ ধরনের প্রত্যাশা করা অবান্তর।

এ ধরনের খোলামেলা মনোভাব ও বিশ্বাসবোধ নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্মান করতে চান তার উপর। আপনি যদি একটা সামরিক কায়দার প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চান এবং কর্মীদের কাছ থেকে “জী হুজুর” “না হুজুর” শুনতে চান তবে এ ধরনের খোলামেলা মনোভাবের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আপনি এমন একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চান যেখানে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের পুরস্কার থাকবে, সহযোগিতা ও যোগাযোগের উপর জোর দেয়া হবে, তথ্যের সাবলীল প্রবাহ বিদ্যমান থাকবে, যেখানে কর্মীবৃন্দ একটা দর্শনের প্রতি প্রতিশ্রæতিশীল হবে এবং দর্শন বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করবে। তবে অবশ্যই পারস্পরিক বিশ্বাসবোধ ও খোলামেলা মনোভাবের প্রয়োজন আছে।

৭. মানুষ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান
নেতৃত্ব মূলতঃ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটানোর দক্ষতা। একজন নেতা একটা দর্শন থেকে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক খুঁজে বের করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেন। পরিবর্তনক্ষম নেতৃবৃন্দের চারিত্রিক বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সকলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া। এ সবের মূল ভিত্তি হচ্ছে মানব প্রকৃতিতে গভীর জ্ঞান। পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্ব মানুষের খুব গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম, স্পর্শ করতে সক্ষম। আপনি যদি আপনার নিজের গভীরতম স্তরে প্রবেশ করতে না পারেন তবে কখনই মানুষকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারবেন না। আপনি কেবল নিজস্ব অভিজ্ঞতার স্তরে মানুষকে নিয়ে যেতে পারবেন। পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্বের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা থাকা জরুরী, এ বিষয়টি বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনোই খোলামেলাভাবে আলোচনা করা হয় না। এখানে কতকগুলো জীবনভিত্তিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলো যা নেতৃবৃন্দের জানা প্রয়োজন। তবে আত্মদর্শনের কাজে অত্যন্ত সহায়ক হচ্ছে সেমিনারে অংশগ্রহণ, পরিবর্তনক্ষম বইপত্র পাঠ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সাথে কাজ করা ইত্যাদি ।

বৈপরীত্য। একজন মানুষের মধ্যে পরস্পর বিরোধী চারিত্রিক বৈশিষ্ট থাকবে এটি বাস্তব এবং প্রকৃতিগত বিষয়। একজন মানুষের মধ্যে বহু সংখ্যক বৈপরীত্য থাকতে পারে। এক ব্যক্তির স্ত্রী পেটানোর স্বভাব আছে, আবার সে বন্ধুত্বপূর্ণ ও অন্যের উপকার হয় এমন অনেক কাজ করে থাকেন। একজন অত্যন্ত সত্যপরায়ন ব্যক্তি কিন্তু কোন এক সময় মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন, চুরি করতে পারেন। একজন নারী তার স্বামীকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে আন্তরিকভাবে বলতে পারেন, “আমি তোমাকে ভালবাসি”। আবার একই সময়ে একই নারী তার স্বামীকে তার কিছু আচরণের জন্য ঘৃণা করতে পারেন। একজন নেতা হিসাবে আপনি কোন ব্যক্তিকে কোন কাজ সমাধা করার জন্য অনুরোধ করলেন এবং ঐ ব্যক্তি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যে আপনি তাকে অনুরোধ করেছেন। একই সময়ে আপনি ক্ষমতা দেখিয়েছেন এ কথা ভেবে ক্ষুদ্ধ হতে পারেন। সর্বদা একই সময়ে এ বৈপরিত্য ক্রিয়াশীল। আপনি একজনের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট আচরণ আশা করছেন, দেখবেন সে একেবারে বিপরীত আচরণ করছে। আমি উদাহরণটি ধনাত্বক থেকে ঋণাত্বক আকারে উপস্থাপন করেছি। আপনারা ইচ্ছা করলে এটিকে ‘ঋণাত্বক থেকে ধনাত্বক আকারে উপস্থাপন করতে পারেন। একজন ব্যক্তির যে কোন একটি ঋণাত্বক কর্মকান্ডের পিছনে একটা ধনাত্বক মানসিক অবস্থা বিরাজমান, যেখানে প্রবেশ করা সম্ভব। যখন একদল মানুষ রাগান্বিত থাকেন তখন এ অবস্থা স্বচ্ছ হয়ে উঠে। যদি এ রাগান্বিত অবস্থাকে খোলামেলা এবং গঠন মূলকভাবে মোকাবেলা করা হয় তবে দেখবেন দ্রæত পরিবেশ শান্ত হয়ে আসছে। লোকজন বেশ হাসিখুশি উত্সাহ উদ্দীপনা এবং গর্বের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে। “কয়েকঘন্টা আগে এ মানুষগুলোর অবস্থা কেমন ছিল?” এ দৃশ্যপট স্বরণ করাই হচ্ছে শক্তিশালী চেতনাবোধ।

প্রেক্ষিত। প্রেক্ষিত বিবেচনা করা দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। মানুষ হচ্ছে এক ধরনের প্রেক্ষিত খুঁজে ফেরা প্রাণি। সে সব সময় একটা প্রশ্নের উত্তর পেতে সচেষ্ট হয়। প্রশ্নটি হচ্ছে “এর অর্থ কি?” যে কোন পরিস্থিতির প্রেক্ষিত যদি সহজ বোধ্য না হয়, দ্রুত না বুঝা যায় তবে মানুষ একটা কিছু তাত্ক্ষণিকভাবে প্রেক্ষিত হিসাবে অনুমান করে ফেলেন। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের সহযোগিতা করার জন্য কাজ করে। তথ্যের ভিত্তিতে ধারণার পরিবর্তন ঘটায় এবং পৃথিবীতে কাজ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করে।

(প্রিয় পাঠক ভুলক্রমে গত সংখ্যায় ৫ কিস্তির লেখাটা ছাপা হয়েছে। সেজন্য, পড়ার গতিতে ছেদ পড়েছে। এবারের সংখ্যায় ৪ কিস্তির লেখা ছাপা হল। অনুগ্রহ করে, ধারাবাহিকতায় এই লেখাটা আগে পড়বেন। আমার এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আগ্রহী পাঠকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।) (চলবে)