জেমস এ রিসচার, অনুবাদ: কোরবান আলী : (প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে এক অপার শক্তি। এই শক্তিতে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে গেলে একজনের প্রয়োজন একান্তে নিজের ভেতরে প্রবেশ করা, নিজেকে উপলব্ধি করা আর নিজের শক্তি বৃদ্ধির চর্চায় নিজেকে নিমগ্ন করা। মানুষের এই নিমগ্নতা মানুষকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায়, যা অন্যদের মুগ্ধ করে। ‘স্পিরিচুয়াল লিডারশীপ’ বিষয়ক গ্রন্থের লেখক এবং ‘অর্গানাইজেশন ট্রান্সফরমেশন নেটওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জেমস এ রিসচার সুক্ষ্মভাবে আলোচনা করেছেন মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই পরম শক্তি নিয়ে এবং কিভাবে এই শক্তিকে ব্যবহার করে সত্যিকারের নেতৃত্ব অর্জন করা যায়। জেমস এ রিসচার এর আলোচনার আধ্যাত্মিকতা ও নেতৃত্ব বিষয়টি সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’ এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী।)

পাঁচ.
মানুষের অনুমানকৃত খুব সাধারণ প্রেক্ষিত হচ্ছে ‘আমার জন্য’ না ‘আমার বিরুদ্ধে’। মানুষ অন্যদের ভাবে মানুষটি বা মানুষগুলো আমার পক্ষে না আমার বিপক্ষে। পরিস্থিতি তার পক্ষে না তার বিপক্ষে। একদল কর্মী একজন ভদ্র মহিলার কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। প্রস্তাবটি তার কাছে বিস্বাদ লাগলো। তাদের কাছে তার প্রথম প্রশ্ন ছিল “আপনারা কারা! কোন্থেকে এসেছেন!’। আপনার চারপাশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলোর প্রেক্ষিত বর্ণনাপূর্বক আপনি মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন। যেহেতু আপনি ঘটনাটি সম্পর্কে জানেন বা ঘটনাটির সাথে আপনি সংশ্লিষ্ট কাজেই আপনিই সঠিক তথ্য দিতে পারবেন। যা অনুমানকৃত প্রেক্ষিতের চেয়ে অনেক শ্রেয়। কাজেই এটি আপনার জন্য একটা সুযোগ।

প্রত্যাশা এবং দর্শন। উপরের আলোচনার সূত্র ধরে আর এক ধাপ এগোনো যাক। আমাদের সমস্ত কাজ এবং বিশ্বাসবোধ একটা প্রেক্ষিত থেকে উদ্ভূত ও লালিত। মানুষের জীবনে উচ্চমানের প্রেক্ষিত সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করা সবচেয়ে বড় কাজ। কেননা শুধুমাত্র উচ্চমাত্রার প্রেক্ষিতই পৃথিবীতে ভালো কিছু করার জন্য মানুষকে প্রচন্ড ক্ষমতাবান এবং সম্ভাবনাময় করে তোলে। পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্ব সবসময় এ কাজটিই করে থাকেন। মানুষের কাছে আপনার যদি কোন ধনাত্বক প্রত্যাশা থাকে তবে তারা সাধারণত আপনার প্রত্যাশা পূরনের জন্য উঠে দাঁড়ান। আপনার যদি এমন কোন দর্শন থাকে যা মানুষকে নিজের জীবন যাপনকে অন্যের জন্য সেবা প্রদানের তাগিদ দেয়, তবে তারা আপনার এই দর্শনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবেন এবং একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। মানুষকে সাহায্য করার ক্ষমতা এবং প্রেক্ষিত তৈরি করে। এ প্রেক্ষিতই তাকে অনেক দূর এগিয়ে নেয় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।

ফলাফল বের করে আনার যোগ্যতা। মানুষ যন্ত্র নয় এক ধরনের জটিল প্রাণি। সঠিক পরিবেশ পেলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারেন। চমৎকার ফলাফল বের করে আনতে পারেন। ভুল পরিবেশে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারেন। মানুষ এমনই বিস্ময়কর প্রাণি যারা সামান্য প্রতিক‚ল অবস্থায় থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানের অগোচরে প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে ব্যপক ক্ষতি সাধন করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এমন একটা ভন্ডামী শুরু করবে যা নিরলসভাবে কর্মরত কর্মীদের কর্মতৎপরতায় ফাটল সৃষ্টি করে। একজন নেতার জানা উচিৎ কোন পরিবেশ সৃষ্টি করলে মানুষ ভালো ফলাফলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে আর কোন পরিবেশ ঋণাত্মক ফলাফল বয়ে আনবে। এগুলো জেনেই তাকে সঠিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

নির্বিঘ্নতা, নিরাপত্তা ও সমাজিক মর্যাদা। ভাল ফলাফল পাবার জন্য মানুষকে নির্বিঘেœ কাজ করার ক্ষমতা দিতে হবে। সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ভালো কাজের সমর্থন দিতে হবে। তবে এটি সত্য যে প্রায়ই এ সমস্ত বিধি লঙ্ঘন করা হয়। পরে যখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা অবাক হই এবং বলি একটা প্রতিষ্ঠানের লোকজন এমন নৈরাশ্যজনক আচরণ করে কি করে!

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সংবেদনশীল উপাদন। অনেক প্রতিষ্ঠানে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার গুরত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে আর্থিক উপাদানগুলোকে নির্দেশ করা হয়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সংবেদনশীল উপাদান হচ্ছে তার আবেগ। পক্ষান্তরে যুক্তিই যেখানে মৌলিক সিদ্ধাগ্রহণকারী উপাদন সেখানে মানুষের ভূমিকা কি হবে বা মানুষ কি করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কেন কর্মক্ষেত্রে আবেগের স্মরণাপন্ন হন। আবেগ তাড়িত হলে সমস্যা নেই কিন্তু আবেগ অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় যা মানুষের মনে রাখা প্রয়োজন।

সরাসরি যোগাযোগ। সরাসরি যোগাযোগ কাজ করে। মানুষকে সত্য কথা বললে কাজ হয়, যদি তারা আপনার মতামত বা বিশ্লেষণ শুনতে পছন্দ করেন। এটি সত্য যে আপনি সরাসরি সত্য কথা না বলে একটা সম্ভব্য সংঘর্ষ এড়িয়ে সুকৌশলে আপনার কাজ হাসিল করতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে আপনার প্রতিষ্ঠানকে কত বড় মূল্য দিতে হবে তা গুরত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

৮. জনসংগঠন নির্মানের দক্ষতা
মানুষ দলে কিভাবে কাজ করেন, দলগুলোকে কাঠামোবদ্ধ করার সঠিক উপায় কোনটি এবং একটা প্রতিষ্ঠান কিভাবে দক্ষতার সাথে কাজ করবে তা একজন পরিবর্তনক্ষম নেতার জানা প্রয়োজন। একজন পরির্তনক্ষম নেতার জনসংগঠন নির্মান সম্পর্কে যা কিছু জানা দরকার সেগুলো নিচে দেয়া হলো।

দলকে তার নিজের স্বার্থেই বেঁচে থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই দলে পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করেন। আমাদের দলবদ্ধভাবে চলার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মানুষ দলে খুব কম সময় ব্যয় করেন। দল কিভাবে কাজ করে এটুকু জানাই তাদের উদ্দেশ্য। দলগত ক্রিয়-প্রতিক্রিয়া এবং দলের দুজনের মধ্যে ক্রিয়-প্রতিক্রিয়া এ দুটির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তথাকথিত দলীয় গতিশীলতা দলের প্রধান শক্তি। কিছু বিশেষ ধরনের ইস্যু দলে সবসময় কাজ করে। যেমন দলভূক্ত হওয়া, দল ত্যাগ করা, দলে অন্তর্ভূক্ত করা, দল থেকে বাদ দেয়া, নিরাপত্তা, খোলামেলা মনোভাব, ক্ষমতা এবং দলীয় নিয়ম-কানুন। একজন ব্যক্তি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে দলীয় ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন এবং দক্ষভাবে দলের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন।

প্রত্যেক ব্যবস্থাপক এবং নেতাকে দলীয় গতিশীলতা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনার দলের ভিতর এবং বাহির সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকলে আপনি উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে থাকবেন। পরিবর্তক্ষম নেতৃবৃন্দ সভাবগতভাবেই দল পরিচালনায় অসাধারণভাবে দক্ষ হয়ে থাকেন। তাঁরা সময় সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন, দলে ক্রিয়াশীল ব্যক্তিগত ক্ষমতার ধরণ, দলে কিভাবে সততা বজায় রাখা যায়, কিভাবে খোলামেলা থাকা যায়, কিভাবে দলীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখা যায় এবং এ ধরণের চরিত্রিক বৈশিষ্টগুলো অন্যান্য সদস্যরা কিভাবে অর্জন করবেন সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার কাজে অত্যন্ত দক্ষ। আপনি যখন দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করবেন তখন স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন, খোলামেলা হবেন, দলীয় ফলাফল বের করে আনার ক্ষেত্রে নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন যা আপনার প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্বকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে।

নির্ভরযোগ্য দল। উপরে নির্দেশিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে অপনি ধীরে ধীরে দল এবং দলীয় প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করতে পারবেন। অনেক ব্যবস্থাপক দলের দুজনের মধ্যে পারস্পরিক মত বিনিময় তুলনামূলকভাবে বেশি পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে খোলামেলা আলোচনায় সাচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু বড় দলে তাদের আচরণ সীমিত হয়ে যায়, অনুৎপাদনশীল আচরণ করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন। এ রকম ঘটার কারণ হচ্ছে তারা আসলে দলীয় প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসই করেন না। তারা দলে নিরপত্তাহীনতায় ভোগেন।

দলীয় প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করতে শেখা প্রাতিষ্ঠানিক সফলতার জন্য অপরিহার্য কারণ দলীয় কার্যক্রম একটা প্রতিষ্ঠানের কণ্ঠস্বরকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠানে খোলামেলা, আনন্দঘন এবং উৎপাদনশীল সভার আয়োজন করা জরুরী। একজন সহায়ক বা অংশগ্রহণমূলক প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করে আপনি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের গুরত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পারেন। এ পরিবেশ আপনাকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাবে যেখান থেকে আপনি একটা সভায় অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বাস করতে পারবেন। কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দলের উপর আস্থা সৃষ্টি হবে।

প্রতিষ্ঠান তার নিজের স্বার্থেই টিকে থাকে। অনেকগুলো দলের কাঠামোবদ্ধ রূপই প্রতিষ্ঠান। দলের যেমন জীবন আছে তদ্রপ প্রতিষ্ঠানেরও জীবন আছে এবং প্রতিষ্ঠান কাজ করে। প্রতিষ্ঠানের মানুষকে এভাবে মন্তব্য করতে শোনা যায় আমার মনে আছে যখন রউফকে কোন কিছু বলার প্রয়োজন হতো তখন হলের মধ্যে রউফের নাম ধরে জোরে চিৎকার করতাম। কিন্তু বাছা এটি ভিন্ন পরিবেশ। এখানে যথেচ্ছা চিৎকার করা যায় না। কোন প্রতিষ্ঠানে যা ইচ্ছা তা করা যায় না। কারণ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জীবন আছে, নিজস্ব জীবনী শক্তি আছে, নিজস্ব জীবন কাহিনী আছে, নিজস্ব একটা পরিচয় আছে, মর্যাদাবোধ আছে। মানুষের মতো প্রতিষ্ঠানেরও আত্মা এবং জীবনকাল আছে।

মানবিক দিকসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া। প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে প্রবেশ করার একটা উপায় হচ্ছে মানবিক দিক গুলোকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া। কথাটি দ্বারা আমি বোঝাতে চেয়েছি সচেতনভাবে কিছু কাঠামো এবং কিছু প্রতীক সৃষ্টি করুন যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মানবিক দিক সম্পর্কে আপনার উদ্বেগের কথা সংশিষ্ট সকলকে স্মরণ করিয়ে দেবে।

উদাহারণঃ
* প্রতিষ্ঠানে একটা সাপ্তাহিক সামাজিক বৈঠকের ব্যবস্থা থাকা যেখানে সবার অংশগ্রহণ থাকবে
* সফলতার সাথে কোন কাজ সম্পন্ন করার জন্য ব্যক্তি এবং পুরো টিমের জন্য স্বীকৃতি ও পুরোষ্কারের ব্যবস্থা থাকা
* নিশ্চিত হন আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে প্রত্যেকটি বিভাগের কাজ সম্পর্কে জানেন
* আপনার কোম্পানির নিজস্ব শ্লোগান তৈরি করুন
* বৃহদ পরিসরে কৌতুক সমাবেশের ব্যবস্থা থাকতে পারেন
* দলগুলোর মধ্যে হালকা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি করুন
* হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের গভীর বন্ধন সৃষ্টির জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে নিউজলেটার ছাপানোর ব্যবস্থা করুন
* কোম্পানির টি-সার্ট তেরি করুন
* প্রতিষ্ঠানের সকলের সামনে হাস্যরস পরিবেশন করুন
* মানবিক সম্পর্ক বিষয়ক বাসায় তৈরি সৃজনশীল পোষ্টার প্রতিষ্ঠানে লাগিয়ে দিন
* পর্যায়ক্রমে সকলের দলীয় ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করন

এগুলো আপাত দৃষ্টিতে বোকামী মনে হতে পারে কিন্তু উলেখিত সমস্ত কার্যক্রমই প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠান যত বড় এ সমস্ত কার্যক্রম তত বেশি গুরত্বপূর্ণ। এ গুলো মানুষকে অনুভব করতে শেখায় তারা এখন একটা প্রতিষ্ঠানে আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক সংশক্তি বৃদ্ধি পায়।

প্রতিষ্ঠান কাজ করে। অনেক গতানুগতিক ব্যবস্থাপক সংকীর্ণভাবে ফলাফল কেন্দ্রিক হয়ে থাকেন। তারা বলেন, ‘আমরা একটা ফলাফল বের করে আনতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন মাত্র কয়েকজন মানুষের জোর কদমে চলা এবং ফলাফল বের করে আনার প্রক্রিয়ায় আরও কম সংখ্যক কণ্ঠস্বর। তাহলেই উদ্দেশ্য অর্জন হবে। প্রতিষ্ঠানকে ফলাফল বের করে আনার মেশিন হিসাবে দেখা হয়। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক মনে করেন, প্রতিটি মানুষের বদলে যদি একটা করে যন্ত্রমানব বসিয়ে দেয়া হয় তাহলেই সমস্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে মানুষকে প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাবা হয় না সহযোগী বা অনুষঙ্গ ভাবা হয়। তারা মানুষকে গুরত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে স্বীকার করেন না। যখন তারা এ সমস্ত চিন্তা-ভাবনার বিপরীত কিছু দেখেন তখন বলেন এটি ব্যতিক্রম। যেমন ’শীবলীর উৎপাদন কাজে মনোযোগ নেই। তার কি স্ত্রীর সাথে দিনকাল ভালো যাচ্ছে না, না কি অন্য কিছু’।
একদিকে পরিবর্তনশীল নেতার প্রতিষ্ঠানের সাথে গতিশীল সম্পর্ক, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান নিজেই কাজ করে, কর্মী শুধুমাত্র সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন এ দুটি ধারনা দিয়ে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যাবে না। প্রতিষ্ঠানকে তার কর্মীর প্রতিও যথেষ্ট মাত্রায় দ্বায?িত্ববান হতে হবে, তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে হবে। সুতরাং একটা প্রতিষ্ঠান যদি তার কর্মীদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে না এগিয়ে আসে তবে কখনোই কাংখিত ফলাফল পাওয়া যাবে না।

একটা প্রতিষ্ঠান তখনই সবদিক থেকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল বের করে আনতে সক্ষম হয়, যখনঃ
* প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ উৎপাদন করে এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকে
* প্রতিষ্ঠানটি সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করে
* কর্মীবৃন্দ যখন নিজ নিজ কাজ দ্বায়িত্বপূর্ণভাবে, কার্যকরভাবে এবং পেশাদারিত্বের সাথে সম্পন্ন করে
* শক্তিশালী দলীয় আনুগত্য ও অন্যান্য দলীয় অনুভূতি বজায় থাকে
* কর্মীবৃন্দ একটা সাধারণ দর্শন এবং লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হন
* কর্মীদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহযোগিতা বজায় থাকে ও সামাজিক অনুভূতিগুলো প্রবল থাকে
* সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদ্ধতি চালু থাকে
* কর্মীবৃন্দ নিজেদের সুখী ভাবে এবং তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্তষ্ট থাকে

কিছু ব্যবস্থাপক উপরের তালিকার প্রথম তিনটির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং তারা ভাবেন বাকি প্রতিষ্ঠানিক পরিবেশের তেমন কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে এখানে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ই পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল। ভীতি প্রদর্শন অথবা বন্ধুত্বসুলভ আচরণের ভান করে আপনি একটা নির্দিষ্ট মাত্রার ফলাফল মানুষের কাছ থেকে আদায় করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি সর্বোচ্চ মাত্রার কৃতিত্ব অর্জন করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই অধিকতর মানবিক এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এখন বিবেচনা করুন উপরে উল্লেখিত সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কী সম্ভব? না কী আমরা ফলাফল বের করে আনার জন্য যান্ত্রিক একটা পরিবেশ সৃষ্টি করবো যা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত শক্তি এবং সামর্থকে হত্যা করে? একজন প্রাতিষ্ঠানিক নেতা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করবেন? তিনি কী সনাতন সামন্ততন্ত্র অনুসরণ করবেন না যৌক্তিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দ্বারা বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠানকে পরিচালিত করবেন যা প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন এবং কর্মীর সৃজনশীলতাসহ কাজ করার সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে সমর্থন করে?

৯. চারিত্রিক শুদ্ধতা, সততা ও নীতিবোধ
চারিত্রিক শুদ্ধতা সততা ও নীতিবোধকে কিছুটা মাতৃত্ব বা মায়ের আচরণের সাথে তুলনা করা যায়। কোন প্রতিষ্ঠানে চারিত্রিক সততা ও শুদ্ধতা স্থিতিশীল থাকলে সে প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী কাঠামোগত বৈশিষ্ট, সংশক্তি এবং সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সমুন্নত থাকে। একটা প্রতিষ্ঠানে যখন সততা স্বচ্ছতা এবং দৃঢ় নীতিবোধের অভাব প্রতিফলিত হয় তখন এটি একটা ঘুণেধরা পচা কাঠামোর রূপ নেয়। সামান্য আঘাতেই নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে বা ভেঙ্গে যেতে পারে। পোকা-মাকর ও পরজীবী জীবাণুর আখরায় পরিণত হয়। আর যে প্রতিষ্ঠানে সততা, স্বচ্ছতা এবং নীতিবোধের দৃঢ? ভিত্তি রয়েছে সে প্রতিষ্ঠান সহজে বিলুপ্ত হয় না। এ প্রতিষ্ঠানের ভিত অত্যন্ত মজবুত। যখন বাহিরের কোন শক্তি আঘাত হানে তখন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এ প্রতিষ্ঠানের হঠাৎ লাফিয়ে উঠা এবং পরোক্ষণেই আগের স্থানে ফিরে আসার ক্ষমতা বজায় থাকে। ঘুণেপোকা এবং জীবাণুর কোন স্থান এখানে নেই। কারণ এটি একটি অক্ষয় প্রতিষ্ঠান। (চলবে)