জেমস এ রিসচার, অনুবাদ: কোরবান আলী : (প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে এক অপার শক্তি। এই শক্তিতে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে গেলে একজনের প্রয়োজন একান্তে নিজের ভেতরে প্রবেশ করা, নিজেকে উপলব্ধি করা আর নিজের শক্তি বৃদ্ধির চর্চায় নিজেকে নিমগ্ন করা। মানুষের এই নিমগ্নতা মানুষকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায়, যা অন্যদের মুগ্ধ করে। ‘স্পিরিচুয়াল লিডারশীপ’ বিষয়ক গ্রন্থের লেখক এবং ‘অর্গানাইজেশন ট্রান্সফরমেশন নেটওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জেমস এ রিসচার সুক্ষ্মভাবে আলোচনা করেছেন মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই পরম শক্তি নিয়ে এবং কিভাবে এই শক্তিকে ব্যবহার করে সত্যিকারের নেতৃত্ব অর্জন করা যায়। জেমস এ রিসচার এর আলোচনার আধ্যাত্মিকতা ও নেতৃত্ব বিষয়টি সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’ এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী।)
দুই
শান্ত ও বলিষ্ঠ চারিত্রিক বৈশিষ্ট উদ্ভুত শক্তিকে খুব বেশি গুরত্ব দেবার প্রয়োজন নেই। প্রতিষ্ঠানের একক এবং গুরত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে এক ধরনের উদ্বিগ্নতা এবং নিম্নমানের বিভ্রান্তি বা বিশৃংখলা। নেতৃবৃন্দ প্রায়শ উদ্বিগ্নতা, অহংবোধ, অপর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা, খানিকটা দিশেহারা অবস্থার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, যেগুলো মূলতঃ দলীয় সিদ্ধান্ত। এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য কোন একজন ব্যক্তিকে সমস্যার ধরন, প্রকৃতি ও কারণ সম্পর্কে অবহিত করে একটা শান্ত পরিবেশে পাঠিয়ে স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত বের করে আনার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি সম্পূর্ণ অবান্তর কালক্ষেপণ মাত্র।
যতদূর মনে পড়ে আমি যেমনটি দেখেছি ব্যবস্থাপকরা এ সমস্ত ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি সিদ্ধান্তদাতারা সিদ্ধান্ত দেবার সময় রাগান্বিত ছিলেন অথবা অসন্তুষ্ট বা ক্ষুদ্ধ ছিলেন অথবা বিরক্ত ছিলেন অথবা কোন ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। একজন ব্যবস্থাপকের কথা মনে আছে তিনি এমনভাবে প্রশ্ন করতেন যার গ্রহণযোগ্য উত্তর হতো হ্যাঁ অথবা না। তিনি কোন ব্যাখ্যা শুনতে অভ্যস্ত ছিলেন না। তিনি একমাত্র প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে অভ্যস্ত ছিলেন, “আপনি কি আমার সাথে একমত?” সহজেই অনুমান করা যায় যার একমাত্র সঠিক উত্তর ছিল হ্যাঁ। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা তিনি বেশকিছু ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনা সমৃদ্ধ ব্যবস্থাপকগণের সিদ্ধান্ত ভুল হয়না। এটা সত্য নয়। তাদের সিদ্ধান্তও ভুল হতে পারে। তাদের ভুলের সংখ্যা অনেক কম এবং তারা দ্রুত ভুল সংশোধন করে ফেলেন। তাদের মস্তিস্কে দ্রুত যে কোন বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে আসল কারণ বের করে আনতে পারেন এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সমস্ত বিবেচ্য বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ ধরনের স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনার পূর্বশর্ত হচ্ছে ব্যাবস্থাপককে অবশ্যই ভারসাম্য মনস্ক হতে হবে। যুক্তিসঙ্গত চিন্তা-চেতনার অধিকারী, অন্তর্জ্ঞান সম্পন্ন ও সৃজনশীল হতে হবে। অর্জন ও সৃজনশীলতা বেশির ভাগ উন্নয়নের জন্য বার বার প্রয়োজন হয়। ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় মূলতঃ যুক্তি ও বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে। অন্তর্জ্ঞান বিষয়টি এক্ষেত্রে বারবার বাদ পড়ে যায়। অপেক্ষাকৃত কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ তখনই সম্ভব যখন অন্তর্জ্ঞান ক্রিয়াশীল, যখন বিষয় ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনা উভয়ই সমান গুরত্ব পায়।
চিন্তা-চেতনার স্বচ্ছতা বলতে যে কোন বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে দৃষ্টিপাতকে বুঝায়। চর্তুদিকে দৃষ্টিপাতের বিরোধিতা করে। একজন ব্যবস্থাপকের প্রাত্যহিক কর্মকান্ডকে শক্তির বিকীরণের সাথে তুলনা করা যায়। কেন্দ্রাভিমুখী চিন্তা-চেতনা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন নিয়মানুবর্তিতা এবং দক্ষতা। একটা ছোট কোম্পানির কথা আমি জানি, যেখানে ব্যবস্থাপকরা দিনের প্রথম দু’ঘন্টা ফোনে কারও সাথে কথা বলেন না। এ দু’ঘন্টা তারা প্রাত্যহিক কর্মদর্শন সৃষ্টি করেন এবং ফোকাস বিন্দু নির্ধারণ করেন। এভাবে মনোযোগ নষ্টকারী প্রভাবককে সর্বনিম্ন করার প্রয়াশ চালান।
আপনি কিভাবে চিন্তা-চেতনার স্বচ্ছতা সৃষ্টি করবেন? প্রথম কাজ হচ্ছে এটা কতটুকু প্রয়োজন তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা। অর্থাত আমাদের কাছে চিন্তা-চেতনার স্বচ্ছতা সৃষ্টির গুরুত্ব কতটুকু। আসলে ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত জীবনে চিন্তা-চেতনার স্বচ্ছতার মূল্য এতো বেশি যে এটাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া আবশ্যক। একজন নেতা হিসেবে আপনার চিন্তার রাজ্য হচ্ছে প্রাথমিক হাতিয়ার। এটাকে ধারালো এবং চক্চকে রাখা প্রয়োজন। এটাকে শান দেবার অনেক পথ আছে। প্রথমত, প্রতিদিন খানিকটা চুপচাপ শান্ত সময় কাটানো খুবই গুরত্বপূর্ণ। দিনের শুরুভাগ কর্ম পরিকল্পনা ও লক্ষ্যসমূহ সম্পর্কে চিন্তা করার উত্কৃষ্ট সময়। কিছু সময় আপনার দর্শন বা স্বপ্ন পর্যালোচনা করুন। আপনার বর্তমান অবস্থান কোথায় এবং গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হলে কি করা প্রয়োজন।
দিনের একটা সময় বের করা প্রয়োজন যখন আপনি কাজ করবেন না, এ সময়টা ধ্যান বা মেডিটেশন করার কাজে ব্যয় করতে পারেন। মেডিটেশন করার বহু কৌশল ও শিক্ষক আছেন। দৌড়ানো অথবা সাঁতার কাটার মতো অনুশীলন করা প্রয়োজন যখন মস্তিষ্ক একটা সুনির্দিষ্ট ছন্দে শিথিল হবে এবং চিন্তার জট খুলে যাবে। আপনি যদি অত্যন্ত যুক্তিশীল কাজে নিয়োজিত থাকেন, তবে আপনার সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ছবি আঁকার শখ গড়ে তুলন। কবিতা লিখুন। একটা গানের সুর করুন। মৃত শিল্পের একটা প্রশিক্ষণ কোর্স গ্রহণ করুন। সৃজনশীল চিন্তা-চেতনা সমৃদ্ধ যে কোন কাজ করুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের লোকজনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ উপদেশগুলো দিতে পারেন। ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির জন্য কর্মশালা করুন। ঘনিষ্ঠবন্ধু তৈরি করুন। বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটান যারা আপনাকে আরও বাস্তববাদী এবং যুক্তিশীল হবার জন্য তাগিদ দেবে।
মোট কথা ততক্ষণ শরীর এবং মন শান্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে যতক্ষণনা অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন গভীর জ্ঞান সৃষ্টি হয়। অভিজ্ঞতা বলে, আমরা যত শান্ত হতে পারবো তত সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং অন্তর্দৃষ্টি গভীর হবে। আমরা যখন নিরুত্তাপ ও শান্ত হবো তখন একটা সমস্যার বিভিন্ন গতি প্রকৃতি দেখতে পারবো যা পূর্বে কখনই দেখি নাই। এমন কোন সুনির্দিষ্ট সূত্র নায় যার দ্বারা সুগভীর চিন্তা-চেতনার স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা যায়। দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে পটু এমন অনেকগুলো গুণের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। যারা চিন্তা-চেতনার দিক থেকে যেমন স্বচ্ছ হয়ে থাকেন, তেমন চারিত্রিক বলিষ্ঠতা বজায় রাখতে সক্ষম, তাঁরা গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে থাকেন। একদিনের সেমিনারে অংশগ্রহণ করে এ সমস্ত গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব না। কিন্তু যদি আমরা মনে-প্রাণে এ সমস্ত গুণাবলী অর্জন করতে চায় তবে আমাদের এমনভাবে জীবন যাপন করতে হবে যাতে ক্রমান্বয়ে উল্লেখিত গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব হয়।
৩. দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি ও সংকল্প
অনেক মানুষ আধ্যত্মিকতাকে দয়া, মায়া, মমত্ববোধ ইত্যাদি কোমল গুণাবলির সাথে তুলনা করে থাকেন। আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নেবার জন্য যদিও আত্মত্যাগ ও সাহসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মানবিক কোমল গুণাবলীর তেমন প্রয়োজন হয় না। পরিবর্তনক্ষম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। নেতৃত্ব অসীম, অলৌকিক। এটা সাহস ও ইচ্ছা শক্তির দুর্দান্ত ও বাস্তব কর্ম প্রতিফলন। যখন আপনি নেতৃত্বের কোন পদে অধিষ্ঠিত হবেন সেই মুহূর্ত থেকে আপনি একটা পরিপূর্ণ ব্যাগের কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন যেখান থেকে সম্পূর্ণ সাহায্য সহযোগিতা ও সমর্থন পাবেন। এর জন্য প্রয়োজন অসীম সাহসিকতা এবং ইচ্ছাশক্তি।
নেতৃত্ব জীবনকে ভিন্নভাবে দেখার তাগিদ দেয়। সচেতনতার একটা পরিবর্তিত রাজ্যে প্রবেশ করার কথা বলে। এ কারণে আমরা অন্যান্যদের থেকে আলাদা। যখন আমরা নেতার দায়িত্ব পালন করি তখন আমরা আমাদের এবং পরিবেশ পরিস্থিতিকে অন্যান্যদের থেকে আলাদাভাবে দেখি। দলের মধ্যে থেকেও অকস্মাত দলের বাইরের লোক বলে নিজেদের মনে হয়। অন্যান্যরাও আমাদের আলাদাভাবে বিবেচনা করে।
নতুন একটা সেবা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির কথা বলতে চাই। প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টির সম্ভাবনার বিষয় আলোচনা করার জন্য অনেক লোক একত্রিত হয়েছেন। অংশগ্রহণমূলক আলোচনা চলছিল। দলে সবাই সমান, কেউ নেতার দায়িত্ব পালন করছিলেন না। তখন একজন মহিলা লিন্ডা বলল “এ দল সম্পর্কে আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন এবং আমিই এ দলের দায়িত্ব নিতে চাই এবং নেতৃত্ব দিতে চাই।” যেহেতু দলের অন্য কেউ নেতৃত্ব গ্রহণ করার দৃঢ় ইচ্ছা ব্যাক্ত করল না বরং তার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিল, দল আন্তরিকভাবে লিন্ডাকে নেতা মেনে নিল।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মজার ঘটনার সূত্রপাত হলো। নেতৃত্বের দুর্দান্ত আঘাতে লোকজন সামান্য ভীত হলো, নারী নেতৃত্বে সম্মান দেখাতে লাগলো। কিছুক্ষণ আগেই অংশগ্রহণকারীগণ নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করছিল কিন্তু এখন তারা নেতাকে অনুসরণ করতে লাগল। লিন্ডা সমস্ত আলোচনার শিরোমণি হয়ে উঠলেন। শক্তির মৌলিক এবং নবতর বিন্যাস সূচিত হলো। দলটি হঠাত করে লিন্ডাকে আলাদাভাবে সম্বোধন করা শুরু করল। লিন্ডা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। নেতৃত্বের আসল রূপ প্রকাশ পেতে লাগল।
নেতৃত্ব একেবারে কিছু না থেকে কিছু একটা সৃষ্টি করতে পারেন, যা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপের উপর নির্ভর করে। এ দৃঢ়তা মাঝে মাঝে অন্যান্যদের উপর এক অদ্ভূত প্রভাব ফেলে। প্রায়শ দেখা যায় অন্যান্যরা আমাদের সমস্ত ভার বহনের জন্য উত্সাহিত করে এবং এমনকি আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে চাতুরতার সাথে অথবা প্রকাশ্যে দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালায়। দুটি পক্ষ (তারা এবং আমরা) সৃষ্টি করার একটা সবল প্রবণতা নেতৃত্বের মধ্যে দেখা যায়।
যখন আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ সভায় উঠে দাঁড়াবেন এবং বলবেন, ‘আমাদের এই পথ বেছে নেয়া দরকার।’ তখন অন্যরা আপনাকে বসিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন এবং বলবেন, ‘না ঐ পথ নয়, এ পথই উত্কৃষ্ট’ এটা মানব জাতির স্বভাব সুলভ বৈশিষ্ট। এ প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু এ ধরনের মতামতকে স্বীকৃতি দেয়া জরুরি। অন্যথায় আপনি নিজেকেই বিধ্বস্ত করবেন। এ জন্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম এমন নেতৃবৃন্দকে অবশ্যই দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হতে হবে। যে পথে দল অগ্রগামি, সে পথে দলকে পরিচালিত করা খুব কঠিন কাজ নয়। কিন্তু নতুন পরিকল্পনা, নতুন পথ অথবা নতুন দর্শন অর্জনের জন্য দলকে পরিচালিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং ধৈর্য।
যখন দৃঢ়তা শব্দটি উচ্চারণ করি তখন এ শব্দটি দ্বারা আমি যা বুঝাতে চেয়েছি তেমনটি হয়ে উঠে না। শব্দটির গতানুগতিক অর্থ দ্বারা যা বুঝানো হয় তা হচ্ছে স্রোতের বিপক্ষে চলা। যাতে করে আপনি নিজে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। যখন আমি দৃঢ়তা শব্দটি ব্যবহার করি তখন সংবেদনশীলতা সমুন্নত রাখার কথা বলি। নতুনকে গ্রহণ করার মানসিক শক্তির কথা বলি। বিরাজমান পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার মানসিক শক্তির কথা বলি। অর্থাত দৃঢ়তা বলতে পরিস্থিতির সাথে অসৃজনশীলভাবে এবং মৌলিক শিক্ষার তাগিদে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বুঝায়। যদি লোকজন মিটিং-এ আপনাকে লক্ষ্য করে চিত্কার করে তবে বুঝতে হবে সম্ভবত তারা জেনেছেন যে আপনি তাদের কথা শুনছেন না। তাছাড়া তারা চিত্কার করবেন কেন? সুতরাং সবচেয়ে উত্কৃষ্ট কৌশল হচ্ছে তাদের কথায় বিচলিত না হয়ে সতর্কতার সাথে তাদের কথা শোনা। ‘চারিত্রিক দৃঢ়তা’ সংবেদনশীলতা ও খোলামেলা মনোভাবের বিরোধিতা করে না।
একটা দর্শন সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মনোবল। যদি ব্যস্ততা বাধ সাধে এবং আমাদের আত্মত্যাগ এবং প্রচেষ্টার স্বীকৃতি তাত্ক্ষণিকভাবে না পায় তবে এ সময়ে দর্শনটিকে লালন করা নিঃসন্দেহে আরও অনেক সাহসিকতাপূর্ণ ও দৃঢ় মনোভাবের প্রতিফলন। অভীষ্ট লক্ষ্যের অনুভূতি থেকে দর্শন বেরিয়ে আসে। দর্শন অন্তর্জ্ঞানলব্ধ। প্রসঙ্গত বলতে হয় দর্শন কখনই যুক্তিনির্ভর নয়। যখন একটা দর্শনকে ঘিরে সমস্ত কাজ সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে তখন কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। আর যদি এর উল্টাটা হয় তবে প্রমাণিত হয় যে দর্শনটি যুক্তিসঙ্গত উপায়ে নির্মাণ করা হয়নি।
এরূপ দর্শনকে বৈষম্যমূলক অভিপ্রায় বা দিবাস্বপ্ন বলে অভিহীত করা যায়। দিবাস্বপ্নের একটা উদাহরণ হচ্ছে “আগামী দিনগুলোর মধ্যে যে কোন দিন আমি নতুন কিছু শুরু করতে যাচ্ছি। যা আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে”। অভিপ্রায়ের উদাহরণ এরূপ “পরের সোমবার আমি স্বাধীনভাবে আর্থিক বিশ্লেষক হিসাবে আমার নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি।” পরের উদাহরণটিতে কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তার কোন প্রমাণ নায়। কিন্তু সত্যিকার অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে স্পষ্ট বুঝা যায় কোন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এগুলো দিবাস্বপ্ন আগাগোড়া ভিত্তিহীন। (চলবে)