অনলাইন ডেস্ক : ভালোবাসার রঙে এলো বসন্ত। আজ পহেলা ফাল্গুন এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুই উৎসবকে ঘিরে বাঙালির মননে আজ জোড়া উৎসবের আমেজ। ‘আজই বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’।
ষড়ঋতুর এই দেশে বাঙালি প্রতি বছরই উৎসবমুখর এই বসন্তের অপেক্ষায় থাকে। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত এলে গাছে গাছে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারদিক। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা চলে অবিরত। গতকাল থেকেই দেশজুড়ে দেখা গেছে বসন্ত উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে উৎসব করার নির্দেশনা থাকলেও মানুষের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস যেন ছড়িয়ে পড়েছে নিয়মের বেড়াজাল ডিঙিয়ে।
ফাল্গুনের প্রথম দিন এ বছর কিছুটা অন্য রকমও বটে। বাংলা বর্ষপঞ্জির পহেলা ফাল্গুন ও ইংরেজি মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিলেছে এক সুতোয়। ফলে এক দিনে দুটি উৎসব পালন করছেন এ দেশের তরুণ-তরুণীসহ সর্বস্তরের মানুষ। অন্যদিকে দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবেও পালন করার প্রস্তুতি নিয়েছে একাধিক সংগঠন। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মজিদ খান কমিশনের গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে সচিবালয় অভিমুখী ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন জয়নাল, জাফর, মোজাম্মেল, দিপালী, কাঞ্চনসহ অনেকে। বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালন করা হবে। এ ছাড়া বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে একুশের বইমেলায় প্রতি বছরই উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। করোনার জন্য বইমেলা পিছিয়ে যাওয়ায় এবারের বসন্তে থাকছে না বইমেলায় ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ।
১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ উদযাপনের বিষয়ে ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইয়োর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মানবসেবাই যেখানে ভালোবাসার প্রতীক সে অর্থে এই ভালোবাসা প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেকের। যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির।
এদিকে বসন্ত সামনে রেখে গ্রামবাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙায় বাসন্তী রঙে। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও। এদিকে, দিনটিকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। দিনটিকে ঘিরে মোবাইল ফোন, ফেইসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলবে শুভেচ্ছাবিনিময়। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আজ দিনভর চলবে আনন্দ।
প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে ঢাকা শহরে আয়োজন করা হচ্ছে অনুষ্ঠান। পহেলা ফাল্গুনের সকাল সাড়ে ৭টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসন্ত উৎসব উদযাপন করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে বিকেল ৪টায় উদযাপিত হবে বসন্ত উৎসব। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব বদরুল আরেফীন। এ ছাড়া সংগীত, নৃত্যসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবেন শিল্পীরা। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।