Home ইসলাম ও ধর্ম আজ পবিত্র শবেবরাত

আজ পবিত্র শবেবরাত

অনলাইন ডেস্ক : আজ শুক্রবার দিবসের আলোকরেখা পশ্চিমে মিলিয়ে যাবার পরই শুরু হবে অনেক মুসলমানের কাছে পরম কাঙ্ক্ষিত মহিমাময় রজনি—শবেবরাত। পাপ থেকে সর্বান্তকরণে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিষ্কৃতি লাভের অপার সৌভাগ্যের রাত।

উপমহাদেশের কিছু আলেম বলে থাকেন, শবেবরাত হলো আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ সময়। এই রাতে বিশেষ বরকত হাসিলের মানসে মুসলিম সম্প্রদায় নফল নামাজ আদায় ও কোরআন তেলাওয়াত, ইস্তেগফার, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়ায় মশগুল থাকেন।

শবেবরাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ নামে অভিহিত করেছেন অনেকে। ‘শব’ শব্দটি ফার্সি, অর্থ রাত। আর বরায়াত শব্দের অর্থ হলো নাজাত, নিষ্কৃতি বা মুক্তি। শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে পবিত্র শবেবরাত পালিত হয়।

এ ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকলেও একটি ‘হাসান’ হাদিসে এটাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়েছে। বিজ্ঞ আলেম-উলামা ও ইসলামের বিশেষজ্ঞগণ এই রাতে বিশেষ কোনো ইবাদতের নির্দেশ নেই বলে মনে করেন। এর পক্ষকাল পরেই রহমত বরকত নাজাতের সওগাত নিয়ে আসবে মাহে রমজান। এ কারণে শবেবরাতকে বলা হয় রমজানের মুয়াজ্জিন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামি বিশ্বকোষ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে শাবান মাসের একটি রজনিকে ‘শব-ই-বরাত’ বলা হয়। তুরস্ক, ইরান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশের কোনো কোনো এলাকায় শবেবরাত ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। সৌদি আরবসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর কোথাও শবেবরাতের কোনো অস্তিত্ব নেই।

শবেবরাতের ইতিহাস সম্পর্কে ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর ৪০০ বছরের মধ্যে শবেবরাত বলে কিছু ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম এই শাবান মাসে বেশি-বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন। শবেবরাতের বরকত, ফযিলত ও মর্যাদা নিয়ে বেশকিছু হাদিসের বর্ণনা আছে।

শবেবরাত পালনের পক্ষের আলেমগণ মনে করেন, এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে সারা রাত ইবাদত ও প্রার্থনায় কাটাতে পারলে তা-ই হবে এ রাতের সঠিক মূল্যায়ন। এই রাতে শুদ্ধ মনে তওবা করার পর নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং ইসলামি বিধান মেনে চলতে হবে। আর এ রাতে হালুয়া-রুটি, ফিরনি-পায়েশ, খিচুড়ি, বিরিয়ানি প্রভৃতি বিতরণ বাধ্যতামূলক নয়। আলোকসজ্জা, হালুয়া-রুটি আর আতশবাজির মেলা এ রাতের পবিত্রতায় আঘাত হানে।

এদিকে যথাযথ মর্যাদায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে আজ পবিত্র শবেবরাত উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আসকারের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আলোচনা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। শবেবরাত উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার সরকারি ছুটি। সংবাদপত্রও আজ বন্ধ থাকবে। ফলে আগামীকাল শনিবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। এ রাতের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে।

এই উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এ উপলক্ষে আজ মাগরিব ও বাদ এশা এবং ১৯ মার্চ রাত ২টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ‘পবিত্র শবেবরাত-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

Exit mobile version