শাহনুর চৌধুরী : করোনা মহামারির প্রভাবে বিভিন্ন সেক্টরের মতো কানাডার অ্যারোস্পেস সেক্টরও মারাতœক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়া এই সেক্টরকে চাঙ্গা করতে কানাডা ও ক্যুইবেক সরকার নতুন করে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে এই সেক্টরে নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া এর মাধ্যমে দেশটি আকাশ পথে তাদের বৈশ্বিক কর্তৃত্ব ধরে রাখতেও সক্ষম হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণ যতটা সম্ভব কমানো যায় তেমন যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি আবিস্কারে নতুন এই বিনিয়োগ কাাজে লাগানো হবে।

কেন্দ্রীয় ও প্রভিন্সিয়াল এই দুই পর্যায়ের সরকার একত্রে ৬৮৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ৩টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে। কোম্পানিগুলো হলো- ইঞ্জিন প্রস্তুতকারি প্রাট অ্যান্ড হুইটনি কানাডা, হেলিকপ্টার উৎপাদনকারী বেল টেক্সট্রন কানাডা ও ফ্লাইট প্রশিক্ষণ কোম্পানি সিএই। এই কোম্পানিগুলো পরিবেশবান্ধব নতুন প্রজেক্টে এই অর্থ ব্যয় করবে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত বৃহস্পতিবার মন্ট্রিলে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। ফেডারেল শিল্পমন্ত্রী ফ্রাঁসো ফিলিপি বলেন, গত এপ্রিলে ঘোষিত বাজেটে অ্যারোস্পেস খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল তা থেকে ওই ৩ কোম্পানিকে বিনিয়োগের অর্থ দেয়া হবে। এর বাইরে ভবিষ্যতে বোম্বারডিয়ার কোম্পানিতেও অর্থ বরাদ্দ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আকাশ পথের বানিজ্যে টিকে থাকার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছুই করতে প্রস্তুত। বিশাল এই বিনিয়োগ শুধু ফ্যাক্টরির আকার-আয়তন লাখ লাখ স্কয়ারফিট বাড়ানোর জন্য বা শত শত নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য নয়। আগামী ২০/৩০ বছর যাতে বৈশ্বিক এভিয়েশন সেক্টরে কানাডার কর্তৃত্ব বজায় থাকে সেই লক্ষে কাজ করতে এই বিনিয়োগ করা হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যারোস্পেস কোম্পানি ও সরকার যখন আগামী প্রজন্মের জন্য টেকনোলজি আবিষ্কারের চেষ্টায় মরিয়া ঠিক তখনই করোনা মহামারির ধাক্কায় এই খাতে স্থবিরতা নেমে আসে। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের অন্যতম একটি হলো এই এভিয়েশন খাত। দিনের পর দিন বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এই খাতে লাখ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে। কানাডার বোম্বারডিয়ার কোম্পানি এক সময় বিশ্বের সেরা ৫ টি বিমান তৈরি প্রতিষ্ঠানের একটি ছিল। এই কোম্পানির জেট বিমান রফতানি করে কানাডা এক সময় বিপুল মুদ্রা আয় করেছে। কিন্তু এখন এর অবস্থা অতীতের ছায়া মাত্র।

মন্ট্রিলে ইউনিভার্সিটি অব ক্যুইবেকের প্রফেসর ও অ্যারোস্পোস বিশেষজ্ঞ মেহরান ইব্রাহিমি বলেন, কানাডার অ্যারোস্পেস সেক্টর মূলত ক্যুইবেক কেন্দ্রিক। এই সেক্টরের বড় বড় কোম্পানিগুলো এই প্রভিন্সেই গড়ে উঠেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এই ক্যুইবেকের এই খাতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে বলে আশা করা যায়। তিনি বলেন, আমরা ৬০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পরিবেশ বান্ধব একটি বিমান তৈরি করেই থেমে থাকতে চাই না। আমাদেরকে আরো সামনে তাকাতে হবে-এরপর কী আছে তা।

হেলিকপ্টার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেল টেক্সট্রন কানাডার প্রেসিডেন্ট স্টিভ লেভয়ই বলেন, তার কোম্পানি নতুন একটি হেলিকপ্টার বাজারে আনতে কাজ করছে। ওই কপ্টারটি শব্দ ও বায়ু দূষণ অনেক কম করবে। প্রধানমন্ত্রীর নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা তাদের নতুন প্রজেক্ট সফল করতে সহায়তা করবে। তবে অ্যারোস্পেস কোম্পানিগুলো এই নতুন বিনিয়োগের ঘোষণাকে স্বগত জানালেও বিরোধী রাজনীতিবিদরা অনেকে এর সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন করোনা মহামারি মোকাবেলার ব্যর্থতা ঢাকতে এবং আগামী নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সরকার একের পর এক এসব চটকদার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র : দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল