ফরিদুর রহমান : চলচ্চিত্র উত্সবগুলোতে সাধারণত একটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিনেমা হল এবং অডিটোরিয়ামসহ অনেকগুলো জায়গায় একই সাথে প্রায় সারা দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এরই ফাঁকে মাঝে মাঝে সেমিনার, আলোচনা, কোনো বিশেষ নির্মাতার জীবন ও কাজ নিয়ে রেস্ট্রস্পেক্টিভ এবং কোথাও কোথাও তরুণদের জন্য কর্মশালার মতো প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও যুক্ত থাকে। সে দিক থেকে ভ্যালেন্সিয়ার ‘মিছে’ চলচ্চিত্র উত্সবকে ব্যতিক্রম বলেই উল্লেখ করা যায়। একই সাথে ভ্যালেন্সিয়ার চারিদিকে পঞ্চাশ কিলোমিটারের মধ্যে ছোট ছোট অনেকগুলো শহরে তরুণদের জন্য, বিশেষ করে স্কুল এবং কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রদর্শনীর আয়োজন মফস্বলের চলচ্চিত্র প্রেমিক তরুণদের উত্সাহিত করা এবং সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সারা ভ্যালেন্সিয়া প্রভিন্সে উত্সবের আমেজ সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে বিদেশি অতিথি এবং নির্মাতাদের শুধুমাত্র চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনার সিম্পোজিয়ামে আটকে না রেখে তাদের জন্য ভ্যালেন্সিয়া শহর এবং আশেপাশের গ্র্রামাঞ্চল ও প্রত্নতাত্তি¡ক নিদর্শন কিছুটা ঘুরে দেখার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া প্রতি সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নতুন নতুন পরিবেশনা স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচতি হতে সাহায্য করেছে।
গতকাল ভ্যালেন্সিয়ার ফেস্টিভ্যাল ভ্যেনু এল মিউজিক্যালে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পরে সন্ধ্যায় ছিল তেমনি এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। একে ঠিক নাচের অনুষ্ঠান বলবো না কোরিওগ্রাফি- ঠিক করতে পারিনি। হাতে নাচের মুদ্রা, পায়ে সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলোর লোকনৃত্যের শিল্পীদের মতো জুতার ঠোকাঠুকি আর শরীরে ব্যালেরিনাদের মতো তরঙ্গ এই মিলিয়ে যিনি মঞ্চ মাতিয়েছিলেন তিনি কোনো ঊর্বশী মেনকা নন, নেহায়েতই শশ্রুমণ্ডিত একজন সুদর্শন যুবক। নাচের সাথে সরাসরি যন্ত্র সঙ্গত করেছেন ভায়োলিন, সিলভার ফ্লুট, গিটার, চেলো এবং অক্টোপ্যাড বাজিয়ের দল। সুরের মূর্চ্ছনা ও নাচের ছন্দে উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল ভ্যালেন্সিয়ার রাত।
![](https://i0.wp.com/www.banglakagoj.com/wp-content/uploads/2021/12/Bk-13-3.jpg?resize=696%2C464&ssl=1)
রাতে দেরি করে ফিরে সকালে উঠেছিও দেরিতে। ম্যারিনা আতাারাজানাসের ব্রেকফাস্টের সময় সকাল দশটা পর্যন্ত, তবে মাঝে মধ্যেই কেউ কেউ ছুটতে ছুটতে দশটার পরেও হাজির হয়ে যান। ব্যাপারটা জার্মানি কিংবা ফ্রান্সে হলে ঘড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলতো সময় শেষ অথবা মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিতো। ইতালি, গ্রিস এবং স্পেনে অবশ্য ব্যাপারটা ভিন্ন। নিয়ম কানুনের এতোটা কড়াকড়ি এখনো এ সব দেশে দেখিনি। আমরা দ্রুত নাস্তা পর্ব শেষ করে ‘এল মিউজিক্যালে’ পৌঁছলাম। আজ সারাদিনই এখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী চলবে। এ ছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি, বিপুল সংখ্যক তরুণ দর্শক, দেশি বিদেশি নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সমালোকদের আড্ডা মিলিয়ে সরগরম পুরো এলাকা। মূল অডিটোরিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল আকারের বাস, রঙিন বাসের গায়ে শোভা পাচ্ছে ‘মিছে’ উত্সব এবং উত্সবের লোগো বিশাল আকারের সব হাতি। এ সব বাহন ব্যবহার করা হচ্ছে স্কুল থেকে ক্ষুদে দর্শকদের ছবি দেখতে আনা নেয়ার কাজে। ছোটদের চলচ্চিত্র দেখতে উত্সাহিত করা, তাদের উত্সবে সম্পৃক্ত করা এবং এর মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্র সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে নিরন্তর প্রচেষ্টা জার্মানিতে, গ্রিসে এবং স্পেনে দেখেছি তা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে উদাহরণ হিসাবে কাজে লাগতে পারতো। কিনতু বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না! ‘কার গোয়োলে কে দেয় ধুয়া!’ অতএব আমাদের চলচ্চিত্র সিনেমা বাণিজ্য এফডিসির মহাজনদের এবং অনুদানের চলচ্চিত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ও শান্ত্রী সেপাইয়ের হাতে পড়ে গত পঞ্চাশ বছর ধরেই তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বানরের মতো ওঠানামা করছে।
অল্প কিছুক্ষণ ছবি দেখে এবং বেশ কিছু সময় আড্ডা দিয়ে লাঞ্চের সময় হলে আমরা নির্ধারিত রেস্টুরেন্টের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। এদিকের পথঘাট বেশ নির্জন। ফুটপাথে পথচারির তেমন চলাচল নেই। মাঝে মাঝে বসে জিরিয়ে নেবার জন্যে পেতে রাখা হয়েছে কাঠের বেঞ্চ, কিন্তু প্রতিদিন আসা যাওয়া পথে কাউকে বসে থাকতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কয়েকটা রঙিন বাড়ির বাইরের দিকের রঙ বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করে আর চোখে পড়ে পথের ধারের কমলা গাছে ঝুলে থাকা অসংখ্য কমলা। আমরা রেস্টুরেন্টে বসে যে খাবার দিতে বললাম সে সবের জটিল স্প্যনিশ নাম মনে রাখা সম্ভব হয়নি। ক্যাপসিকাম, টমেটো, লেটুস পাতার সালাদ, মাছ ভাজা এবং চিজ ব্রেড। ব্রেড অবশ্য নামমাত্র, সালাদ এবং ফিস ফ্রাই হচ্ছে মূল খাবার। আমরা সত্যিকারের মাছে ভাতে বাঙালি হলে শুধু গোটকয়েক মাছ ভাজায় দ্বিপ্রাহরিক উদরপূর্তি কঠিন হতো।
বিকেলের দিকে ম্যারিনা আতারাজানাসের সামনেও বেশ একটা আড্ডা জমেছিল। এখানে ইন্দোনেশিয়ার পেনি সিলভানিয়া পুত্রী, ভারতের পরশ কুমার রবিন ও নিশান্ত রায় এবং আমরা দুজন ছাড়াও আরও দুই একজন যোগ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে বিশেষ করে শারজা ইন্টারনাশনাল চিল্ড্রেন্স ফিল্ম ফস্টিভ্যালের সিনিয়র ফেস্টিভ্যাল কো-অডিনেটর ফাতিমা মুশারবেক এবং তাঁর এক সফর সঙ্গিনীর কথা উল্লেখ করা যায়। পেনি সিলভানিয়া পুত্রী পড়াশোনা করেছে জাকার্তা ইন্সটিটিউট অব আর্টে চলচ্চিত্র প্রযোজনায়। বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে ইন্দোনেশিয়ার ইন্সটিটিউট অফ সাইন্সে। বেশ কিছু বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ছাড়াও দেশে বিদেশে চলচ্চিত্র উত্সবের সমন্বায়ক হিসাবে কাজ করেছে। আগাগোড়াই বেশ হাসিখুশি, একটু ছেলে মানুষী থাকলেও সবার সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক। এর আগেও ‘মিছে’ ফেস্টিভ্যালে এসেছে। আন্তরিক ছেলে রবিন বয়সে সম্ভবত বয়সে সবার ছোট, অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছে দিল্লিতে কিন্তু পেশা এবং নেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে ফটোগ্রাফি! প্রকৌশলী নিশান্ত পুণেতে অডিও-ভিজ্যুয়াল মাস কম্যুনিকেশনে পড়াশোনা করে চলচ্চিত্র প্রযোজনা-পরিচালনায় এসেছে। নন-ফিকশন চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। একটু ভাব গম্ভীর হলেও গড়পরতা ভারতীয়ের মতো নাকউঁচু নয়। আমরা ওকে বুদ্ধিজীবী হিসাবেই ধরে নিয়েছি। ফাতিমা মুশারবেক ‘র্যাবিট হোল’ নামের একটি চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। শারজার ইন্টারনাশনাল চিল্ড্রেন্স ফিল্ম ফস্টিভ্যালই সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম শিশু চলচ্চিত্র উত্সব এবং সেই উত্সবের বলা যায় মূল উদ্যোক্তা ফাতিমা। শারজার আগামী চলচ্চিত্র উত্সবে যোগ দিতে আমাদের বেশ উত্সাহিত করেছিল ফাতিমা।
আলাপের এক পর্যায়ে দেখা গেল স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় উত্সবে এলেও উপস্থিত সকলেই এশিয়ান। আমি একটা গ্রুপ ছবি তোলার প্রস্তুতি নিয়ে ক্যামেরা তুলেছিলাম। হঠাত দেখা গেল ফাতিমা এবং তার বান্ধবী, দুজনেই দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে ফেলেছে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফাতিমা বললো, কিছু নে করো না, ছাব তোলার ব্যাপারে আমাদের কিছু সমস্যা আছে। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে অন্যদের নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে রাখলাম। তবে এরপর আড্ডাটা আর জমলো না। পরে আমি বিষয়টা ভেবে দেখেছি, দুবাই থেকে ভ্যালেন্সিয়ায় এসে হিজাব নিকাবের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করে ওরা দুজন যেমন সেজে গুজে স্কার্ট-জিনস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই দৃশ্য দেশে অভিভাবক বা আত্মীয় পরিজনের কাছে পৌঁছালে তা ওদের ভাবিষ্যতের মূল কাজ অর্থাত চলচ্চিত্র নির্মাণ ও চলচ্চিত্র উত্সবেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তারচেয়ে ছবি তোলায় প্রলুব্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
আমাদের হোটেলের ঠিক সামনেই যে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন গির্জার অবস্থান, প্রথম কয়েকদিনে তা বুঝতে পারিনি। প্রতিদিনই গির্জার সামনের দীর্ঘ খেজুর গাছ এবং কমলার বাগানে দর্শনার্থী কিংবা পূণ্য প্রত্যাশী ভক্তদের পদচারণা দেখা যায়। দিনে এবং একদিন রাতে আলোকোজ্জ্বল ফোয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলেছি। বেশিরভাগ সময় চার্চের মূল দরজা বন্ধ থাকায় অথবা আমাদের ব্যস্ততার কারণে গুরুত্ব দিয়ে পেরোকুইয়া ডি সান্তা মারিয়া দেল মার নামের এই খ্রিস্টিয় উপাসনালয় দেখা হয়ে ওঠেনি। সন্ধ্যায় ফেয়ারওয়েল পার্টিতে যাবার সময় গির্জার প্রবেশ পথ ঘিরে বেশ জন সমাগম দেখে কৌতূহল হলো। সম্ভবত কোনো বিশেষ প্রার্থনার অনুষ্ঠান ছিল। এতোদিন শুধু সুদৃশ্য ভবন, সামনের ফোয়ারা এবং বেল টাওয়ারসহ প্রবেশ পথে পাথরের ভাস্কর্য দেখেছি। এবারে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলাম। সোনালী ধাতবের বেদী, যিশু ও মেরি মাতার ভাস্কর্য, চিত্রিত সিলিং, মূল্যবান পাথর ও পেইটিংয়ে সাজানো দেয়াল ছাড়াও রয়েছে ক্রিস্টো দেল গ্রাউয়ের মূর্তি! তিনি যে কে তা আমার জানা নেই তবে তিনি পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র পথে ভ্যালেন্সিয়ায় এসেছিলেন এবং সান্তা মারিয়া দেল মার তাঁর নামেই উত্সর্গ করা হয়েছে।
পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ১২৪৯ খিস্টাব্দে কিং প্রথম জেমস দ্য কঙ্কারারের ভ্যালেন্সিয়া বিজয়ের পরপরই রাজাধিরাজ এখানে একটি ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠি গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিজস্ব চার্চটির গোড়াপত্তন করেন। কয়েকবার নাম বদল করার পরে ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে শান্তা মারিয়া দেল মার নামটি চূড়ান্ত হয়েছে। রাজা মশাই নিবেদিত প্রাণ ধার্মিক এবং চার্চের প্রতিষ্ঠাতা হলেও গোটা কয়েক বিবাহ করেছিলেন এবং বিবাহ বহির্ভূত নারী সংসর্গেও তাঁর যথেষ্ট সুনাম ছিল। এক্ষেত্রে একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান রাজা তাঁর প্রতিপক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান স¤্রাটদের চেয়ে পিছিয়ে থাকবেন কেন! অতএব ইহজগতের ধার্মিক রাজা বাদশাদের পরকালীন সুখ সাচ্ছন্দ্যও সুনিশ্চিত।
আমাদের ফেয়ারওয়েল ডিনারের আমন্ত্রণ ছিল একটা ফ্যাক্টরি রেস্টুরেন্টে। পুরোনো কারখানাকে রেস্তোরায় রূপান্তর প্রথমবার দেখেছিলাম বছর কুড়ি আগে বার্লিনে। কারখানাটা কিসের ছিল মনে নেই, তবে বিশাল স্টুডিওর মতো চত্বরের ভেতরে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি, বয়লার, প্লান্ট, পাইপ এবং চাকার ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার টেবিল সাজানো। প্রথমবার ভীষণ অবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম। পরে ইওরোপের বিভিন্ন দেশে পরিত্যক্ত গুদাম এবং ফ্যাক্টরিকে চেহারা পাল্টে রেস্টুরেন্ট হয়ে যেতে দেখেছি। কাজেই অবাক হই না। এখন বুঝেছি কারখানা কার তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে, খানা ঠিক থাকলেই হলো। আমরা যে কারখানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি সেটি অতীতে ছিল আইসক্রিম ফ্যাক্টরি। ভ্যালেন্সিয়ার মানুষের আইসক্রিমে অরুচি দেখা দিয়েছে না কি অন্য কোনো কারণে তারা বরফ খাওয়া বন্ধ করেছে যার ফলে লোকসান পড়ে আইসক্রিম ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে তা জানা যায়নি, তবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা যে এখন জমজমাট তা ঢুকেই বুঝতে পারলাম।
প্রবেশ পথের লৌহ কপাট দেখেই বোঝা যায় এটি প্রচলিত ধারার কোনো রেস্তোরা নয়। অনেক বড় সড় এলাকা নিয়ে বেশ দূরে দূরে বসানো হয়েছে শক্তপোক্ত কাঠের টেবিল চেয়ার। কোনো কোনো জায়গায় চেয়ারের পরিবর্তে টেবিলের সাথে যুক্ত কাঠের বেঞ্চ। লোহার বড় বড় বিম এবং টিনের পুরোনো দেয়ালগুলোতে দেয়া হয়েছে সাদা রংয়েরর প্রলেপ। মাঝে মাঝে গাছপালা অথবা কাঠের দীর্ঘ পার্টিশান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কিছু বিভাজন। আমরা পৌঁছাবার আগেই অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়ে ভেতরটা বেশ সরগরম। গাঢ় রং করা অমসৃণ পলেস্তারা খসা দেয়ালের সামনে ব্যান্ডদল মৃদুলয়ে বাজিয়ে চলেছে জনপ্রিয় স্প্যানিশ গানের সুর। মাঝামাঝি এক জায়গায়, সম্ভবত কারখানার কোনো একটি পরিত্যক্ত বড় খোলের মধ্যে বসানো বার থেকে হাতে হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বিয়ার, রেড অথবা হোয়াইট ওয়াইনের বোতল এবং নির্ভেজাল হালকা পানীয়। পানীয় বার থেকে তুলে নিয়ে আসতে হলেও খাবার কিন্তু টেবিলে পৌঁছে যাচ্ছে। ফ্রাইড ক্যালামারি, স্প্যানিশ মিটবল, মাশরুম ক্রকেটস এবং নাম না জানা অন্যান্য টাপাসের সাথে টেবিলে গড়াগড়ি যাচ্ছিল জার্মান প্রেত্জেল অথবা বার্লিনার নুপেলের মতো স্প্যানিশ রুটি।
রেস্তোরায় কয়েকদিন পরে দেখা হলো লোলা এবং পেপের সাথে। এই দিন কোনো আলোচনা সমালোচনা জ্ঞানগর্ভ ভাষণের ব্যাপার ছিল না। তবে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময়ের সাথে পানাহার চললো অনেক রাত পর্যন্ত। আলোচনার সিংহভাগ জুড়েই ছিল চলচ্চিত্রের কথা ও আগামীদিনের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উত্সব। একই সাথে চলছিল বিজনেস কার্ড বা ব্যক্তিগত ঠিকানা আদান প্রদান এবং সুভ্যেনিয়ার বা ছোটখাটো উপহার সামগ্রী দেয়া নেয়া। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপহার তুলে দিলাম ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর জোসেফ আরবিয়লের হাতে। জোসেফ নিজেই আমাদের দুজনকে দুপাশে রেখে একজনকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘একটা ছবি তুলে রাখো- ফ্রম ঢাকা টু ভ্যালন্সিয়া!’
বিদায়ী নৈশ্যভোজে আমাদের সকল পরিচিত মুখের দেখা পেলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুই বান্ধবীকে কোথাও দেখা গেল না। চলবে…