ফরিদুর রহমান : একুশে ফেব্রুয়ারি ভোর বেলা আনিকা হোটেলে তার ঘরে একটা অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিছুদিন আগেই শুনেছিলাম ওরা সাতজন বান্ধবী, যারা এক সময় ‘তারানা’ নামের একটা গানের স্কুলে একসাথে গান শিখতো, তারা সবাই মিলে সমবেত কণ্ঠে কয়েকটা গান রেকর্ড করে একুশে ফেরুয়ারি রাতে আপলোড করবে। ওরা সাতজন থাকে পাঁচ দেশে। সারা জীবন অনুষ্ঠান রেকর্ডিং এডিটিং-এর সাথে থেকেও আমি বুঝতে পারছিলাম না বিভিন্ন দেশে থেকে কীভাবে কোরাস গান রেকর্ড হবে! আমেরিকা থেকে আনন্দী কল্যাণ প্রভা, সুইডেন থেকে নিধি, প্রধি এবং অধি, যুক্তরাজ্য থেকে মনিকা, বাংলাদেশ থেকে নামিরা এবং জার্মানি থেকে আনিকা একই স্কেলে কণ্ঠ মিলিয়ে কয়েকটা গান ইতিমধ্যেই রেকর্ড করে ফেলেছে। ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে উপজীব্য করে গাওয়া গানগুলোেেত এখন শুধু অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা অংশ যুক্ত করাই বাকি। আনিকা স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় বসে সেই অংশটুকু রেকর্ড করে আমেরিকায় প্রভার কাছে পাঠিয়ে দেবে। প্রভা পুরো অনুষ্ঠানের সাথে উপস্থাপনা জুড়ে দিয়ে রাতেই আপলোড করে দেবে। একুশের কথা এবং গানগুলো সম্পর্কে দু চার কথা বিভিন্নভাবে কয়েকবার রেকর্ড করার পরেও বোধহয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক খুব বেশি খুশি হতে পারলো না। তবে হাতে সময় কম বলে রেকর্ড করা সবগুলো ভার্সানই প্রভার কাছে পাঠিয়ে দিল। প্রভা সম্পাদনার সময় ভালো টেকগুলো বেছে নেবে।

মেরিনা আতারাজানাসে ব্রেকফাস্ট করেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। ভ্যালেন্সিয়ার সবচেয়ে সুন্দর পার্কগুলির একটি ‘লস জর্দেনিস দে ভিভেরোস’ উদ্যানে পৌঁছে গেলাম সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে। উদ্যানের ঠিক মাঝখানে ‘মিউনিসিপ্যাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্স’। প্রতœতাত্তি¡ক জাদুঘর, সাংস্কৃতিক জাদুঘর, আনা ফ্রাঙ্ক মিউজিয়াম, বিজ্ঞান জাদুঘর, পুতুলের জাদুঘর, পেইটিংএর জাদুঘরসহ বিভিন্ন জাদুঘর দর্শনের সুযোগ হলেও প্রকৃতি বিজ্ঞানের জাদুঘরে এসেছি এবারই প্রথম। ভিএলসি ট্যুরিস্ট কার্ড থাকার ফলে কোনো প্রবেশ মূল্য দিতে হলো না। প্রাগৈতিহাসিক যুগের যে সব প্রাণির কথা এতোদিন শুনেছিলাম, সেই ডাইনোসোরের কঙ্কালসহ দক্ষিণ আমেরিকার বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিদের সংরক্ষিত দেহাবশেষ, কীট পতঙ্গের জীবাশ্ম, পাথরে স্তরে চাপা পড়া পশু-পাখি ও কীট পতঙ্গের ফসিলের মতো মূল্যবান সংগ্রহে সমৃদ্ধ মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে দেখার মধ্যে দিয়ে একটি ভিন্ন ধরনের জাদুঘর দেখার অভিজ্ঞতা হলো। বিশাল তিমিসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণির কঙ্কাল, খোলস এবং দেহাবশেষও সংরক্ষণ করা হয়েছে এখানে। মিউজিয়ামের একটি কক্ষে দেখা গেল স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষিকা প্রাণি জগতের রূপান্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। ভাষা না বুঝলেও বুঝতে পারি ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বেশ মনোযোগ এবং আনন্দের সাথে বিষয়টি উপভোগ করছে। একটি কক্ষে ভিডিওতে প্রাণি জগতের বিবর্তনের দৃশ্যাবলী ধারাবাহিকভাবে চলছে। স্পেনের জীবাশ্ম বিজ্ঞানী রড্রিগো বোতেত-এর সম্মানে একটি কক্ষে তাঁর চেয়ার টেবিলসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে। ছবি তোলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নিষেধ না থাকায় মিউজিয়ামের ভিতরে এবং বাইরে বেরিয়ে উদ্যানেও বেশ কিছু ছবি তুলে হোটেলে ফিরে এলাম।

প্রকৃতি বিজ্ঞান জাদুঘরে

বিকেলে ভ্যালেন্সিয়া থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরের ছোট শহর সুয়েকায় আমাদের ‘তাসমিনা দ্য হর্স গার্ল’ এবং ভারতের ছন্দিতা মুখার্জির প্রামাণ্য ছবি ‘ইয়াং ভয়েসেস স্পিক আউট’ দেখানো হবে এবং তার পরেই ‘জেন্ডার এ্যান্ড এডুকেশন’ শিরোনামে সেমিনারে ‘স্কুল কি মেয়েদের জীবন বদলে দিতে পারে?’ এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা। কাজেই দেরি করার উপায় ছিল না। বেলা দ্বিপ্রহর হবার আগেই মেরিন আতারাজানাসের সামনে গাড়ি প্রস্তুত ছিল। এবারের যাত্রায় অপু আনিকা দুজনেই আমাদের সাথেই চললো সুয়েকার পথে। ছন্দিতা মুখার্জি ভ্যালেন্সিয়ায় উৎসব শুরু হবার দু দিন পরে আসবে বলে আমার জানা ছিল। কাজেই ধারণা করেছিলাম, হোটেলে না হলেও সুয়েকা পৌঁছে ছন্দিতার সাথে নিশ্চয়ই দেখা হবে। কিন্তু সুয়েকায় এসে জানলাম, ইউনিসেফ এবং মহারাষ্ট্র সরকারের যৌথ প্রয়োজনায় নির্মিত ‘ইয়াং ভয়েসেস স্পিক আউট’ ছবির কোনো প্রযোজকই যাতায়াতের বিমান ভাড়া না দেয়ায় ছন্দিতা শেষ পর্যন্ত আসছে না।

সমুদ্র তীরের সুয়েকা শহরের মেয়র মহোদয় আমাদের জন্যে মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা করেছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা, সেমিনার উপস্থাপক, আলোচক এবং স্থানীয় দু-চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ আমরা জন পনের লা গ্রাঞ্জা রেস্তোরায় এসে সমবেত হলাম। সকলে বসে পড়ার পরপরই লম্বা টেবিলে পানীয় ছাড়াও বড় আকারের যে বৃত্তাকার পাত্রটি টেবিলে এসে হাজির হলো সেটি দেখে আমাদের গ্রামীণ মজলিস বা গণখাবারের খিচুড়ির কথা মনে পড়লো। হলদে রঙের এই স্প্যানিশ ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম পায়েলা। খাবার হিসাবে জনপ্রিয় পায়েলার মূল উপাদান চাল, নানা রকম সবজি, বিভিন্ন মশলা, মুরগির মাংস এবং নানা রকম সামুদ্রিক প্রাণি। সামুদ্রিক মাছ না বলে প্রাণি বললাম এই কারণে, সি-ফিস ছাড়াও অক্টোপাস থেকে শুরু করে শামুক এবং ঝিনুকসহ যে কোনো কিছুই পায়েলার উৎকৃষ্ট উপাদান। উপস্থিত সংগঠক বা আলোচকদের মধ্যে পেপে প্লাজা ছাড়া কেউই আমার পরিচিত নয়। টেবিলে সে আমার কাছাকাছি বলে ওকেই চুপচাপ জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমাদের এই বিশেষ খাবারের ইনগ্রেডিয়েন্স কী?’ সে বেশ আস্থার সাথে আমার কানে কানে বললো, ‘তোমাদের কথা ভেবেই চিকেন এবং ভেজিটেবল ছাড়া অন্য কিছুই এতে দেয়া হয়নি। তোমরা নিশ্চিন্তে খেতে পারো।’

প্রকৃতি বিজ্ঞান জাদুঘরে-২

পায়েলা খেতে খেতেই এই খাবারের প্রস্তুত প্রাণালী নিয়ে কথা হচ্ছিল। সদ্য পরিচিত আলোচকদের একজন জানালেন, ‘এই সুয়েকা এলাকায় প্রচুর ধানের চাষ হয়, কাজেই চালই হচ্ছে পায়েলার প্রধান উপকরণ। আর সমুদ্র কাছাকাছি হওয়াতে সামুদ্রিক মাছ এবং অন্যান্য সি-ফুড একসাথে করে তৈরি হয় এই খাবার।’

অপু বললো, ‘ধান চাষের দিক থেকে তাহলে আমাদের দেশের সাথে স্পেনের অন্তত এই এলাকার বেশ মিল আছে।’ জানা গেল ধানই স্পেনের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের প্রধান ফসল। আমরা জানতাম, ধানচাল শুধু ভারত-বাংলাদেশ, চীন-জাপান, থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামেরই প্রধান খাদ্য। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও অনেক কিছুই যে আমাদের অজানা, বিভিন্ন দেশে ঘুরে ফিরে তা বেশ বুঝতে পারি। দেখতে খিচুড়ির মতো এবং স্বাদেও খিচুড়ি জাতীয় পায়েলা খেতে বেশ ভালোই লেগেছে বলা যায়।

লা গ্রাঞ্জা রেস্তোরাঁ. সুয়েকা

সেমিনার শুরু আগে বেশ খানিকটা সময় আছে। কাজেই কে যেনো প্রস্তাব করলো কাছেই সমুদ্র তীরের কুয়েরা থেকে ঘুরে আসা যাক। আমরা কয়েকজন ছোট দুটো গাড়ি নিয়ে চললাম কুয়েরার উদ্দেশ্যে।

একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে অপু আনিকা দুজনেই পরেছিল একুশের শহিদ মিনার এবং বর্ণমালা ছাপ দেয়া পাঞ্জাাবি এবং শাড়ি। ওদের এই শাড়ি পাঞ্জাবি দেখে অনেকেই কৌতূহল প্রকাশ করেছিল। কথায় কথায় একুশের ইতিহাস, বাংলাভাষা এবং ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পথ ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূত্রপাতের বিষয়টিও এসে পড়লো স্বাভাবিকভাবেই। প্রসঙ্গক্রমে কাতালান এবং স্প্যানিশ ভাষার দ্বন্দ্বের কথাও জানা হলো। স্পেনের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের কাতালোনিয়া এবং ভ্যালেন্সিয়ায় অন্যতম প্রধান ভাষা কাতালান। স্পেনে এখন কাতালান দাপ্তরিক কাজের জন্য স্বীকৃত ভাষা। কাতালোনিয়ায় স্কুলের পড়াশোনায় কাতালান বাধ্যতামূলক, তবে পাশাপাশি স্প্যানিশও বহুল প্রচলিত। উচ্চ শিক্ষায় অবশ্য স্প্যানিশের কোনো বিকল্প নেই।

কুয়েরার সমুদ্র সৈকত নেহায়েতই শান্ত, এখানে আপাতত বালুকা বেলায় পর্যটক নেই, নিস্তরঙ্গ নীল সাগরের জলে কোথাও কেউ ডুবো-স্নানে নামেনি এবং সমুদ্রের বালির দীর্ঘ সৈকতে কাউকে রৌদ্রস্নানেও শুয়ে বসে থাকতে দেখা গেল না। অবশ্য আকাশে একটু মেঘ করেছিল, আবহাওয়াও বেশ ঠাণ্ডাই বলা যায়, এ সময় সখ করে মেঘের ছায়ায় কে আর বালিতে চিৎ-পাত সময় কাটাতে আসবে! তবে জানা গেল, সব সময় এমন পর্যটক শূন্য থাকে না। ভ্যালেন্সিয়া থেকে ঘণ্টা খানেক এবং সুয়েকা থেকে মাত্র পনের বিশ মিনিটের পথ, এখানে হোটেল রেস্তোরা রিসর্টের কোনো অভাব নেই। কাজেই ছুটির দিনে, বিশেষ করে সামারে এখানে ট্যুরিস্টের ভিড়ে জায়গা পাওয়াই মুশকিল হয়ে যায়। আমরা ডাইনে পাহাড় রেখে এবং বাঁয়ে সাগরের তীর ধরে অনেক দূর এগিয়ে কুয়েরার বাতিঘর পর্যন্ত দেখে ফিরে এলাম। এরই মধ্যে আনিকার সাথে আমাদের ফেস্টিভ্যালের ইন্টারপ্রেটার ক্রিস্টিনার সাথে আনিকার আলাপ বেশ জমে উঠেছিল।

কুয়েরা সৈকতে

বিকেলে যে মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেই সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। আমাদের আলোচনা শুরু হবার আগে এবারে সকল বয়সের দর্শকদের জন্য আবারো দেখানো হলো ‘ইয়াং ভয়েসেস স্পিক আউট’ এবং ‘তাসমিনা দি হর্স গার্ল’। ছন্দিতা মুখার্জির ছবিটি দেখে ভীষণভাবে হতাশ হলাম। মহারাষ্ট্র সরকার এবং ইউনিসেফের অর্থায়নে তৈরি প্রামাণ্যচিত্রটি একেবারেই সাধারণ এনজিও মার্কা ছবি। কিশোর কিশোরীরা তাদের কথা বলেছে ঠিকই, কিন্তু কেবল সাক্ষাৎকার ভিত্তিক এই ছবিটি যে কোনো ভাবেই দর্শককে ধরে রাখবে না সে কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এতে তেমন কোনো ভাবনার প্রতিফলন নেই এবং নির্মিতির মধ্যে কোনো কারশিমা নেই, মনে রাখার মতো একটি কথা বা দৃশ্যও নেই। মহারাষ্ট্র সরকার কেন ছন্দিতার জন্য এয়ার ফেয়ার দিতে রাজি হয়নি, ছবিটি দেখে বুঝতে পারলাম। এনজিও প্রোডাকশন হলেও আমরা কখনোই এতোটা দায়সারা কাজ করতে পারি না।

আলোচনার সূত্রপাত করলেন এবং পুরো সেমিনার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট লেখিকা এবং মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা রোজা রেইগ। সমস্যা হলো রোজা এবং আলোচকদের মধ্যে একজন ছাড়া কেউই ইংরেজি জানেন না। আমাদের একজনের কথা অন্যজনের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেবার জন্যে ক্রিস্টিনা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তারপরেও যিনি স্প্যানিশে প্রশ্ন করেন তার কথা অনূদিত হয়ে আমার কাছে পৌঁছায় ইংরেজিতে, আবার আমি কোনো উত্তর দিলে বা কোনো কিছু জানতে চাইলে তাও ইংরেজি থেকে ভাষান্তরিত হয়ে স্প্যানিশে দর্শক বা আলোচকের কাছে পৌঁছায়। জীবনে এই প্রথম এমন বহুমুখি অনুবাদের পাল্লায় পড়ে বুঝতে পারলাম এ ভাবে কোনো আলাপ আলোচনা প্রবহমান রাখা বা নিদেনপক্ষে চালিয়ে যাওয়াও দুঃসাধ্য বিষয়। তারপরেও কিছু কিছু কথা আমরা যতোটা সম্ভব নিজেদের মতো করে বুঝতে এবং বলতে চেষ্টা করেছি।

সেমিনার শুরুর আগে

প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের সমাজে এই অশ্বারোহী তাসমিনার ভবিষ্যত কী? সে কি স্কুল কলেজের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে বলে মনে হয়? তার পরিবারের পক্ষে কি তাসমিনার লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব? একজন নারী হিসাবে তাকে শিক্ষাক্ষেত্রে কী ধরনের প্রতিক‚লতার সামনে পড়তে হয়? সরকার বা সিভিল সোসাইটি এ সব ক্ষেত্রে কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে? আমি জানি, এইসব প্রশ্নের উত্তর আসলে আমার কাছে নেই। বাংলাদেশের বাস্তবতা স্পেনের বাস্তবতা দিয়ে বিচার করে কোনো উত্তরই মিলবে না। আমরা একটি পশ্চাদপদ গ্রামের কিশোরীকে তার বিশেষ যোগ্যতা ও সাফল্যের কারণে শহুরে মধ্যবিত্ত টেলিভিশন দর্শকের কাছে, কিছু সংখ্যক সংবেদনশীল উৎসাহী মানুষের কাছে, সমাজের শিক্ষিত উঁচুতলার মানুষের কাছে তুলে ধরে এক ধরনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি মাত্র। কিন্তু আমাদের স্কুলের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজের প্রচলিত ধ্যান ধারণা তাসমিনাকে কতোদূরে নিয়ে যেতে পারে তা অনুমান করা কঠিন নয়। তাসমিনা নিজেই বলেছে, ‘যখন আমি ঘোড়া চালাতে পারবো না, তখন বিয়ে করে ফেলবো।’
আমরা হয়তো বাইরে থেকে একজন তাসমিনাকে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে কিছুটা এগিয়ে দিতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের হাজারো তাসমিনাকে স্কুলের শিক্ষা শেষ হবার আগেই বাল্য বিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন, সমাজের রক্তচক্ষু থেকে বাঁচাবে কে! সেমিনার শেষে অনেকটা মন খারাপ নিয়েই সুয়েকা থেকে বেশ রাতে ভ্যালেন্সিয়ায় ফিরে এলাম। চলবে…