ফরিদুর রহমান : মোসত্রা ইন্তারন্যাসিওনাল সিনেমা এদুকাসিও অর্থাৎ চলচ্চিত্র শিক্ষার আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী সংক্ষেপে ‘মিছে’ চলচ্চিত্র উৎসবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ভ্যালেন্সিয়া শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের এই প্রদেশের বিভিন্ন শহরে। ভ্যালেন্সিয়ার সাতটি ছাড়াও বেনেতুসের, সুয়েকা, মিরাবেল, বেনেফাইও এবং পোর্ট সেগুন্তের মতো আরও আট-দশটি ছোট ছোট শহরে আয়োজন করা হয়েছে ছবির প্রদর্শনী এবং সেমিনার, ওয়ার্কশপ, চলচ্চিত্র নিয়ে কথামালা ইত্যাদি। প্রতিদিনই সকাল দশটা থেকে ভ্যলেন্সিয়া এবং ভ্যালেন্সিয়া থেকে দূরের শহর বন্দর মিলিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য অন্তত পনেরটা প্রদর্শনী একযোগে চলতে থাকে। ফলে আমাদের, অর্থাৎ বিদেশি নির্মাতা, জুরি এবং অতিথি অভ্যাগতদের জন্য প্রত্যেক দিনই সকাল বেলাটা ঘুরে ফিরে বা আলসেমী করে কাটাবার সুযোগ আছে।

দিন দশেকের জন্যে ভ্যালেন্সিয়ায় এসে শুয়ে বসে কাটাবার কোনো মানে হয় না। কাজেই ব্রেকফাস্টের পরে অপু আনিকাসহ বেরিয়ে পড়লাম। হোটেল মেরিনা আতারাজানাস থেকে সবচেয়ে কাছে কুড়ি বাইশ মিনিট হেঁটে ‘প্লায়া দেল কাবানিয়াল’ অথবা আর একটু সামনে এগিয়ে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত ‘প্লায়া দেল মাল-ভরোসা’য় যাওয়া যায়। আমরা আল্লাহ-ভরোসার দেশের মানুষ, কাজেই সিদ্ধান্ত হলো দূরবর্তী মাল ভরোসায় চেয়ে কাছাকাছি দেল কাবানিয়াল পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসবো। ভ্যালেন্সির সকাল বেলার রোদ বেশ মিষ্টি হলেও রোদের তাপ বাড়তে থাকলে সমুদ্র সৈকতে বালিও উত্তপ্ত হতে থাকবে। কাজেই ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। হোটেলের পেছন দিকে মিনিট খানেক পরে জেব্রাক্রসিং পার হয়ে হাতের বাঁ দিকে হাঁটতে থাকলে কিছু পরেই রাস্তার দুপাশে পামট্রির সারি। গাছগুলো যেমন দীর্ঘ তেমনি যতো দূর চোখ যায় তাদের সারিও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে পৌঁছে গেছে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত। রাতের বেলা দেখতে না পেলেও বুঝতে পারি এই পথ দিয়ে কয়েক মিনিট এগোতেই চোখে পড়বে মেরিনা বিচ কাব এবং ভ্যালে-এ-ভেন্তাস। তবে সে পর্যন্ত পৌঁছাবার আগেই অপুকে ছুটতে হলো সিটি সেন্টারের দিকে। আমরা পুরো দশ দিন থেকে গেলেও ওদের ফিরতে হবে তিনদিন পরেই। শহরে এয়ারলাইন্সের অফিস থেকে টিকেট কনফার্ম করে অপু হোটেলে ফিরে আসবে আর আমরা সি-বিচ থেকে ফিরে এক সাথে লাঞ্চ করতে বের হবো।

মুখোশ নৃত্য

সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত যাবার রাস্তাটা যেমন নির্জন তেমনি সুদৃশ্য। সি-বিচও এ সময় বেশ নির্জনই বলা যায়। তারপরেও সকাল দশটার উষ্ণবালিতে চাদর পেতে অথবা একেবারেই বালিতে শুয়ে সূর্যস্নান করা পর্যটকের সংখ্যা কম নয়। তবে ভুমধ্য সাগরের গাঢ় নীল নিস্তরঙ্গ জলে দাপাদাপি করার মতো মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম। তার কারণ হয়তো ভ্যালেন্সিয়া শহরের চারপাশে আরো দীর্ঘ এবং আরো আকর্ষণীয় সাতটি সমুদ্র সৈকত। আমাদের সাক‚ল্যে গোটা দুই-তিন কক্সবাজার কুয়াকাটা ইনানির মতো সৈকতের বাইরে কোথাও যাবার জায়গা নেই, সেই কারণে সর্বত্রই জনসমাগম বেশি। এ সময় সি-বিচে আমাদেরও তেমন কিছু করণীয় নেই। কিছুক্ষণ ঘোরা ফেরা করে ছবি তুলে, বেশ হতাশ হয়েই ফিরে চললাম হোটেলের পথে। সৈকতে দর্শণীয় কিছু না থাকলেও শহর থেকে সাগরের তীর পর্যন্ত আসা যাওয়ার পথটুকু সত্যিই দৃষ্টি নন্দন।

লাঞ্চের সময় হোটেল থেকে বেরিয়ে আবার সেই ফুটপাথে কমলা গাছের সারির ভেতর দিয়ে হেঁটে যাবার সময় আনিকা-অপুকে বললাম, ‘গতকাল দুপুরে আমরা যে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করেছি সেখানেই যাওয়া যেতে পারে। দেশি স্বাদের ভালো খাবার এবং ক্রেডিট কার্ডের দিক থেকেও বেশ সহনীয় পর্যায়ের।’ আনিকা জিজ্ঞেস বললো, ‘দেশি স্বাদের মানে নিশ্চয়ই ইন্ডিয়ান?’

মঞ্চে শিশুদের পরিবেশনা

বললাম, ‘তাজমহল নাম শুনে ইন্ডিয়ান মনে হতে পারে, তবে আসলে পাকিস্তানি!’ ‘পাকিস্তানি! অসম্ভব। একবেলা লাঞ্চ না করতে পারি, কিš‘ পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে ঢুকবো না।’ আমি জানতাম ব্যাপারটা এই রকমই দাঁড়াবে তারপরেও আনিকার পাকিস্তান বিদ্বেষ কিছুটা কমেছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। পাকিস্তান বিরোধী বলে যে ওর মধ্যে ভারতের জন্য বিশেষ প্রীতি আছে, তাও নয়। আসলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের একটা বড় অংশ যেমন নিজেদের অজ্ঞাতসারেই পাকিস্তানপন্থী হয়ে বেড়ে উঠেছে, তেমনি অনেকের মধ্যেই অন্ধ ভারতভক্তিও লক্ষ করা যায়, যার কোনোটাই যৌক্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত নিরপেক্ষতা নিজের মধ্যে ধারণ এবং তা লালন করা আসলেই খুব কঠিন।

গতরাতে আমরা যখন ‘সেইলস এ্যান্ড উইন্ড’ রেস্তোরায় উদ্বোধনী নৈশ্যভোজে ছিলাম তখন ওরা দুজন জাপানি একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করেছে। রাতের সেই রেস্টুরেন্টটা কাছে ক‚লে না হওয়ায় আমরা একটা ভিয়েতনামি রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম। দেশের বাইরে কোথাও গেলে আমরা সাধারণত যে দেশে যাই, সেই দেশের বিশেষ কোনো খাবার যাকে বলে ‘লোকাল ডেলিকেসি’ তা অন্তত চেখে দেখার চেষ্টা করি। অনেক সময়ই ট্যুরিস্টদের চাহিদার কারণে স্থানীয় সংস্কৃতি-উপকরণ-রন্ধন পদ্ধতি ইত্যাদি মিলিয়ে এইসব খাবারের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। সেক্ষেত্রে রুচিতে না আটকালে যে কোনো দেশ-কালের খাবার খেতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কাজেই ডাল-ভাত-মাছ অথবা পোলাও বিরিয়ানি না হলেই চলবে না, এমনটা কখনোই হয় না। কাজেই প্রাচ্য দেশের চীন, জাপান বা ভিয়েতনাম যেমন, মধ্যবর্তী তুর্কি, ইরানি বা লেবানিজ এবং পশ্চিমে গ্রিস বা ইতালি থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত সব দেশের খাবারই গ্রহণযোগ্য!

বেনেফাইয়োর শিশুদের সাথে

বিকেলে চলচ্চিত্র উৎসবের লোকজন দলবেধে চললাম ভ্যালেন্সিয়া থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরের শহর বেনেফাইয়ো। অপু আনিকা দিন তিনেকের জন্যে এসেছে, ওরা ভ্যালেন্সিয়া শহরের দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরে দেখার জন্যে থেকে গেল। সন্ধ্যা ছয়টায় বেনেফাইয়ো পৌঁছে দেখা গেল, স্থানীয় চলচ্চিত্র প্রেমিক, দর্শক এবং উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এনরিখ ভেলোর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এনরিখ ভেলোর, যা নামে এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, তিনি একজন খ্যাতিমান স্প্যানিশ লেখক এবং ন্যারেটর। বিশ্বখ্যাত না হলেও কাতালান ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে তার পরিচিতি আছে। আমরা আমাদের জাতীয় পর্যায়ের লেখক বা কবিদের নামে মফস্বল শহরের একটি মিলনায়তন বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নাম করণ করার মতো উদারতা এখনো দেখতে পারি না।
শুরুতেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মিলনায়তনে প্রবেশ না করে, ব্যান্ডপার্টির বাজনার সাথে কিছুটা হেঁটে চলে এলাম নগরীর প্রাচীনতম গির্জা পেরোকুইয়া দি সান্ত পেরে আপস্তল এর সামনের খোলা চত্বরে। সেখানেও আগে থেকেই তৈরি ছিল মুখোশ নাচের দল এবং ভারতীয় সাজপোশাকে একদল নৃত্য শিল্পী। ছোট পৌরনগরের এই বিচিত্র আয়োজনে বিনোদন ও বৈচিত্র্যের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের স্বতঃস্ফ’র্ত অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে গ্রামের হাট বাজারে জাদুকরের খেলা দেখার সময় দর্শক যেমন মূল আকর্ষণকে ঘিরে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে যায়, ঠিক তেমনি গির্জা চত্বরের সামনের পরিবেশিত নাচ-গানের জমজমাট আসর ঘিরে স্থানীয় মানুষের সাথে আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম। ইন্ডিয়া থিম কান্ট্রি হবার ফলে এখানেও ভারতীয় নাচের মাধ্যমেই শুরু হলো অনুষ্ঠান। রাজস্থানের ঝলমলে বাহারি পোশাকের রঙ ছড়িয়ে একদল ভারতীয় তরুণী দর্শকদের মাতিয়ে খোলা মঞ্চ ত্যাগ করার পরে আরম্ভ হলো মুখোশ নাচ।

বেনেফাইও-ভারতীয় নৃত্যানুষ্ঠান

বেনেফাইয়োতে নামার পরপরই নানা রূপ চেহারার গোটা ছয়েক বিশাল আকৃতির মুখোশ দেখেছিলাম। এই মুখোশগুলো কী কাজে লাগতে পারে শুরুতে বুঝতে পারিনি। নারী- পুরুষ, সাদা-কালো এবং চেহারায় ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার ছাপ মুখোশগুলোর প্রত্যেকেটিকেই একটির সাথে অন্যটি অন্যটিকে পৃথক করে চিনিয়ে দেয়। কিন্তু ছয়জন মানুষ যখন এক সাথে এই মুখোশের ভেতরে প্রবেশ করে স্প্যানিশ লোক সঙ্গীতের সুরের মূর্চ্ছনার সাথে নৃত্য পরিবশেন শুরু করে তখন ভিন্ন গোত্র-সম্প্রদায়, রূপ-চেহারা, নারী-পুরুষ সকল পার্থক্য ঘুঁচে যায়। খুবই সহজবোধ্য সুর-তাল-লয়ে, সাধারণ পরিবেশনা বেনেফাইয়োর সন্ধ্যাকে অসাধারণ করে তোলে। নাচের শেষে অনেকেই মুখোশ নিজের মাথায় পরে নিয়ে ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশনের চেষ্টা করে। ইন্দোনেশিয়ার পেনি সিলভানিয়া পুত্রী এবং বাংলাদেশের মাহবুবা বেগম হেনা দুজন দুটি মুখোশ পরে নিয়ে কিছুক্ষণ মজা করে। অবাক ব্যাপার দুজন পরিচিত মানুষ যখন মুখোশ পরে ঘোরাঘুরি করছিল তখন মুখোশের নিচে আসল চেহারার পরিবর্তে তাদের মুখোশটাই যেনো মুখ্য পরিচয় হয়ে উঠেছিল।

বেনেফাইয়োর অডিটোরিয়ামে সকাল দশটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত শিশুদের এবং সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত হাইস্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেছে। তারপরেও বিকেলে খোলা চত্বরে এবং সন্ধ্যায় মিলনায়তনে শিশুদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। উৎসব সম্পর্কিত কিছু আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও সন্ধ্যায় ছিল দুটি নির্বাচিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। দুটি ছবির মধ্যে মালয়ালম ভাষায় নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য ভারতীয় ছবি ‘ওত্তাল’ আমি আগেই দেখেছি। এই একই ছবি গ্রিসের অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছিল ‘দ্য ট্র্যাপ’ নামে। ছবি দেখতে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম এটি আমার দেখা। পিতৃ-মাতৃহীন আট বছর বয়সের কুট্টাপাই তার দাদার সাথে গ্রামে চলে এসেছে। খালে বিলে নৌকায় ঘুরে, একপাল হাঁসের দেখাশোনা করে, মাছ ধরে এবং গ্রামের ছেলেমেয়েদের সাথে হৈ চৈ খেলাধুলায় দিনগুলো ভালোই কাটছিল তার। শহরে একটা স্কুলে ভর্তি হবার সুযোগও এসেছিল। কিন্তু দাদা অসুস্থ হয়ে পড়ায় সব উলোট পালোট হয়ে যায়। ছবি উল্লেখযোগ্য দিকগুলো ছিল কেরালার অসাধারণ সুন্দর প্রকৃতির চমৎকার চিত্রায়ণ এবং কুট্টাপাইয়ের চরিত্রে অশান্ত শাহর অভিনয়।

সমুদ্র সৈকতের পথে

তবে এই দিনের সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটেছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুরুতে। মিলনায়তনের বাইরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অডিটরিয়ামের ভেতরে আমাদের জন্যে নির্ধারিত প্রথম সারিতে এসে বসেছি। মঞ্চে তখন প্রায় ৪০-৪৫ জন শিশু কিশোর দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে আছে। সামান্য ঘোষণার পরেই পিয়ানো, গিটার এবং মারাক্কাসে মিউজিক বেজে উঠলো। আমি পাশের আসনে বসা হেনাকে বললাম, সুরটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে না? সে একটু চিন্তা করে বললো, পরিচিত রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর। একটু পরেই আমাদের অবাক করে দিয়ে একদল ছেলে মেয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে গেয়ে উঠলো, ‘ফুল ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়/তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায় …।’ মঞ্চে ছেলেমেয়েরা সুরে ছন্দে দুলে দুলে গান গাইছিল আর আমাদের বুকের ভেতরে ঢেউ খেলে যাচ্ছিল এক অবর্ণনীয় আনন্দ। পুরো অডিটরিয়ামে ভারতীয় কয়েকজন থাকলেও আমরা দু জনই মাত্র বাঙালি। গানের মর্মবাণী আমাদের মতো করে উপলদ্ধি করার মতো আর কেউ ছিল না। অনুষ্ঠানের পুরোটা জুড়েই আমরা ‘কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায়…’ অবস্থায় আচ্ছন্ন হয়ে রইলাম।
অনুষ্ঠান শেষে ডিনারের সময় আমার অনুরোধে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর জোসফ আরবিয়ল সঙ্গীত পরিচালককে খুঁজে নিয়ে এলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই গান তুমি কোথায় পেয়েছো?’

আপাদমস্তক কালো পোশাক পরা মাথামোড়ানো সঙ্গীত পরিচালক বললেন, ‘দিস ইজ এ্যান ইন্ডিয়ান সং, আমার এক ভারতীয় বন্ধু তুলে দিয়েছে।’ বললাম, ‘তোমার কথা মিথ্যে নয়, তবে এই গান যতোটা ভারতীয়, তারচেয়ে বেশি বাংলাদেশের। এটা আমার ভাষা বাংলায় লেখা এবং এর রচয়িতা গ্রেট পোয়েট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’

মিউজিক ডিরেক্টরের কথা শুনে বুঝলাম ট্যাগোর বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কাছে অপরিচিত। অর্থাৎ যে ভারতীয় বন্ধু তাকে এই গান শিখিয়েছে সে নিজেও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে জানে কিনা সন্দেহ! আমার শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘তুমি বা তোমার শিশু শিল্পীরা কি গানের অর্থ খানিকটা হলেও জানে?’ উত্তরে সে বললো, ‘এটা এমন এটা গান, যার অর্থ জানার তেমন কোনো প্রয়োজনই পড়েনি। এমনিতেই রিদম এবং মেলোডিতে পরিপূর্ণ গানটা আমি এবং আমাদের ক্ষুদে শিল্পীরা বেশ উপভোগ করেছি।’ চলবে…