অনলাইন ডেস্ক : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মহামারির প্রেক্ষাপটে বাজেট বক্তব্যেও ভিন্নতা রাখছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বাজেট বক্তৃতায় মহামারি কাটিয়ে ওঠার জন্য পবিত্র কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের স্মার্ট বাজেটের বক্তব্য শেষ করবেন।
পাশাপাশি জনগণকে উজ্জীবিত রাখতে বাজেট বক্তৃতায় তিনি রাখছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদিত কবি শামসুর রাহমানের কবিতা ‘ধন্য সেই পুরুষ’। আগামীকাল (১১ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, তার খসড়া বক্তব্যে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজেট বক্তব্যের খসড়া অনুযায়ী শেষ পর্যায়ে ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কাবিতার কয়েকটি লাইন আবৃত্তি করবেন অর্থমন্ত্রী। ‘ধন্য সেই পুরুষ, নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে/ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে/ ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে/ প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মতো উপত্যকায়/… ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে।/… ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর পতাকার মতো/ দুলতে থাকে স্বাধীনতা।’
অর্থমন্ত্রী বলবেন, কবির এ পঙতিমালার মতোই যার নামের ওপর দুলছে বাঙালির বিজয়ের পতাকা, দুলতে থাকবে অবিরাম; যার নামের প্রতি শব্দই যেখানে স্বাধীনতা, দুর্মর ভেঙে ফেলা শত শৃঙ্খল; নতজানু হতে শেখা এক অবয়ব, নুয়ে পড়ে সব বাধ; সেই অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ মানেই মুজিব, মুজিব মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের কাঠামোর সব স্তরে, জাতীয় পতাকায়, জাতীয় সংগীতে, শস্য ক্ষেতে দোল খাওয়া ফসলে, নদীর কলতানে, পাখির কুজনে তিনি আছেন ও থাকবেন। তিনি আছেন, তিনি থাকবেন বাঙালির মননে, চেতনায়, ভালোবাসায় অমর অক্ষয় এবং অব্যয় হয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্বপ্ন ছিল মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশের অভ্যুদয়। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির অন্তরীক্ষ বঙ্গবন্ধুর চিরঞ্জীব আদর্শের সজীব উপস্থিতিতে আমরা এগিয়ে চলেছি, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধনে দেশপ্রেমে জাগ্রত থাকতে হবে দেশের প্রতিটি মানুষকে। রক্ত যদি স্বাধীনতার মূল্য হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ মূল্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সূর্য, স্বাধীন দেশ ও পতাকা অর্জন করেছে। আমাদের এই পতাকা, এই মানচিত্র ও স্বরাজ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের দান। এ রক্তের পতাকা যতদিন বাংলাদেশে উড়বে, বাঙালি থাকবে, ততোদিন সমগ্র জাতি ঋণী হয়ে থাকবে। এ ঋণ অপরিশোধ্য। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলবেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্ব সভায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বঙ্গবন্ধুর অজেয় আদর্শ, মহান আত্মত্যাগ এবং যোগ্য উত্তরসূরির অকুতোভয় সংগ্রামের ফলে। আমাদের সম্ভাবনা অসীম, তাই সম্পদ ও সুযোগের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সেই সম্ভাবনাকে নিয়ে আসতে হবে করতলে। অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে যেতে হবে, অর্জন করতে হবে স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক, রাজনৈতিকদৈব-দুর্বিপাকে ভয়হীন, ঘুরে দাঁড়াবার ঐকান্তিক স্পৃহায় বলীয়ান, প্রত্যয়ী আর সৃজনশীল জনসাধারণই আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস। বাস্তবে ফুল ফুটুক, সৌরভ ছড়াক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশের। জয় হোক মানবতার, জয় হোক সভ্যতার, অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাক আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা, মহামারির এই প্রলয় দ্রুত থেমে যাক। সালামুন আলাল মুরসালিন, ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। জায় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।