অনলাইন ডেস্ক : করোনা দুর্যোগের আয় কমে যাওয়ায় সন্তানদের টিউশন ফি নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকেরা। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত নোটিশ পাঠানো হচ্ছে অভিভাবকদের। টিউশন ফি আদায়ের কৌশল হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে অনলাইনে পাঠদান। যাতে তেমন সাড়াও মিলছে না। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এখন টিউশন ফি পরিশোধ করতে হবে পাঁচ মাসের। ফলে এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উত্কণ্ঠা রয়েছে।
অভিভাবকরা বলছেন, টিউশন ফি ৫০ শতাংশ বা ২৫ শতাংশ যেটাই হোক, কমাতে হবে। নইলে বেশির ভাগ দরিদ্র পরিবারের পক্ষে করোনা দুর্যোগের মধ্যে স্কুলের টিউশন ফি দেওয়া সম্ভব হবে না। ফি কমানো হলে ইতিমধ্যে অধিকাংশ অভিভাবক টিউশন ফি পরিশোধ করত। ফি না কমানোর কারণে অভিভাবকরা টিউশন ফি পরিশোধে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা জানান, টিউশন ফি কমানোর জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানালেও তাতে সাড়া মেলেনি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিভিন্ন সময়ে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগামী কয়েক মাস চলার সামর্থ্য আছে তাদের উচিত সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া। আর সামর্থ্যবান অভিভাবকদের উচিত হবে টিউশন ফি পরিশোধ করা।
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের নামি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে তারা টিউশন ফি পরিশোধে অভিভাবকদের তাগিদ দিচ্ছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মিতই টিউশন ফি আদায়ে এসএমএস দিচ্ছে। এমনকি শিক্ষকরা অভিভাবকদের ফোনও দিচ্ছেন বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পড়ালেখা করে। করোনাকালে তারা সমস্যায় রয়েছে। অনেক বেসরকারি চাকরিজীবী বেতন পাচ্ছেন না। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। আবার যারা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন তাদের আয়ও বন্ধ। এমন অবস্থায় স্কুলগুলোর বেতনের নোটিশ অমানবিক। আমরা ছয় মাসের বেতন সম্পূর্ণ মওকুফের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সাড়া মেলেনি। প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি নিয়ে অমানবিক আচরণের বিষয়টি মাউশির মহাপরিচালককেও জানিয়েছি।
শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, যেসব অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের টিউশন ফি কমানো উচিত। আর অভিভাবকদের পক্ষ হয়ে সরকারকে এই টিউশন ফি বহন করা উচিত।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, বিষয়টি অতটা সহজ-সরল নয়। প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে সহজেই এর সমাধান করা যাবে না। অন্যের বিষয় বিবেচনা না নিয়ে কেবল নিজেরটা চিন্তা করলে এই ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে পারব না। টিউশন ফি মওকুফ বা কমানোর বিষয় সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বা অভিভাবকদের ক্ষেত্রে একরকম নয়। তাই নির্দিষ্ট করে টিউশন ফি কমালেই সমস্যা সমাধান হবে না। এতে কারো কারো সমস্যা বেড়ে যাবে। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের আহ্বান জানাব, নিজেরা বসে সমস্যার সমাধান করেন। এখনো টিউশন ফি কমানোর বিষয় লিখিত কিছু দেইনি। যদি শেষ পর্যন্ত এ বিষয় সমাধান না হয় তাহলে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করা হবে বলে জানান মাউশির মহাপরিচালক।