অনলাইন ডেস্ক : কপোতাক্ষের তীরঘেঁষা ছোট্ট গ্রাম কাঠমারচর। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি হারিয়ে এ গ্রামের অনেক মানুষ গত ছয় মাস ধরে বাস করছেন উঁচু বাঁধের ওপর। সেখানে সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় কোনোমতে তাদের সংসার চললেও করোনায় বন্ধ হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কথা কেউ ভাবেনি। তবে এসব শিক্ষার্থীর কথা ভেবে এগিয়ে এসেছে মনিরা খাতুন নামের এক কিশোরী। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের শিশুদের ডেকে নিজেদের খুপরি ঘরের সামান্য ফাঁকা জায়গায় সকাল-বিকেল তাদের লেখাপড়া করাচ্ছে সে। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের ওপর বসেও তাদের লেখাপড়া করাচ্ছে মনিরা।
গ্রামের বাসিন্দা চিংড়ি ব্যবসায়ী আবিয়ার সরদারের মেয়ে মনিরা খাতুন খুলনার কয়রার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষার্থী। তার নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি গ্রামের অসহায় পরিবারের শিশুদের শিক্ষা চালিয়ে নিতে তার এ প্রচেষ্টা।
মনিরা জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ৯ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে আম্পানের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা অবস্থা মানুষের। সবাই ঘর সংসারের চিন্তায় ব্যস্ত। ইচ্ছা থাকলেও কেউ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কথা ভাবতে পারছে না। নিয়মিত লেখাপড়া না করলে শিশুরা সব ভুলে যাবে। তাছাড়া এ অবস্থায় অনেক শিশুর ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন চিন্তায় নিজ উদ্যোগে তাদের লেখাপড়া চালু রাখার ব্যবস্থা করেছি।
কাঠমারচর গ্রামের তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘মেয়েটি আমাগের গ্রামের আশীর্বাদ। আমরা যতটুকু পারতিছি তার এ কাজে সহযোগিতা করতিছি যাতে ছেলেমেয়েদের পড়াডা চালু থাকে।’ গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ী আবিয়ার সরদারের তিন মেয়ের মধ্যে মনিরা সবার ছোট। মনিরার বড় দুই বোনও কলেজে অধ্যয়নরত। গ্রামের মানুষ এ পরিবারটিকে শিক্ষানুরাগী হিসেবেই জানে।
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, ওই গ্রামের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস বাগদা চিংড়ি। কেউ নদীতে জাল টেনে, কেউ ছোট চিংড়ি ঘের আবার কেউ চিংড়ির পোনা বিক্রি করে সংসার চালায়। তবে গ্রামের অধিকাংশ মানুষই তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে আগ্রহী। এখানকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে কিশোরী মনিরা খাতুন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। আমরা তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করব।’
মনিরা খাতুনের মাদ্রাসার সুপার আবদুস সাত্তার বলেন, সে মেধাবী ছাত্রী। এবারের দাখিল পরীক্ষায় মনিরা ভালো ফল করবে বলে আশা করি। তার নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি আপৎকালীন অন্যদের লেখাপড়া চালু রাখায় তার শিক্ষক হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, দুর্যোগকালীন শিক্ষা চালু রাখতে কিশোরী মনিরা যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। সাধ্যানুসারে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করব।