Home কানাডা খবর অন্টারিওতে ক্যাথলিক স্কুলে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ

অন্টারিওতে ক্যাথলিক স্কুলে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক : কানাডার অন্টারিও প্রদেশের রাজধানী টরন্টো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে ইনিসফিল এলাকায় একটি স্কুলে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেন্ট ফ্রান্সিস অ্যাসিসি ক্যাথলিক স্কুল নামের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রেড-৭ এর একজন কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রীর মা-বাবা ওই অভিযোগ করেছেন।

ফোয়েবি ফাইফি ও জেসন ম্যাক ডোনাল্ড দম্পতির অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পরও একদল শ্বেতাঙ্গ ছাত্র তাদের ১২ বছর বয়সী মেয়েকে নানা কটু কথা বলে ব্যাঙ্গ-বিদ্রæপ ও উপহাস করেই যাচ্ছে। এমনকি তাকে তারা ভয়-ভীতিও দেখাচ্ছে। স্কুল বোর্ড জানিয়েছে, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে এবং বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছে।
৭ম গ্রেডের ওই কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর মা-বাবা জানান, তাদের মেয়ে স¤প্রতি একটি পাবলিক স্কুল থেকে বদলি হয়ে ওই ক্যাথলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু ক্লাস শুরুর পর একদল ছাত্র, যারা প্রায় সবাই শ্বেতাঙ্গ তারা শ্রেণীকক্ষ, স্কুলবাস ও স্কুল ক্যাম্পাসে ওই ছাত্রীকে উত্যাক্ত করতে থাকে। তারা তাকে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ ও তার প্রতি নানান অশোভন অঙ্গ-ভঙ্গি করে তাকে উত্যাক্ত করা শুরু করে। বিষয়টির প্রতিবাদ করলে উত্যাক্তকারীরা পাল্টা তাকে হুমকি দেয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাসরুম এবং স্কুল বাসে বেশ কয়েকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সে সময় ঘটনাস্থলে শিক্ষক ও বাস ড্রাইভার উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রীটির অভিভাবকের অভিযোগ বিষয়টি স্কুল কতৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং কতৃপক্ষের তদন্ত কমিটি গঠন ও পুলিশকে জানানোর পর তাদের উচ্ছৃঙ্খলতা আরো বেড়ে গেছে। বর্ণবাদী আচরণের শিকার ছাত্রীটির মা ফোয়েবি ফাইফি বলেন, গত সপ্তাহে ওই শ্বেতাঙ্গ ছাত্রদের এমন আচরণের প্রতিবাদ করলে তাদের একজন নিজেকে কিউ ক্ল্যাক্স-ক্যানের (কে কে কে) সদস্য দাবী করে। এতে ছাত্রীটি ভয় পেয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, কিউ ক্ল্যাক্স-ক্যান বা কে কে কে হচ্ছে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী একটি গুপ্ত সংগঠন। যারা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে অগনিত কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে হত্যা করেছে।
ফাইফি বলেন, তারা বিষয়টি স্কুল কতৃপক্ষ ছাড়াও ক্যাথলিক স্কুল বোর্ডেও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার মেয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকে। সে আমাদের কাছে জানতে চায় তারা (শ্বেতাঙ্গরা) যদি তার উপর আক্রমণ করে তাহলে সে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবে।
স্কুল বোর্ড সুপরিনটেন্ডেন্ট মন্টেরিও আলমেইদা বলেছেন, এ ধরনের অভিযোগের বিষয় প্রমাণ হলে, কাউন্সেলিং থেকে সাসপেনশনসহ নানান ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। এই অভিযোগটি পুলিশকে জানানো হয়েছে। এছাড়া তৃতীয় একটি পক্ষকেও তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকারের বিষয়ে খুবই সচেতন।

এদিকে সিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, স¤প্রতি অন্টারিওতে আরো কয়েকটি বর্ণবাদী আচরণের ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে এক কৃষ্ণাঙ্গ মা ও তার মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছে। এছাড়া টরন্টো হাইস্কুলে আগামা ক্রিস্টির উপন্যাস পড়ানোর সময় এক শিক্ষক কৃষ্ণাদের নিয়ে বিদ্রæপ করেছেন বলে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে। অন্য দিকে অন্টারিওর লন্ডনে একটি স্কুলে হ্যালোইন উৎসবের সময় এক শিক্ষক বিতর্কিত পোশাক ও মুখোশ পরিধান করে কৃষ্ণাঙ্গদের বিদ্রæপ করায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
ফোরেবি ফাইফি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে প্রথম যখন শ্রেণীকক্ষে তার মেয়েকে উত্যাক্ত করা হয় তখনই শিক্ষকের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা নেয়নি। এখন বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে আমি মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় ভয়ে থাকি যে এই বুঝি স্কুল থেকে কোনো খারাপ খবর এলো।

এদিকে পুলিশ বলছে, তারা ঘটনার তদন্ত শুরুর করেছে। ইতোমধ্যে স্কুলবাস ও শ্রেণীকক্ষের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ৭ জন শ্বেতাঙ্গ ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। দ্রæত দোষীদের চিহ্নিহ্নত করা হবে। সূত্র : সিবিসি

Exit mobile version