সাইফুল আলম চৌধুরী : অধ্যাপক মমতাজ উদদীন আহমদের পরিচয় শুধুমাত্র শিক্ষক ও নাট্যকার হিসেবে নয়, তিনি গবেষণাধর্মী, জার্নাল, গল্প, উপন্যাস, সরস ও রগড় এবং বহুবিধ গ্রন্থের সম্পাদনাও করেছেন। এছাড়া অনেক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য নির্মাণ করেছেন। তার সৃষ্ট গদ্য রচনাসমূহের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো :
১. চার্লি চ্যাপলিন – ভাঁড় নয় ভবঘুরে নয় (গবেষণা)
২. আমার সময় এবং আমি (জার্নাল)
৩. অমৃত সাহিত্য (গবেষণা)
৪. জগতের যত মহাকাব্য (গবেষণা)
৫. কপাল কুন্ডলা (সম্পাদনা)
৬. লাল সালু ও সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ (সম্পাদনা)
৭. আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যের গদ্যরূপ
৮. শাহানামা কাব্যের গদ্যরূপ
৯. সাহসী অথচ সহাস্য (সরস রচনা)
১০. নেকাবী এবং অন্যগণ (সরস রচনা)
১১. জন্তুর ভেতর মানুষ (সরস রচনা)
১২. ভালোবাসিলেই (গল্পগ্রন্থ)
১৩. ওহে নুরুল ইসলাম (উপন্যাস)
উল্লেখিত গদ্য নির্মাণ ছাড়াও পূর্বে আলোচিত হয়েছে, তার ‘প্রসঙ্গ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু’, ‘আমার ভেতরে আমি’, ‘হৃদয় ছুঁয়ে আছে’, ‘সজল তোমার ঠিকানা’, ‘এক যে জোজো এক যে মধুমতী’, ‘নাট্য সম্ভার’, ‘কথা সাহিত্য সম্ভার’, ‘কিশোর সম্ভার’, ‘সরস ও রগড় কাহিনী সম্ভার’ প্রভৃতি গ্রন্থাবলী সম্পর্কে।
আমার শিক্ষক ‘লাল সবুজের পালা’, ‘জোহরা’, ‘কাঠগড়া (রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ গল্প অবলম্বনে)’, ‘বিরাজ বউ’, ‘বিপরীত স্রোত’, ‘খোকা বাবুর প্রত্যাবর্তন’সহ বহু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য নির্মাণ করেন।
নাট্যকার মমতাজ উদদীন আহমদ কেবলমাত্র মঞ্চ-নাটক নির্মাণ করেননি, তার প্রতিভার বহির্প্রকাশ প্রত্যক্ষ করেছি সমান্তরালভাবে বেতার এবং টেলিভিশন নাটকেও। বেতারে তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য নাটকসমূহের মাঝে রয়েছে, ‘সাগর থেকে এলাম’, ‘সাগরে জেগেছে উর্মি’, ‘ঝরাপাতা’, ‘চয়ন তোমার ভালোবাসা’, ‘বিবাহ’, ‘তখন মধুমাস’, ‘ফিরে যাও’, ‘সজলের মা’, ‘দৃষ্টি’, ‘বর্ণচোরা’, ‘লজ্জা’, ‘কী চাই শঙ্খচিল’।
টেলিভিশনে স¤প্রচারিত তার লেখা নাটকসমূহের মাঝে ‘আমাদের মন্টু মিঞা’, ‘বিবাহ’, ‘একটি কালো সুটকেস’, ‘দখিনের জানালা’, ‘রাক্ষুসী’, ‘ঝড়ের মধ্যে বসবাস’, ‘হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’, ‘যামিনীর শেষ সংলাপ’, ‘একটি যুদ্ধ অন্যটি মেয়ে’, ‘স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা’, ‘ফলাফল নিম্নচাপ’, ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’, ‘সুভা’, ‘অসময়ে অতিথি’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, ‘নেই’, ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘স্বপ্নবিলাস’, ‘প্রতিদ্ব›দ্বী’, ‘নয়নপুরের জমিদার’, ‘তাহারা দম্পতি’, ‘কুল নাই কিনার নাই’, ‘সহচর’, ‘জমিদার দর্পণ’।
নাট্যকার মমতাজ উদদীন আহমদ প্রায় ত্রিশটি মৌলিক ও অনুবাদ, রূপান্তর, অনুসরণ অবলম্বনে মঞ্চ-নাটক নির্মাণ করেছেন। প্রকাশনার সময় তিনি একাধিক নাটককে একই গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন। বিদেশী বহু নাটক বাংলা ভাষাভাষীদের উপজীব্য করার সময় নির্বিচারে স্বাধীনতা নিয়েছেন।
তার নাট্য-সাহিত্য কর্মের বিবরণ নির্মাণকাল আর প্রকাশকাল নিম্নে দেয়া হলো : স্পাটাকাস বিষয়ক জটিলতা, ফলাফল নিম্নচাপ এবং হরিণ চিতা চিল- তিনটি পৃথক নাটকের সমন্বয়ে ‘নাট্যত্রয়ী’। রচনা করেছেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনাকালে ১৯৭৩-৭৪ সালে, গ্রন্থখানি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৭৬ সনে।
আন্তন চেখভের নাট্য রূপান্তর- যামিনীর শেষ সংলাপ, এই রোদ এই বৃষ্টি, বুড়িগঙ্গার সিলভার জুবিলি, হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার- চারটি আলাদা নাটক নিয়ে প্রকাশিত ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার। এই নাটকগুলোর নির্মাণ সময় ১৯৬২-১৯৭৫ আর প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে।
লেডি গ্রেগরীর ‘রাইজিং অব দ্যা মুন’ অবলম্বনে ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং বর্ণচোরা- এই চারটি নাটক মমতাজ স্যার নির্মাণ করেছেন একাত্তর-বাহাত্তরে। প্রথম নাটক মঞ্চায়িত হয় চট্টগ্রাম কলেজ রঙ্গমঞ্চে একাত্তরের ফেব্রæয়ারি মাসে, দ্বিতীয় নাটক লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতিতে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানের খোলামঞ্চে একাত্তরের পনের মার্চ, তৃতীয় নাটক একাত্তরের চব্বিশ মার্চ চট্টগ্রাম কলেজ প্যারেড ময়দানে অভিনীত হলেও তা রচিত হয় একুশে মার্চ।
উল্লিখিত গ্রন্থের শেষ নাটকখানি- ‘বর্ণচোরা’ নির্মিত হয় বাহাত্তরের ফেব্রæয়ারি মাসে। বর্ণিত নাটকসমূহ গ্রন্থাকারে ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ নামে ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয়।
নাট্যকার রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বোন’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন ১৯৭৮ সালে। ‘থিয়েটার’ নাট্য সংগঠনের আগ্রহ-উৎসাহে তিনি এই কাজটি সম্পন্ন করেন, যা ঢাকা, নতুন দিল্লী, কলকাতাসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা শহরে মিলে দেড়শত রজনীর বেশি অভিনীত হয়েছে।
এই উপন্যাসের নাট্যরূপ দান প্রসঙ্গে তিনি পাঠকদের জানান : “… দুই বোনে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং কথা বলেছেন এবং চরিত্রগুলোর মর্মে বসে বিশ্লেষণ করেছেন। দারুণ সংহত আর পরিণত এই উপন্যাস। শর্মিলার সংলাপ সন্ধান করতে, কখনো উপন্যাসখানির প্রথম পাতা, কখনো মাঝখানের পৃষ্ঠা এবং কখনো রবীন্দ্রনাথের কথা এক সাথে জুড়তে হয়েছে। … দুই বোনের স্বরূপটি ধরার জন্য মালঞ্চ, চতুরঙ্গ, ঘরে বাইরে পড়লাম। চিরকুমার সভা, শেষের কবিতা আবার ঝালাই করলাম। নালুদা আর নীরজা চরিত্র দুটির সরস অবস্থান সন্ধান করতে চিরকুমার সভা সাহায্য করল। শর্মিলার জন্য শেষের কবিতা দিয়েছে কয়েকটি সংলাপ, শশাঙ্কের মুখে রক্তকরবীর সংলাপ বাদ পড়েনি। … একমাত্র মথুরদা চরিত্রটি আমাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বার বার পাতা উল্টোতে আর কথা খুঁজতে বাধ্য করেনি। … নাট্যরূপের আবহ নির্মাণের জন্য ছিন্নপত্র, কালান্তর ও দূরবর্তী সহায় হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে ছিল। … গীত বিতান নিয়ে এপিঠ ওপিঠ করতে করতে সাতাশটা গান নির্বাচন করা হলো। কাটছাঁট করে শেষ পর্যন্ত গোটা চারেক গান থাকল। … উর্মিমালার মতো দূরন্ত চপল, আধুনিক এবং সজীব চকচকে চরিত্রটি নাট্যরূপে কিছুতেই জ্যোৎস্নার মতো ফুটে ওঠেনি। উর্মিমালার সরব সম্ভাবনাকে সমুন্নত করাই গেল না। সুন্দর, উজ্জ্বল মেয়েটিকে বসন্তের বাতাসে যদি নাচাতে পারতাম, মেয়েটি যদি টেনিস খেলার মাঠে প্রাণের উদ্দামতায় খলখলিয়ে উঠত, আমি খুশিই হতাম।
আমাদের মঞ্চের সামান্যতা ও দীনতার মধ্যে উর্মির নাচন সম্ভব নয়। নাট্যকারের হাতে মাত্র সংলাপের সুযোগ, কর্মের প্রবাহ দিয়ে মঞ্চ সাজাব তেমন মঞ্চ সুযোগ এখনও নেই।”
‘জমীদার দর্পণ’ মীর মশাররফ হোসেনের দ্বিতীয় এবং অন্যতম সেরা নাটক। বিষয় গুণাবলীর কারণে – ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ জারী হবার পর বাংলার কৃষ্ণক‚লের ওপর যে অমানুষিক ও পাশবিক নির্যাতন সংঘটিত হয়েছিলো, সেই সবের কাহিনী সম্বলিত হয়ে নাটকখানি নির্মিত হয় ১৮৭৩ সালে।
‘থিয়েটার’ নাট্য সংগঠনের আগ্রহ আর নাট্যকার মমতাজ উদদীন আহমদের ব্যক্তিগত সংশ্লেষে জমীদার দর্পণের নব নাট্যরূপ বাংলাদেশের মঞ্চ – নাটক দর্শকগণ প্রত্যক্ষ করেছে। নাট্যকার মূল নাটকের বিষয়াবলী সিংহভাগ অক্ষুণœ রেখে চরিত্র আর সংলাপ নির্ণয়ে ও বিশ্লেষণে যথেষ্ঠ স্বাধীনতা গ্রহণ করেছেন, প্রস্তাবনা ও উপসংহারেও তেমনি ইতিহাসের সেই কৃষক বিদ্রোহের শ্রেণী সংগ্রামের চেতনার বহির্প্রকাশ বর্তমান।
তবে নাট্যকার মমতাজ উদদীন আহমদ প্রায় দেড়শ’ বছরের ব্যবধানে নব নাট্যরূপ প্রদানকালে মূল নাটকে উপস্থাপিত চরিত্রের মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধন করেছেন – বৃটিশ ভারতবর্ষে বিদেশী বেনিয়া আর জমিদার, জোতদার, মুৎসুদ্দীদের সাথে স্বাধীন বাংলাদেশে শাসক চরিত্র এবং আবু মোল্লার চারিত্রিক পার্থক্য স্পষ্টতরো তাই।
নব নাট্যকারের জবানিতে : “… আমার নাট্যায়নে আবু মোল্লা মিথ্যা বিচারের কাঠগড়ায় আত্মদানকারী। আমার আবু মোল্লা বিষাদসিন্ধুর নায়ক নয়, বিদ্রোহী যমুনার কণ্ঠস্বর। এ পরিবর্তনের সাহসটি বিষয়গত নয়, বিশ্লেষণগত।
… মীরের জমিদার লম্পট, নারীর দেহ তার লক্ষ্য। নব নাট্যায়নে জমীদারের লক্ষ্য কৃষকের জমি আর তার শ্রম। নারীর দেহ তার উপলক্ষ্য মাত্র। মীরের নাটকে বিদেশী শাসক একজন অন্যায় বিচারক। নব নাট্যায়নে সেই শাসক একটি রাজনৈতিক কর্মকাে র অধীশ্বর। এই অলঙ্ঘনীয় অধীশ্বরের (১৯৮৩ সালে যখন মমতাজ স্যার জমীদার দর্পণ নাটকের নব নাট্যরূপ দান করেন, তখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার অধীশ্বর ছিলো স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ – লেখক) বিরুদ্ধে আবু মোল্লার অসহায় রোদন মীর সাহেবের অন্তর্দেশকে বিব্রত করেছিল। আমি সেই বিব্রত অন্তরকে বিদ্রোহীর উপাদানে উপস্থাপিত করেছি। আবু মোল্লার হাতে প্রতিরোধের অস্ত্র সমর্পণ করেছি। এসব কারণে নব নাট্যায়নে নাট্যকার মশাররফ অক্ষুণœ নন। কিন্তু সত্যবাদী এবং ভ‚মি সংলগ্ন মীর মশাররফ হোসেন সসম্মানে সংস্থাপিত।”
মমতাজ উদদীন আহমেদ ‘জমীদার দর্পণ’ মঞ্চ নাটক ১৯৮৩ সালে ‘থিয়েটার’ নাট্য সংগঠনের জন্যে নির্মাণ করেছেন, যা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সনে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন কাইয়ুম চৌধুরী।
দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর শনিবার চিৎপুরে ‘ঘুড়িওয়ালা বাড়ি’ নামে খ্যাত মধুসূদন স্যান্নালের বিশাল অট্টালিকার বহির্দেশের উঠানে মাসিক চল্লিশ টাকা ভাড়ায় ন্যাশনাল থিয়েটার কর্তৃক স্থাপিত রঙ্গমঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়েছিলো, যাতে অর্ধেন্দু শেখর মুস্তাফী একাই চার- চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। বাগবাজার থিয়েটারের গিরিশচন্দ্র ঘোষ ব্যতিরেকে সেই সংগঠনের সকলেই নাটকে অভিনয় করেন, মুস্তাফী অভিনীত চরিত্রসমূহের মাঝে একটি নারী চরিত্র ছিলো।
প্রথম শ্রেণী- এক টাকা এবং দ্বিতীয় শ্রেণী – আট আনা দর্শণীর বিনিময়ে বাংলা সাহিত্যের প্রথম গণনাটক মঞ্চস্থ হয় বিধায় দিবসটি বাংলা সাধারণ রঙ্গমঞ্চের জন্যে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। বলাবাহুল্য, নীল দর্পণ নাটকটি সেই সময় ষোল রজনী মঞ্চায়িত হয়েছিলো। রাত আটটায় নাটকটির অভিনয় আরম্ভ হতো আর শেষ হতো রাত একটার সময়।
ন্যাশনাল থিয়েটার বা জাতীয় নাট্যশালা স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র চার বছরের – ৭ ডিসেম্বর ১৮৭২ থেকে ২ ডিসেম্বর ১৮৭৬। এই চার বছরের মাঝে নাট্যমঞ্চের ইতিহাসে কয়েকটি ঘটনা ‘উত্তপ্ত সংবাদ’ হিসেবে সব সময় বিবেচিত হবে :
এক. নীল চাষীদের ওপর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অত্যাচার – নির্যাতনের কাহিনী সমৃদ্ধ নীল দর্পণ বাংলা ভাষা হতে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করার কারণে পাদ্রী লংয়ের জেল আর জরিমানা- দুইই হয়েছিলো এবং বাংলা প্রদেশের বৃটিশ গভর্নর আর মুখ্য সচিব চাকুরীচ্যুত হয়েছেন।
দুই. ভারত বর্ষের তৎকালীন পুলিশ রঙ্গমঞ্চে ঢুকে নাট্যকার, পরিচালক উপেন্দ্রনাথ দাস ও অমৃতলাল বসু এবং মতিলাল বসু। বেলবাবুসহ আটজন অভিনেতাদের গ্রেফতার করে।
তিন. ১৮৭৬ সালের মার্চ মাসে ‘ড্রামাটিক পারফরম্যান্সেস কন্ট্রোল বিল’ বছরের শেষ নাগাদ প্রবল বিরোধিতা সত্তে¡ও আইনে পরিণত হয়েছিলো। যে কারণে বৃটিশ, পাকিস্তানী, এমনকি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও অবিশ্বাস্য রকম হ্রাস পায় বাংলা নাট্য সাহিত্যে এবং মঞ্চে সামাজিক-রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত সৃজনশীল নাটকের সংখ্যা।
‘বিবাহ ও কী চাহ শঙ্খচিল’- একই গ্রন্থে দুটি পৃথক নাটক। আবার ‘বিবাহ’ নাটকখানি দুই ভাগে বিভক্ত আর আলাদাভাবে মঞ্চায়িত হবার যোগ্য, যা বায়ান্নের ভাষা-আন্দোলনের অন্যতম শহীদ প্রসঙ্গে কল্পিত বিষয়ে নির্মিত হয়েছে। বর্ণিত নাটকের সময়কাল ১৯৭৯ সাল বিবেচনা করে নাট্যকার সৃষ্ঠ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রের বয়স নির্ণয় করেছেন।
এই নাটকে সখীনা চরিত্রের কিশোরী ও পরিণত কালের – দুই ভিন্ন সময়ের পরিবর্তনজনিত সমস্যা সম্পর্কে নাট্যকার সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত থেকে সমাধান দিয়ে গেছেন পূর্ব হতে। কিশোরী চরিত্রের জন্যে সমবয়েসী শিল্পী নির্বাচন করা যেতে পারে আমরা একই শিল্পী মেকআপের সামান্য পরিবর্তন করে বয়সের দূরত্ব ঘোচাতে পারেন।
‘কী চাহ শঙ্খচিল’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভ‚মিতে নির্মিত। তার নির্মিত বর্ণিত নাটকসহ একাধিক নাটক কলকাতার রবীন্দ্র ভারতীতে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠদান করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের কালে শত্রæসেনা ও তাদের দোসর কর্তৃক বাংলার নারীদের নির্যাতন আর সম্ভ্রম হারানোর কলঙ্কিত ইতিহাসের উপস্থাপন এই নাটক। বর্ণিত এই নাটকে রৌশন আরার অন্তিম সংলাপ লক্ষণীয় :
“যুদ্ধকে নিয়ে তোমরা ভাগ্য গড়ে নাও, সাধের সিংহাসন মবজুত কর। পৃথিবীর রঙকে মলিন কর, আমিতো প্রতিবাদ করিনি। … আমার সন্তানকে তোমরা বাণিজ্য গড়তে চাও কেন? আমার সন্তানের পরিচয়কে তোমরা অপবিত্র কর কেন? স্বাধীনতা? কার স্বাধীনতা? কেমন স্বাধীনতা?”
‘বিবাহ ও কী চাহ শঙ্খচিল’ নাট্যদ্বয়ের নারী চরিত্র এবং নাটক দুটি সম্পর্কে নাট্যকার বলেন : “… সখীনা ও রৌশন আরার আবেগ ও যন্ত্রণার সূত্র আমার কাছে অভিন্ন। ভাষা আন্দোলনে স্বাধীকার এবং একাত্তরে স্বাধীনতার যুদ্ধ ধারাবাহিক সূত্রে গ্রথিত। এই কারণে বিবাহ ও কী চাহ শঙ্খচিলের একই গ্রন্থে অবস্থান।” (অসমাপ্ত / চলবে) ২৪ মার্চ ২০২০ সংখ্যার পর …
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও কলামিস্ট। sakil19@hotmail.com