শুজা রশীদ : (পর্ব ১৬)
রিমার নতুন একটা অভ্যাস হয়েছে এখন। হাতে একটু সময় পেলেই নতুন কি ধরনের কাজকর্ম করা যায় তাই নিয়ে গবেষণা করে। অনেক কিছুই করা সম্ভব। এলিমেন্টারি স্কুলে স্পেশিয়াল প্রোগ্রাম হেল্পার থেকে শুরু করে ওল্ড এজ এসিস্ট্যান্ট, রিয়েল এজেন্ট কিংবা নার্সিং, নিজের একটা ছোটখাট ব্যবসাও খোলা যায়, কিংবা ফার্মেসী এসিস্ট্যান্ট, অফিস এডমিন হওয়া যায়। এমনকি আবার পড়াও শুরু করা যায় কোন কলেজে কিংবা ইউনিভার্সিটিতে, অসমাপ্ত ডিগ্রীটা শেষ করার জন্য। কিন্তু কোথাও ভর্তি হওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কতটুকু কি করতে পারবে সঠিক জানা না থাকলেও এইসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে খুব ভালো লাগে ওর। যেভাবেই হোক ওর জীবনে একটা বড় সড় পরিবর্তন আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও। আরেকটু উঁচুতে উঠবার জন্য, আরেকটু ভালোভাবে জীবন পরিচালনা করবার জন্য যা যা করা সম্ভব সবই করতে প্রস্তুত ও। শারীরিকভাবে খারাপ কিছু একটা হবার আগেই অন্তরের সমস্ত আগ্রহ এবং উদ্দীপনা দিয়ে হলেও জীবনে এক ধাপ এগিয়ে তাকে যেতেই হবে।
রিমার এই নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনায় সবচেয়ে উচ্ছসিত বোধহয় ফায়জা। যখন থেকে নিজের জীবনে একটা বড়সড় পরিবর্তন আনার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে সে, তার পাশে বন্ধুর মত এসে দাঁড়িয়েছে ফায়জা। তাকে যতভাবে সম্ভব সাহায্য করে চলেছে। ইন্টারনেটে কোন একটা বিষয়ের উপর কিভাবে গবেষোণা করতে হয় থেকে শুরু করে দেখিয়েছে কিভাবে বিভিন্ন জব সাইটে গিয়ে কাজ খুঁজতে হয়, কিভাবে রেজুমে লিখতে হয় এবং পাঠাতে হয়, কিভাবে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের রিকয়ারমেন্ট সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। সপ্তাহ পুরতে পারে নি রিমার মনে হয়েছে সে যেন ইতিমধ্যেই গুগল বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে। সারা দুনিয়া যেন তার আঙ্গুলের ডগায় এসে হাজির হয়েছে।
ডাক্তারের অফিস থেকে ফোন এসেছিল, জানিয়েছে একজন গাইনোকলজিস্টের এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেছে যদিও মাস খানেক পরে। তার আগে কোন ফাঁকা নেই। কানাডীয়ানদের কাছে ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার সিস্টেম গর্বের বিষয় হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসা পাবার জন্য সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার ব্যাপারটা কারোরই পছন্দ নয়। কিছু কিছু জীবন রক্ষাকারী অপারেশনের ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে বছর খানেকও অপেক্ষা করতে হয়।
রিমা চেষ্টা করেছে অসুখটা নিয়ে বেশি না ভাবতে। তলপেটের ব্যাথাটা আসে যায়, মাঝ মাঝে ব্যাথায় কোঁকায় সে। ওর মেন্সট্রুয়াল সার্কেল অনিয়মিত রয়ে গেছে, মাঝে মাঝে অত্যধিক রক্তপাতও হয়। ঐসব ব্যাপার নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করে না ও। তার এই নব্য আবিষ্কৃত উদ্দীপনার মাঝে ঐ সব অসুখ বিসুখ কিংবা ব্যাথা বেদনার তেমন কোন গুরুত্ব নেই। পেছনে ফিরে সে আর তাকাতে রাজী নয়।
ফায়জার সাহায্যে একটা রেজুমে দাঁড় করাল ও। কাজের অভিজ্ঞতা বলতে ঢাকা গ্রোসারীর কাজই। সেটাই দেখিয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এপ্লিকেশন করল। বড় কোন কিছুতে ঢুকবার আগে পুরানো গন্ডী থেকে বের হওয়াটা দরকার।
২৩.
কালাম হঠাৎ করেই শনিবার সন্ধ্যায় ওর বাসায় এসে হাজির হল। রিমার কাজ ছিল রাত আটটা পর্যন্ত। কাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফিরে গোছল করেছে, বাচ্চাদের সাথে বসে রাতের খাবার খেয়ে টেলিভিশনের সামনে বসেছে কোলের উপর ল্যাপটপটা নিয়ে। ওর পাশেই লেপ্টে বসে আছে ফায়জা, কাজ খুঁজতে সাহায্য করছে। পাশের কামরায় মা এবং বোনের চোখের আড়ালে কিছু একটা নিয়ে ব্যাস্ত দুই ভাই। যা ইচ্ছা করুক। রিমা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐসব নিয়ে সে আর কোন টেনশন নেবে না।
কলিং বেল বাজতে প্রথম মনে হল নিশ্চয় মিলা এসেছে। বেশ কিছুদিন হল ডেটিং শুরু করেছে মিলা, প্রধানত কাজে যে সব পুরুষদের সাথে ওর দেখা কিংবা পরিচয় হয় তাদের সাথেই। কিন্তু সব উইক এন্ডে ব্যাস্ত থাকে না। ভেবেছিল এই সপ্তাহে হয়ত ফাঁকা আছে।
ইন্টারকমে কালামের গলা শুনে একটু অবাক হয়েছিল। ছেলেটার কন্ঠ শান্ত, মার্জিত। তার কন্ঠস্বর শুনে মনে হল ক্লান্ত। রিমা জানে আজ কাজে অনেক ব্যাস্ততা গেছে কালামের। দেখা হয়েছিল কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি, শুধু পরস্পরকে হাত নেড়েছিল। এভাবে বাসায় আসবে ভাবেনি। এর আগে কখন ওর এপার্টমেন্টে আসে নি কালাম। রিমা বোতাম চেপে নীচের দরজা খুলে ওকে বিল্ডিঙয়ের ভেতরে ঢুকতে দিল। হঠাৎ এভাবে আসার পেছনে ওর নিশ্চয় কোন কারণ আছে।
কালাম এক বিশাল ব্যাগ হাতে নিয়ে এসেছে। ব্যাগটা লাজুক মুখে ওর হাতে তুলে দিল। বেশ ভারী।
“কি এনেছ?” কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে রিমা।
“বাচ্চাদের জন্য কিছু ফলমূল। ক্যান্ডির চেয়ে স্বাস্থ্যকর।”
রিমা মুচকি হাসে। ছেলেটা ঐরকমই। সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলে না। নিজে যেটা ভালো মনে করে সেটাই করে। এই বিশেষ দিকটা ওর খুব ভালো লাগে। ভেতরে আসতে বলল। মুখোমুখি একটা সোফায় বসল কালাম। “আপু, খোঁজ খবর না দিয়ে এসে পড়লাম, কিছু মনে করবেন না,” বিনীত কন্ঠে বলে সে। “মিন্টু ভাইয়ের খবরটা শুনে কতখানি কষ্ট পেয়েছি সেটা জানাতে চেয়েছিলাম। দোকানে সবার সামনে মন খুলে কথা বলা যায় না। মিন্টু ভাই ভালো মানুষ ছিলেন। আপনার নিশ্চয় এখন অনেক ঝামেলা হচ্ছে। যেকোন দরকার লাগলে আমাকে বলবেন।”
রিমা আনমনে হেসেছিল। তাদের দুজনার মধ্যে কার যে সাহায্য বেশী লাগবে সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত নয়। কালাম মুখে কিছু না বললেও ও জানে বিদেশী ছাত্র হিসাবে প্রায় দ্বিগুন টিউশন ফি দিতে নাস্তানাবুদ হচ্ছে সে। এই বিদেশে এসে পড়াশুনা করাটা সবার জন্য সহজ নয়, বিশেষ করে যাদের পারিবারিক অর্থনইতিক অবস্থা অসম্ভব ভালো নয়।
ফায়জা নিজের কামরা থেকে বাইরে এলো আগুন্তুককে এক নজর দেখবার জন্য। কালামের সাথে এর আগে কখন দেখা না হলেও মায়ের মুখে তার কথা সে অনেক শুনেছে। ইদানীং রিমা মেয়ের সাথে তার সহকর্মীদের গল্প করে, তারা কেমন দেখতে, কিভাবে কথা বলে, তার সাথে তাদের কার কেমন সম্পর্ক। এই জাতীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলাপের ভেতর দিয়ে ওদের দুজনার মধ্যে একটা বন্ধুত্বের সাঁকো তৈরী হচ্ছে, সুযোগ করে দিচ্ছে দুটি ভিন্ন বয়েসী মানুষের পরস্পরের চিন্তা চেতনাকে অন্য জনের সাথে ভাগ করে নেবার। কালামকে দেখে সংক্ষেপে ‘হাই’ দিয়ে ফলের ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল ও। পাকা কলার গন্ধ শুকে দুই ভাই হাতের কাজকর্ম ফেলে ছুটে এলো। কালামকে নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। রান্নাঘরে গিয়ে ফায়জার সাথে ঝামেলা শুরু করল। ক্ষণস্থায়ী ঝড় ঝাপ্টার পর শান্তি ফিরে এলো। বোঝা গেল কলা দিয়ে তাদেরকে আপাতত নিরস্ত করেছে ফায়জা।
“পাজীর পা ঝাড়া দু’টা?” কালাম হাসি মুখে বলে।
রিমা হেসে ফেলে। ছেলে দুটাকে আদর করে পাজীর পা ঝাড়া বলে ডাকে। সবাই জানে।
“আমি ভালোই আছি, কালাম,” ছেলেটাকে নিশ্চিত করবার জন্য বলে রিমা। “আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা কর না।”
“আপনার পেটের ব্যাথাটার কথাও শুনেছি,” কালামের চোখে মুখে দুশ্চিন্তা।
“তাই? কে বলল তোমাকে?” রিমা অবাক হয়। ও তো কাউকে এই প্রসঙ্গে কিছু বলে নি।মিলাও কাউকে কিছু বলবে না।
“বাংলা টাউনে কারো কোন গোপনীয়তা নেই,” কালাম রহস্যময় এক টুকরো হাসি দেয়। “বললে বিশ্বাস করবেন না, আমি শুনেছি মানিকের কাছে। আপনার ডাক্তারের অফিসের কাউকে চেনে সে। যাই হোক, আপনার যে কোন ধরনের প্রয়োজনে আমি আপনার পাশে আছি। যে কোন কিছুর দরকার হলে আমাকে ডাক দেবেন।”
রিমা স্নেহার্দ্র দৃষ্টিতে ছেলেটাকে দেখে। “নিশ্চয় ডাকব। তুমি আমার স্পিড ডায়ালে আছো।”
কালাম হেসে ওঠে। “হতেই পারে না।”
“বিশ্বাস হচ্ছে না? প্রমাণ দিচ্ছি।” রিমা একটা নাম্বার চেপে ধরে কালামকে কল করল। কালামের ফোন বাজছে। আনন্দের হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল তার ছেলেমানুষী মুখটা।
ফায়জা কফি আর কুকি নিয়ে এসেছে। টি টেবিলের উপর সেগুলোকে নামিয়ে রেখে মায়ের পাশে বসল। “আঙ্কেল, একটা কাজ করতে পারবে?”
“কি কাজ ফায়জা?” কালাম আগ্রহের আতিশয্যে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এই পরিবারের জন্য কিছু করবার জন্য সে মুখিয়ে আছে, বোঝা যায়।
মেয়ের মনে কি আছে বুঝতে পারে না রিমা। মেয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
“দরজায় যে নক করে রাতে,” ফায়জা বিড়বিড়িয়ে বলে মাকে লক্ষ্য করে।
“কে নক করে?” কালাম কৌতূহলী কন্ঠে জানতে চায়।
রিমা কাঁধ ঝাঁকায়। “তেমন সিরিয়াস কিছু না। এখন পর্যন্ত মন্দ কিছু হয়নি। মাঝে মাঝে গভীর রাতে কেউ এসে দরজায় টোকা দেয়,” রিমা বিরক্তি নিয়ে বলে। “বাচ্চারা খুব ভয় পেয়ে যায়। ইচ্ছা করে বাইরে বেরিয়ে লোকটাকে হাতেনাতে ধরিৃকিন্তু আবার ভয় করেৃকত জাতের মানুষ আছে চারদিকেৃসাবধান থাকা ভালো।”
“গভীর রাত মানে কত রাত?” কালাম গম্ভীর গলায় জানতে চায়।
“রাত দুইটা তিনটার দিকে,” ফায়জা দ্রুত উত্তর দেয়। “অনেক জোরে জোরে টোকা দেয়। আমাদের সবার ঘুম ভেঙে যায়।”
রিমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। “মনে হয় কেউ আমাকে একটু ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছে। তুমি তো নিশ্চয় শুনেছ মিন্টুর মৃত্যুর পর অনেক কিছু হয়েছে।”
“পুলিশ ডেকেছেন?” কালাম প্রশ্ন করে।
রিমা মাথা নাড়ে। “না। ভয় হয় পুলিশ ডাকলে ক্ষেপে গিয়ে যদি সত্যি সত্যি কোন ক্ষতি করে বসে। এখন তো শুধু টোকা দিচ্ছে।”
কালামের মখ শক্ত হয়ে উঠেছে। “কাউকে সন্দেহ হয় আপনার?”
“মিন্টুর ছোট ভাই পিন্টুর নাম শুনেছ? মিন্টু মারা যাবার পর থেকে আমার পেছনে লেগে আছে।”
কালাম মাথা দোলাল। “ওর কর্মকান্ডের কথা সবাই জানে। আপনি সন্দেহ করছেন এটা ঐ করছে?”
রিমা কাঁধ ঝাঁকাল। “জানি না। অত রাতে ও বিল্ডিঙয়ের ভেতরে ঢুকবে কি করে?”
কালাম আপনমনে মাথা নাড়ল। “ও হয়ত নিজে করছে না। চারদিকে ওর পরিচিত মানুষের সংখ্যা অনেক। হয়ত কাউকে টাকা দিয়ে করাচ্ছে।” কয়েক মুহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “সেদিন দোকানে আপনার সাথে সে কি করেছে আমি শুনেছি। আমি থাকলে কক্ষন ওকে ছেড়ে দিতাম না।”
ছেলেটার ভেতরের উষ্মাটুকু সহজেই ধরতে পারে রিমা। মনে মনে একটু আশঙ্কিত হয়ে পড়ে। “কালাম, এই সমস্যা তোমার না। আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করব। তুমি পড়াশুনা শেষ কর। ঠিক আছে? কোন রকম ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে তোমাকে বের করে দেবে। তোমাকে এই সব নিয়ে কিছু বলাটাই ঠিক হয় নি। এসব কিছু না। একটু বিরক্তিকর এই যা। আমাদের কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না।”
কালাম দাঁড়াল। নিজেকে শান্ত রাখতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে তার। ভেতরে ভেতরে অসম্ভব ক্রোধে জ্বলতে শুরু করেছে সে। দেশে থাকতে ছাত্র রাজনীতি করত। গোলমালে জড়ানোটা তার জন্য নতুন কিছু না। পিন্টুকে সে ভয় পায় না।
“আপু, আমি যাই তাহলে,” সংক্ষেপে বলে।
“তোমার কফি তো শেষ করলে না।”
“অন্য একদিন খাবো।” দরজা পর্যন্ত হেঁটে গেল, দরজাটা খুলে বাইরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। “ফায়জা, কিচ্ছু ভেব না। এই সমস্যার সমাধান আমি করে দেব।”
“না, কালাম, তুমি কিচ্ছু করবে না,” রিমা জোর দিয়ে বলে। “আমি এখান থেকে চলে যাবার চেষ্টা করছি। চলে গেলেই এসব বন্ধ হয়ে যাবে।”
কালাম মাথা নাড়ল। “যদি সে আপনার নতুন বাসায় গিয়ে হামলা দেয়?”
এই প্রশ্নের উত্তর রিমার কাছে নেই। “তুমি কি করবে?”
“জানি না কিন্তু গাধার মত কিছু করব না,” কালাম তাকে নিশ্চিত করবার চেষ্টা করে। “দোকানে দেখা হবে, আপু।”
সে চলে যাবার পর মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকাল রিমা। “ওকে এইসব বলাটা ঠিক হয় নি তোমার। মাথা গরম ছেলে।”
“কিছু একটা করা দরকার মা,” ফায়জা গলা চড়িয়ে বলে। “তুমি তো কিছু করছ না।”
রিমা একটা গভীর শ্বাস নেয়। মেয়েটার কথায় যুক্তি আছে। এখন কালাম আবোল তাবোল কিছু একটা না করে বসলেই হয়। রিমা চায় না কোন ভুল করে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ছেলেটা।
পরদিন গভীর রাতে যখন দরজায় করাঘাত পড়ল, রিমা প্রস্তুত হয়েই ছিল। তার উপর ফায়জার বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাটা রিমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিছানার নীচ থেকে বেসবল ব্যাটটা বের করে সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গলার সমস্ত শক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে সে, “ভাগ এখান থেকে, শালা হারামী। আবার যদি আসিস পুলিশ ডাকব।”
একজনের ছুটন্ত পদক্ষেপ কানে এলো, ছুটেছে সিড়ির দিকে,করিডোরের একটা দরজা খোলা এবং বন্ধ হবার শব্দ হল, পায়ের শব্দ সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠছে, তারপর হঠাৎ করেই সব কিছু আবার সুনসান হয়ে গেল। ফায়জা জেগেই ছিল। এমন একটা কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না। বিছানা থেকে উঠে এলো মায়ের খোঁজ নিতে। রিমা দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে ছিল, ব্যাটটা তার পাশে মেঝেতে রাখা। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার শরীর থেকে সমস্ত শক্তি উবে গেছে।
“মা, তুমি ঠিক আছো? লোকটা চলে গেছে।”
রিমা মাথা দোলাল। ওর বুকের মধ্যে দুরু দুরু চলছে কিন্তু তাছাড়া আর কোন সমস্যা নেই।
এতো শব্দে রবিনের ঘুম ভেঙে গেছে। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করল সে। ফায়জা গেল তাকে সামলাতে। রিমা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল। অনিচ্ছাতে হলেও দুর্বৃত্তটাকে হয়ত উৎসাহিত করা হয়ে গেল। গভীর রাতে সবার ঘুম ভাঙ্গিয়ে এই নাটক করার পেছনে তার কারণ একটাই- রিমাকে বিব্রত করা। সেই ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তটা সম্পূর্ণ স্বার্থক।