শুজা রশীদ : (পর্ব ৮)
১১.
সুস্বাদুতে রিমার সাথে সাক্ষাতের পর মিনিট দুয়েক গাড়ি চালিয়ে ড্যানফোর্থ এভেনিউয়ের আরও পশ্চিমে আরেকটা রেস্টুরেন্টে এসে থামল মার্সেল। এটি অবশ্য আকারে বিশাল, চাকচিক্যময়, সামনে ঝকমকে নিয়ন সাইনে লেখা আহমেদ’স কিচেন রিমাকে মিথ্যা বলেছে মার্সেল। পিন্টুর সাথে সে এখন দেখা করেনি। ফোনে আলাপ করেছিল। ভেবেছিল রিমার সাথে দেখা করে তাকে ভরসা দেয়াটা বেশি জরুরি, তাই আগে তার সাথেই দেখা করতে গিয়েছিল। গত দুটি মাসে পিন্টু সম্বন্ধে একটা জিনিস সে ভালোই বুঝেছে, সে যত গর্জে তত বর্ষে না। কিন্তু নিজের দীর্ঘ পুলিশী অভিজ্ঞতা থেকে এটাও সে জেনেছে যে কাউকে অবজ্ঞা করাটা ঠিক নয়। মানুষ বাস্তবিকই রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যখন মানষিক কোন বিপর্যয়ের মধ্যে থাকে। সাধারণ মানুষও নির্মম কিছু একটা করে বসতে পারে। পিন্টুর সাথে মুখোমুখি দেখা করাটা দরকার ছিল। লোকটার মাথার মধ্যে কি ধরনের পরিকল্পনা ঘুরছে জানাটা প্রয়োজন।

রাস্তার পাশে একটা পেইড পার্কিং স্পটে গাড়ি রাখল সে, মিটারে কিছু পয়সা ঢোকাল, তারপর ফুট বিশেক হেঁটে রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এই শহরে বাংলাদেশী মালিকানাধীন দোকানপাটের সংখ্যা ইদানিং অনেক বেড়েছে কিন্তু তাদের অধিকাংশই ড্যানফোর্থে এলাকায়। সেই হিসাবে এই রেস্টুরেন্টটিকে দলছুট বলা যায়। এর অবস্থান বাংলা টাউনের চেয়ে গ্রীক টাউনের বেশি নিকটে।

ভারী কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরের ছোট একটা কাঁচ ঘেরা স্থানে পা রাখল সে। আরেকটি কাঁচের দরজা পেরিয়ে মূল রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতে হল। ভেতরটা অনেক প্রশস্ত, সাধারণ আর দু’- দশটা দেশী রেস্টুরেন্টের তুলনায় দর্শণীয়ভাবে সজ্জিত, প্রতিটা টেবিলের উপর গ্রানাইটের পুরু স্তর, চেয়ারগুলো দামী, গদি আঁটা। দেয়ালে বাংলাদেশের নানান বিষয়ের উপর বড় বড় চিত্রের শোভা। গ্রামের নারকেল, তাল গাছের দৃশ্য থেকে শুরু করে গরু টানা গাড়ি, যার ব্যবহার নাকি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু তারপরও তুলে ধরেছে ফেলে আসা স্বদেশের ইতিহাস এবং স্মৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলামের ফ্রেমে বাঁধা ছবিও টাঙ্গানো। সে জেনেছে তারা দক্ষিণ এশিয়ার দুই জন ক্ষ্যাতিমান সাহিত্যিক। সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে তার জ্ঞান খুবই সীমিত কিন্তু এটা জেনে ভালো লেগেছে যে ঐ এলাকা থেকে একজন সাহিত্যিক নোবেল বিজয়ী হয়েছেন। যদিও ঐ সব ব্যাপার নিয়ে সে খুব একটা মাথা ঘামায় না। তার মাথায় অনেক বোঝা, অপরাধীদের ধরতে হবে, মানুষকে নিরাপদ রাখতে হবে।

রেস্টুরেন্টে ভীড় তেমন বেশি নয়। লাঞ্চের সময় অল্প আগেই পেরিয়ে গেছে, সুতরাং দুপুরের ব্যস্ততাটাও খানিকটা কমেছে। এই রেস্টুরেন্টটি বাংলাদেশী স্টাইলের ইন্ডীয়ান খাবারের জন্য বহুল পরিচিত, যে ধরনের খাবার সাধারণ ইন্ডীয়ান রেস্টুরেন্টে গেলে পাওয়া যাবে না। এই কেসের সাথে যুক্ত হবার আগে থেকেই এই রেস্টুরেন্টটার কথা মার্সেলের জানা ছিল যদিও কখন আসা হয়নি। পিন্টুর সাথে এই কেসের সুবাদে পরিচয় হবার পর পরিবার নিয়ে সে একবার এসেছিল এখানকার খাবারটা চেখে দেখার জন্য। রান্না ছিল চমত্কার, ঝালের পরিমান যুতসই- খুব বেশিও না আবার একেবারে কমও নয়।

পিন্টু কাউন্টারে বসে ছিল। মার্সেলকে দেখেই সে দ্রুত হেঁটে তার সামনে এসে দাঁড়াল। “ডিটেকটিভ! তোমার আসার কোন দরকারই ছিল না। আমি তো ফোনেই তোমাকে আমার জবান দিয়েছি। কিন্তু এসেই যখন পড়েছ, বস। তোমার জন্য একটা ড্রিঙ্কস নিয়ে আসি।”
পিন্টুর লিকার লাইসেন্স আছে। কাউন্টারের পেছনে কয়েকটা তাকে সারি বেঁধে দড়িয়ে আছে নানা রকমের মদের বোতল।

মার্সেল হাত নাড়ল। “অফিস টাইমে আমি ড্রিঙ্ক করি না। তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
“কথা তো হয়েই গেছে,” পিন্টু বিরক্তি ঢাকতে পারে না।
“জানি। অল্প কিছুক্ষণের জন্য কোথাও বসা যায়?” মার্সেল নাছোড়বান্দা।
তাকে পেছনের অফিসে নিয়ে আসা হল। ছোট একটা কামরার মধ্যে একটা ডেস্ক পাতা, সেটাকে ঘিরে দুটি গদি মোড়া চেয়ার। মার্সেল একটাতে বসে পিন্টুকে অন্যটাতে বসার জন্য ইংগিত করল। পিন্টু নীরবে বসে।
“আর আলাপ করার কি আছে, ডিটেকটিভ?” পিন্টু হতাশভঙ্গীতে ঘাড় নাড়ে। “আমি তো তোমাকে বলেছিই আমি দুঃখিত। আমার ভাই মারা গেছে। শোকে দুঃখে আমার মাথার ঠিক থাকে না মাঝে মাঝে। উল্টো পাল্টা কাজ করে ফেলি। কিন্তু আমি কখন কারো কোন ক্ষতি করব না। মানুষ হসাবে আমি খারাপ নই।”
“নিয়ম কানুন তো তোমার সব জানাই আছে,” মার্সেল কাঠিন্য নিয়ে বলে। পিন্টুকে নিয়ে তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার উপক্রম হচ্ছে। গর্দভটা কোর্ট অর্ডার ভেঙে এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি। “তোমাকে জেলে ভরে দিতে পারি আমি। মাথায় ঢুকছে? আর কতবার বলব?”
“আমি একটু কথা বলতে গিয়েছিলাম,” পিন্টু কন্ঠে আর্তি নিয়ে বলে। “ফোন করলে ফোন ধরে না। কথাটা বলব কি করে?”
“ওর সাথে তোমার কথা বলার দরকারটা কি?” মার্সেল সহিষ্ণুভাবে বলে। “আমার তো ধারণা ছিল তুমি তাকে দেখতেই পারো না।”
পিন্টু কয়েক মুহূর্তের জন্য নীরব থাকে। তারপর মাথার ছোট করে ছেটে রাখা চুলে হাত বোলায়, একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে। “বাবা-মা বাচ্চাগুলোকে দেখার জন্য ব্যাস্ত হয়ে গেছে।”
“তাহলে তারা নিজেরাই কেন ওর সাথে গিয়ে কথা বলছে না? তাদের তো যেতে কোন মানা নেই।”

পিন্টু কাঁধ ঝাঁকাল। “তারা চায় আমি ওর সাথে যোগাযোগ করি। এটাকে এতো বড় করে দেখার কি হল? ও ইচ্ছে করে এটাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বিশাল একটা ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছে। ওর একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আমাদের পরিবারটাকে হেয় করা। তোমাকে কি বলেছিলাম মনে আছে? তার রূপ আর নিষ্পাপ আচরণ দেখে ভুলে যেও না। ও হচ্ছে ডাইনী। আমার ভাইকে খুন করল কিন্তু তোমরা কিছুই করলে না। তার অতীতে কি হয়েছিল সব তোমাকে খুলে বলেছি। কিভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে একটা মস্তানকে বিয়ে করেছিল, পরে তাকে মেরে তার সমস্ত টাকা পয়সা নিয়ে সটকে পড়ে। তারপর ধরে এক পয়সাওয়ালাকে। তোমার উচিত ভালো করে খোঁজ খবর নেয়া। কিছু একটা কর। আমার ভাইটা এভাবে চলে গেল। পাগলামি যদি কিছু করি সেই জন্য আমাকে দোষ দিতে পারো না।”

মার্সেল শান্তভাবে মাথা দোলাল। রিমার অতীত সম্বন্ধে পিন্টু যা যা বলেছিল সে সব তার মনে আছে। সে খোঁজ খবর নিচ্ছে। “আমার যা করার আমি করছি, বুঝতে পারছ? সব কিছু আমি সব সময় সবাইকে বলতে পারি না। কিন্তু তোমার ভাইয়ের পোস্ট মর্টেমে আমরা সন্দেহজনক কিছুই পাইনি। সে রাতে মদ খাচ্ছিল। তার রক্তে ড্রাগস ধরা পড়েছে। হতে পারে তার মাথার ঠিক ছিল না। তার মৃত্যুকে করোনার একটা সাধারণ আত্মহননের কেস বলে সার্টিফাই করতে প্রস্তুত। এখানে আমার কিছুই করার নেই। কি বলছি বুঝতে পারছ?”
পিন্টু মাথা নাড়িয়ে তার অসম্মতি প্রকাশ করল। পুলিশের উপর তার কোন আস্থা নেই। যাদের ধারণা কানাডার পুলিশের মধ্যে দুর্নীতি নেই, তারা কিছুই জানে না। এমনও হতে পারে এই ব্যাটা ডিটেকটিভ হয়ত রিমার সাথে প্রেম করছে। তাকে দুনিয়ার তাবত প্রমাণ দিলেও সে কিছুই করেবে না।

মার্সেল ঘড়ি দেখল। সন্ধ্যায় তার অর্ধাঙ্গীনির কি যেন একটা পরিকল্পনা আছে। আগের বারের দুটি এই জাতীয় প্ল্যান তার জন্য মাঠে মারা গেছে। এইবারও যদি প্ল্যান ভেস্তে যায় তাহলে বিপদ হবে। “পিন্টু, আমার কথা শোন। সবকিছু নিয়ম মাফিক হয়েছে। আত্মহত্যা ছাড়া এটা আর কিছুই নয়। করোনার তাই বলছে। আমারও তাই মনে হচ্ছে। এখন একটা ফাইনাল রিপোর্ট লিখে জমা দিলেই কেস বন্ধ হয়ে যাবে। খামাখা আর ঝামেলা কর না। তোমার বাবা মা যদি তাদের পোতা-পুতনি দেখতে চান, তাদেরকে নিয়ে যাও রিমার সাথে কথা বলতে। আমার মনে হয় না তাদের সাথে কথা বলতে রিমার কোন আপত্তি থাকবে।”
পিন্টু থমথমে মুখে তাকিয়ে থাকল। সমাধানটা তার পছন্দ হয়নি। রিমাকে তার এতো ঘৃণা করার কারণটা মার্সেল বুঝতে পারে না। কেন রিমা তার স্বামীকে খুন করবে তার কোন যথাযথ কারণ পিন্টু বলতে পারে না। কথায় কথায় মেয়েটার অতীত নিয়ে টানাটানি করে। বিদায় নেবার আগে সে পিন্টুর সাথে হাত মেলাল, পিঠে আলতো করে একটা চাপড় দিয়ে হাজার বারের মত স্মরণ করিয়ে দিল কোর্ট অর্ডার ভাঙার পরিনাম কি হতে পারে। পরের বার তাকে হাজতে না ঢুকিয়ে মার্সেলের আর কোন উপায় থাকবে না।

মার্সেল চলে যাবার পর নিজের ছোট অফিস রুমে দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসে থাকে পিন্টু, পুরো পরিস্থিতিটা নিয়ে একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে চায়। তার ভেতরটা ক্রোধে জ্বলছে, প্রতিশোধ নেবার জন্য হাতটা নিশপিশ করছে। যদি বউ এবং দুটি বাচ্চা না থাকত তাহলে হয়ত সত্যি সত্যিই কিছু একটা করে বসত। তার যৌবনে তাকে যারা দেখেছে তারা জানে তার পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।
তবে সত্য হচ্ছে সেই সব দিন বহু আগেই গত হয়েছে। রাজনৈতিক পার্টির ছত্র ছায়ায় ঢাকার রাস্তায় সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সশস্ত্র বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতো সে। মাত্র একুশ বছর বয়েসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল দয়ামায়া হীন নির্মম এক ষন্ডা হিসাবে। তাবত মস্তানরা পর্যন্ত তাকে এড়িয়ে চলত।
পিন্টুর সাথে ঝামেলা করতে যাস না। ওর মধ্যে ভয় বলে কিছু নেই।
ওর বিপক্ষের ষন্ডারাও ভয় পেত ওকে। তারপর হঠাত করে কানাডা চলে আসতে হল। ওর বাবা লাট্টু আহমেদ দেশ ছাড়বার জন্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। তার ভয় ছিল তার দুটি ছেলের কোন একটিকে হয়ত হারাতে হবে। সেই ভয়াবহ সম্ভাবনার কথা ভেবে তার ঘুম হারাম হয়ে যায়। মিন্টু ঠিক পিন্টুর মত ছিল না, কিন্তু অসম্ভব রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই তার বেশ কিছু শত্রু তৈরী হয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে হত্যা করবার চেষ্টা করবে না তার কোন নিশ্চয়তা ছিল না। সব কিছু ভালোই যাচ্ছিল কিন্তু একটা ক্ষমতাশালী চক্রের বিরুদ্ধাচারণ করে ঝামেলায় পড়ে যায় মিন্টু। তার প্রিয় সহকর্মীদের একজনকে যখন রহস্যময়ভাবে কে বা কারা কৌশলে নির্জন এক স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে তখন লাট্টুর টনক নড়ে। খুব দ্রুত কিছু একটা করার প্রয়োজন ছিল। একটা বিজনেস ভিসা জোগাড় করে সবাইকে নিয়ে কানাডা চলে আসেন তিনি। পিন্টু কিছুতেই আসতে চায়নি। কিন্তু তার অন্য কোন উপায়ও ছিল না। রাতারাতি তাদের পেছন থেকে সরে যায় রাজনৈতিক শক্তি। যে কোন মুহূর্তে নেমে আসতে পারত ধস। পতন ছিল অবশ্যম্ভাবী। তারপর পেরিয়ে গেছে বারোটা বছর।

ফোনটা বাজছে। লাট্টু। ধরল।
“কি হয়েছে, আব্বা?”
“বাবা, তুই এসব কি করছিস?” লাট্টূর কন্ঠে হতাশা। “ডিটেকটিভ বাসায় ফোন করেছিল। এইসব করাটা ঠিক না।”
“ভাব্বেন না আব্বা। কিচ্ছু হবে না।” পিন্টু ফোন রেখে দিল। লাট্টু বোধহয় আরোও কিছু বলেতে চেয়েছিলেন কিন্তু পিন্টুর এখন তার উপদেশ শোনার মত মানসিকতা নেই। তার বাবা সব সময়েই একটু গোবেচারা ধরনের। তার বয়েস যখন অল্প ছিল, ত্রিশের কোঠায়, কোন একভাবে তিনি একটা কন্সট্রাকশন ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন। সেখান থেকে ভালোই টাকা পয়সা বানান। পরবর্তিতে অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর আশীর্বাদ পুষ্ট তরুণ, দূর্ণিতিবাজ ব্যবসায়ীদের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হয় তাকে। যে কোন টেন্ডার জয় করাই দুরূহ হয়ে উঠছিল। লাট্টুকে বাধ্য হয়ে সরে আসতে হয়। হয়ত ঘুষ টুষ দিয়ে টিকে থাকা যেত কিন্তু লাট্টু আবার সেই ধরনের মানুষ ছিলেন না। পিন্টুর মাথায় ব্যাপারটা ঢূকত না। প্রতিযোগীতায় জেতার জন্য যা করতে হয় করতে হবে। তাদের সব অবনতির জন্য সে তার বাবাকেই দায়ী করে। তার মিনমিনে স্বভাবের জন্যেই তাদের পরিবারটা আজ এই অবস্থা। যেখানে তারা গর্বে বুক ফুলিয়ে দাপটের সাথে চলবে সেখানে তারা দিনকে দিন শুধু গড়িয়ে নীচেই নামছে।
তার ফোনটা আবার বাজছে। এইবার মা। ধরল। “মা?”
“বাসায় আয়,” নীতা সংক্ষেপে বলে। “রেস্টুরেন্ট মরিয়ম সামলাক। তোর সাথে কথা আছে।”
“মরিয়মের মায়ের শরীর ভালো নেই। মাকে দেখতে গেছে ও। আজকে ছুটি নিয়েছে।” মরিয়ম ওর স্ত্রী। দশ বছর হল ওদের বিয়ের বয়েস।
“দিনার কাজ করছে আজকে? সুফি কোথায়?” নীতা জানতে চায়। তার কন্ঠে বিশেষ একটা তাড়না।
“হ্যাঁ, দিনার রান্নাঘর সামলাচ্ছে। সুফি সার্ভ করছে। ওকে বলতে পারি ক্যাশ রেজিস্টার সামলাতে। তেমন ব্যাস্ত না এখন। যা বলতে চাও সেটা ফোনে বলা যায় না?”
“না, বলা যায় না,” নীপা মেজাজ দেখায়। তার অনেক রাগ, হঠাত হঠাত ক্ষেপে যায়। এই বয়েসেও মাকে রাগাতে ভয় পায় পিন্টু।
“ঠিক আছে, আসছি আমি। শিগ্রীই।” নীতা ফোন রেখে দিলেন। তিনি কঠিন মানুষ। যখন কথা বলেন বুঝে সুঝেই বলেন। যখন কিছু করেন দৃঢ়তা নিয়ে করেন, কোন দ্বিধা দ্ব›দ্ব থাকে না। পিন্টু মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবে তার বাবার মত নরম-সরম শান্ত প্রকৃতির একটা মানুষের সাথে তার মায়ের মত তেজী একজন মানুষের সংসার চল্লিশ বছর ধরে কিভাবে টিকল? অবাক হলেও সত্য যে পারিবারিক অধিকাংশ সিদ্ধান্ত লাট্টুই নেন, কালে ভদ্রে হয়ত নীতা জেদ ধরে তার মতামত পাল্টাতে বাধ্য করেন। একজন আগুণ, আরেক জন বরফ। অথচ তারপরও দু’জনে তেমন কোন সমস্যা ছাড়াই কাটিয়ে দিলেন প্রায় একটা সম্পূর্ণ জীবন।