শুজা রশীদ : (পর্ব ২৩)
৩২.
আহমেদ’স কিচেনের ভেতরে কখন ঢোকেনি কালাম যদিও শুনেছে সেখানকার খাবার নাকি খুব ভালো। বেশ কয়েকবার পাশ দিয়ে হেঁটেও গেছে। কিন্তু কোনবারই ঢোকেনি। দামটা খুব বেশি মনে হয়েছে। তবে যেটুকু চোখে পড়েছে তাতে ওকে স্বীকার করতে হয়েছে রেস্টুরেন্টটা বাইরে ভেতরে সব দিক থেকেই অন্যন্য আর দু’ দশটা দেশী রেস্টুরেন্টের চেয়ে কয়েক ধাপ উপরে।

মাত্র দুপুর হয়েছে। মানুষজন এলাকার সব রেস্টুরেন্টগুলোতে ভীড় করছে লাঞ্চের জন্য। ভারী কাঁচের দরজাটা ঠেলে আহমেদ’স কিচেনের ভেতরে ঢোকে কালাম। প্রশস্ত, আলোকিত পরিবেশ, ডজন দুয়েক কাস্টমার ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। লাইনে ওর সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে, টেবিলে বসার জন্য অপেক্ষা করছে। জনৈক ভারতীয় তরুণী, বয়েস আঠারো-উনিশের বেশি হবে না, হোস্ট হিসাবে কাজ করছে। গেস্টদেরকে বসানোর দায়িত্ব তার। যখন কালামের সময় এলো সে লাজুক মুখে বলল, “আমি আসলে কাজ খুঁজছি। তোমাদের ম্যানেজারের সাথে একটু কথা বলতে পারি?”

মেয়েটাকে দেখে মনে হল সে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। “ওরা কি নতুন মানুষ খুঁজছে? আমি তো কিছু জানি না। আচ্ছা, তুমি একটু দাঁড়াবে? আমি শেফের সাথে আলাপ করে আসি। মালিকরা কেউ আজ এখনও আসেনি।” সামনের দরজার দিকে তাকিয়ে অন্য কোন খদ্দের নেই নিশ্চিত হয়ে মেয়েটা দ্রুত পায়ে একটা দরজা ঠেলে ভেতরে চলে গেল।
এই অবসরে আরেকবার ভালো করে চারদিকে নজর বোলাল কালাম। এতো বড় একটা রেস্টুরেন্টে যেমন ভীড় থাকা উচিৎ তার এক তৃতীয়াংশও নেই। কিন্তু দামী রেস্টুরেন্টগুলোতে সাধারণত ডিনারের সময় ভীড় বেশি হয়। হয়ত এখানেও তাইই হয়, ভাবল ও। লক্ষ্য করল একজন অস্থিসার মাঝ বয়েসী শ্বেতাঙ্গ মহিলা এবং একজন ভারতীয় দর্শন লোক ওয়েটার হিসাবে কাজ করছে। লোকটার বয়েস মধ্য ত্রিশ হবে। একটা টেবিলে পিচার ভর্তি ঠান্ডা পানি নিয়ে যেতে যেতে কালামের দিকে কৌতূহলী হয়ে ফিরে তাকাল সে। চোখাচোখি হতে কালাম মৃদু হাসল। লোকটা হালকা করে ঘাড় নাড়ল। কালামের মনে হল লোকটা বাংলাদেশেরও হতে পারে। জানার একটাই উপায়। লোকটা পানির পিচারটা নামিয়ে রেখে একই পথে ফিরছিল। ওর পাশ দিয়ে যাবার সময় কালাম হাত তুলে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। লোকটা থামল।

“আপনি কি বাংলাদেশী?” কালাম গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে।
লোকটা সতর্ক ভঙ্গিতে ওকে পর্যবেক্ষণ করে, মৃদু হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ে। “কেন?”
কালাম এক হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ড শেক করার জন্য। “ভাই, আমিও বাংলাদেশী। আমি এখানে পড়তে এসেছি। একটা কাজ খুঁজছি। যে কোন ধরনের কাজ হলেই হবে।”
লোকটা আলতো করে হাত মেলায়, দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নেয়। তার দৃষ্টি থেকে সন্দেহের ছোঁয়াটুকু চলে যায়। “ইদানীং আমাদের এখানে খুব একটা ভীড় হয় না। একমাত্র উইকেন্ডে ছাড়া, বিশেষ করে ডীনারের সময়। তোমাকে পিন্টু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে হবে। সে মালিকের ছেলে। তার স্ত্রী মরিয়ম ভাবী সাধারণত ইতিমধ্যেই চলে আসেন। আজকে হয়ত কোন কারণে দেরী হচ্ছে। তুমি তার সাথেও আলাপ করতে পারো। উনি ভীষণ ভালো মানুষ।”

কালাম কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়। “অনেক ধন্যবাদ, ভাই। কাজটা পেলে অনেক উপকার হবে। আমার নাম কালাম। আপনার?”
“সুফি। আমার যেতে হবে। গুড লাক।” সুফ দ্রæতপায়ে ভেতরে চলে গেল। প্রায় একই সময়ে বাইরে বেরিয়ে এলো হোস্ট মেয়েটা।
“শেফের সাথে কথা বলেছি,” সে বলল। “তুমি চাইলে তোমার নাম আর ফোন কিংবা ইমেইল ঠিকানা রেখে যেতে পারো। মালিকদের কেউ এলে আমি তাদের কাছে দিয়ে দেব।”
সেই মতই কাজ করল কালাম। যদি দিন দুয়েকের মধ্যে কেউ ওর সাথে যোগাযোগ না করে তাহলে আবার ফিরে আসবে খোঁজ নিতে।

সারাদিনে আর তেমন কিছু করার নেই। প্রাচীন আমলের টয়োটা করল্লাটা চালিয়ে ড্যানফোর্থে এলো, স্ট্রিপ মলের পার্কিং লটে গাড়ি রেখে হেঁটে সুস্বাদুতে চলে এলো। ইদানীং টাকা বাঁচানোর জন্য বাসায় রান্না করে কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে তার ব্যাতিক্রম হয়, বাইরে খেতে ইচ্ছে হয়। আজ তেমন একটা দিন। বেশ কিছুদিন ধরেই আহমেদ’স কিচেনে যাবে যাবে করছিল কিন্তু ঠিক সাহস করে উঠতে পারছিল না। আজ শেষতক গেছে। মনটা ভালো লাগছে। সুফির সাথে আলাপ হয়েও ভালো হয়েছে। আশা করছে মালিকদের কাছে তার সম্বন্ধে দু’ একটা ভালো কথা বলবে লোকটা। হাজার হোক, দুজন একই দেশের মানুষ। স্বদেশীর জন্য এইটুকু না করলে চলবে কেন?

একটা চেয়ারে আয়েশ করে বসে ভাত আর ইলিশ মাছের অর্ডার দিল। ইলিশ তার প্রিয় কিন্তু দামটা বেশি হওয়ায় বিলাসীতার পর্যায়ে পড়ে। মাঝারী আকারের একটা মাছের দাম চল্লিশ-পঞ্চাশ ডলার হয়ে যায়। রেস্টুরেন্টে বড়সড় এক টুকরো দশ-বারো ডলারে পাওয়া যায়। কালে ভদ্রে খাওয়া যায়। ও ধীরে সুস্থে খায়, চেখে চেখে, স্বাদটুকু পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে করতে। সময় নিয়ে কাঁটা বাছে। ইলিশ মাছের পিঠের দিকের ছোট ছোট কাঁটা গলায় ফুটলে বিপদ।

খাওয়া শেষ হতে এক কাপ দুধ চায়ের অর্ডার দিল। চা আসতে চেয়ারে হেলে বসে চুমুক দিতে দিতে কাঁচের দেয়ালের ওপাশে রাস্তায় দ্রæত গতিতে ছুটে যাওয়া গাড়ি আর ব্যাস্ত পায়ে পেরিয়ে যাওয়া পথচারীদের দেখে। আহমেদ’স কিচেনের অল্প বয়েসী মেয়েটাকে ওর খুব মনে ধরেছে। মেয়েটা খুব সুন্দর। কথাও বলে সুন্দর করে। আর হাসিটা- একেবারে পাগল করা। চেষ্টা করেও তাকে মন থেকে বের করতে পারল না কালাম। মনে হচ্ছে নামটা জিজ্ঞেস করতে পারত। মেয়েটা নিশ্চয় রাগ করত না। আবার ফিরে গিয়ে নামটা জানতে চাইবে? কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। যে সমস্ত মেয়েদের প্রতি ওর রোমান্টিকভাবে আগ্রহ থাকে তাদের সাথে কথা বলতে ওর খুব সমস্যা হয়। প্রত্যাখ্যাত হবার কিংবা উপেক্ষিত হবার ভয় ওর সমস্ত মানসিক দৃঢ়তাকে বিনষ্ট করে দেয়।

চা শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে ফুটপথে দাঁড়িয়ে কয়েকটা দোকান পরেই অবস্থিত ঢাকা গ্রোসারির দিকে তাকিয়ে থাকে। আজ সকালে রিমা কাজ করছিল। ও যখন দুপুরের দিকে শিফট শেষ করে রিমা তখন ক্যাশিয়ারে খুব ব্যাস্ত ছিল। দু’জন দু’জনাকে হাত দেখিয়েছিল। গিয়ে দেখবে রিমার ব্যাস্ততা এখন একটু কমেছে কিনা? কিছুক্ষণ ভেবে না যাবারই সিদ্ধান্ত নিল। পরে এক সময় কথা বলবে রিমার সাথে, যখন বলার মত কিছু একটা করতে পারবে।

মিনিট পাঁচেক ড্রাইভ করে বাসায় ফিরে এলো, ফার্মেসী আর ওয়ার্ডেনের মোড়ে। বেসমেন্টে আরোও দু’জনের সাথে একটা এপার্টমেন্ট ভাগাভাগি করে থাকে। তিনটা ছোট ছোট কামরা, একটা বাথরুম আর ছোট রান্নাঘর। প্রত্যেকে একটা করে কামরার দখল নিয়েছে। একটা ডাবল বেড আর ছোট একটা টেবিল কোন রকমে ঢোকানো গেছে। ছোট একটা ক্লোজেটও আছে। ওর জিনিষপত্র তেমন কিছু নেই, এতেই কাজ চলে যায়। মাসে চার শ ডলার দিতে হয়। মন্দ না।

বাড়িটার এক পাশের দেয়ালে বসানো দরজা দিয়ে ঢুকে নিচের বেসমেন্টে যেতে হয়। চাবি দিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকল। ওর সঙ্গীদের কেউ বাসায় নেই। ভেবেছিল একটু পড়াশূনা করবে কিন্তু দুপুরে এমন জাঁকজঁমক করে খেয়ে শরীরটা একেবারে এলিয়ে পড়ছে। ওর ক্ষুদ্র জানালাবিহীন ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে অচিরেই ঘুমিয়ে পড়ে ও।

ঘন্টা দুয়েকও যায়নি ওর সেল ফোন বেজে উঠল। ওর ঘুম পাতলা। প্রথম রিঙের শব্দেই ঘুম ছুটে গেল। নাম্বারটা অজানা। ভাবল ভয়েস মেইলে যাক কিন্তু পরে কি মনে করে ধরল। আহমেদ’স কিচেন থেকে যদি হয়। একটা নারী কন্ঠ কথা বলে উঠল। তার নাম মরিয়ম। কালামের সাথে কথা বলতে চায় কাজের ব্যাপারে। কালাম বিস্মিত হয়। এতো দ্রæত ফোন আসবে ভাবেনি। সুফি নিশ্চয় কিছু বলেছে। নিজের পরিচয় দিতে ভদ্রমহিলা জানতে চাইল সে বিকাল চারটার দিকে ইন্টারভিউ দিতে আসতে পারবে কিনা। রাজী হয়ে গেল ও। এই ইন্টারভিউ নামকা ওয়াস্তে। জানে কাজ ওর হয়ে যাবে। যে কাজই হোক। ওর শুধু ভেতরে ঢোকার একটা উপায় চাই। দিনে বিশবার যদি পায়খানা পরিষ্কার করতে হয় তাতেও সই। ওর ধারনা ঐ রেস্টুরেন্টই হচ্ছে মৌচাক।

৩৩.
প্রায় স্থবির অবস্থা থেক হঠাৎ করে এমন দ্রুত গতিতে সব কিছু এগিয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি রিমা। খবর এলো মিন্টুর ডেথ রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে এবং এখন রিমা মিউনিসিপালিটিতে ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য এপ্লাই করতে পারে। মিন্টুর লাইফ ইন্সুরেন্সের টাকার জন্য ক্লেইম করতে হলে ডেথ সার্টিফিকেট লাগবে। যে মানুষটা এক রকম তাদের জন্য নিজের জীবন বিকিয়ে দিয়েছে তার মৃত্যুর বিনিময়ে টাকা পাবার ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হয় রিমার, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। কিন্তু এই এপার্টমেন্ট থেকে বের হবার জন্যও ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে ও। নিশুতি রাতের ভীতকর উপদ্রবটাতো আছেই, তাছাড়াও রয়েছে পড়শীদের কৌতূহলী দৃষ্টি, চারপাশের মানুষের অহেতুক সন্দেহের জল্পনা-কল্পনা। এইসব পেছনে ফেলে নতুন কোথাও জীবন শুরু করবার একটা তীব্র তাগিদ অনুভব করে ও, চায় বাচ্চাদের জন্য একটা ভালো ভবিষ্যৎ তৈরী করতে। নিজের জীবনের বিনিময়ে সেটাই কি মিন্টুর চাওয়া ছিল না? তারপরও দ্বিধা দ্ব›েদ্ব পেরিয়ে যায় কয়েকটা সপ্তাহ। অবশেষে ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য এপ্লাই করে। ওকে জানানো হল, সার্টিফিকেট আসতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।

এইবার ভবিষ্যত নিয়ে গুরুত্বের সাথে চিন্তা করবার সময় এসেছে ওর। এখন পর্যন্ত মনে মনে আবছায়াভাবে ধরে রেখেছিল সত্যি সত্যিই ইন্সিউরেন্সের টাকাটা যদি হাতে আসে তাহলে অনেক সাবধানে, ভেবে-চিন্তে খরচ করবে যেন অনেকদিন কোন অর্থনৈতিক সমস্যায় না পড়তে হয়। আধা মিলিয়ন ডলার অনেক টাকা হলেও ব্যাংকে রেখে দিলে বলতে গেলে কোন লাভই নেই। ব্যাঙ্কের ইন্টারেস্ট অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়েও কম হয়। সুতরাং সেই অর্থের একটা বড় অংশ ইনভেস্ট করতেই হবে কিন্তু কোথায় কিভাবে করবে সেই ব্যাপারে ওর কোন ধারণাই নেই। একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য যদি সব কিছু হারাতে হয় তাহলে নিজেকে সে কখন ক্ষমা করতে পারবে না।

নিরাপত্তার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। অনেক মানুষই জানে ভবিষ্যতে কোন না কোন এক সময় তার হাতে অনেকগুলো টাকা আসতে পারে। চোর-ডাকাতের অভাব কোথাও নেই। পিন্টুকে নিয়েও ওর ভীষণ ভয়। আবুলকে পাঠিয়ে ইন্সিউরেন্সের টাকার অর্ধেকটা দাবি করার ব্যাপারটা অচিন্তনীয়। জানত রিমা কেন কেউই ঐ জাতীয় একটা অবাস্তব প্রস্তাবে রাজি হবে না, কিন্তু তারপরও করেছে। যার অর্থ একটাই, রিমাকে অনুক্ষণ তটস্থ রাখতে চায়। প্রয়োজনে সেও যে বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

৩৪.
দিনটা ওর অফিসে অনেক ব্যাস্তততায় গেছে আবুলের। রাত আটটার দিকে যখন বাসায় ফিরে গোছল-টোছল সেরে রাতের খাবার খাবে সেই চিন্তায় মশগুল হয়ে ছিল তখন ওর ফোন বেজে উঠল। স্ত্রীর জন্য বিশেষ রিঙের ব্যবস্থা করা। শব্দ শুনেই বুঝল সে নয়। প্রথমে ভেবেছিল ধরবে না কিন্তু কলার আইডি দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টাল। পিন্টু। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে। মরিয়ম তার একমাত্র বোন। তাকে সে জান দিয়ে ভালোবাসে। পিন্টুকে প্রথম থেকেই তার পছন্দ হয় নি। কিন্তু তার বাবা-মায়ের খুব পছন্দ হয়েছিল। আহমেদ’স কিচেন ততদিনে বেশ নাম করেছে। সেই কারণেই পরিবারটারও খুব খ্যাতি হয়ে গিয়েছিল। এখন ও জানে তারা কি পরিমান সমস্যায় আছে। খুব সম্ভবত পারিবারিক সব সমস্যার জন্য পিন্টুই দায়ী।
আহমেদকে আবুল পছন্দ করে, কম-বেশী। তার ছেলেদের চেয়ে তিনি ভালো মানুষ, হিসাবী, চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করেন। মিন্টুকে অবশ্য সে খুব একটা চিনত না। কিন্তু পিন্টুকে খুব ভালোমতই চেনে। বোনের মুখে যা শুনেছে তাতেই বুঝেছে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাপারটা ঠিক মাথায় ঢোকে না পিন্টুর। তার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়া। শেয়ার মার্কেটে অনেক টাকা ঢেলেছিল, বেশ কিছু ধার কর্য করেও, বাড়ীর ইকুইটি থেকেও টাকা নিয়েছিল। যেভাবে ভেবেছিল মার্কেট সেভাবে যায়নি। অধিকাংশ টাকাই গচ্চা গেছে। সে যে এখন বিধবা ভাবীর পেছনে গিয়ে লাগবে তাতে অবাক হবার কিছুই নেই। গর্দভ!
ফোনটা ধরল। “পিন্টু? সব ঠিক আছে তো?”
পিন্টুর ভণিতা করবার সময় নেই। “আবুল ভাই, আমাদের বাসায় একটু আসবেন? খুব জরুরী একটা ব্যাপারে আলাপ করা দরকার।”

কন্ঠে খুব মিষ্টি মিশিয়ে কথা বলছে। খারাপ খবর। পিন্টু যখন বেশী ভালো সাজে তখন বুঝতে হবে সেটা তার কৌশল। ভাবছে সুন্দর করে কথা বললে তার কাজ হাসিল হবে। মরিয়মের যদি এই গর্দভের সাথে দুই দুইটা সন্তান না থাকত তাহলে সে কবে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেত। একটু জোরেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে, যেন অন্য পক্ষ শুনতে পায়। “আজ খুব ক্লান্ত, পিন্টু। কাল অফিসে আসার পথে না হয় থামি? সকাল নয়টার দিকে? কি বল?”
“মা আপনার সাথে খুব কথা বলতে চাইছে,” অসহিষ্ণু কন্ঠে বলে পিন্টু। “তাকে তো চেনেনই। কথা দিচ্ছি পনের-বিশ মিনিটের বেশী লাগবে না। আজ রাতে না হয় আমাদের সাথেই খেলেন। আমি মরিয়মকে বলছি।”

“না, না, তার প্রয়োজন নেই,” আবুল আপত্তি করে। রাতের খাবারটা স্ত্রীর সাথে বসে খেতে পছন্দ করে সে। সারাদিনে পরস্পরের সঙ্গ পাবার সেটাই ওদের একমাত্র সময়। বেশ কিছু বছর ধরে অনেক কষ্ট করেছে আবুল। হঠাৎ করেই বেশ সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে সে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত সেই সাফল্যের কারণে পরিবারের সাথে ইদানীং সময় কাটানোই সমস্য হয়ে পড়েছে। “ঠিক আছে, আমি একটু পরেই আসছি। কিন্তু খুব বেশীক্ষণ থাকতে পারব না।”

পিন্টু বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে ফোন রেখে দিল। আবুল আবার একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে। তার মোটেই যেতে ইচ্ছে করছে না। শুধুমাত্র মরিয়মের মুখের দিকে চেয়েই যেতে হচ্ছে।