শুজা রশীদ : (পর্ব ২২)
৩০.
সপ্তাহ দুইয়ের জন্য আমেরিকায় বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল আসমা। সেই কারণে রিমার ড্রাইভিং শেখা বন্ধ হয়ে ছিল। অন্য কোন ইন্সট্রাক্টরের কাছে যেতে পারত কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে ওর মনে হয়েছে ভদ্রমহিলার সাথে ওর একটা মানসিক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। বাইরে থেকে দেখে মহিলাকে রুঢ় মনে হলেও তার মধ্যে একটা নমনীয় দিক রয়েছে।
এক সোমবার দুপুরে আসমার ফোন এলো। আমেরিকা থেকে ফিরে এসে আবার কাজে যোগ দিয়েছে, সেটা জানানোর জন্যই করা। রিমা চাইলে আধা ঘন্টার মধ্যে তাকে বাসা থেকে তুলে নিতে পারে। ফায়জা এবং জিব্রান স্কুলে, রবিন আরিফার কাছে। ঘন্টা খানেক পরে ঢাকা গ্রোসারীতে ওর কাজের শিডিউল আছে। সময়ের হিসাবে টানাটানি হয়ে যায় কিন্তু তারপরও রাজী হয়ে গেল রিমা। আসমা তাকে ঢাকা গ্রোসারীতে নামিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিল।
বরাবরের মতই ওর এপার্টমেন্ট বিল্ডিঙয়ের সামনে থেকে ওকে তুলে নিয়ে কাছেই একটা এলাকায় নিয়ে এলো আসমা যেখানে গাড়ীর ভীড় কম। একই রাস্তায় চক্রাকারে বেশ কয়েকবার ওকে গাড়ি চালাতে দিল সাহস বাড়ার জন্য।
“এখনও কি ভয় লাগে?” রিমাকে রাস্তার পাশে থামার ইংগিত করে জানতে চায় আসমা।
রিমা মাথা নাড়ে। “এখানে লাগে না। বেশি গাড়ি দেখলেই নার্ভাস হয়ে যাই।”
আসমা হেসে ফেলে। দুর্লভ বস্তু। “সেই সমস্যাতো আমাদের সবারই আছে। কারো কম কারো বেশি। মাথা ঠান্ডা রেখে নিজ লেনে গাড়ি চালাতে হবে, রাস্তার নিয়ম মেনে চলতে হবে। দেখবে কোন সমস্যাই হচ্ছে না।”
“অন্য কেউ যদি আমাকে মেরে দেয়?” রিমার প্রশ্ন শুনে আবার হাসে আসমা।
“সেটা তো আর তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তোমার শুধু নিশ্চিত করতে হবে তুমি যেন অন্য কাউকে মেরে না দাও। নিজ দোষে দূর্ঘটনা ঘটলে ইনস্যুরেন্স আকাশচুম্বী হয়ে যাবে। তোমার ড্রাইভিং রেকর্ডের বারোটা বেজে যেতে পারে।”
আসমা তারপর তাকে সেই বিরান রাস্তা থেকে বের করে আরেকটা রাস্তায় নিয়ে এলো যেখানে মোটামুটি গাড়ির ভীড় আছে। রিমা শান্ত থাকার চেষ্টা করে, সামনে তাকিয়ে অন্যান্য গাড়ীগুলোর উপর বেশি মনযোগ না দেবার চেষ্টা করে। মাথা ঠান্ডা রেখে নিজ লেনে গাড়ি চালাতে হবে, রাস্তার নিয়ম মেনে চলতে হবে। বুকের মধ্যে তার হৃৎপিণ্ড এখনও দুরু দুরু করলেও সেই কম্পন আগের মত তত তীব্র নয়। কিছুক্ষণ পর আসমার কথা মত মোড় নিয়ে আবার আরেকটা নিরালা রাস্তায় প্রবেশ করে রাস্তার পাশে গাড়ি থামায়।
“আর সব কিছু কেমন যাচ্ছে?” জানতে চায় আসমা। তার কন্ঠে মাতৃসুলভ কিছু একটা ছিল, রিমার চোখে পানি আসার উপক্রম হয়। কত বছর হয়ে গেল কেউ ঐ স্বরে তার সাথে কথা বলেনি।
“চলছে,” নীচু স্বরে বলে, কন্ঠের তারতম্যটা বুঝতে দিতে চায় না। এই মহিলার সাথে তার আর কদিনেরই বা পরিচয়? তার কাছে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করাটা খানিকটা অবমাননাকারই হবে।
“শুনেছি পুলিশী তদন্ত শেষ হয়ে গেছে,” আসমা বলে। এই সব খবর দুনিয়ার পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়। মানুষ গোগ্রাসে গেলে সেসব।
“আমার তো তাই ধারনা,” রিমা বলে। “কিন্তু মানুষ জন আমার দিকে এমনভাবে তাকায় যেন আমি একটা খুনী। ও যে উপর থেকে লাফ দেবে আমি সেটা কি করে জানব? জানি ওর সমস্যা ছিল। কিন্তু আত্মহত্যা?”
“পুলিশ কি মিন্টুর পরিবারকেও তদন্ত করেছিল?” আসমা জানতে চায়, তারপর নিজেই মাথা নাড়ে। “করলেও তুমি জানবে না। ওদের করা উচিৎ। আমি আর আমার স্বামী অনেক মানুষজনকে চিনি। অনেক কথা কানে আসে আমাদের। শুনেছি ওর পরিবারের সাথে ভীষণ সমস্যা চলছিল মিন্টুর, বিশেষ করে পিন্টুর সাথে। এবং সেই সমস্যা তোমাকে নিয়ে না। ঐ ব্যাপারে তুমি কিছু জান?”
রিমা অবাক হয়। “না তো। আমার তো ধারনা ছিল আমাদের বিয়ের পর ওর পরিবারের সাথে ওর আর কোন যোগাযোগ ছিল না।”
“শুধুমাত্র তোমাদের বিয়েকে কেন্দ্র করে ওদের মধ্যে ঝামেলা হয় নি,” আসমা বলে। “অন্য ব্যাপারও আছে। আমি যে তোমাকে এসব বলেছি কাউকে বলতে যেও না। ঢাকার বাইরে ওদের পারিবারিক কিছু জমিজমা মিন্টু হয়ত দলিলপত্র জালয়াতি করে ওর বাবা-মা-ভাইয়ের অমতে বিক্রী করে থাকতে পারে। বড়সড় একটা ফার্মাসিউটিকাল কম্পানী খোলার চেষ্টা করছিল সেখানে। পারিবারিক সমর্থন না থাকায় বাঁকা পথে যায় মিন্টু। ব্যাপারটা জানার পর পিন্টু ভীষণ ক্ষেপে যায়। ভাবতেও পারেনি ওর বড় ভাই ওদের সাথে এইরকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে। কম্পানী অবশ্য কখনই হয়ে ওঠেনি দুনিয়ার রাজনৈতিক কারণে। সুতরাং পিন্টু জমি বেঁচার টাকায় ওর অংশ দাবি করে। মিন্টু দিতে অস্বীকার করে। তারপরই দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা পাকিয়ে ওঠে।”
এই সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ রিমাকে খানিকটা হতবিহবল করে দেয়।
“এইসব নিয়ে মিন্টু তোমাকে কখনও কিছু বলেনি?” আসমা জানতে চায়।
“কিচ্ছু না। কখন কোন ইঙ্গিতও দেয়নি। টাকাপয়সা নিয়ে কখনই অবশ্য আমার সাথে কোন আলাপ এমনিতেও করত না।”
আসমা কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাল। “তোমাকে কাজে যেতে হবে, তাই না? নিজে ড্রাইভ করে যাবে?”
রিমা মাথা নাড়ে। ড্যানফোর্থ এভেনিউতে অনেক ভীড় থাকে। গাড়ি, সাইকেল, মানুষজন, বাস- সব মিলিয়ে একটা এলাহী কান্ড। আসমাই ওকে নামিয়ে দিল।
“যা বলেছি সেটা আর কাউকে বল না,” যাবার আগে সতর্ক করে দিয়ে যায় সে। “আরোও ঝামেলায় জড়ানোর তোমার কোন দরকার নেই। কিছু লাগলে আমাকে ফোন দিও।”
রিমা মাথা দুলিয়ে হাত নেড়ে আসমাকে বিদায় জানায়। একটু দিশেহারা বোধ করে। কয়েক বছর আগে মিন্টু বার দুয়েক ঢাকায় গিয়েছিল। সময়টা ঠিক মনে নেই ওর। প্রতিবার এক-দুই মাস ছিল। তখনই কি এই কাজ করেছিল? নিজের বাবা-মা-ভাইকে ধোঁকা দেয়া? তার চেনা মিন্টুর সাথে মেলে না। হয়ত অনেক দোষত্রুটি ছিল মানুষটার কিন্তু চৌর্যবৃত্তি তার একটা নয়। হতে পারে আসমা যার মুখে শুনেছে সে বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। সত্যতা জানার একটাই উপায়। মিন্টুর পরিবারকেই জিজ্ঞেস করা। সেই সম্ভাবনা অবশ্য প্রায় নেই বললেই চলে। তাদের কাছে এই ধরণের স্পর্শকাতর একটা প্রশ্ন নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, সে তাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যেও যেতে চায় না।
৩১.
এডভোকেট আবুল মিয়া রিমার সেলফোনে ফোন দিয়ে তার সাথে দেখা করতে চায়। একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তার সাথে আলাপ করা দরকার। রিমা ভদ্রলোককে আগে থেকেই চিনত। সে পিন্টুর স্ত্রী মরিয়মের বড় ভাই। কিন্তু রিমার সাথে তার পরিচয় ভদ্রতাসূচক আলাপেই সীমাবদ্ধ। এতোগুলো বছরে তার সাথে রিমার বোধহয় হাতে গোনা কয়েকবার দেখা হয়েছে। হঠাৎ তার সাথে ভদ্রলোক আলাপ করবার জন্য এমন আগ্রহী কেন হয়ে উঠল সেটা ঠিক পরিষ্কার হয়নি। ফোনে খোলাসা করে কিছু বলতেও চায়নি আবুল। মুখোমুখি বলতে চায়। একটু দ্বিধা দ্বন্দ্বের পর রিমা তাকে সন্ধ্যায় তার এপার্টমেন্টে আসতে বলেছে। তার জানা মতে আবুল ভালো মানুষ। মরিয়মকেও তার বেশ পছন্দ যদিও দুজনার মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠার কোন সুযোগই হয়নি যেহেতু রিমা কখনও মিন্টুর পরিবারের অংশই হতে পারেনি।
আবুল সন্ধ্যা সাতটার সামান্য আগে এসে হাজির হল এবং বারংবার এত অল্প সময়ের নোটিশে আসবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকল। তার আচার আচরণ দেখেই কেমন যেন খটকা লাগে রিমার। তার মুখ রক্তশূন্য, হাবেভাবে অস্বস্তি, কেমন অসুস্থ মনে হচ্ছে। তাকে বাসার ভেতরে আমন্ত্রণ জানিয়ে লিভিং রুমে এনে বসাল ও। ফায়জাকে আগেই বলে রেখেছিল আবুলের কথা। জিব্রান এবং রবিনকে সেই সময়টুকু তার কামরায় ব্যাস্ত রাখতে হবে তার। আবুল ঠিক কি আলাপ করতে আসবে সেই ব্যাপারে কোন ধারনা না থাকায় রিমা চায় নি বাচ্চারা আশে পাশে থাকুক। সব কিছু তাদের জানা কিংবা শোনার কোন প্রয়োজন নেই। হাজার হোক, আবুল পিন্টুর সাথে সম্পর্কিত। নিজে হয়ত মানুষ হিসাবে ভালো কিন্তু বোনের শ্বশুর বাড়ির অশুভ প্রভাব তার উপর পড়তে পারে না সেই নিশ্চয়তা কোথায়?
আবুলকে চা-বিস্কুট এনে দিল ও। ছুঁয়েও দেখল না আবুল। তার দৃষ্টিটি টেবিলের উপর নিবদ্ধ, দুই হাতের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের সাথে শক্তভাবে যুক্ত, তাকে দেখে মনে হচ্ছে যা সে বলতে এসেছে সেটা কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না।
“আবুল ভাই!” রিমা পরিস্থিতিটাকে একটু সহজ করবার চেষ্টা করে। “কিছু একটা নিয়ে আলাপ করবেন বলেছিলেন।”
আবুল চোখ তুলে তার দিকে তাকায়, অপরাধী মুখে। “রিমা, আমার কাছে তুমি আমার ছোট বোন মরিয়মের মতই,” অবশেষে মুখ খোলে আবুল।
রিমা চুপি চুপি বড় করে একটা শ্বাস নেয়। লোকটার মুখ খুলেছে।
“তোমার জন্য একটা মেসেজ আছে,” আবুল গলা পরিষ্কার করে বলে। “তোমার শ্বশুর পক্ষ থেকে। আমি তাদের উকিল হিসাবে কাজ করছি এবং আমি তোমাকে যা বলব সেই ব্যাপারে ব্যাক্তিগতভাবে আমার কোন রকম আগ্রহ বা সমর্থন নেই। আমি চাই তুমি ব্যাপারটা বোঝো।”
রিমা আপ্রাণ চেষ্টা করে কোন রকম প্রতিক্রিয়া না দেখাতে। এটা তো সে আগেই ধারনা করেছিল। জানত এমন কিছু একটা হবেই।
“তোমার শ্বশুর পক্ষ একটু ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এখন,” আবুল নীচু গলায় কথা বলে। “ব্যাঙ্করাপ্ট হবার মত অবস্থা। তাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় অনেক লোকসান যাচ্ছে। কম্পিটিশন অনেক বেড়েছে। রেস্টূরেন্টটাকে নতুন করে গড়তে পারলে হয়ত আবার লাভজনক করা যেত কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের আরোও কিছু ব্যবসাও মার খেয়েছে। মিন্টু সেগুলোর দেখভাল করত। ম্যানেজমেন্টে সমস্যা ছিল। টাকাপয়সাও নাকি সরানো হয়েছিল।”
“তাহলে এখন মিন্টুকে চোর বলা হচ্ছে?” রিমা রাগ সামলাতে পারে না। আসমা ওকে যা বলেছে সেটার মধ্যে কতটুকু সত্যতা আছে জানার ওর কোন উপায় নেই কিন্তু তাই বলে এই জাতীয় দোষারোপকে নীরবে মেনে নেবার কোন প্রশ্নই আসে না।
আবুল দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর গভীর হতাশায় মাথা নাড়ে। তার ভাবভঙ্গীতেই বোঝা যায় এই ভূমিকায় সে মোটেই স্বস্তি বোধ করছে না। “রিমা, আমি ওদের হয়ে শুধুমাত্র তোমাকে এটা জানাতে এসেছি। করতে চাই নি কিন্তু আমার বোন ঐ পরিবারের অংশ। আমাকে নিদেনপক্ষে দেখাতে হবে যে আমি ওদেরকে সাহায্য করতে চেষ্টা করছি। তুমি তো বুঝতে পারছ, তাই না?”
কি বলবে বুঝতে পারে না রিমা। এই লোকটাকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে কিনা ধরতে পারছে না সে। পিন্টু তাকে কি বলে বশ করেছে কে জানে?
“কি চায় তারা?” রিমা শীতল গলায় জানতে চায়।
“ইন্সিওরেন্সের টাকার অর্ধেকটা,” আবুল চাঁপা গলায় বলে।
“ইন্সিওরেন্সের টাকা?” রিমা ভ্রূ কুঁচকায়। “মিন্টুর লাইফ ইন্সিওরেন্সের কথা বলছেন? আমি তো কোন টাকা পাইনি। এখন পর্যন্ত তো ক্লেইমই করিনি। একটা প্য়সাও পাবো কিনা তাও তো জানি না। শুনেছি এই জাতীয় কেসে ইন্সিওরেন্স কম্পানীও নিজস্ব তদন্ত করে। সব শেষ হতে হতে কয়েক বছর গড়িয়ে যেতে পারে। এখনই কেন সেটা নিয়ে কথা বলছে তারা?”
আবুল স্থির দৃষ্টিতে তাকে লক্ষ্য করে। “তাহলে তাদের সাথে ভাগাভাগি করতে তোমার কোন সমস্যা নেই? যখনই পাও টাকাটা।”
রিমা শরীরের ওজন এক পা থেকে আরেক পায়ে সরায়। ভাবছে। “আবুল ভাই, মিন্টু তার জীবনের উপর পলিসিটা নিয়েছে একটা কারণে,” অবশেষে বলে। “ওর কিছু একটা হলে ওর ছেলেমেয়েদের যেন কোন সমস্যা না হয় সেই জন্য।”
“রবিনের কথা বলছ তাই তো?” আবুল জানতে চায়।
“না, তিন জনের কথাই বলছি,” রিমা জোর দিয়ে বলে। “ফায়জা এবং জিব্রান ওর বাচ্চা না হলেও ও কখন ওদেরকে ভিন্ন নজরে দেখে নি। ওর ইন্সিওরেন্সের টাকার উপর ওদেরই পূর্ণ অধিকার আছে। যা আমার নয় তা আমি কি করে বিলিয়ে দিতে পারি? মিন্টু চেয়েছিল ওর বাচ্চারা যেন ভালো থাকে। আমার জীবন দিয়ে হলেও আমি সেই জন্য যুদ্ধ করে যাবো।”
আবুল মাথা দোলায়। “জানতাম তুমি এটাই বলবে। কিন্তু পিন্টুকে তো চেন। আমাকে একরকম ভয় দেখিয়ে এখানে পাঠিয়েছে। যেটা বলার চেষ্টা করছি – সাবধানে থেক। আরেকটা কথা – মিন্টুর কি কোন উইল ছিল?”
রিমার জানা মতে ছিল না। তার মনে হয় না মিন্টুর এমন কিছু ছিল যেটা সে উইল করে রেখে যেতে পারে। কিন্তু ওর পরিবারকে যদি সত্যি সত্যিই ধোঁকা দিয়ে থাকে তাহলে হয়ত ছিল। ফার্মাসিউটিকাল কম্পানীতে ব্যার্থ হবার পর সেই টাকার কিছু যদি বেঁচে গিয়ে থেকেও থাকে রিমা তার একটা প্য়সাও চায় না।
আবুল তার মনের কথা পড়তে পারে। “ওর কাগজপত্রের মধ্যে খুঁজে দেখ। কোন উকিল থেকে থাকলে তার সাথে কথা বল। আমি চাই না পিন্টু তোমার কাছ থেকে কোন কিছু নিয়ে যাক। আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।”
রিমা কাঁধ ঝাঁকায়। “মিন্টুর কিচ্ছু ছিল না।”
আবুল এবার মাথা নাড়ে, রিমার সাথে অমত পোষন করে। “বাংলাদেশে ওর নামে অনেক জমি জমা ছিল। কিছু কিছু খুব ভালো জায়গায়। ওর বাবা-মা ওর নামে কিনেছিলেন ট্যাক্সের পয়সা বাঁচানোর জন্য। সেই সব জমি এখনও আছে কিনা আমি জানি না। কিন্তু থাকলে স্ত্রী হিসাবে তোমারই পাবার কথা। ঊইল থাকলে ঝামেলা অনেক কম হবে।”
রিমা হেসে ফেলে। “ও যদি উইল করে সেই সব জমি জমা আমার নামে লিখেও রেখে গিয়ে থাকে সেসব আমার কি কাজে আসবে? আমি কখন ফিরে যাবো না। এখানেই আমার জীবন।”
“এখানে বসেও হয়ত তার কিছু কিছু তুমি বিক্রী করে টাকাটা আনতে পারো,” আবুল যাবার আগে বলে যায়।
সে চলে যাবার পর বিভিন্ন ড্রয়ারে, বাক্সে, প্লাস্টিকের ব্যাগে মিন্টুর যত কাগজপত্র ছিল সব কিছু খুঁজে দেখে রিমা কিন্তু উইল জাতীয় কিছুই পায় না।