অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ‘মহান বিজয় দিবস ও সুবর্ণজয়ন্তী’ যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসব মুখর পরিবেশে গত ১৬ দিবসম্বর ২০২১ তারিখে উদযাপিত হয়। উক্ত দিবস উদযাপনে দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। অনুষ্ঠানের কর্মসূচী মূলত দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। ১৬ ডিসেম্বর দিনের শুরুতে অত্র হাইকমিশনের মান্যবর হাইকমিশনার ডক্টর খলিলুর রহমান বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পতাকা উত্তোলনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পরবর্তীতে, বেলা ৬ ঘটিকায় শুরু হয় দিনের দ্বিতীয় কর্মসূচী। করোনা মহামারীর কারণে কানাডার ১০টি প্রদেশ ও তিনটি টেরিটরির বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ হাইকমিশন অটোয়া ও বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিস ইন কানাডা যৌথভাবে পরিচালনা করে। ‘মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যবৃন্দ, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ এবং অন্যান্য সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মান্যবর হাইকমিশনার ডক্টর খলিলুর রহমান।

এরপর এ দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। বাণী পাঠের পর “বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশের উন্নয়ন” নাম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত এক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করে হয়। এরপর মূল আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। ভিডিও বার্তা প্রদান করেন অন্টারিও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জনাব ফারুকী, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু। আলোচনায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে সংযুক্তির মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নুরুন্নবী এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ সম্পাদক প্রফেসর ডাক্তার নুজহাত চৌধুরী। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য নুজহাত চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একই সাথে ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের নিমিত্তে কাজ করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা রাখার জন্য উদ্বাত্ত আহবান জানান।

সর্বশেষে মান্যবর হাই কমিশনার তার বক্তব্যে উক্ত অনুষ্ঠানে যুক্ত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

আজ এই আনন্দের দিনে তিনি সকলকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ও বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নিতে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করার জন্য আহŸান জানান। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশকে কানাডা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মান্যবর হাইকমিশনার আরো উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি অবহিত করেন। একই সাথে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সকলকে আরো অবহিত করেন যে, কানাডায় অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র মানবাধিকার জাদুঘরে বাংলাদেশের গণহত্যা তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও বঙ্গবন্ধুর পোট্রেট স্থায়ীভাবে উক্ত জাদুঘরে টাইম স্ট্রিমে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে। পরিশেষে মান্যবর হাইকমিশনার তার বক্তব্যে কানাডাতে বাংলাদেশ বিরোধী কিছু মিথ্যা ও দেশবিরোধী অপপ্রচার চালানোর ব্যাপারে সতর্ক করেন। এবং এ বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা কামনা করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, কানাডিয়ান সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ বিরোধী চক্রের সব ধরণের অপচেষ্টা বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এবং এ ধরণের চক্রদের আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনার ব্যাপারে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মান্যবর হাইকমিশনারের বক্তব্যের পরে ইতোপূর্বে বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শপথবাক্য পাঠ করান। মান্যবর হাইকমিশনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শপথ বাক্য ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে যুক্ত সকল অতিথিকে পাঠ করান।

অতঃপর একটি ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শেষত্ববোধক গান পরিবেশন করা হয়। মান্যবর হাইকমিশনার কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশী শিল্পীদের কর্তৃক নির্মিত “আমার সোনার বাংলাদেশ” নামক নতুক একটি গানের উদ্বোধন করেন।

বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মান্যবর হাইকমিশনার শিশুদের সাথে নিয়ে কেক কাটেন। পরে নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)