Home কানাডা খবর অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ১৫ আগস্ট ২০২১...

অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ১৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে জাতীয় শোক দিবস উদ্যাপন

বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়া এবং বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ, কানাডা কর্তৃক যৌথভাবে ১৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে জাতীয় শোক দবিস পালন করে। হাইকমিশন জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ করে। জাতীয় শোক দিবস উদযাপনের কার্যক্রম মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল।

দিবসের শুরুতে সকাল ৮.৩০ ঘটিকায় বাংলাদেশ হাউজে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন অত্র হাইকমিশনের মান্যবর হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান। এ সময় অত্র মিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। পতাকা অর্ধনমিত করার সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

দিবসের দ্বিতীয় কর্মসূচী হাইকমিশনের অডিটরিয়ামে শুরু হয় বেলা ১১.০০ ঘটিকায়। কোভিড-১৯ এর মহামারীর কারণে উদযাপন অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়। তবে অত্র হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তাকর্মচারীগণ স্থানীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বশরীরে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল শহিদ সদস্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পরই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে অত্র হাইকমিশনের মান্যবর হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সাথে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পনের পর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণীগুলো দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ পাঠ করে শোনান। বাণী পাঠের পর বঙ্গবন্ধুর মহিমান্বিত জীবন ও তাঁর কর্মের উপর একটি ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়।


ডকুমেন্টরি প্রদর্শনের পর একটি বিশেষ ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা হলেন বাংলদেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ এমপি, শিক্ষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সাহচার্য জনাব রবিউল আলম, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর জনাব মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন এবং কানাডায় নিযুক্ত মান্যবর হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান। এছাড়াও উক্ত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ভার্চুয়াল এ বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. কাওসার আহমেদ। তিনি অনুষ্ঠানের শুরুতে ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনকে বক্তব্যের জন্য অনুরোধ জানান। ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ১৫ আগস্ট শুধু শোকের দিবস নয় এটি শক্তি সঞ্চয়ের দিন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং জাতির পিতার প্রদত্ত রূপরেখা ধরে বাকি কাজ সম্পন্ন করার শপথ নেয়ার দিন আজ। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর রচিত “মুজিব-রেনু সাধনা বীর বাঙালির ঠিকানা” শীর্ষক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর এই নিবন্ধে ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা ও বিভিন্ন বিষয়ের মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের উন্নয়নের তরীকে যে প্রবল গতিতে নিয়ে যাচ্ছেন তাতে আমরা সকলে গর্বিত বলে, তিনি মন্তব্য করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর অতি সাধারণ মানুষের প্রতি যে অকৃত্রিম ও অগাধ ভালোবাসা ছিল এবং এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর দর্শন তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি নূর চৌধুরী কানাডাতে অবস্থান আমাদের জন্য লজ্জার একটি বিষয়। পরিশেষে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ ও সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে দারিদ্রের অভিশাপে কেউ দুর্ভোগ পোহাবে না এবং সকল দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে-এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন। এই বক্তার বক্তব্যের পর জনাব তোফায়েল আহমেদ, এমপি কর্তৃক প্রদত্ত ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। প্রদত্ত ভিডিও বার্তায় তোফায়েল আহমেদ বলেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। জাতির জনক ও বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এদেশ স্বাধীন হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টি হবার পর বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য সৃষ্টি হয়নি। একদিন বাঙালির ভাগ্য বাঙালীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি প্রথমে ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন।


বিভিন্ন পরিক্রমনায় জীবনের ১৪টি বছর কারাবরন করেন এবং বিভিন্ন সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দেন বলে, উল্লেখ করেন তোফায়েল আহমদ। পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর দুটি স্বপ্ন ছিল বলে আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা মত প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধুর একটি স্বপ্ন ছিল এদেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়া এবং অন্যটি ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি। এরপর জনাব রবিউল আলমের ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। জনাব রবিউল আলম ভিডিও বার্তায় বঙ্গবন্ধু অন্যতম একজন সহযোগী হিসাবে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শহীদ পরিবারের সদস্যের রুহের মাফফেরাত কামনা করে এবং একই সাথে খুনিদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

পরিশেষে অত্র হাইকমিশনে মান্যবর হাইকমিশনার এবং বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. খলিলুর রহমান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা সহ সকল শহিদ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং একই সাথে কৃতজ্ঞতা ভরে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর জন্যই আজ আমরা যার যার অবস্থানে আসতে পেরেছি। তিনি বলেন যে, বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা যা ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের কারণে তাঁর জীবদ্দশায় সম্ভব হয়নি। কারণ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয় জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশ থাকার কারণে এই ষড়যন্ত্র কারীদের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যান। যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তথা “সোনার বাংলা” গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন।

মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ “সোনার বাংলায়” পরিণত হবে। এ পর্যায়ে মান্যবর হাইকমিশনার আরো বলেন যে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের হত্যাকারী সাজাপ্রাপ্ত নূর চৌধুরীকে কানাডা হতে বাংলাদেশে দ্রুত ফেরত নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে এবং এ বিষয়ে কানাডাস্থ বাংলাদেশীদেরকে যার যার অবস্থান থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান। এছাড়াও কানাডা হতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারী সকলকে আইনের মুখোমুখি করায় সচেষ্ট থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধে প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। একই সাথে মানি লন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাঁর বক্তব্যের পরিশেষে বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ইন কানাডা এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা মুজিব এবং শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর স্মরণে এবং সম্মানে সেন্টারের পক্ষ থেকে ৫টি বৃত্তি প্রদান করার ঘোষণা দেন।

বৃত্তিগুলো নি¤েœাক্ত বিষয়ে প্রদান করা হবে:
বঙ্গবন্ধুর “শান্তি দর্শন ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর ইতিবাচক ভূমিকা ও গুরুত্ব। বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য দর্শন ও বাংলাদেশে আজকের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে এর ভূমিকা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। রাজনীতিতে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা মুজিবের অবদান ও আজকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণে এর তাৎপর্য। শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল: বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়া জগতের রুপকার।”
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, এ বৃত্তিগুলো সম্পর্কে অতি সত্ত¡র বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ইন কানাডা এর ওয়েব সাইটে বিস্তারিত পাওয়া যাবে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মান্যবর হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্য পরিসমাপ্তি করেন।
সবশেষে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য শহিদ সদস্য ও শহিদ বীর মুক্তিযােদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

Exit mobile version