লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে যারা কোন ধরনের অপরাধে লিপ্ত নন, তাদের সকলকে সিটিজেনশিপ প্রদানের অঙ্গীকার করলেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জোসেফ আর বাইডেন। একইসাথে গত সাড়ে তিন বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন বিরোধী যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেগুলো বাতিলের কথাও বললেন জো বাইডেন।
বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে মুসলমানদের জন্যে ভিসা কঠিন করা, পারিবারিক কোটায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার রীতি রহিত, সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে দায়িত্ব গ্রহণের একশ’ দিনের মধ্যে। শুধু তাই নয়, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন সিটির মতো ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ সিটির সংখ্যাও বাড়াবেন বলে উল্লেখ করেছেন বাইডেন।
এছাড়া, মামুলি অপরাধে কারাগারে থাকা অভিবাসীদের বহিষ্কারের পথও রুদ্ধ করা হবে। করোনাযুদ্ধে অবতীর্ণ স্বাস্থ্যকর্মী এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত অভিবাসীরা খুব দ্রুত গ্রিনকার্ড পাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাইডেনের সাবেক প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে সাথে নিয়ে ডেমক্র্যাটিক পার্টির ‘ইউনিটি প্ল্যাটফরম’ থেকে ৮ জুলাই এসব ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন বিরোধী নানা কর্মসূচির সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে গ্রিনকার্ডধারি/সিটিজেনদের স্বজনদের ভিসা স্থগিত করা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব ভিসা ইস্যু করা হবে না। অথচ, পারিবারিক কোটায় যুক্তরাষ্ট্রে আসতে আগ্রহীরা ১৩/১৪ বছর আগে ফি প্রদানের মাধ্যমে আবেদন করেছেন। অনেকের ভিসা ইস্যুর প্রসেসও হচ্ছিল। এজন্যে পুনরায় ফি নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রীতি অনুযায়ী সবকিছু অবলম্বনেরও পরও ভিসা পাচ্ছেন না ১০ লাখের বেশি স্বজন। এমন অমানবিক আচরণ হরদম ঘটছে ট্রাম্পের কারণে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে অবতীর্ণ হবার পর সভা-সমাবেশে অভিবাসন বিরোধী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা পুরোদমে বাস্তবায়িত করেছেন তিনি। অর্থাৎ, যাদের রক্ত-ঘাম আর মেধায় যুক্তরাষ্ট্র আজ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে, সেই অভিবাসী সমাজকে কোণঠাসা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ট্রাম্পের সর্বশেষ স্ত্রী তথা বর্তমান ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ২০০৬ সালে সিটিজেনশিপ পেয়েছেন। এর আগে তাকেও অবৈধ অভিবাসীর অপবাদ নিয়ে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত করতে হয়েছে। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে অংশ নেয়া অভিবাসীর মধ্যে অনেককেই পরবর্তীতে নানা কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নিজেদের জীবন বাজি রাখা সেইসব লোকজনকে সিটিজেনশিপ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছেন বাইডেন। শিশুকালে মা-বাবার হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর আজ অবধি যারা গ্রিনকার্ড পায়নি, এমন ৮ লাখ তরুণ-তরুণী, যারা ড্রিমার হিসেবে ‘ডেকা’ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত, তাদের নিয়ে টানাহেচড়াও করবেন না বাইডেন। অধিকন্তু সরাসরি তাদেরকে (যারা ওবামার নির্দেশ অনুযায়ী ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন) সিটিজেনশিপ প্রদানের আদেন দেয়া হবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র যে চেতনায় আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, সেই নীতিতে অধিষ্ঠিত করবেন বাইডেন।
৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেখানে জয় পেলে ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০০ দিন পর্যন্ত কাউকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার না করার নির্দেশ দেবেন তিনি। সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বর্ডার পেট্রল এবং আইসের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্যে। বর্ণ-গোত্র আর জাতীয়তার দৃষ্টিতে কেউ যাতে বৈষম্যের শিকার না হন-সেটি দেখতেই এমন পদক্ষেপ অবলম্বন করা হবে। এরপর ঢেলে সাজানো হবে সীমান্ত সুরক্ষার কার্যক্রম। বাইডেন মনে করছেন, সুপরিকল্পিতভাবে অভিবাসন দফতরের কার্যক্রম এবং ইমেজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়া হয়েছে। আর এ অবস্থা প্রসারিত হয়েছে সীমান্ত থেকে এয়ারপোর্ট, ডিটেনশন সেন্টার এবং ইমিগ্রেশন কোর্টে। যেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং যারা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আবেদনের পরও ভিসা পাননি, সেগুলো পর্যালোচনার পর পুনরায় আবেদনের নির্দেশ দেয়া হবে। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র রিফ্যুজি গ্রহণের সংখ্যা সোয়া লাখে উন্নীত করা হবে পুনরায়। উল্লেখ্য, ট্রাম্প সে সংখ্যা কমিয়ে মাত্র ১৮ হাজার করেছেন।
ডেমক্র্যাটিক পার্টির এই ঐক্য প্ল্যাটফরম থেকে আরো ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, তারা জয়ী হলে স্বাস্থ্য-সেবা, শিক্ষা, অর্থনীতি, ক্রিমিনাল জাস্টিস এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবেন। বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, নানা ইস্যুতে বাইডেনের সাথে আমার দ্বিমত থাকলেও ট্রাম্পের কারণে সৃষ্ঠ দৈন্যদশা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্ধারে সবকিছু দূরে ঠেলে একত্রে কাজের বিকল্প নেই। কারণ, আমরা সকলেই যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক ঐক্যে বিশ্বাসী। স্যান্ডার্স উল্লেখ করেছেন, ‘সময়ের পরিক্রমায় বিবেকবান প্রতিটি মানুষই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন এই সময়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রেসিডেন্ট। এমন একজন মানুষের কবল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষায় ট্রাম্পকে হঠানোর বিকল্প নেই।’