সোনা কান্তি বড়ুয়া : বৌদ্ধ ত্রিপিটক ও চর্যাপদে আমরা দেখতে পাই হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির হিন্দুধর্ম মানবাধিকারের বিরুদ্ধে মানব জাতিকে “চন্ডাল” বানাচ্ছে! হিন্দু রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের (অধ্যায়) বত্রিশ নম্বর শ্লোকে বুদ্ধকে (যথাহি চৌর স তথাহি বুদ্ধ, তথাগতং নাস্তিকমত্র বিদ্ধি) চোর বলে গালাগাল করার পর সেই মহাকাব্যটি কি বৌদ্ধ জাতকের আগে রচিত? অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধকে হিন্দুদের নবম অবতার বানিয়ে মনুষ্যত্বের অপমান করার পরে হিন্দুর ভগবানকে পূজা করার অর্থ কি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “চন্ডালিকা” শীর্ষক নৃত্যনাট্যে বিশ্বমানবতার বাণী অহিংসা পরম সুধা প্রচার করেছেন। সকল ধর্মের উপদেশে বিরাজমান, “মানুষ মানুষের ভাইবোন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা / নিতান্তই সহজ সরল! সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি / তারি দু’চারিটি অশ্রæজল / নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা / নাহি তত্ত¡ নাহি উপদেশ!” হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞে হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির হিন্দু মৌলবাদের হরিলুট! হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ (খৃষ্ঠ পূর্ব ১ম শতাব্দী)সহ চক্রান্তকারীরা বিভিন্ন হিন্দু জঙ্গীদের সাথে ক‚ঠনীতি করে উপমহাদেশে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞে বৌদ্ধ ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্মের মুল গ্রন্থ বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতেবৌদ্ধ জাতক থেকে রামায়ন ও মহাভারত (১) বেতাল পঞ্চবিংশতি (২) পঞ্চতন্ত্র, এবং (৩) কথাসরিৎসাগরের উৎস! ২৩০০ বছর পর নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে গৌতমবুদ্ধের শিক্ষা প্রচারে ‘পালি ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মূখ্য ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র ত্রিপিটক বোধিদর্পন প্রকাশনীর মাধ্যমে ৫৯ খণ্ডে বাংলা অনুবাদের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত হলো শুক্রবার ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও সার্বজনীন শাক্যমুনি বিহারে!
ইতিহাসের পাতা থেকে! গৌতমবুদ্ধের দশরথ জাতকে রামজন্মভূমির ইতিহাস! ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয় কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির এক আলোচনা সভায় বলেছেন, “দশরথ জাতকই রামায়নের উৎস (দৈনিক বসুমতি, কলকাতা, ২ মার্চ ১৯৭৮ ইং)।” মানবতাবাদী বৌদ্ধময় ভারতবর্ষকে ধ্বংস করে ব্রাহ্মন্যবাদের হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, একথা তো সর্বজন স্বীকৃত এবং সমস্ত ঐতিহাসিক, গবেষকেরাও তা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন। গোটা রামজন্মভূমির আন্দোলনটাই বকওয়াসের রাজনীতি। রাম কাহিনি নিয়ে হিন্দুরাজনীতি হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ মুসলমানদের বাবরি মসজিদ কেড়ে নিল! হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ বৌদ্ধদের বৌদ্ধধর্ম কেড়ে হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধবিশ্বের দশরথ (৪৬১) জাতককে বদলায়ে হিন্দু রামায়ন বানিয়েছে! এবং রাম কাহিনি নিয়ে ভারত রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙেছে! হিন্দু রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের (অধ্যায়) বত্রিশ নম্বর শ্লোকে বুদ্ধকে (যথাহি চৌর স তথাহি বুদ্ধ, তথাগতং নাস্তিকমত্র বিদ্ধি) চোর বলে গালাগাল করার পর সেই মহাকাব্যটি কি বৌদ্ধ জাতকের আগে রচিত? উক্ত হিন্দু রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে চোর এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে! বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ ও বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর হিন্দু মন্দির”Ñ সেই চেপে রাখা ইতিহাসের সামান্য তুলে ধরা হলো হিন্দু ধর্ম কি ভাবে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করে!
গৌতমবুদ্ধ তাঁর ভিক্ষুসংঘকে উপদেশ প্রসঙ্গে দশরথ জাতক (রামায়ন) সমাধান করতে গিয়ে বলেছেন, “তখন (পূর্ব জন্মে) শুদ্ধোধন রাজা ছিলেন দশরথ মহারাজা, মহামায়া ছিলেন সে মাতা, রাহুলমাতা (গোপা) ছিলেন রাজকুমারী সীতা, আনন্দ ছিলেন রাজপুত্র ভরত, সারীপুত্র ছিলেন রাজপুত্র লক্ষন, বুদ্ধ পরিষদ সে পরিষদ, আমি (বুদ্ধ) ছিলাম সে রাম পন্ডিত (দশরথ জাতক নম্বর ৪৬১, জাতক অট্টকথা, পালি টেক্সট সোসাইটি, লন্ডন)। রাম মন্দির আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় ১৯৯২ সালে ৬ই ডিসেম্বর প্রায় দুই হাজার অপাপবিদ্ধ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল এবং বাবরি মসজিদ ভেঙে সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বিচার না হলে তাদের ঔদ্ধত্য ভারত জাতিকে নষ্ট করে দেবে! হিন্দু যেই মানব, মুসলমানও সেই মানব। মানুষ মানুষকে হিংসা করা আইনত: দন্ডনীয়! ভারতীয় টিভি চ্যানেলে বাঙালি বৌদ্ধ বীর বিজয় সিংহের শ্রীলঙ্কা জয় দেখানো হয়নি কেন? ব্রাহ্মণ্যবাদের জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়। বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় এমারেল্ড (মরকত মনি) বুদ্ধ মন্দিরের চারিদিক জুড়ে আছে দশরথ জাতকে রামকীর্তির অভিনব চিত্রশালা।
বৌদ্ধ জাতকে বাসুদেব বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জিবনি! ঘটজাতক (৪৫৪) বা বাসুদেব জাতকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাতার নাম দেবগর্বা (দেবকি), পিতার নাম রাজপুত্র UPASAGAR, শ্রীকৃষ্ণের পালক মাতার নাম নন্দগোপা (যশোদা) এবং রাজধানীর নাম দোয়ারাবতী (দারিকা)। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম বাসুদেব, তাঁর ভাইয়ের নাম বলদেব, ঘটসহ দশভাই ছিলেন। জরা নামক ব্যায়াধের আঘাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছিল। নলিনীকা জাতক বা শকুন্তলা। সম্ভব জাতক! সম্ভব জাতক (৫১৫) ইন্দ্রপ্রস্থ নগরে ধনঞ্জয় কৌরব্য নামে (Generation of King Judhidtira) রাজা ছিলেন। কুণালজাতকে দ্রৌপদী বা কৃষ্ণার পঞ্চস্বামী ছিল। মহাপন্ডিত ঈশানচন্দ্র ঘোষ বৌদ্ধ সাহিত্যের ছয়খন্ড জাতক লিখে অমর হয়ে আছেন। রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনী জাতকে (৫৪৭) রাজা বেস্সান্তর! বৌদ্ধগণ ভারতে হিন্দু রাজনীতির দীর্ঘ সংগ্রামের অগ্নিপথ থেকে ব্রাহ্মণ্যবাদের জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়।
ধর্মান্ধ হিন্দুরাজনীতি এমন এক অভিশাপ ধর্মান্ধ জটিল ধাঁধা, যা থেকে নিস্তার পাইনি মানবতাবাদী বৌদ্ধময় ভারতবর্ষ! ব্রাহ্মণ্ পুরোহিত ও হিন্দু রাজ শক্তিই হিংস্র জীব-জানোয়ারের চেয়েও ভয়ঙ্কর মানুষরূপী কোন জীব। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিশালী জাতিরাষ্ট্র গঠনের কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের ভোটব্যাঙ্কের মুখ চেয়ে জাতপাত নিয়ে এক বিচিত্র ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ রণকৌশল গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। আগে এটা ছিল শুধু হিন্দু-মুসলমান বিতর্ক। এখন হয়েছে ব্রাহ্মণ দলিত বিতর্ক।”
ব্রাহ্মণরা নিজেদের সংরক্ষণকে ধর্ম বলে থাকে। ধর্মকে আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে জুড়ে অন্ধবিশ্বাসের সৃষ্টি করায়। সেইজন্য তাদের সংরক্ষণের উপর আলোচনা হয় না। অপরদিকে বহুজনের সাংবিধানিক অধিকারকে (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) সংরক্ষণ বলে তাকে আলোচনার প্রধান বিষয় রূপে উপস্থাপন করে থাকে এবং সমস্ত প্রকার শক্তিসামর্থ্য লাগিয়ে তার বিরোধিতা করে থাকে। ধর্মরূপ চাদরের মধ্যে ব্রাহ্মণের সংরক্ষণ সুরক্ষিত হয়ে আছে।
ভারতে বুদ্ধকে হিন্দুকরণ এবং ভারত দেশের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ভারতের মন্দিরগুলির বার্ষিক আয় ২২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি, অর্থাৎ দেশের আর্থিক অবস্থানের চেয়ে ঢের বেশি। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সোনার পরিমাণ হচ্ছে ৩২৫০ টন। কিন্তু দেশের মন্দিরগুলিতে ৩০ হাজার টন সোনা পড়ে আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির কথা বাদ দিন, সর্বশক্তিশালী আমেরিকার কাছেও এত পরিমাণে সোনা নেই। দেশের উপর বিদেশি দেশগুলির ১৫ লক্ষ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। কিন্তু কেবল কেরলের পদ্মনাভ মন্দিরে ২৫ লক্ষ কোটির বেশি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। অর্থাৎ দেশের একটি মন্দির দেশের সমস্ত বৈেিদশিক ঋণ শোধ করতে সক্ষম। সেইরূপ শিরিড সাই, তিরুপতি, বালাজী, সিদ্ধিবিনায়ক ও জগন্নাথের মতো বড়ো বড়ো বাজেট বিশিষ্ট মন্দিরগুলিতে অমাপা ধনভাণ্ডার রয়েছে। তা ছাড়া ভূসম্পত্তি, হীরা, মোতি, মাণিক্য, সোনা, রুপার হিসাব কষতে ক্যালকুলেটরও ব্যর্থ হবে। এইসমস্ত মন্দির এবং এর সম্পত্তিতে শত শত বৎসর ধরে অধিকার কায়েম করে থাকা প্রথম সংরক্ষণ প্রাপ্ত বর্গ হচ্ছে ব্রাহ্মণ।
ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রিত সমাজে মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচার করার মানসে বৌদ্ধধর্মের প্রয়োজন আজও বিরাজমান। প্রসঙ্গত: হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, (630 A.D.) আদি শঙ্করাচার্য্য (830 A.D.) এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন, বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)।” ভারতে বৌদ্ধদের সমাধির উপরে হিন্দুস্থান প্রতিষ্ঠিত হল। ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ত্রিপিটকের পালি বর্ণমালাকে ব্রাহ্মী বর্ণমালা করেছিল! বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধদের ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম হিন্দু ধর্ম! অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং জাতিভেদ প্রথায় হিংসার নাম হিন্দুধর্ম!
ভারতে সম্রাট অশোকের মৃত্যুর (300 B. C.) পর সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের মাটিতে বৌদ্ধ STATE রাষ্ট্রদ্রোহী। বাণভট্ট রচিত হর্ষচরিত গ্রন্থানুসারে, ১৮৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মৌর্য্য রাজবংশের বৌদ্ধ নবম সম্রাট বৃহদ্রথের (5th Generation of Emperor Asoka) প্রধান সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য্য সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে শক্তি প্রদর্শনের সময় তাকে হত্যা করে মৌর্য্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান ও শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করে চলেছে। আবার ব্রাহ্মণ্যবাদ জেগে উঠে দিনের পর দিন বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করে চলেছে।
বর্তমানে ভারতে ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রিত সমাজে প্রতিটি POLITICAL দলই ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাতে তৈরি এবং পরিচালিত। হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগে ভারতে বৌদ্ধরা কিভাবে নমঃশূদ্র ও দলিত হলো? হিন্দু ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে বুদ্ধকে হিন্দুদের নবম অবতার বানিয়ে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বৌদ্ধরা তা মানলো না। শুরু হলো রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ ও অত্যাচার। অকথিত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, বড় যন্ত্রণায় বৌদ্ধরা জলে জঙ্গলে (পূর্ববঙ্গে) পালালো। বল্লাল সেনাবাহিনীকে হুকুম দিল, ওদের পিছনে ধাওয়া করে হত্যা করো। (গুরুচাঁদ চরিত ষষ্ঠ সংস্করণের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠা দেখুন)। হিন্দু মৌলবাদের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ মানব জাতিকে চন্ডাল বানাচ্ছে!
হিন্দুগণ বুদ্ধপূজা না করেও হিন্দুরাজনীতির পান্ডাগণ হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ গৌতমবুদ্ধের পূত পবিত্র ধ্যানভূমি বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির ম্যানেজম্যান্ট কমিটি দখল করেছে! হিন্দুশাস্ত্রে বলছে- দলিত ও শুদ্র লেখাপড়া করবে না, অর্থ জমানো, ধনসম্পত্তি থাকবে না। হিন্দু উচ্চবর্নের উচ্ছিষ্ট খেতে হবে এবং তাদের দয়ার দানে চলতে হবে। আর হিন্দু উচ্চবর্নের পদসেবা করতে হবে। দলিতদের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেবার নাম হিন্দুধর্ম! কর্ণাটকের হিন্দু রাজা বিজয় সেন ১১৩৬ সালে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বঙ্গে (Bangladesh & West Bengal) বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করে হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা প্রতিষ্ঠা করা হল। ব্রাহ্মণ্ পুরোহিত ও হিন্দু রাজ শক্তি মানবাধিকার ধ্বংস করতে দিনের পরদিন বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ হুলিয়া জারি করলো। হিন্দু রাজনীতি এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে চর্যাপদের উৎপত্তি!
১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র হিন্দু রাষ্ট্রধর্মের নেতা হয়ে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে ‘শেক শুভোদয়া ’ শীর্ষক বই লিখেছিলেন। তিনি তাঁর (হলায়ুধ মিশ্র) রচিত দিনলিপির (ডায়েরী) উক্ত বইতে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে মুসলিম তুর্কী মিশনের যোদ্ধাদের সাথে মহামন্ত্রীর (হলায়ুধ মিশ্র) গোপন ষড়যন্ত্র এবং রাজা লক্ষণ সেনকে সরিয়ে বখতিয়ার খিলজিকে বাংলার সিংহাসন আরোহনের নীলনক্সার পুঞ্জীভূত লোমহর্ষকর বাস্তব ঘটনাবলী অকপটে রচনা করে স্বীকার করলেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের এবং সন্ত্রাসী তুর্কি ইসলাম (বখতিয়ার খিলজি) ধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে রামাই পন্ডিতের রচিত “শূন্য পুরান” শীর্ষক বইয়ের উৎপত্তি (16th century)। ১২০২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয় করেছিলেন! রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র এবং বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! রাতারাতি ইতিহাস তৈরী হয় না। এমনকি রাজা লক্ষন সেনের সভাকবি উমাপতি ধর পরে বখতিয়ার খিলজির সভাকবি হলেন কেন? ইহাই বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্মের ট্রাজেডি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে বাংলার বৌদ্ধগণ ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন।
ডঃ আম্বেদকর সহ ভারতীয় পার্লামেন্ট ভারতের সংবিধানে বৈদিক সভ্যতাজাত জাতিভেদ প্রথাকে” বেআইনি ঘোষণা করেন এবং ভারতের রাষ্ঠ্রীয় প্রতীকে বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের “অশোক চক্র” (বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মচক্র) সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করার নাম বৈদিক হিন্দুধর্ম! হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার প্রতœতাত্তি¡ক বৌদ্ধ ইতিহাস বিরাজমান! রাজা দেব পুরন্দর ইন্দ্র সহ বৈদিক শাসকগণ সিন্ধুসভ্যতায় প্রাগৈতিহাসিক কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধধর্ম এবং বিশ্বমৈত্রীর প্রেক্ষাপট ধ্বংস করেছিলেন। মানবতাকে অপমানিত করে দেব দেবীর হিন্দু সমাজে বৈদিক জাতিভেদ প্রথায় মানবাধিকার নেই। হিন্দুগণ বুদ্ধপূজা না করে ও ভয়ঙ্কর মিথ্যা দিয়ে ভারতের ইতিহাস রচিত হ’লো এবং বুদ্ধগয়া ও বৌদ্ধধর্মকে দখল করতে পলিটিক্যাল হিন্দুধর্ম গৌতমবুদ্ধকে কে হিন্দুদের নবম অবতার বানিয়েছে! ভারতে অমানবিক দলিত বিদ্বেষ কেন? বৈদিক জাতিভেদ প্রথায় মানবাধিকার নেই। মনুষ্যত্বের অপমান করার পরে ভগবানকে পূজা করার অর্থ কি?
অষ্ঠবিংশতি বুদ্ধ বন্দনায় বুদ্ধবংশের বুদ্ধ বচনকে উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বারা রচিত নবম অবতার নামক খাঁচায় গৌতমবুদ্ধের ইতিহাসকে বন্দী করে বুদ্ধগয়ায় শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৪৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আদেশে উক্ত শিবলিঙ্গ বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির থেকে সরিয়ে নেওয়া হল এবং বুদ্ধগয়ায় আজ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের বৌদ্ধ মন্দির সমূহ সগৌরবে বিরাজমান। বাংলাদেশ ও ভারতে বৌদ্ধ চর্যাপদের মুক্তিযুদ্ধ এবং হিন্দু রাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর রচিত “ভারত সন্ধানে (ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া)’ শীর্ষক গ্রন্থে ১৫০ পৃষ্ঠায় প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আঁন্দ্রে ম্যালরো রহ ১৯৪১ জওহরলাল নেহেরুকে করেছিলেন, ““How did Brahmanism destroy Buddhism? শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে জওহরলাল নেহেরু বাবু হিন্দুরাজনীতি বা শঙ্কারাচার্য্য কর্তৃক বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের কথা একবার ও উল্লেখ করলেন না। নেহেরু যতই বৌদ্ধধর্মের জয়গান করলেন না কেন, পরিশেষে তাঁদের পরিচিতিতে হিন্দুত্ব!
প্রায় ৫ হাজার পূর্বে বৈদিক রাজা ঈন্দ্র বৈদিক পূর্ব (বা আর্য্যসভ্যতায় বেদের আগে) কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করলেন! কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধধর্মের স্মারকমালা প্রতœতাত্তি¡ ধারায় সিন্ধুসভ্যতায় মানুষের দেশ মানুষের মনেরই সৃষ্টি! হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে ধ্যানমগ্ন রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো (Maha Sudarshan) বোধিসত্ত¡ বিরাজমান! প্রায় ৫ হাজার পূর্বে বৈদিক রাজা ঈন্দ্র কাশ্যপব্দ্ধুর প্রচারিত বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেছিল! রবি ঠাকুরের কবিতায় : “মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে, / সন্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান! “প্রত্যেকেরই জীবনধারণের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার” হিন্দুধর্মে জাতিভেদ প্রথায় মানবাধিকার নেই! এই যে হিন্দুরাজনীতি অন্তরের মধ্যে বিষ পোষণ ও বুদ্ধকে হিন্দু মন্দিরে পূজা না করে ও হিন্দুরা গৌতমবুদ্ধকে’ ‘অবতার’ বলে! এবং মনুষ্যত্বের গভীর সাধনায় সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থভূমি বুদ্ধগয়াকে দখল করে জাপান, থাইল্যান্ড সহ বৌদ্ধবিশ্ব থেকে ‘টাকা আনা পাই’ কামাচ্ছে!
সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর বৌদ্ধ ভারতে ব্রাহ্মণ্যধর্মী হিন্দু মৌলবাদের হরিলুট! বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়ায় ইতিহাসে জাতক কেড়ে নেবার নাম কি হিন্দুধর্ম? হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ বৌদ্ধরা নমঃশূদ্র ও দলিত হলো! জাতিভেদ প্রথায় দলিত মানুষদের মনুষ্যত্বকেড়ে নেবারনাম হিন্দুধর্ম! উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বিচার না হলে তাদের ঔদ্ধত্য ভারত জাতিকে নষ্ট করে দেবে! বৌদ্ধদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ বৌদ্ধধর্মকে হিন্দুধর্ম করতে বর্তমানে ভারতে সম্রাট অশোকের ঐতিহাসিক বুদ্ধ বন্দনা বৌদ্ধ ঐতিহ্য ধর্মচক্র (অশোক চক্র) নিয়ে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় স্মারক সনদ (এম্বলেম) পরম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধের দর্শন (প্রতীত্যসমূৎপাদ বা সমগ্র কার্যকারণ প্রবাহ) বিরাজমান! হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ বৌদ্ধদের বৌদ্ধধর্ম কেড়ে নিয়েছে!
মানুষের সকল মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, মানবতা বিরোধী এক কালো আইনের নাম “বুদ্ধগয়ামহাবোধি ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সদস্যগণের নীতিমালা” (ভারত, দৈনিক পাটনা, ৮ মে, ২০০৮)। বৌদ্ধধর্মের শত্রু রাজা পুষ্যমিত্র (খৃ: পূ: ১৫০) থেকে রাজা শশাংক (৬৫০ খৃষ্ঠাব্দ) বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দিরকে দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করার হীন ষড়যন্ত্র করে। বৌদ্ধধর্মের অন্যতম শত্রু শংকরাচার্য (৮ম শতাব্দী) দিনের পর দিন অমানবিক বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ চালিয়ে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করে। মনুষ্যত্ব বিরোধী বর্বর এই হত্যাযজ্ঞ ও জেনোসাইডমূলক আইনের মারপাঁচে ভারতের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মধ্যে চিরস্থায়ী ক্ষতের জন্ম দিয়েছে। তার ভয়ঙ্কর ফল বিশ্ববৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান “বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির” (যেই পবিত্র বোধিবৃক্ষের তলে বসে রাজকুমার সিদ্ধার্থ কঠোর সাধনার মাধ্যমে সম্যক সম্বুদ্ধ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন) হিন্দু রাজনীতি দখলে রাখবে।
হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়। ভারত সরকার যখন দানব (ও দান্দা নদী, নেপালের দক্ষিন পশ্চিম সীমান্তে) নদীতে বাঁধ দিয়ে দানব হয়ে বুদ্ধের জন্মভূমি ধ্বংস করতে উদ্যত তখন চীন সরকার তা (লুম্বিনী) রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। (Bengali Times, October 27, 2011, Toronto).! ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষার ব্রাহ্মণ্যবাদে জাতিভেদ প্রথার দুর্বৃত্তপনা! হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ধর্মচক্রকে বদলায়ে অশোকচক্র বানিয়েছে এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করেছেন। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বৌদ্ধ তিরুপতি মহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে এবং বুদ্ধ মূর্তিকে হিন্দুর ভগবান বেঙ্কটশ্বর বানিয়েছে। ডাক্তারকে যমানাদাসের লেখা ‘তিরুপতি বালাজি ওয়াজ এ বুদ্ধিষ্ঠ স্রাইন’ শীর্ষক মহাগ্রন্থে লেখা আছে, “আসলে এটি একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি। ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম পতনের সময় হিন্দুরা স্রেফ গায়ের জোরে বিহারটিকে দখল করে নেয়।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!