ইউসুফ কামাল : কক্সবাজারের তখন সবচেয়ে ভালো থাকার জায়গা ‘হোটেল সায়মন’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে কথা, সবচেয়ে ভালো জায়গাতেই থাকতে হবে এটা তো আর বলার বাকি থাকে না। চট্টগ্রাম এলাকার সবার জন্য শেষ ভেন্যু ছিলো কক্সবাজার হোটেল সায়মন। এখান থেকে সবাই ফিরে যাবো ঢাকা। অবশ্য কেউ যদি এর পর অন্য কোথায় যেতে চায় সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার ও নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় করতে হবে।

শেষ দিনটায় ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডক্টর রওশন আলী ও সরদার আশরাফ স্যার চলে এলেন ঢাকা থেকে বিমানে সোজা কক্সবাজার। আমাদের আর একটা গ্রæপের এ্যাসাইনমেন্ট ছিলো কর্ণফুলী রেয়ন মিলে। পুরোপুরি চারিদিকে পাহাড় ও নদী বেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যময় একটা এলাকা। বাংলোর সামনে ছোট্ট পাহাড়ী নদী উপরে ছোট ছোট পাহাড়, এক কথায় অপূর্ব।

ওখানে আমাদের যে গ্রুপ ছিলো ওরা এমনিতেই একটু ‘টপ রেটেড’। সম্ভবত ওখান থেকে পাহাড়ী মারিযুয়ানা টাইপের কিছু একটা সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। সেটার ব্যবহারের ফলাফল টের পেলাম ডাইনিং টেবিলে স্যারদের সাথে খাবার টেবিলে। রুমে বসে ওগুলো খেয়েছে সবাই, সাথে ছাত্তারকেও নিয়েছে। শরীর স্বাস্থ্যে লম্বা চওড়া মনে করেছিলো এতে আর কিইবা হবে? মুসাকে বললাম, ওঁকে এর মধ্যে নেওয়া তোমাদের ভুল হয়েছে। মুসার বক্তব্য পরিস্কার ও জানালো, সে তো জোর করেই খেয়েছে, ওঁকে নিষেধ করেছিলাম। আসলে মফস্বলের মানুষ তার উপর এ সব বিষয়ে একেবারে অনভিজ্ঞ।

খাবার টেবিলে আমার তিনজনের পরে ছাত্তার আর টেবিলের উল্টো দিকে দুই স্যার পাশাপাশি। সবাই খাওয়া যথারিতি শুরু করেছি হঠাৎ দেখা গেলো ছাত্তার খাবার প্লেটে ভাত না মাখিয়ে টেবিলে ভাত মাখানো শুরু করেছে। দেখেই সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন, যা বোঝার সবাই বুঝে ফেল্লো। ড: রওশন আলী বললেন, ওঁকে ওর রুমে নিয়ে যাও। তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে ওর রুমে যেয়ে দেখি সেখানে আরেক নাটক শুরু হয়ে গেছে।

ছাত্তারের পাগলামী তখন চরম পর্যায়ে। অনর্গল বলে চলেছে, আমি মারা যাচ্ছি, আমাকে আমার মা’য়ের কাছে নিয়ে যাও। কোন মতেই তাকে থামানো যাচ্ছে না। হিতবিহ্বল সবাই যখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না সেই মূহূর্তে মুসা রুমে ঢুকে চুল ধরে ধমাধম দুই ঘুষি মেরে দিলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো দেখলাম সবার সাথে ছাত্তারও চুপ করে গেলো। তখন আবারও বুঝলাম মাইর এর উপর কোনো ওষুধ নাই! সেই যে ছাত্তার চুপ করে গেলো পরের দুই দিন চুপ করেই থাকলো।

এ নিয়ে পরের দিন চেয়ারম্যান স্যার আমাদের তিন/চার জনকে ডাকলেন কালকের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ সম্পর্কে আলোচনার জন্যে। সবার সাথে আলোচনা শেষে বিষয়টাকে আর না বাড়তে না দিয়ে ছাত্তারের দু:খ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে ঘটনার নিষ্পত্তি হয়ে গেলো। পরদিন দুই স্যার আবার বিমানে ঢাকা রওয়ানা হয়ে গেলেন। আমার সেই বন্ধুটিই পরে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছিলো।

কক্সবাজার থাকার সময় কেনো জানি না বুলা’র কথা মনে হলো। হিমছড়ির মনোরম পরিবেশ – পিছনে সবুজ পাহাড় আর সামনে নীল সমুদ্র। মনে হলো পাশে বুলার মতো একজন থাকলে হয়তো আরো ভালো লাগতো। ভাবলাম ঢাকা যেয়ে এবার বুলার সাথে কথা বলতে হবে।
পরদিন চলে এলাম ঢাকা।
(চলবে)