অনলাইন ডেস্ক : ২০০৬ সালের পর প্রথমবারের মতো লেবাননের রাজধানী বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সোমবার সকালে এ হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে তারা ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রয়োজন হলে মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশে হামলা চালাতে প্রস্তুত তিনি।
বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলের হামলায় পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিনের (পিএফএলপি) তিন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছেন। সংগঠনটি গত শতকের সত্তরের দশকে উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের বড় কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। তিন নেতার নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পিএফএলপি।
গত বছর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হামাসের সমর্থনে ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তাদের লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলও। সম্প্রতি এ হামলা ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে দেশটি। এতে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা নিহত হয়েছেন। তবে পাল্টাপাল্টি এ হামলায় উল্লেখযোগ্যভাবে যোগ দেয়নি পিএফএলপি।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত রোববার ইসরায়েলের হামলায় আরও ১০৫ জন নিহত ও ৩৫৯ জন আহত হয়েছে। দুই সপ্তাহে দেশটিতে এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও প্রায় ৬ হাজার আহত হয়েছে। হামলার মুখে লেবাননের প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখের বেশি মানুষ সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে এক বক্তৃতায় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের নেতৃত্বের প্রতি সরাসরি হুমকি দিয়েছেন। ইরানের জনগণকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ইসরায়েল নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে মনে করলে এ অঞ্চলটির যে কোনো দেশে হামলা চালাতে প্রস্তুত। মধ্যপ্রাচ্যের এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে ইসরায়েল পৌঁছাতে পারে না।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সেনারা লেবাননের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সোমবার সকালে ছোট পরিসরে বিশেষ ‘অভিযান’ পরিচালনা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাঁদের একজন বলেন, ‘খুবই ছোট আকারে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু কেন্দ্র করে অভিযান চালানো হয়েছে। বিষয়টা এমন—আপনি সীমানা পেরিয়ে গিয়ে অভিযান চালিয়ে আবার ফিরে এসেছেন।’
এসব ছোট হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে—এমনটি বলতে রাজি নন ওই মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইসরায়েল লেবাননে সীমিত পরিসরে স্থল হামলা শুরু করবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
লেবাননে ইসরায়েলের স্থল হামলা মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেওয়া ভাষণে গোষ্ঠীটির উপপ্রধান নাইম কাসেম সোমবার এক ভাষণে এ কথা বলেছেন।
ইসরায়েল তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না উল্লেখ করে নাইম কাসেম বলেন, ‘আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। ইসরায়েল যদি স্থলপথে আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত নেয়, আমরাও প্রস্তুত আছি। প্রতিরোধ বাহিনীগুলো স্থল হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।’