সুহেল ইবনে ইসহাক : এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২০ সালে শুধু টরন্টো শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫৫৩ জন। আর গত কয়েক বছরে কানাডায় মারা গেছে ২৫ জন বাংলাদেশি। তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল, আপডেট তথ্যও সংযুক্ত)

এছাড়াও কানাডাতে ২০২০ সালে ১৭৪৫ জন, এবং ২০১৯ সালে ১৭৬২ জন লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাছাড়া ২০২২ সালে শুধু অন্টারিও প্রদেশে গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৫০ জনের বেশি মারা গেছে বলে অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পুলিশ(ওপিপি) একটি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে। (সূত্র: গ্লোবাল নিউজ, কানাডা)

২০২১ সালের অক্টোবরে নিহত হয় ১৭ বছর বয়সী টরন্টোর বার্চমাউন্ট পার্ক কলেজিয়েট ইনস্টিটিউটের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাদিয়া মজুমদার। কানাডাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশাসনিক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সন্তান নুসরাত জাহান (২৩) সাইকেল চালিয়ে কলেজে যাওয়ার সময় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।

২০১৮ সালের ১ ফেব্রæয়ারি কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিসকাতুল ইসলাম ক্যাম্পাসে রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়ে পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হ্যামিলটন জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ক্যালগরিতে যুগ্ম সচিব আব্দুল লতিফ খানের কন্যা সামিরা লতিফ লিরা (২৪) মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রæতগামী গাড়ির চাপায় ঘটনাস্থলেই সহপাঠীসহ মারা যান।

২০১৯ সালের ২২ জুন টরন্টোর ডাউন টাউনে রিজেন্ট পার্ক এলাকায় চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন মাওলানা মিসবাহ উদ্দিনের স্ত্রী রত্না বেগম। ২০২০ সালের ১০ আগস্ট ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করা শাবাব আহমেদ আলভী মন্ট্রিলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন।

২০১৯ সালের মাঝামাঝি ডেনফোর্থ ও ফার্মেসী এলাকায় বায়তুল আমান মসজিদের একজন মুসল্লি রাস্তা ক্রস করতে গেলে একটি প্রাইভেট কার এসে সজোরে ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হয়ে হাসপালে ওই মুসল্লী মৃত্যুবরণ করেন।

২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী উইনিপেগ থেকে প্রায় ১১৫ কিলোমিটার উত্তরে হাইওয়ে ৭-এ দু’টি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন বাংলাদেশি আল নোমান আদিত্য, রসুল বাধন ও অরণ্য আজাদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করে। ২০২১ সালের ১৩ মে অটোয়া শহর থেকে টরন্টো ফেরার পথে ৪০১ নম্বর হাইওয়েতে দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩ জন। নিহতরা হলেন বাংলাদেশি কানাডিয়ান মনিরুজ্জামান বিজয়, তার শাশুড়ি এবং প্রিমিয়াম সুইটসের অন্যতম কারিগর লিয়াকত হোসেন। মনিরুজ্জামান বিজয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সানিব্রæক হসপিটালে মারা যান। বাকি দু’জন ঘটনাস্থলেই মারা যান । ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর কানাডার টরন্টোর পিটারবোরোতে সড়ক দুর্ঘটনায় উজ্জ্বল গোমেজ নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন ষ এ ঘটনায় উজ্জ্বল গোমেজের স্ত্রী রোজালিন মনি গোমেজ, দুই ছেলে এইডেন গোমেজ (১৫) ও অ্যারন গমেজ(১০) আহত হন ।

২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর টরন্টোয় একটি ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় আবুবকর সৈয়দ নামে বাংলাদেশি এক প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। ঐদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টরন্টো মিডল্যান্ড এবং ব্রডব্যান্ট একালায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশের বরাত দিয়ে টরন্টো সান জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে ধাক্কা মেরে হত্যা করে একজন পুরুষ চালক যে তার গাড়ি ফেলে পায়ে হেঁটে পালিয়ে যায়। ১১ জুলাই ২০২২, শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কানাডার অটোয়া হাইওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আসিফের গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে আসিফ সৈয়দ(২৭) ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশী ৩ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারান, একজন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে শয্যাশায়ী আছেন। শুধু মৃত্যুই নয় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকেই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাদের মধ্যে অনলাইন পত্রিকা “জালালাবাদ বার্তা”র সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস চৌধুরীর চার বছরের ছেলে রাধিউল চৌধুরী রাধি। ২০১৯ সালের ২৬ মে ভিক্টোরিয়া পার্ক অ্যাভিনিউ এবং আদায়ের রোড এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয় ছোট্ট শিশু রাধিউল চৌধুরী রাধি । বর্তমানে সে পঙ্গু হয়ে বিছানায় দিন কাটাচ্ছে।