অনলাইন ডেস্ক : নতুন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চার মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আছে। এ অবস্থায় ঈদ সামনে রেখে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি কি আরও বাড়বে, নাকি খুলে দেওয়া হবে?

এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। এমনকি সেপ্টেম্বরের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঈদের আগেই ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সংক্রমণের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকতে পারে।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষা দেখভাল করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুলে ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব আকরাম-আল-হোসেন রোববার বলেন, ‘ছুটি অবশ্যই বাড়বে। যে অবস্থা, তাতে সেপ্টেম্বরের আগে খুলতেই পারব না। আগে বাচ্চাদের নিরাপত্তা। তারপরে অন্য কিছু। সেপ্টেম্বরকে লক্ষ্য করে আমরা এগোচ্ছি। সেপ্টেম্বরের আগে স্কুল খুলব না।’

দেশের মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার বিষয়টি পরিচালিত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও কে সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবে? এই কর্মকর্তা সরাসরি না বললেও বুঝিয়ে দিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ঈদের আগেই জানানো হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানালেন।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, তাঁরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। ছুটির বিষয়ে সম্ভবত ঈদের আগেই জানানো হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় চার মাসের বেশি সময় ধরে করোনার কারণে বন্ধ থাকায় প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশের মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ে প্রায় পৌনে দুই কোটি ছেলেমেয়ে। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সোয়া কোটির কিছু বেশি। আটকে গেছে এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা। সেশনজট বাড়ছে। বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলো পড়ছে আর্থিক সংকটে। করোনার বাস্তবতায় যত দিন এই বন্ধ বাড়বে, স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিও তত বাড়বে। বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকার স্কুলপর্যায়ে টিভির মাধ্যমে ক্লাস প্রচার করছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সিলেবাস কাটছাঁট করে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার বিষয় কমিয়ে কম সময়ে তা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে দেরি হলে চলতি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে আগামী বছরের দু-তিন মাস যুক্ত করারও চিন্তা করছে শিক্ষা প্রশাসন। আসলে সবকিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।