স্বপন শিকদার : সূর্যোদয়ে সূর্যকে অধিক লাল দেখায়। এমনকি মাঝে মাঝে সম্পূর্ণ আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। এই রক্তিমতা যেন প্রকৃতি রুপী রমণীর বা কোন নব বঁধুর মুখের অবগুন্ঠন উন্মোচনের ফলে সলজ্জ আভা। অবশ্য এর বৈজ্ঞানিক বাখ্যা হলো, ঐ সময়ে লাল আলোর বিক্ষেপণ কম হওয়ার কারণে সূর্যকে এমন লাল দেখায়। যাই হউক, নতুন সূর্য, নতুন আশা। কাব্য কথায় –
“নির্লিপ্ত প্রেমের মতো আসে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে
পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে-
ভোরের সূর্য উঠে ছড়িয়ে দেয় আলো পূর্ব দিগন্তে।
আমার ঘুমন্ত গ্রন্থিগুলোর নিহিত অন্ধকারে
যখন রোদের স্পর্শ এসে লাগে… শিহরিত হই!”
আশা আকাঙ্ক্ষার দোলাচলে প্রবাহিত হয় মানুষের জীবন। সূর্যোদয়ে আরও একটি লাল সূর্যের আলোয় আলোকিত হয় জগৎ। শুধু রাতের অন্ধকার নয় – জরা, ক্লেদ ইত্যাদিকেও বিদায় দেবে সূর্যের আভা-সূর্যরশ্মির আলোর কাছে আমাদের এমনই প্রত্যাশা। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রার্থী’ কবিতার কয়েকটি পঙ্তিতে পরিস্ফূট আকুতি –
“হে সূর্য! শীতের সূর্য! হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায় আমরা থাকি
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ
ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
হে সূর্য!
তুমি আমাদের উত্তাপ দিও- শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড,
তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে
একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই,
এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ডে পরিণত হব! তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,
তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারবো রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী”।
সূর্যোদয় আমাদের মুগ্ধ করে । কবির ভাষায়-
“আমি শুধু দেখেছি উষামানবীর মতো –
সূর্য ওঠার আগে পুবের আকাশে ছড়িয়ে পড়া
অলৌকিক অরুণ-আভা।
সেটুকুই তৃপ্তি আমার”।
একটি উজ্জ্বল সূর্য শুধু আলো বিকিরনই করে না। সাথে জীবন, আশা, এবং একটি সুন্দর দিনের শুরুও মানুষের জন্য বহে আনে। আমরা যদি সুখী হতে চাই, তাহলে নিজেদেরকে সূর্যের আলোর মতো উজ্জ্বল করতে শিখতে হবে। সূর্যের কিরন হলো এই পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে দামি সোনা। প্রত্যেক দিনের শুরুতে যখন আমাদের ঘুম ভাঙ্গে, তখন একটা জিনিস খুব বেশি আমরা আশা করি। সেটা হচ্ছে একটা সূর্যোজ্জ্বল দিন। ইহা আমাদের মুখে একটা সুন্দর হাসি এনে দেয়। সূর্যোদয় কেবল আমাদের দিনকে আলোকিত করে না – আমাদের আত্মাকেও আলোকিত করে। রাতের অন্ধকার যে অন্ধকার নিয়ে এসেছিল তা পরিষ্কার করে দেয়। নেলসন ম্যান্ডেলার আশা – “আমি সবসময় জানতাম যে একদিন আমি আবারও আমার পায়ের নীচে ঘাস অনুভব করব এবং একটি মুক্ত মানুষ হিসাবে রোদে চলব”। যখন আমাদের হৃদয় ভারী হয়, তখন সূর্য এটিকে হালকা করে তুলতে সহায়তা করে। জীবন রক্ষার জন্য দুটি প্রাথমিক বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি হ’ল রোদ।
সূর্যোদয় এত রোমাঞ্চকর যে, প্রেমিকের কাছে কবির প্রত্যাশা- “তোমার মুখে দেখবো আমি, নূতন সূর্যোদয়”
কবির অভিলাষ –
“ভাবছি আর নয় আবেগের ঘনঘটা
আর নয় জড়সড় বিষন্নতা,
নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে
হোক নতুন প্রভাতের সূচনা”। – খন্দকার মো: আকতার
বিশ্বকবিকেও সূর্য তৃপ্ত করেছে। যেমন –
“আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান”। – রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর
প্রত্যেকটা নতুন সকাল যেন একেকটা নতুন সম্ভাবনা। কবির আশাবাদ –
“ধ্বংসের মুখে মানবিকতা,
মৃতপ্রায় হৃদয়,
বেশি দেরি নয় কাটবে আঁধার
হবে নতুন সূর্যোদয়”। – জুবিন মোহাম্মদ
কবির আকাঙ্খা –
“ভোরের পাখি মাতায় যখন আলোর গানে গানে
সেই আলোতে মাতবো মোরা, জাগবো নূতন প্রাণে”।
– শমিতা দাস
কাজী নজরুল ইসলামও নূতন সূর্যকে আহ্বান করেছেন জাতির ঘুম ভাঙানোর জন্য। যেমন –
“বলবো, ‘মামা, কথা কওয়ার নাইকো সময় আর,
তোমার আলোর রথ চালিয়ে ভাঙো ঘুমের দ্বার।’!”
– কাজী নজরুল ইসলাম
কামনা করি কবির প্রত্যাশা সফল হউক। আমরা অনেকদুর এগিয়েছি। আরো অনেকদুর যেতে হবে। যে আদর্শ ও লক্ষ্যে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনা হয়েছিল, তাকে আরো অর্থবহ করা তথা বঙ্গব্ন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা প্রতিষ্টার লক্ষ্যে আমরা যেন আরো এগিয়ে যাই। নব সূর্যোদয় আমাদের ঘুম ভাঙাক। নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।