সৌদি আরব প্রতিনিধি : হজ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জীবনে একবার হজ করা আবশ্যিক। আর এই ইবাদতটি করতে প্রতি বছর আরবী জিলহজ মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র নগরী মক্কায় সমবেত হন ২০-২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ২০২০ সালের পবিত্র হজ পালনের জন্য মুখিয়ে ছিলো বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম। কিন্তু হঠাত করেই সকল হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয়া বৈশ্বিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। সৌদি আরব সিদ্ধান্ত নেয় সীমিত পরিসরে সৌদিতে অবস্থান করছেন এমন সীমিত সংখ্যক মানুষকে নিয়ে পালিত হবে এবারের হজ।
মিনা, আরাফা, মুজদালিফা। অন্যান্য বছর ঠিক এই সময়ে স্থানগুলো হজের জন্য প্রস্তুত করতে কর্মব্যস্ত সময় পার করে হাজার হাজার শ্রমিক। এ বছর ঠিক ভিন্ন চিত্র। হজের জন্য গুরুত্বপুর্ণ জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। সীমিত পরিসরে স্বল্প সংখ্যার মুসলমান নিয়ে হজ অনুষ্ঠান হবে এজন্য নেই আবাসস্থল আর ময়দান প্রস্তুত করার কর্মযজ্ঞ।
ইসলামের ইতিহাস বলছে। বিগত ১৪০০ বছরে মহামারী, রাজনৈতিক অশান্তি, অর্থনৈতিক সংকট, নিরাপত্তাহীনতা এবং দ্বন্দ্বের কারণে ৪০ বারের বেশি স্থগিত কিংবা স্বল্প পরিসরে হজ আয়োজের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই সৌদি নাগরিক এবং দেশটিতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ ১০ হাজার নাগরিক নিয়ে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়য়ের তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় সুন্দর একটি হজ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
মুসলমানদের সর্ববৃহত সমাবেশে শারিরিক দুরত্ব এবং স্বাস্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় এজন্য মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সৌদি আরব অবস্থারত বিভিন্ন দেশের স্বল্প সংখ্যক মুসলিম নাগরিকদের নিয়ে সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির হজ ও উমরাহ্ মন্ত্রণালয়। সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ওআইসি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ নানা শ্রেণী পেশার প্রবাসীরা।
হজ ও উমরাহ্ মন্ত্রণালয়য়ের তথ্য মতে, চলতি বছর ৬৫ বছর কম, দীর্ঘস্থায়ী রোগাক্রান্ত নন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উন্নীত এবং হজ শেষে নিজ খরচে আইসোলেশন থাকতে পারবেন এমন ব্যক্তিদেরকেই সুযোগ দেয়া হবে। হজে অংশগ্রহনকারী সবাইকে শারিরিক দূরুত্ব বজায় রেখে প্রতিদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা পর্যবেক্ষন করা হবে। তবে তাদেরকে কোন প্রক্রিয়ায় কাদের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হবে এই বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা এখনো জারি করেনি সৌদ আরব। এজন্য এখনই ২০২০ সালের হজ বিষয়ে কারও সঙ্গে কোন ধরনের লেনদেন বা চুক্তিতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের হজ কাউন্সিলর মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।
দীর্ঘদিনের লকডাউন সেই সাথে উমরাহ্ এবং আন্তর্জাতি ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে আভ্যন্তরীণ লোক নিয়ে সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে মাথায় হাত মক্কা এবং মদীনায় হজ এবং উমরার সঙ্গে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক বাংলাদেশির।