হাসান আমিন : গত ২৮ এপ্রিল, শুক্রবার কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারস্পরিক সীমান্ত জুড়ে বন্দুক এবং মাদক চোরাচালান সম্পর্কে আরও তথ্য আদান-প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। জননিরাপত্তা মন্ত্রী মার্কো মেন্ডিসিনো বলেছেন, অটোয়া ওয়াশিংটনের সাথে চারটি নতুন বা হালনাগাদ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা আরসিএমপি এবং কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সিকে সীমান্তের দক্ষিণে অংশীদারদের সাথে আরও তথ্য বিনিময় করার অনুমতি দিবে।
মেন্ডিসিনো শুক্রবার বিকেলে অটোয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বন্দুক চোরাচালান এবং পাচারের আরও যৌথ তদন্ত করাই এই চুক্তির লক্ষ্য। এর অর্থ হল আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে গোয়েন্দা সংবাদ এবং তথ্যের আরও বেশি আদান-প্রদান।’
তিনি বলেন, কানাডা-আমেরিকা ক্রস-বর্ডার ক্রাইম ফোরামের অধীনে চুক্তিগুলো মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং অ্যালকোহল, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক ব্যুরো, যেমন অর্থ পাচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভ‚মিকার পাশাপাশি আরও তথ্য আদান-প্রদানের অনুমতি দিবে।
বিচার মন্ত্রী ডেভিড ল্যামেটি এবং আমেরিকান হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মায়োরকাস এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডকে সাথে নিয়ে যৌথভাবে এই ঘোষণা দেন মেন্ডিসিনো। চুক্তির লক্ষ্য হল ফেন্টানাইলের মতো ওপিওডের প্রবাহকে আটকাতে সাহায্য করা।
পাশাপাশি গারল্যান্ড বলেছেন যে, তাঁরা মারাত্মক ওষুধ তৈরি করতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো এবং চীন থেকে এর উপাদানগুলোর প্রবাহকে চিহ্নিত করবে। এই যৌথ বিবৃতি উভয় দেশকে ‘কৃত্রিম ওষুধের বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক জোট গড়ে তুলতে’ প্রতিশ্রুতি দেয় যা আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আগ্নেয়াস্ত্রের সরবরাহে জড়িত এবং গ্রহণকারীদের চিহ্নিত করতে এবং লক্ষ্যবস্তু করতে সহায়তা করতে পারে।
মেন্ডিসিনো বলেছেন, চারটি চুক্তি ‘আমাদেরকে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার অনুমতি দেবে যা স¤প্রতি আবির্ভূত হয়েছে, বিশেষ করে ‘গোস্ট গানস’ (গ্যাং দ্বারা ব্যবহৃত আনট্র্যাকড ও ব্যক্তিগতভাবে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র) উৎপাদনকারীদের খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।’
বৈঠকে যৌথভাবে সীমান্তে অভিবাসীদের মৃত্যুর সা¤প্রতিক ঘটনা পর্যালোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি চোরাকারবারীদের জবাবদিহি আওতায় আনতে এবং সেন্সর, কর্মী এবং সময়মত তথ্য ব্যবহার করে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
অন্য দিকে, ওই চার নেতা শুক্রবারের চুক্তির ফলে বস্তুগতভাবে কী পরিবর্তন হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বিবরণ দিয়েছেন। বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে যে, সীমান্তের উভয় দিকের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীগুলোকে গোপনীয় আইনগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আমেরিকান কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা হাইতির পরিস্থিতি সম্পর্কেও কথা আলোচনা করেছেন। যেখানে সশস্ত্র গ্যাংগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করেছে এবং ওয়াশিংটন পুরো অঞ্চলে বন্দুক, মাদক এবং গ্যাং ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। হাইতির কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সহিংসতা বন্ধ ও গ্যাংগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছিলো। এরই প্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে কানাডাকে একটি সামরিক হস্তক্ষেপের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটন অটোয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলো। সে বিষয়ে মায়োরকাস এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড মনোযোগ দেননি।
এর পরিবর্তে, তারা অভিবাসনের জন্য আইনি পথের গুরুত্ব এবং হাইতিকে একটি কার্যকরী পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে সহায়তা করার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। ‘উভয় দেশ হাইতিতে যৌথ আইন প্রয়োগকারী পদক্ষেপগুলো খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,’ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
গত কয়েকদিন আগে হাইতিতে সন্দেহভাজন ১৩ গ্যাং সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট ও বাসিন্দাদের ওপর হামলার অভিযোগে ক্যারিবীয় দেশটির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের রাস্তায় গ্যাং সদস্যদের পুড়িয়ে হত্যা করেছে বাসিন্দারা। সূত্র : সিবিসি নিউজ